ফের সেতু ভেঙে পড়ল ভারতে। বুধবার (৯ জুলাই) সকালে গুজরাটের বডোদরায় মহীসাগর নদীর উপর ভেঙে পড়ে গম্ভীরা সেতু। সেই সময় সেতুর উপরে থাকা অন্তত চারটি গাড়ি নদীতে পড়ে যায় বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
সেতু ভেঙে পড়ার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সূত্রে খবর, বুধবার সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ মধ্য গুজরাট এবং সৌরাষ্ট্রের মাঝামাঝি পাডরা-মুজপুর এলাকায় মহীসাগর নদীর উপর হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে গম্ভীরা সেতু। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, ‘‘ওই সময় দুটি ট্রাক, একটি ভ্যান এবং একটি গাড়ি সেতু দিয়ে যাচ্ছিল। সেতুর একটি অংশ আচমকাই ভেঙে পড়ে। ওই অংশে থাকা গাড়িগুলোও উপর থেকে সোজা নদীতে গিয়ে পড়ে।”
আরো পড়ুন:
টানা বৃষ্টিতে কলকাতায় জনজীবন বিপর্যস্ত
রাতের অন্ধকারে ভারতে আওয়ামী লীগ নেতা, সীমান্ত পেরিয়েই গ্রেপ্তার
খবর পেয়েই দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় উদ্ধারকারী দল। এখনও পর্যন্ত চার জনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে ৯ জনের। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বডোদরার পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) রোহন আনন্দ। তবে মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, তিন বছর আগে ২০২২ সালে এই রাজ্যেরই মোরবীতে সেতু ভেঙে পড়ে ১৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এর আগে সংস্কারের জন্য প্রায় দুই দশক ধরে বন্ধ ছিল ব্রিটিশ আমলে তৈরি হওয়া ওই সেতু। পুনর্নির্মাণের পর ২০২২ সালের অক্টোবরে জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয় ঝুলন্ত সেতুটি। খুলে দেওয়ার চার দিনের মধ্যে সেতুটি ভেঙে পড়ে। ওই দিন মাচ্ছু নদীর উপরের ঝুলন্ত সেতুটি দেখতে প্রচুর মানুষ হাজির হয়েছিলেন। শুধুমাত্র ভেঙে পড়ার দিনেই নাকি টিকিট বিক্রি হয়েছিল ৩ হাজারেরও বেশি! দুর্ঘটনার সময়েও সেতুর উপর ছিলেন ৩০০ জন। তার মধ্যে ১৩৫ জনের মৃত্যু হয়। গুরুতর জখম হন আরো অনেকে। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, সেতুর সংস্কারে ঘাটতি ছিল। অভিযোগের আঙুল ওঠে নির্মাণকারী সংস্থা এবং রাজ্য সরকারের দিকেও।
বুধবারের সেতু বিপর্যয় ফেরাচ্ছে তিন বছর আগের সেই ঘটনার স্মৃতি।
ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
কৃষিতে নারীর শ্রম সস্তা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে নেই অধিকার
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চুকাইবাড়ী ইউনিয়নটি যমুনা নদীর তীরবর্তী। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে তলিয়ে যায় এ ইউনিয়নের গ্রামগুলো। বালুগ্রাম দক্ষিণের মর্জিনা বেগম (৪৫) ডান হাতের চার আঙুল দেখিয়ে বললেন, জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত কমপক্ষে চারবার বন্যায় ডোবে তাঁদের গ্রাম। বন্যার হিসাব করেই ফসল ও সবজির আবাদ করা হয়। তবে এ বছর ঈদুল আজহার আগে চার-পাঁচ দিনের বন্যা সেই হিসাবেও ‘গন্ডগোল’ বাধায়।
