মুসাফির কাকে বলে: শরিয়তের আলোকে সফরের বিধান
Published: 9th, July 2025 GMT
সফর মানুষের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। কাজ, পড়াশোনা, চিকিৎসা বা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য আমরা প্রায়ই বাড়ি ছেড়ে দূরে যাই।
ইসলামে এমন সফরকারীকে ‘মুসাফির’ বলা হয়, যিনি শরিয়তের নির্দিষ্ট দূরত্ব অতিক্রম করে ভ্রমণ করেন এবং তার জন্য বিশেষ ধর্মীয় রুখসত লাভ করেন। মুসাফিরের বিধান ইসলামে এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যাতে সফরে ইবাদত সহজ হয় এবং আল্লাহর প্রতি নির্ভরতা বৃদ্ধি পায়।
আল্লাহ মুসাফিরের জন্য নামাজ অর্ধেক করে দিয়েছেন।সুনানে নাসাঈ, হাদিস: ১,৪৫৮মুসাফির কাকে বলেইসলামি শরিয়তের পরিভাষায়, মুসাফির হলেন সেই ব্যক্তি, যিনি নিজ বাড়ি বা স্থায়ী বাসস্থান থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বের জন্য সফরে বের হন এবং সেখানে ১৫ দিনের কম সময় থাকার নিয়ত করেন। নবীজি (সা.
শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে মুসাফির হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়—
দূরত্ব: সফরের দূরত্ব কমপক্ষে ৭৮ কিলোমিটার (প্রায় ৪৮ মাইল) হতে হবে। এটি হানাফি মাজহাব মতে, যা বাংলাদেশ ও উপমহাদেশে প্রচলিত।
নিয়ত: সফরের শুরুতে ভ্রমণের ও গন্তব্যের নিয়ত থাকতে হবে। যেমন ব্যবসা, চিকিৎসা বা পরিবারের সঙ্গে দেখা করার জন্য সফর।
অবস্থানের সময়: গন্তব্যে ১৫ দিনের কম থাকার নিয়ত থাকতে হবে। ১৫ দিন বা তার বেশি থাকার নিয়ত হলে মুসাফিরের বিধান প্রযোজ্য হবে না।
মুসাফিরের জন্য শরিয়তের সুবিধামুসাফিরের জন্য শরিয়ত কিছু বিশেষ সুবিধা দিয়েছে, যাতে সফরে ইবাদত সহজ হয়—
নামাজে কসর: মুসাফির চার রাকাতের ফরজ নামাজ (জোহর, আসর ও ইশা) দুই রাকাত পড়বেন। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ মুসাফিরের জন্য নামাজ অর্ধেক করে দিয়েছেন।’ (সুনানে নাসাঈ, হাদিস: ১,৪৫৮)
রোজায় অবকাশ: রমজানে সফরে থাকলে রোজা না রেখে পরে কাজা করা যায়। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি অসুস্থ বা সফরে থাকে, সে অন্য দিনে গণনা পূর্ণ করবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫)
জামাতের সুবিধা: মুসাফির স্থানীয় ইমামের পেছনে নামাজ পড়লে পূর্ণ নামাজ পড়বেন, তবে একা পড়লে কসর করবেন।
তায়াম্মুম: পানির অভাবে তায়াম্মুমের মাধ্যমে অজু করা যায়, যা সফরে সুবিধাজনক।
সফরে বের হওয়ার সময় নবীজি (সা.) দোয়া পড়তেন, যা মুসাফিরের জন্য নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিয়ে আসে।মুসাফিরের দোয়াসফরে বের হওয়ার সময় নবীজি (সা.) দোয়া পড়তেন, যা মুসাফিরের জন্য নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিয়ে আসে।
দোয়াটি হলো: আল্লাহুম্মা আনতাস সাহিবু ফিস সফার, ওয়াল খালিফাতু ফিল আহল, আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা ফি সফারিনা হাজাল বিররা ওয়াত তাকওয়া, ওয়া মিনাল আমালি মা তারদা।
অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি সফরে আমার সঙ্গী এবং পরিবারের তত্ত্বাবধায়ক। হে আল্লাহ! আমরা এই সফরে তোমার কাছে নেকি, তাকওয়া ও এমন আমল চাই, যা তোমার সন্তুষ্টি অর্জন করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৩৪২)
আরও পড়ুনবাঙালির পবিত্র সফর১৬ মে ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম স ফ র র জন য ন আল ল হ ম
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করল ‘নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরাম’
জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ ঐক্যবদ্ধভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে ‘নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরাম’। সংগঠনটির ভাষ্য, প্রত্যাশিত জুলাই জাতীয় সনদে নারীর জন্য অর্থপূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে কোনো বাস্তব পরিবর্তন আনা হয়নি। এই সনদে বাংলাদেশের নারীর আকাঙ্ক্ষা নিদারুণভাবে অনুপস্থিত। তাই এই সনদ তারা প্রত্যাখ্যান করছে এবং সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর ‘ন্যক্কারজনক’এই আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রতিবাদলিপিতে আজ বৃহস্পতিবার ফোরাম এ দাবি তুলে ধরেছে। তারা জুলাই সনদ অবিলম্বে পুনর্বিবেচনা করে নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের রূপরেখা এবং দলে নারীর অন্তর্ভুক্তির বাধ্যতামূলক কাঠামো সংযোজন করার দাবি জানিয়েছে।
