Prothomalo:
2025-09-22@22:46:17 GMT

ভরসা যখন ঘোড়ার গাড়ি

Published: 7th, August 2025 GMT

যমুনার চর দক্ষিণ চরপেঁচাকোলায় যখন পৌঁছালাম, তখন দুপুর গড়িয়েছে। চরের এখানে–সেখানে গড়ে উঠেছে নৌকার অস্থায়ী ঘাট। এমনই একটি ঘাটে চোখে পড়ল ১০–১৫টি ঘোড়ার গাড়ি। কয়েকটিতে বোঝাই করা ফসলের বস্তা। কয়েকটি রয়েছে যাত্রীর অপেক্ষায়। বোঝাই যায়, এই চরাঞ্চলে প্রধান বাহন হিসেবে টিকে আছে ঐতিহ্যবাহী এই যান।

পাবনার বেড়া উপজেলার নাকালিয়া বাজার থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে চর দক্ষিণ চরপেঁচাকোলায় গিয়েছিলাম। চরটি বেশ দুর্গম। নেই বিদ্যুৎ, পাকা রাস্তা, আধুনিক যানবাহনের চলাচল। পাড় থেকে চরের ভেতরের গ্রামগুলোর দূরত্ব দু–তিন কিলোমিটার। রাস্তায় কখনো থাকে কাদা, কখনো বালুতে ভরা। তাই ঘোড়ার গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো বাহনে যাতায়াত করাটা কঠিন।

চরবাসীকে জিনিসপত্র কিনতে, চিকিৎসার প্রয়োজনে বা স্কুল-কলেজে যেতে প্রথমে চরের পাড়ে যেতে হয়। তারপর নৌকায় করে বাকি পথ। কেউ কেউ পাড় পর্যন্ত হেঁটেই যাতায়াত করেন। তবে বেশির ভাগের ভরসা ঘোড়ার গাড়ি। যাতায়াত থেকে শুরু করে মাঠে ফসল পৌঁছানো, বাজারে মালামাল বহন—সবকিছুই চলে এই ঘোড়ার গাড়িতে করে। বিশেষ করে হাটের দিনগুলোতে এর চাহিদা বেড়ে যায়।

চরপেঁচাকোলায় প্রায় দেড় শ পরিবারের বসবাস। প্রায় প্রতিটি বাড়িতে রয়েছে ঘোড়ার গাড়ি। নিয়মিত ঘোড়ার পরিচর্যাও করতে হয় তাদের। চরবাসীর সঙ্গে আলাপচারিতায় জানা যায়, প্রতিদিন একেকটি ঘোড়ার জন্য ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার খাবার লাগে। এর মধ্যে রয়েছে খইল, ভুসি, ঘাস, ছোলা, ধানের কুঁড়া ও চাল। কখনো কখনো থাকে খড়। এ ছাড়া চিকিৎসা খরচ তো আছেই।

অনেকেই নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে ঘোড়ার গাড়ি ভাড়াতেও চালান। এভাবে দিনে ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয়। কথা হচ্ছিল চরপেঁচাকোলার চালক কামরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘জমির ফসল আর বাড়ির লোকজনের যাতায়াতের জন্য প্রায় সারা দিন গাড়ি লাগে। কখনো কাজ না থাকলে ভাড়ার বিনিময়ে অন্যের জন্য গাড়ি চালাই। তখন বাজারে মালপত্র বা মানুষ পৌঁছে দিই।’

চরবাসীর দেওয়া তথ্য অনুসারে, একেকটি ঘোড়ার গাড়ি তৈরিতে এখন খরচ পড়ে ২০–৩০ হাজার টাকা। গাড়ির কাঠ ও লোহার অংশ আলাদাভাবে তৈরি করা হয়। স্থানীয় মিস্ত্রিরা পাঁচ থেকে ছয় দিনের মধ্যে একটি গাড়ি তৈরি করতে পারেন। গাড়ির জন্য সাধারণ মানের একেকটি ঘোড়া কিনতে লাগে ৪০–৬০ হাজার টাকা। তবে ভালো মানের ঘোড়া হলে গুনতে হয় লাখ টাকার বেশি।

চরপেঁচাকোলার বাসিন্দারা শুধু নিজেদের প্রয়োজনেই ঘোড়া কেনেন না। ঘোড়ার গাড়ি প্রতিটি পরিবারের জন্য সম্মানেরও। চরটির প্রধান হিসেবে পরিচিত ইব্রাহিম হোসেন (৬৫) বলেন, ‘এখানে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ঘোড়ার গাড়ি আছে। আমাদের বাড়িতেই কয়েক ভাই মিলে তিনটি ঘোড়ার গাড়ি চালাই। ঘোড়ার গাড়ি ছাড়া জীবন অনেকটাই অচল।’

বেড়ার মনজুর কাদের মহিলা কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমি প্রায়ই যমুনার চর এলাকায় যাই। কৃষিকাজ, বাজারে যাতায়াত, এমনকি রোগী আনা-নেওয়াতেও এই গাড়িই ভরসা। ওখানে ঘোড়ার গাড়ি শুধু বাহন নয়, জীবনের অংশে পরিণত হয়েছে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে আজ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে পৌঁছেছেন।

প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট স্থানীয় সময় বিকেল ৩টায় জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

এ বছর প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীদের মধ্যে ছয় রাজনৈতিক নেতা রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাসনিম জারা ঢাকা থেকে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে যোগ দেন।

এছাড়া জামায়াত নেতা নকিবুর রহমান তারেক যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতিনিধি দলে যুক্ত হন।

এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর রাত ১টা ৪০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময়) প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওনা দেয়।

সূচি অনুযায়ী অধ্যাপক ইউনূস আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