রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রো-ভিসি) অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খানের একটি ফেসবুক স্টোরি নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে একজন প্রার্থীর জন্য জামায়াতে ইসলামীর সাবেক এক সংসদ সদস্যের (এমপি) সুপারিশের কাগজ স্টোরিতে আপলোড করা হলে এ আলোচনা শুরু হয়।

গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খানের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে স্টোরিটি আপলোড করা হয়। মুহূর্তেই তা ছড়িয়ে পড়ে। স্টোরিতে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের প্রভাষক পদে জন্য আজমীরা আরেফিন নামের একজন প্রার্থীর প্রবেশপত্রে চাঁপাইনবাবগঞ্জে জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য মো.

লতিফুর রহমানের সুপারিশ।

স্টোরিটি আপলোড হওয়ার কিছুক্ষণ পর অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান সেটি সরিয়ে ফেলেন। একটি স্ট্যাটাস দিয়ে বিষয়টির ব্যাখ্যা দেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমার ফেসবুক স্টোরিতে একজন আবেদনকারীর প্রবেশপত্র ভুলবশত এসে গেছে।...প্রতিদিনই অনেক আবেদনকারী বা তাঁদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে সিভি-প্রবেশপত্র দিয়ে যায়। ...একজন আলামনাস (সাবেক এমপি) ফোন করে উনার এলাকার একজন আবেদনকারীর কথা বলেন। আমার অফিস এবং ফোনে এ রকম ডজনখানেক সুপারিশ আছে। তবে এগুলো কোনোভাবেই লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষায় প্রভাব ফেলে না। আশা করি বিষয়টি নিয়ে কেউ ভুল বুঝবেন না। ভুলবশত এই স্টোরির জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।’

মো. লতিফুর রহমান চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর-৩ আসন থেকে দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮২ সালে ইতিহাস বিভাগ থেকে এমএ পাস করেন। তিনি ছাত্রজীবনে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের পরপর দুবারের সভাপতি ছিলেন। পরে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন।

সুপারিশের বিষয়ে সাবেক সংসদ সদস্য মো. লতিফুর রহমান বলেন, চাকরিপ্রার্থীর প্রবেশপত্রে সুপারিশ করা হয়েছে, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। তবে এটা সত্য যে ওই প্রার্থীর বিষয়ে সহ-উপাচার্যকে ফোনে সুপারিশ করা হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, ‘আমি তাঁকে (ফরিদ উদ্দিন খান) বলেছিলাম, বিগত দিনে ভাইভাগুলোতে অনেক বাজে চর্চা হয়েছে। তবে বর্তমান সময়ে আমরা এটা চাই না। আপনি এই প্রার্থীর আবেদনপত্রটা দেখবেন। আবেদনকারীর বিভাগের ফলাফল অনেক ভালো।’

এ ঘটনার পর মেহেদী হাসান নামে একজন ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ নামের ফেসবুক গ্রুপে লিখেছেন, ‘শ্রদ্ধেয় স্যার, কারা কারা আপনার কাছে সুপারিশ করেছে? আপনি যদি সত্যিই অসৎ না হয়ে থাকেন, তাহলে তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে নিশ্চয়ই আপনার দ্বিধা থাকার কথা নয়। আর যদি সেটা প্রকাশ না করতে পারেন; তাহলে তার মানে এটাই দাঁড়ায়, আপনি নিজে দুর্নীতিবাজ এবং দুর্নীতিবাজদের পাহারাদার। আপনি বিশ্বাসঘাতক। পারলে সুপারিশদাতাদের নাম–পরিচয় প্রকাশ করুন।’

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল লিখেছেন, ‘চাকরি যদি জামায়াত নেতার রেফারেন্সেই দেন...সে ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষার নাটক কেন? নাকি লিখিত পরীক্ষা অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী প্রার্থীকে নকআউট করার নিঞ্জা টেকনিক?’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক গোলাম কিবরিয়া মো. মেশকাত চৌধুরী লিখেছেন, ‘সুপারিশে আসা বাকি সমস্ত প্রবেশপত্র পোস্ট করার দাবি জানাচ্ছি। আমরা জানতে চাই কারা এইটারে বিশ্ববিদ্যালয় না ভাইভা দলীয় গোয়ালঘর বানাতে চায়।’

উপাচার্যের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী মিথ্যাবাদী না মাননীয় উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব স্যার?’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার লেখেন, ‘কাল রাতে আমাদের প্রো-ভিসি মহোদয়ের ছেলে ছাগল–কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছেন। গেমস খেলতে গিয়ে বাবার ফোন থেকে একজন জামায়াতপন্থী সাবেক সংসদ সদস্যের রেফারেন্সসহ প্রবেশপত্র স্টোরি দিয়ে ফেলে। স্যার ক্লারিফিকেশনে লিখলেন এমন অনেক রেফারেন্স ওনার হোয়াটসঅ্যাপ, মেইল বা সরাসরি আসে; কিন্তু প্রশ্ন হলো, আপনাদের কাছে রেফারেন্স দেওয়ার সাহস কেন পাবে?’

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, ‘চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে একটা পরিবর্তন এলেও আমাদের চিন্তাগত কোনো পরিবর্তন আসেনি। সত্য কথা হচ্ছে, বিভিন্ন দপ্তরে সুপারিশ, তদবির এগুলো কোনো কিছুই বন্ধ হয়নি।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপ চ র য ফ সব ক প রক শ

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে