শিক্ষক নিয়োগে জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্যের সুপারিশ সহ–উপাচার্যের ফেসবুকে
Published: 3rd, August 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রো-ভিসি) অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খানের একটি ফেসবুক স্টোরি নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে একজন প্রার্থীর জন্য জামায়াতে ইসলামীর সাবেক এক সংসদ সদস্যের (এমপি) সুপারিশের কাগজ স্টোরিতে আপলোড করা হলে এ আলোচনা শুরু হয়।
গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খানের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে স্টোরিটি আপলোড করা হয়। মুহূর্তেই তা ছড়িয়ে পড়ে। স্টোরিতে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের প্রভাষক পদে জন্য আজমীরা আরেফিন নামের একজন প্রার্থীর প্রবেশপত্রে চাঁপাইনবাবগঞ্জে জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য মো.
স্টোরিটি আপলোড হওয়ার কিছুক্ষণ পর অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান সেটি সরিয়ে ফেলেন। একটি স্ট্যাটাস দিয়ে বিষয়টির ব্যাখ্যা দেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমার ফেসবুক স্টোরিতে একজন আবেদনকারীর প্রবেশপত্র ভুলবশত এসে গেছে।...প্রতিদিনই অনেক আবেদনকারী বা তাঁদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে সিভি-প্রবেশপত্র দিয়ে যায়। ...একজন আলামনাস (সাবেক এমপি) ফোন করে উনার এলাকার একজন আবেদনকারীর কথা বলেন। আমার অফিস এবং ফোনে এ রকম ডজনখানেক সুপারিশ আছে। তবে এগুলো কোনোভাবেই লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষায় প্রভাব ফেলে না। আশা করি বিষয়টি নিয়ে কেউ ভুল বুঝবেন না। ভুলবশত এই স্টোরির জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।’
মো. লতিফুর রহমান চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর-৩ আসন থেকে দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮২ সালে ইতিহাস বিভাগ থেকে এমএ পাস করেন। তিনি ছাত্রজীবনে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের পরপর দুবারের সভাপতি ছিলেন। পরে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন।
সুপারিশের বিষয়ে সাবেক সংসদ সদস্য মো. লতিফুর রহমান বলেন, চাকরিপ্রার্থীর প্রবেশপত্রে সুপারিশ করা হয়েছে, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। তবে এটা সত্য যে ওই প্রার্থীর বিষয়ে সহ-উপাচার্যকে ফোনে সুপারিশ করা হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, ‘আমি তাঁকে (ফরিদ উদ্দিন খান) বলেছিলাম, বিগত দিনে ভাইভাগুলোতে অনেক বাজে চর্চা হয়েছে। তবে বর্তমান সময়ে আমরা এটা চাই না। আপনি এই প্রার্থীর আবেদনপত্রটা দেখবেন। আবেদনকারীর বিভাগের ফলাফল অনেক ভালো।’
এ ঘটনার পর মেহেদী হাসান নামে একজন ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ নামের ফেসবুক গ্রুপে লিখেছেন, ‘শ্রদ্ধেয় স্যার, কারা কারা আপনার কাছে সুপারিশ করেছে? আপনি যদি সত্যিই অসৎ না হয়ে থাকেন, তাহলে তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে নিশ্চয়ই আপনার দ্বিধা থাকার কথা নয়। আর যদি সেটা প্রকাশ না করতে পারেন; তাহলে তার মানে এটাই দাঁড়ায়, আপনি নিজে দুর্নীতিবাজ এবং দুর্নীতিবাজদের পাহারাদার। আপনি বিশ্বাসঘাতক। পারলে সুপারিশদাতাদের নাম–পরিচয় প্রকাশ করুন।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল লিখেছেন, ‘চাকরি যদি জামায়াত নেতার রেফারেন্সেই দেন...সে ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষার নাটক কেন? নাকি লিখিত পরীক্ষা অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী প্রার্থীকে নকআউট করার নিঞ্জা টেকনিক?’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক গোলাম কিবরিয়া মো. মেশকাত চৌধুরী লিখেছেন, ‘সুপারিশে আসা বাকি সমস্ত প্রবেশপত্র পোস্ট করার দাবি জানাচ্ছি। আমরা জানতে চাই কারা এইটারে বিশ্ববিদ্যালয় না ভাইভা দলীয় গোয়ালঘর বানাতে চায়।’
উপাচার্যের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী মিথ্যাবাদী না মাননীয় উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব স্যার?’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার লেখেন, ‘কাল রাতে আমাদের প্রো-ভিসি মহোদয়ের ছেলে ছাগল–কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছেন। গেমস খেলতে গিয়ে বাবার ফোন থেকে একজন জামায়াতপন্থী সাবেক সংসদ সদস্যের রেফারেন্সসহ প্রবেশপত্র স্টোরি দিয়ে ফেলে। স্যার ক্লারিফিকেশনে লিখলেন এমন অনেক রেফারেন্স ওনার হোয়াটসঅ্যাপ, মেইল বা সরাসরি আসে; কিন্তু প্রশ্ন হলো, আপনাদের কাছে রেফারেন্স দেওয়ার সাহস কেন পাবে?’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, ‘চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে একটা পরিবর্তন এলেও আমাদের চিন্তাগত কোনো পরিবর্তন আসেনি। সত্য কথা হচ্ছে, বিভিন্ন দপ্তরে সুপারিশ, তদবির এগুলো কোনো কিছুই বন্ধ হয়নি।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপ চ র য ফ সব ক প রক শ
