Risingbd:
2025-07-09@19:13:22 GMT

পাটন দরবার স্কোয়ার 

Published: 9th, July 2025 GMT

পাটন দরবার স্কোয়ার 

ভূস্বর্গের দেশ নেপাল। যাকে ‘হিমালয় কন্যা’ বলা হয়। রাজকীয় বৈভব, পাহাড় আর প্রকৃতির হাতছানিতে নেপালের কোনো জুড়ি নেই। পূর্ব, দক্ষিণ ও পশ্চিমে ভারত আর উত্তরে চীন দেশের ভূখণ্ডে ঘেরা নেপালের পাহাড়ি পথ, চঞ্চলা নদনদী, নিবিড় অরণ্য, পাহাড়ি ঝরনা সবই আপনাকে মোহিত করবে। উঁচু-নিচু এই পাহাড়ই দেশটির মূল স্তম্ভ ও চালিকাশক্তি। যার বেশিরভাগই পাহাড় আর অরণ্য। আর এই পাহাড় ও অরণ্যকে ঘিরেই তাদের বসতি, প্রাকৃতিক লেক, আঁকাবাঁকা সড়ক ও জনপদ গড়ে উঠেছে। এ যেন পাহাড়ের ভূখণ্ডে এক অবিনশ্বর পৃথিবী। 

বিমানের জানালা দিয়ে হিমালয়ের অপূর্ব দৃশ্য নয়ন ভরে দেখছি। চেষ্টা করছি মোবাইলের ফ্রেমে বন্দি করে রাখতে। আগে নানানভাবে হিমালয় দেখেছি। প্রত্যেকটা পাহাড় চূড়ার দৃশ্যই হৃদয়ে লেগে থাকার মতো। পাখির চোখে হিমালয়ের দৃশ্য দেখে আমি অভিভূত! এত সুন্দর হিমালয়ের রূপ, চোখের পাতা পড়ছিল না। নভেম্বরের শুরুর দিকে বরফ জমাট বাঁধতে শুরু করে। তাই এ সময়টা কোথাও সাদা বরফে ঢাকা, কোথায় আবার বরফের চাদরে ঢেকে দেওয়ার প্রস্তুতি দেখতে পেলাম। 

ঘড়ির কাটায় তখন বেলা দুইটা, উড়োজাহাজে চেপে আমরা এসে পৌঁছালাম নেপালে। বিমানবন্দরে আমাদের বরণ করে নিলেন নেপাল-বাংলাদেশ ইয়ুথ কনক্লেভ অনুষ্ঠানের প্রধান সমন্বয়ক অভিনব দাদা। বাংলাদেশ থেকে আরো অনেকেই এসেছেন। অভিনব দাদা বললেন, আমরা চাইলে এখন  কাছাকাছি ভ্রমণ গন্তব্যে ঘুরে হোটেলে উঠতে পাড়ি। সবাই একবাক্যে বলল, আগে ঘুরে নেই আর হোটেলে ঢুকলে পরে বের হতে দেরি হবে। আমরা চার চাকার বাহনে উঠে পড়লাম। প্রকৃতির উষ্ণ ছোঁয়া বেশ ভালোই লাগছিল। পথে আমরা পেট পূজা সেরে নিলাম। আমাদের বাহন একটি গলির সামনে নামিয়ে দিলো। সেখানে দেখা হলো নেপাল-বাংলাদেশ ইয়ুথ কনক্লেভের আরেক সদস্য সুমিত দাদার সাথে। তিনি বললেন, সংক্ষিপ্ত রাস্তা দিয়ে আমরা যাবো নেপালের ঐতিহাসিক স্থান পাটন দরবার স্কোয়ারে। 

