ঢাকায় বেলারুশ দূতাবাস খোলার অনুরোধ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার
Published: 9th, July 2025 GMT
ঢাকায় বেলারুশ দূতাবাস খোলার অনুরোধ জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
বুধবার (৯ জুলাই) বিকেলে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার অফিসকক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত বেলারুশের অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত মিখাইল কেসকো সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এ অনুরোধ করেন।
উপদেষ্টা বলেন, “সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৯২ সালে বেলারুশের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, শিক্ষা, প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা বিদ্যমান যা দিনদিন সম্প্রসারিত হচ্ছে। বাংলাদেশ বেলারুশ থেকে অন্যতম সার আমদানিকারক দেশ। এসব কারণে দুই দেশের সাধারণ জনগণ পর্যায়ে যোগাযোগ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।”
আরো পড়ুন:
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ভুটানের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ
শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে দিল ৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা
তিনি বলেন, “বর্তমানে ঢাকায় বেলারুশের একটি অনারারি কনস্যুলেট রয়েছে। কিন্তু মূল দূতাবাস নয়াদিল্লিতে অবস্থিত হওয়ায় ভিসা ও কনস্যুলার কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রিতা, ব্যয় বৃদ্ধি, হয়রানিসহ জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সেজন্য ঢাকায় বেলারুশের একটি পূর্ণাঙ্গ দূতাবাস খোলা প্রয়োজন।”
উপদেষ্টা এ বিষয়ে বেলারুশের রাষ্ট্রদূতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
দূতাবাস খোলার বিষয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, “এটি অসম্ভব নয়। তবে এ বিষয়ে দুই দেশের সরকারের কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন।”
তিনি বলেন, “২০২১ সালের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ বেলারুশ থেকে সবচেয়ে বেশি এমওপি (মিউরেট অভ পটাশ) আমদানি করতো।২০২১ সালে বেলারুশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশ আমদানি করা সারের টাকা পরিশোধ করতে পারেনি। এরপর থেকে বেলারুশ থেকে বাংলাদেশে সার আমদানি বন্ধ রয়েছে।”
সার আমদানির টাকা পরিশোধের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, “আমরা সব দেশের সার আমদানির টাকা পরিশোধ করেছি। যথোপযুক্ত প্রক্রিয়া খুঁজে বের করে বেলারুশের বকেয়া টাকাও দ্রুত পরিশোধ করা হবে।”
তিনি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানকে বেলারুশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ বিষয়ে সভা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে টেলিফোনে নির্দেশ দেন।
বাংলাদেশের জেল থেকে বেলারুশের একজন নাগরিকের মুক্তির বিষয়ে রাষ্ট্রদূত অনুরোধ করলে উপদেষ্টা বলেন, “বেলারুশের নাগরিক হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্ত। তাছাড়া মামলাটি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। অধিকন্তু দুই দেশের মধ্যে দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীদের কূটনৈতিক চ্যানেলে বিনিময় সংক্রান্ত কোন চুক্তি নেই।”
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে বেলারুশের সুসম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু অপরাধী অপরাধীই তা সে যে দেশেরই হোক। তবে এ বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সর্বাধিক সহযোগিতা করা হবে।”
বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ইস্যু, অবৈধ অভিবাসন ও মানবপাচার প্রতিরোধ, ঢাকায় বেলারুশের পূর্ণাঙ্গ দূতাবাস খোলা, ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধিসহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকের শুরুতে উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানান ও কুশল বিনিময় করেন। রাষ্ট্রদূত এ সময় উপদেষ্টাকে ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য বেলারুশের জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানান।
বৈঠকে ঢাকাস্থ বেলারুশের অনারারি কনস্যুলেটের অনারারি কনসাল অনিরুদ্ধ কে.