আকস্মিক সেই বন্যায় ফসল নষ্ট হয়। রোজগারহীন হয়ে পড়েন কৃষি শ্রমজীবী মর্জিনার মতো অন্য নারীরা। তাঁদের মধ্যে মোসাম্মৎ সীমা বেগমের মতো কেউ কেউ সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে চাষ করেছিলেন। কীভাবে ক্ষতি সামলাবেন, সেই দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ে তাঁদের কপালে।
কৃষিতে ছোট-বড় যেকোনো ক্ষতিরই ভাগ নিতে হয় মর্জিনা বেগম, সীমা বেগম, বিজলি আক্তারদের। তবে আয়ের ভাগ বা মজুরি তাঁরা পুরুষের সমান পান না।
১৭ ও ১৮ জুন চুকাইবাড়ীর বালুগ্রাম দক্ষিণ ও যমুনার চর এলাকায় গিয়ে কথা হয় অন্তত ১৫ জন কৃষিজীবী নারীর সঙ্গে। তাঁরা সবাই পুরুষের চেয়ে প্রায় অর্ধেক মজুরি পান। কেউ কেউ পারিবারিক জমিতে নিয়মিত খাটেন, অথচ লাভের অর্থ পান না। কারও কিছু জমির মালিকানা থাকলেও ফসল উৎপাদন, বিক্রি বা আয়ের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না। আবার জমির দলিল না থাকায় কৃষিঋণ ও বিনা মূল্যের কৃষি উপকরণও পান না তাঁরা। সস্তা শ্রম আর অধিকার বঞ্চনার এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও কৃষিতে নারীর উপস্থিতি বাড়ছে, বিপরীতে কমছে পুরুষের সংখ্যা।
আরও পড়ুনকৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে, সেবা ও শিল্পে কমেছে ০৯ মার্চ ২০২৫কৃষিজীবী নারী বাড়ছেবাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ (২০২২) অনুসারে, প্রধান অর্থনৈতিক খাত হিসেবে কৃষিতে সবচেয়ে বেশি ৪৫ শতাংশ জনবল (১৫ বছর বা তার বেশি বয়সীরা) নিয়োজিত। এর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী, ১৯ শতাংশ পুরুষ। সংখ্যার হিসাবে কৃষি খাতে অর্থাৎ কৃষি, বনায়ন ও মৎস্যকর্মী হিসেবে নিয়োজিত ৩ কোটি ১৯ লাখ ২০ হাজার জন। নারী শ্রমশক্তির মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ এবং পুরুষদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ কৃষিজ, বনজ ও মৎস্যকর্মী হিসেবে নিয়োজিত। শহরের চেয়ে গ্রামে নারী ও পুরুষের কৃষিকাজে নিয়োজিত থাকার হার ১০ শতাংশ বেশি।
২০১৬-১৭ সালের শ্রমশক্তি জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, সে সময় নারীদের ৬০ শতাংশ ও পুরুষদের ৩২ শতাংশ কৃষিতে যুক্ত ছিলেন।
কৃষিকাজ বলতে এখন বোঝানো হয় শস্য উৎপাদন, গবাদিপশু পালন, হাঁস-মুরগি পালন, মাছ চাষ ও বনায়ন বা বাড়ির আশপাশে গাছ লাগানো ইত্যাদি। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং জেন্ডার বিশেষজ্ঞ ইসমত আরা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার হার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অকৃষি কাজে পুরুষের আগ্রহ বাড়ছে। কৃষিকাজে মজুরি ও সামাজিক মর্যাদা কম—এমন মনোভাব থেকে বাড়ির পুরুষেরা শহরে পড়াশোনা ও চাকরির জন্য এবং বিদেশে শ্রমিক হিসেবে চলে যাচ্ছেন। ফলে গ্রামে কৃষির দেখভালের দায়িত্ব পড়ছে নারীর ওপর। নারীরাই কৃষি টিকিয়ে রাখছেন। বিশেষ করে অপ্রাতিষ্ঠানিক কৃষি।
শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২ অনুসারে, দেশে প্রাতিষ্ঠানিক কৃষির হার (সরকারি ও বেসরকারি সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায়) ১ শতাংশের কিছু বেশি, অপ্রাতিষ্ঠানিক কৃষি ৪৪ শতাংশ। আর নারীদের প্রায় ৯৭ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক কৃষিতে যুক্ত। এ ক্ষেত্রে পুরুষের হার ৭৮ শতাংশ।
সস্তা শ্রম আর অধিকার বঞ্চনার মধ্যেও কৃষিতে বাড়ছে নারীর অংশগ্রহণ