প্রতিবাদলিপিতে ফোরাম বলেছে, গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে, তাদের কোনো দাবিই গৃহীত হয়নি। জাতীয় জুলাই সনদ নারীর নেতৃত্বের সম্ভাবনাকে আরও সংকুচিত করেছে এবং রাজনৈতিক দলে নারীর প্রতিনিধিত্বের লক্ষ্যমাত্রাকে ২০৩০-এর পেছনে ঠেলে দিয়ে পশ্চাৎপদ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এ অবস্থায় চূড়ান্ত সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ ঐক্যবদ্ধভাবে প্রত্যাখ্যান করছে তারা। এ সিদ্ধান্ত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নয়, এটি তাদের নীতিগত অবস্থান, নারীর রাজনৈতিক সমানাধিকারের প্রতি অঙ্গীকারের প্রতিফলন এবং পুরুষতান্ত্রিক কাঠামো জিইয়ে রাখার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ।
প্রতিবাদলিপিতে ফোরাম বলেছে, নাগরিক পরিসর থেকে নানাভাবে সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব বিষয়ে অনেকগুলো যৌক্তিক ও বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশ ঐকমত্য কমিশনের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চলতি মাসে প্রত্যাশিত জুলাই জাতীয় সনদে নারীর অর্থপূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে কোনো বাস্তব পরিবর্তন আনা হয়নি।
প্রতিবাদলিপিতে আরও বলা হয়, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং রাজনৈতিক দলগুলো নারীর সরাসরি নির্বচনের প্রস্তাব উপেক্ষা করেছে, ভবিষ্যতের জন্য কোনো অঙ্গীকার রাখেনি। মাত্র ৫ শতাংশ দলীয় মনোনয়ন বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়ে ২০৪৩ সাল পর্যন্ত সময়ক্ষেপণের পথ বেছে নিয়েছে। এটি কেবল হতাশাজনক নয়, এটি নারীর নেতৃত্ব ও গণতান্ত্রিক সমতার দাবির প্রতি সরাসরি অবজ্ঞা। রাজনৈতিক দলগুলোকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে বাংলাদেশের নারী ভোটাররা এ বৈষম্যের জবাব দেবেন।
জুলাই সনদ সবার হয়নি
প্রতিবাদলিপির শুরুতে বলা হয়, জাতীয় জুলাই সনদ হওয়ার কথা ছিল ২০২৪ গণ–অভ্যুত্থানপরবর্তী বাংলাদেশের সব গণতন্ত্রকামী নাগরিকের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। কিন্তু এই সনদের প্রণয়নপ্রক্রিয়ায় পদ্ধতিগতভাবে দেশের জনগোষ্ঠীর ৫১ শতাংশের প্রতিনিধিত্বকে অগ্রাধিকার না দেওয়া এবং একই সঙ্গে অন্যান্য সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত না করার অবধারিত পরিণাম যা হওয়ার কথা ছিল, ঠিক তা–ই হয়েছে। জুলাই সনদ সবার হয়নি। ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বাছাইয়ে নারীর প্রতিনিধিত্ব রাখা হয়নি।
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনসহ শ্রম ও গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্যদের বা সুপারিশমালা এই প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার কোনো কার্যকর উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি বলে প্রতিবাদলিপিতে উল্লেখ করেছে নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরাম। ফোরাম বলেছে, এটি ছিল একটি ঐতিহাসিক সুযোগ, যা সরকারি নির্দেশমালার দোহাই দিয়ে হেলায় হারানো হলো। আলোচনাপ্রক্রিয়ায় আহ্বান করা হলো শুধু রাজনৈতিক দলগুলোকে এবং সেখানেও নারীর অংশগ্রহণকে বাধ্যতামূলক করা হয়নি—সত্যিকার সদিচ্ছা থাকলে প্রতিটি রাজনৈতিক দল থেকে এক–তৃতীয়াংশ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যেত।
দাবি আদায়ের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে বলে প্রতিবাদলিপির শেষাংশে উল্লেখ করে নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরাম বলেছে, বাংলাদেশের নারীরা তাঁদের ন্যায্য রাজনৈতিক অধিকার আদায়ে সামনের দিনে জনগণ, রাজনৈতিক দল ও সরকারের সঙ্গে আলোচনা ও দর–কষাকষি চালিয়ে যাবেন। সত্যিকার ন্যায্যতা ও বৈষম্যহীন প্রতিনিধিত্বের দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন বাংলাদেশের নারীরাই।