আমরা পদব্রজে সবাই এগিয়ে যেতে লাগলাম। সূর্যদেব পাটে যাওয়ার পথে। পর্যটকদের পদচারণায় গলিগুলো বেশ জমজমাট। কাঠমাণ্ডু মন্দিরের শহর বললে ভুল হবে না। পুরো শহরজুড়ে ছোট-বড় অনেক মন্দির। নেপাল অনেকটা নিঃশব্দ শহর। একইসঙ্গে নিরাপদ। হর্ন না দিয়ে শত শত মোটরবাইক চলছে। রাস্তা পারাপারের সময় পথচারীকে গুরুত্ব দিচ্ছে তারা। বিষয়টি আমাকে মুগ্ধ করল! যাত্রাপথে দেখতে পেলাম একজন  পানিপুরি বিক্রি করছেন। আমার সহযাত্রী সানন্দা লোভ সামলাতে না পেরে নিয়ে নিলেন পানিপুরি। আমিও স্বাদ আস্বাদন করলাম। সুমিতদা বললেন, পাটন দরবার স্কোয়ার যা ললিতপুর নামে খ্যাত। অসাধারণ স্থাপত্যকর্ম! এই স্থানটি হিন্দু ও বৌদ্ধ সংস্কৃতির মিলিত নিদর্শন। আমরা এগিয়ে চলছি কিন্তু চোখের পলক ফেলতে পারছি না। অসাধারণ কারুকাজ ভবনজুড়ে। এদিকে সন্ধ্যার আরতি চলছে বিভিন্ন মন্দিরে মন্দিরে, কেউ আছেন প্রার্থনায় মগ্ন। আমাদের সব সঙ্গী ছবি তোলায় মগ্ন। আমি ও স্মৃতিটুকু মোবাইলে ধারণ করে রাখার চেষ্টা করছি। কবুতর স্বাধীন ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি আর সানন্দা ঢুকে পড়লাম একটি মন্দিরের ভেতর। 

পাথরের ওপর খোঁদাই করা বিভিন্ন শৈল্পিককর্ম। নগ্ন পায়ে পাথরের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে গেলাম। চারপাশের আগরবাতির গন্ধ আমাদের মোহিত করলো। কিছু সময় সেখানে অতিবাহিত করে আমরা এগিয়ে চললাম সামনের দিকে। চলতি পথে সুমিতদা বলছিলেন পাটন তার সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যর জন্য বেশ জনপ্রিয়। এখানকার রঙিন বাড়িঘর এবং অসাধারণ স্থাপত্য ভ্রমণকারীদের মুগ্ধ করে। এই প্রাচীন মন্দিরগুলোর শিল্পকর্ম যুগ যুগ ধরে প্রশংসিত হয়ে আসছে। পাটন একটি ঐতিহাসিকভাবে সমৃদ্ধ শহর। যার উৎপত্তি খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে। কাঠমান্ডু এবং ভক্তপুরের পরে পাটন নেপালের তিনটি রাজকীয় শহরগুলোর মধ্যে একটি। চতুর্দশ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত, পাটন মল্ল রাজ্যের রাজধানী হিসাবে পরিচিত ছিল। এটি মল্ল শাসকদের অধীনে সমৃদ্ধ হয়েছিল। মল্লরা শিল্প ও স্থাপত্যের প্রতি তাদের ভালবাসার জন্য পরিচিত ছিল। সেই ভালবাসা আজও এখানকার প্রাসাদ এবং মন্দিরগুলোতে দেখা যায়। 

ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী তালিকায় স্থান পেয়েছে এই পাটন দরবার স্কয়ার। খোদাই করা কাঠের একটি প্রাসাদ। এখানে রয়েছে প্রাচীন একটি বৌদ্ধ মন্দির। যা দেখতে লাখ লাখ পর্যটক এখানে আসেন। পাটনের  কৃষ্ণ মন্দির আরও একটি জনপ্রিয় পর্যটক আকর্ষণ। আমরা পদব্রজে এগিয়ে চলছি। শত বছর পূর্বের কারিগরদের কাজ দেখে আমরা সবাই অবাক! পাথরে খোদাই করে এই মন্দিরের সোনালি রঙের চূড়া শহরের অন্যতম বিশিষ্ট স্থাপত্য বিস্ময়। পাটন মিউজিয়াম এই শহরের আরও একটি রত্ন। স্থানটি ধর্মীয় নিদর্শন, ভাস্কর্য এবং শিল্পকর্মের সংগ্রহের জন্য বিখ্যাত। এ ছাড়াও স্বর্ণ মন্দির, রুদ্র বর্ণ মহাবিহার এবং ভীমসেন মন্দির শহরের অন্যান্য বিশিষ্ট স্থাপত্য আকর্ষণগুলোর মধ্যে কয়েকটি। আপনি যদি নেপালের শিল্প ও কারুশিল্পের অভিজ্ঞতা নিতে আগ্রহী হন তবে অবশ্যই পাটন যেতে হবে। যারা নেপালি অভিজ্ঞতা নিতে চান তাদের এই সাংস্কৃতিক জায়গাটি অবশ্যই পরিদর্শন করা উচিত।