এছাড়াও পড়ুন:
পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত, সচিব কমিটি উপদেষ্টা পরিষদে পাঠাবে
পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে অধ্যাদেশের খসড়াটি সচিব কমিটির মাধ্যমে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের জন্য যাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে উপদেষ্টাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশনের কাঠামো ও কার্যক্রমের খসড়া তৈরি করেছে।
খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এই কমিশনের চেয়ারপারসন হবেন। সদস্য থাকবেন একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ; গ্রেড-২ পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা; অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা; পুলিশ একাডেমির একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ; আইন, অপরাধবিজ্ঞান বিষয়ের একজন কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক; ১৫ বছর অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন একজন মানবাধিকারকর্মী।
আরও পড়ুনপুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে স্বাধীন কমিশন অপরিহার্য৮ ঘণ্টা আগেকমিশনের চেয়ারপারসন আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমপদমর্যাদার হবেন।কমিশনের চেয়ারপারসন আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমপদমর্যাদার হবেন। সদস্যরা যোগদানের দিন থেকে চার বছর নিজ নিজ পদে থাকবেন। মেয়াদ শেষে কোনো সদস্য আবার নিয়োগের যোগ্য হবেন না।
অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, পুলিশ কমিশনের নির্দেশ বা সুপারিশ প্রতিপালনে বাধ্যবাধকতার বিষয়ে বলা হয়েছে—এই কমিশন যেকোনো কর্তৃপক্ষ বা সত্তাকে কোনো নির্দেশ দিলে উক্ত কর্তৃপক্ষ বা সত্তা অনধিক তিন মাসের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। তবে কমিশনের নির্দেশ বা সুপারিশ বাস্তবায়নে কোনো অসুবিধা হলে সে ক্ষেত্রে নির্দেশ বা সুপারিশ পাওয়ার অনধিক তিন মাসের মধ্যে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। কমিশন বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে যে নির্দেশ বা সুপারিশ পাঠাবে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেই নির্দেশ বা সুপারিশ কমিশন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করে কমিশনকে জানাতে হবে।
আরও পড়ুনকোনো দল নয়, পুলিশের আনুগত্য থাকবে আইন ও দেশের প্রতি৯ ঘণ্টা আগেপুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পর জুলাই জাতীয় সনদেও এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।এই কমিশনের সদস্য পদে নিয়োগের সুপারিশ প্রদানের জন্য সাত সদস্যের সমন্বয়ে একটি বাছাই কমিটি গঠন করা হবে। খসড়া অধ্যাদেশে প্রধান বিচারপতির মনোনীত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপারসন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির মনোনীত একজন সরকারদলীয় এবং একজন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যকে বাছাই কমিটিতে রাখার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ন্যূনতম পাঁচ সদস্যের উপস্থিতিতে বাছাই কমিটির কোরাম হওয়া ও বাছাই কমিটির বাছাই প্রক্রিয়া শুরুর ৩০ দিনের মধ্যে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে খসড়া প্রস্তাবে।
আরও পড়ুন‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা১৭ ঘণ্টা আগেপুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ খসড়ায় কমিশন প্রতিষ্ঠা, কার্যালয়, সদস্যদের নিয়োগ, মেয়াদ, কমিশনের সদস্য হওয়ার জন্য কারা অযোগ্য, সদস্যদের পদত্যাগ, অপসারণ, পুলিশি কার্যক্রমে দক্ষতা বৃদ্ধি, শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি, নাগরিকের অভিযোগ অনুসন্ধান-নিষ্পত্তি, পুলিশ সদস্যদের সংক্ষোভ নিরসন, পুলিশপ্রধান নিয়োগ, আইন-বিধি, নীতিমালা প্রণয়ন ও গবেষণা বিষয়েও প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পর জুলাই জাতীয় সনদেও এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
আরও পড়ুনমাঝেমধ্যে শুনতে হয়, ‘উনি কি আমাদের লোক’: আইজিপি১৭ ঘণ্টা আগে