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট স বর ষ ট র স র আমদ ন উপদ ষ ট পর শ ধ অন র ধ র অন র
এছাড়াও পড়ুন:
ফ্রিল্যান্সিং করে ২২ বছরের তানিয়ার মাসে আয় লাখ টাকা
অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছিল তানিয়া খলিলের (২২)। বিয়ের বছরখানেক পরই মা হন তিনি। এরই মধ্যে সংসার আর শিশুসন্তান সামলিয়েই তিনি হয়ে ওঠেন ফ্রিল্যান্সার। নিজে ফ্রিল্যান্সিং শিখে অন্যদেরও এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। এখন তাঁর মাসে আয় প্রায় এক লাখ টাকা।
তানিয়ার বাড়ি খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা পৌরসভার বাজারপাড়া এলাকায়। ২০২১ সালে মাটিরাঙ্গা কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় তাঁর বিয়ে হয়। স্বামী ইব্রাহিম খলিল পেশায় ফ্রিল্যান্সার। সেই সুবাদে তানিয়ারও এ জগতে চলা শুরু। ২০২৩ সালের শুরুতে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই খাগড়াছড়ি সদরে চলে আসেন। সেখানেই এখন দুজন ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণকেন্দ্র চালান।
তানিয়া জানান, বিয়ের পর পড়াশোনার পাশাপাশি সংসারের দায়িত্বে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন তিনি। এর মধ্যেও ঘরে বসে কিছু করতে চাইতেন। এরপর স্বামী ইব্রাহিম খলিল তাঁকে ফ্রিলান্সিং শেখার জন্য উৎসাহ দিতে থাকেন। তিনিও সে সুযোগ হাতছাড়া করেননি।
প্রথম আয় আমাকে অসম্ভব আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। মনে হয়েছিল, সত্যিই কিছু করার সামর্থ্য আছে আমার।—তানিয়া খলিল, ফ্রিল্যান্সারতানিয়া খলিল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি প্রথমে গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ শেখা শুরু করি। রং, লে আউট, টাইপোগ্রাফি—সবই আমার কাছে নতুন ছিল। নিজের আগ্রহ থাকায় দ্রুত শিখে ফেলি। কয়েক মাসের মধ্যেই নিজেকে ফ্রিল্যান্সিং বাজারের জন্য তৈরি করে ফেলতে সক্ষম হয়েছি।’
ফ্রিল্যান্সিং শেখার মধ্যেই ২০২১ সালের ডিসেম্বরে প্রথম কাজ পেয়েছেন তানিয়া। লোগো ডিজাইন করে সে মাসে তিনি ১৩ ডলার আয় করেছিলেন। এর পর থেকে আর থেমে থাকতে হয়নি তাঁকে। সেই স্মৃতি মনে করে তানিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথম আয় আমাকে অসম্ভব আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। মনে হয়েছিল সত্যিই কিছু করার সামর্থ্য আছে আমার।’
তানিয়া বলেন, লোগো ডিজাইনের পর ব্র্যান্ড আইডেনটিটি, বিজনেস কার্ড, লেটারহেড তৈরিসহ নানান ধরনের কাজে দক্ষ হয়ে ওঠেন তিনি। গ্রাহকদের খুশি করতে পারায় দ্রুতই আন্তর্জাতিক বাজারে সুনাম বাড়ে তাঁর। এরপর একের পর এক কাজ আসতে থাকে। আয়ও সমানতালেই বাড়তে থাকে। বর্তমানে তিনি ফাইভারের পাশাপাশি আপ ওয়ার্কে ফ্রিল্যান্সের কাজ করেন।
সম্প্রতি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, তিনতলা ভবনের দোতলায় প্রায় ৩০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট প্রস্থের বিশাল কক্ষে সারিবদ্ধভাবে ল্যাপটপ নিয়ে বসে রয়েছেন কয়েকজন তরুণী। তানিয়া তাঁদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। একটু শুনতেই বোঝা গেল তানিয়া তরুণীদের গ্রাফিক ডিজাইন কীভাবে করতে হয়, তা নিয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন।তানিয়ার জন্য এসব কাজ অবশ্য খুব একটা সহজ ছিল না। সময়মতো কাজ জমা দেওয়া, গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ, সন্তানকে দেখাশোনা—সব মিলিয়ে প্রতিদিনই ছিল চ্যালেঞ্জের। তানিয়া বলেন, ‘পরিবারের সাপোর্ট না থাকলে এটা সম্ভব হতো না। আমার স্বামী এখনো আমার সবচেয়ে বড় সহযোগী।’
খাগড়াছড়ি শহরে নারীদের ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তানিয়া খলিল। সম্প্রতি তোলা