যমুনার চর দক্ষিণ চরপেঁচাকোলায় যখন পৌঁছালাম, তখন দুপুর গড়িয়েছে। চরের এখানে–সেখানে গড়ে উঠেছে নৌকার অস্থায়ী ঘাট। এমনই একটি ঘাটে চোখে পড়ল ১০–১৫টি ঘোড়ার গাড়ি। কয়েকটিতে বোঝাই করা ফসলের বস্তা। কয়েকটি রয়েছে যাত্রীর অপেক্ষায়। বোঝাই যায়, এই চরাঞ্চলে প্রধান বাহন হিসেবে টিকে আছে ঐতিহ্যবাহী এই যান।
পাবনার বেড়া উপজেলার নাকালিয়া বাজার থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে চর দক্ষিণ চরপেঁচাকোলায় গিয়েছিলাম। চরটি বেশ দুর্গম। নেই বিদ্যুৎ, পাকা রাস্তা, আধুনিক যানবাহনের চলাচল। পাড় থেকে চরের ভেতরের গ্রামগুলোর দূরত্ব দু–তিন কিলোমিটার। রাস্তায় কখনো থাকে কাদা, কখনো বালুতে ভরা। তাই ঘোড়ার গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো বাহনে যাতায়াত করাটা কঠিন।
চরবাসীকে জিনিসপত্র কিনতে, চিকিৎসার প্রয়োজনে বা স্কুল-কলেজে যেতে প্রথমে চরের পাড়ে যেতে হয়। তারপর নৌকায় করে বাকি পথ। কেউ কেউ পাড় পর্যন্ত হেঁটেই যাতায়াত করেন। তবে বেশির ভাগের ভরসা ঘোড়ার গাড়ি। যাতায়াত থেকে শুরু করে মাঠে ফসল পৌঁছানো, বাজারে মালামাল বহন—সবকিছুই চলে এই ঘোড়ার গাড়িতে করে। বিশেষ করে হাটের দিনগুলোতে এর চাহিদা বেড়ে যায়।
চরপেঁচাকোলায় প্রায় দেড় শ পরিবারের বসবাস। প্রায় প্রতিটি বাড়িতে রয়েছে ঘোড়ার গাড়ি। নিয়মিত ঘোড়ার পরিচর্যাও করতে হয় তাদের। চরবাসীর সঙ্গে আলাপচারিতায় জানা যায়, প্রতিদিন একেকটি ঘোড়ার জন্য ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার খাবার লাগে। এর মধ্যে রয়েছে খইল, ভুসি, ঘাস, ছোলা, ধানের কুঁড়া ও চাল। কখনো কখনো থাকে খড়। এ ছাড়া চিকিৎসা খরচ তো আছেই।
অনেকেই নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে ঘোড়ার গাড়ি ভাড়াতেও চালান। এভাবে দিনে ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয়। কথা হচ্ছিল চরপেঁচাকোলার চালক কামরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘জমির ফসল আর বাড়ির লোকজনের যাতায়াতের জন্য প্রায় সারা দিন গাড়ি লাগে। কখনো কাজ না থাকলে ভাড়ার বিনিময়ে অন্যের জন্য গাড়ি চালাই। তখন বাজারে মালপত্র বা মানুষ পৌঁছে দিই।’
চরবাসীর দেওয়া তথ্য অনুসারে, একেকটি ঘোড়ার গাড়ি তৈরিতে এখন খরচ পড়ে ২০–৩০ হাজার টাকা। গাড়ির কাঠ ও লোহার অংশ আলাদাভাবে তৈরি করা হয়। স্থানীয় মিস্ত্রিরা পাঁচ থেকে ছয় দিনের মধ্যে একটি গাড়ি তৈরি করতে পারেন। গাড়ির জন্য সাধারণ মানের একেকটি ঘোড়া কিনতে লাগে ৪০–৬০ হাজার টাকা। তবে ভালো মানের ঘোড়া হলে গুনতে হয় লাখ টাকার বেশি।
চরপেঁচাকোলার বাসিন্দারা শুধু নিজেদের প্রয়োজনেই ঘোড়া কেনেন না। ঘোড়ার গাড়ি প্রতিটি পরিবারের জন্য সম্মানেরও। চরটির প্রধান হিসেবে পরিচিত ইব্রাহিম হোসেন (৬৫) বলেন, ‘এখানে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ঘোড়ার গাড়ি আছে। আমাদের বাড়িতেই কয়েক ভাই মিলে তিনটি ঘোড়ার গাড়ি চালাই। ঘোড়ার গাড়ি ছাড়া জীবন অনেকটাই অচল।’
বেড়ার মনজুর কাদের মহিলা কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমি প্রায়ই যমুনার চর এলাকায় যাই। কৃষিকাজ, বাজারে যাতায়াত, এমনকি রোগী আনা-নেওয়াতেও এই গাড়িই ভরসা। ওখানে ঘোড়ার গাড়ি শুধু বাহন নয়, জীবনের অংশে পরিণত হয়েছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
চীনের রণতরি উদ্বোধন, চাপে পড়বে যুক্তরাষ্ট্র
চীনের সর্বাধুনিক বিমানবাহী রণতরি ‘ফুজিয়ান’ আনুষ্ঠানিকভাবে নৌবাহিনীতে যুক্ত হয়েছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের উপস্থিতিতে এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে রণতরিটি নৌবাহিনীতে যুক্ত করা হয়।
ফুজিয়ান হলো চীনের তৃতীয় বিমানবাহী রণতরি, যা আধুনিক ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ক্যাটাপল্ট সিস্টেমে সজ্জিত। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধবিমানগুলো আরও বেশি গতিতে উড্ডয়ন করতে পারবে।
এটি চীনের নৌ সক্ষমতায় এক বড় অগ্রগতি। কারণ, বর্তমানে জাহাজের সংখ্যার দিক থেকে চীনের নৌবাহিনীই বিশ্বের সবচেয়ে বড়। সি চিন পিংয়ের নেতৃত্বে চীন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অবিশ্বাস্য গতিতে নৌবাহিনী সম্প্রসারণ করছে, যা যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, ফুজিয়ানের সমতল ডেকে থাকা ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ক্যাটাপল্ট সিস্টেমের সাহায্যে তিন ধরনের যুদ্ধবিমান উৎক্ষেপণ করা সম্ভব। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত এই রণতরি ভারী অস্ত্র ও জ্বালানি বহনকারী যুদ্ধবিমান মোতায়েন করতে পারবে, যা আরও দূরের শত্রু ঘাঁটিতে আঘাত হানতে সক্ষম। ফলে এটি চীনের প্রথম দুটি রণতরি—রুশ নির্মিত ‘লিয়াওনিং’ ও ‘শানডং’-এর তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ফুজিয়ানকে চীনের নৌবাহিনীর বিকাশে একটি বড় মাইলফলক হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
বিশ্বে বর্তমানে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেরই এমন একটি বিমানবাহী রণতরি রয়েছে, যাতে ফুজিয়ানের মতো ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ক্যাটাপল্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।