ভ্রমণ টিপস

বিমানে যাত্রার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে কাঠমান্ডু যাবার সময় বোর্ডিং অফিসারকে বলে যদি বিমানের বাম দিকের সিট নেওয়া যায় তাহলে কাঠমান্ডুর এয়ারপোর্টে নামার আগেই হিমালয়ের আইসপিক বিমান থেকে দেখতে পারবেন। তেমনি ভাবে সেখান থেকে আসার পথে চাইলে আপনি ডান দিকের সিট রিজার্ভ করতে পারেন। নেপালিরা ভীষণভাবে অতিথিপরায়ণ ও সাহায্যকারী। যেহেতু তারা হিন্দুরাজ্য তাই সেখানে গিয়ে খাবার বা তাদের মন্দির ঘুরবার সময় ধর্মীয় রীতিনীতির সাথে যথাসম্ভব সম্মান দেখান। টাকা এয়ারপোর্ট থেকে না ভাঙিয়ে এয়ারপোর্টের বাইরে মানি একচেঞ্জ থেকে ভাঙ্গালে রেট বেশি পাওয়া যায়। তবে মোবাইল সিমটি এয়ারপোর্ট থেকে কেনাই ভালো। যেহেতু নেপাল ঠাণ্ডার দেশ তাই হোটেল নেবার আগে গরম পানির ব্যবস্থা কেমন তা ভালোভাবে জেনে হোটেল নেবেন। অন এরাইভাল ভিসার জন্যে পাসপোর্ট, পাসপোর্টের ফটোকপি, রঙ্গিন পাসপোর্ট সাইজ ছবি, রিটার্ন টিকেট ও হোটেল বুকিং তথ্য (অনেক সময় লাগতে পারে), ডলার এনডোরসমেন্ট, চাকরিজীবি হলে NOC এবং স্টুডেন্ট হলে আইডি লাগে। 

তারা//

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম দ র মন দ র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

আবারও সেমিফাইনালে সিনারের সামনে জোকোভিচ

গত মাসে ফ্রেঞ্চ ওপেনের সেমিফাইনালে ইয়ানিক সিনারের মুখোমুখি হয়েছিলেন নোভাক জোকোভিচ। ২৪ বারের গ্র্যান্ড স্ল্যামজয়ী সার্বিয়ান তারকা লড়াইটা জিততে পারেননি। হেরেছিলেন সরাসরি তিন সেটে। এবার মাস গড়াতেই আরেকটি গ্র্যান্ড স্লাম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছেন জোকোভিচ-সিনার।

আজ উইম্বলডন কোয়ার্টার ফাইনালে দুজনই নিজ খেলায় জিতেছেন। র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ খেলোয়াড় সিনার যুক্তরাষ্ট্রের বেন শিলটনকে হারিয়েছে ৭-৬ (৭/২), ৬-৪, ৬-৪ গেমে। অন্য কোয়ার্টার ফাইনালে ইতালির ফ্ল্যাবিও কোবোলির বিপক্ষে জোকোভিচ জিতেছেন ৬-৭ (৬/৮), ৬-২, ৭-৫, ৬-৪ গেমে।

কোবোলিকে হারিয়ে শেষ চারে জায়গা করে নেওয়ার মাধ্যমে একটি রেকর্ড গড়েছেন জোকোভিচ। এখন উইম্বলডনে সবচেয়ে বেশি ১৪ বার পুরুষ একক সেমিফাইনাল খেলার রেকর্ড তাঁর। ৩৮ বছর বয়সী সার্ব-তারকা ছাড়িয়ে গেছেন রজার ফেদেরারের ১৩ সেমিফাইনালকে। সিনারের বিপক্ষে ম্যাচটি হতে যাচ্ছে জোকোভিচের ক্যারিয়ারের ৫২তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম সেমিফাইনাল, যা পুরুষদের টেনিসে সর্বোচ্চ।

সেমিফাইনালে জোকোভিচের প্রতিপক্ষ ইয়ানিক সিনার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