Prothomalo:
2025-08-07@08:13:07 GMT

ভরসা যখন ঘোড়ার গাড়ি

Published: 7th, August 2025 GMT

যমুনার চর দক্ষিণ চরপেঁচাকোলায় যখন পৌঁছালাম, তখন দুপুর গড়িয়েছে। চরের এখানে–সেখানে গড়ে উঠেছে নৌকার অস্থায়ী ঘাট। এমনই একটি ঘাটে চোখে পড়ল ১০–১৫টি ঘোড়ার গাড়ি। কয়েকটিতে বোঝাই করা ফসলের বস্তা। কয়েকটি রয়েছে যাত্রীর অপেক্ষায়। বোঝাই যায়, এই চরাঞ্চলে প্রধান বাহন হিসেবে টিকে আছে ঐতিহ্যবাহী এই যান।

পাবনার বেড়া উপজেলার নাকালিয়া বাজার থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে চর দক্ষিণ চরপেঁচাকোলায় গিয়েছিলাম। চরটি বেশ দুর্গম। নেই বিদ্যুৎ, পাকা রাস্তা, আধুনিক যানবাহনের চলাচল। পাড় থেকে চরের ভেতরের গ্রামগুলোর দূরত্ব দু–তিন কিলোমিটার। রাস্তায় কখনো থাকে কাদা, কখনো বালুতে ভরা। তাই ঘোড়ার গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো বাহনে যাতায়াত করাটা কঠিন।

চরবাসীকে জিনিসপত্র কিনতে, চিকিৎসার প্রয়োজনে বা স্কুল-কলেজে যেতে প্রথমে চরের পাড়ে যেতে হয়। তারপর নৌকায় করে বাকি পথ। কেউ কেউ পাড় পর্যন্ত হেঁটেই যাতায়াত করেন। তবে বেশির ভাগের ভরসা ঘোড়ার গাড়ি। যাতায়াত থেকে শুরু করে মাঠে ফসল পৌঁছানো, বাজারে মালামাল বহন—সবকিছুই চলে এই ঘোড়ার গাড়িতে করে। বিশেষ করে হাটের দিনগুলোতে এর চাহিদা বেড়ে যায়।

চরপেঁচাকোলায় প্রায় দেড় শ পরিবারের বসবাস। প্রায় প্রতিটি বাড়িতে রয়েছে ঘোড়ার গাড়ি। নিয়মিত ঘোড়ার পরিচর্যাও করতে হয় তাদের। চরবাসীর সঙ্গে আলাপচারিতায় জানা যায়, প্রতিদিন একেকটি ঘোড়ার জন্য ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার খাবার লাগে। এর মধ্যে রয়েছে খইল, ভুসি, ঘাস, ছোলা, ধানের কুঁড়া ও চাল। কখনো কখনো থাকে খড়। এ ছাড়া চিকিৎসা খরচ তো আছেই।

অনেকেই নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে ঘোড়ার গাড়ি ভাড়াতেও চালান। এভাবে দিনে ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয়। কথা হচ্ছিল চরপেঁচাকোলার চালক কামরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘জমির ফসল আর বাড়ির লোকজনের যাতায়াতের জন্য প্রায় সারা দিন গাড়ি লাগে। কখনো কাজ না থাকলে ভাড়ার বিনিময়ে অন্যের জন্য গাড়ি চালাই। তখন বাজারে মালপত্র বা মানুষ পৌঁছে দিই।’

চরবাসীর দেওয়া তথ্য অনুসারে, একেকটি ঘোড়ার গাড়ি তৈরিতে এখন খরচ পড়ে ২০–৩০ হাজার টাকা। গাড়ির কাঠ ও লোহার অংশ আলাদাভাবে তৈরি করা হয়। স্থানীয় মিস্ত্রিরা পাঁচ থেকে ছয় দিনের মধ্যে একটি গাড়ি তৈরি করতে পারেন। গাড়ির জন্য সাধারণ মানের একেকটি ঘোড়া কিনতে লাগে ৪০–৬০ হাজার টাকা। তবে ভালো মানের ঘোড়া হলে গুনতে হয় লাখ টাকার বেশি।

চরপেঁচাকোলার বাসিন্দারা শুধু নিজেদের প্রয়োজনেই ঘোড়া কেনেন না। ঘোড়ার গাড়ি প্রতিটি পরিবারের জন্য সম্মানেরও। চরটির প্রধান হিসেবে পরিচিত ইব্রাহিম হোসেন (৬৫) বলেন, ‘এখানে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ঘোড়ার গাড়ি আছে। আমাদের বাড়িতেই কয়েক ভাই মিলে তিনটি ঘোড়ার গাড়ি চালাই। ঘোড়ার গাড়ি ছাড়া জীবন অনেকটাই অচল।’

বেড়ার মনজুর কাদের মহিলা কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমি প্রায়ই যমুনার চর এলাকায় যাই। কৃষিকাজ, বাজারে যাতায়াত, এমনকি রোগী আনা-নেওয়াতেও এই গাড়িই ভরসা। ওখানে ঘোড়ার গাড়ি শুধু বাহন নয়, জীবনের অংশে পরিণত হয়েছে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

গ্রেপ্তার দেখানো হলো মেজর সাদিকুলের স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিনকে

ভাটারা থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে মেজর সাদিকুল হকের স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিনকে। গ্রেপ্তারের পর তাকে আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ড আবেদন করবেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সকা‌লে ডিবি পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম এ তথ্য জানান। 

পুলিশ জানায়, সুমাইয়া জাফ‌রিনকে মিরপুর ডিওএইচএস এলাকা থে‌কে গ্রেপ্তার করা হয়। এই রাষ্ট্রবি‌রোধী ষড়যন্ত্রের ঘটনায় জাফরিনের কী ভূ‌মিকা ছি‌লো তা খতিয়ে দেখা হ‌চ্ছে ব‌লেও জানান তি‌নি। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৮ জন‌কে গ্রেপ্তার করা হ‌য়ে‌ছে। তা‌দের জিজ্ঞাসাবো‌দে নতুন নতুন তথ্য সাম‌নে আস‌ছে ব‌লেও জানান এ পু‌লিশ কর্মকর্তা। 
ঢাকার বসুন্ধরায় একটি কনভেনশন সেন্টারে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে গোপন বৈঠক করার অভিযোগে বুধবার সন্ধ্যায় সুমাইয়া জাফরিনকে হেফাজতে নেয় ডিবি পুলিশ।

গত ১০ জুলাই রাজধানীর ভাটারা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ৮ জুলাই বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার কেবি কনভেনশন সেন্টারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ একটি গোপন বৈঠকের আয়োজন করে। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলা এ বৈঠকে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মিলে প্রায় ৩০০-৪০০ জন অংশ নেন।

গত ১ আগস্ট আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, ১৭ জুলাই অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাকে উত্তরা এলাকা থেকে আটক করে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। পূর্ণ তদন্ত শেষ হওয়া সাপেক্ষে প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ওই সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর প্রচলিত আইন ও বিধি অনুযায়ী যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সঙ্গে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করা হচ্ছে।

ঢাকা/এমআর/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