সচিবালয়ে প্রধান উপদেষ্টা, নজিরবিহীন নিরাপত্তা
Published: 7th, August 2025 GMT
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সকালে দ্বিতীয়বারের মতো সচিবালয়ে গেছেন। তার আগমনকে কেন্দ্র করে সচিবালয়ে নেওয়া হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে প্রেস ক্লাব-সংলগ্ন ৫ নম্বর গেট দিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নতুন এক নম্বর ভবনের পঞ্চম তলায় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করছেন ড.
সচিবালয়ের চারপাশে ও ভেতরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো হয়েছে গোটা এলাকা। শুধু ১ নম্বর গেট দিয়ে যানবাহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ওই গেটে সোয়াট টিম মোতায়েন থাকতে দেখা গেছে। পাশাপাশি বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও অবস্থান নিয়েছেন বিভিন্ন পয়েন্টে।
আরো পড়ুন:
শহীদ ও আহতদের স্মরণে সচিবালয়ে দোয়া
বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়াই এখন সময়ের দাবি: সেতু সচিব
সকাল থেকে সচিবালয়ে স্টিকারবিহীন কোনো গাড়িকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এমনকি সাংবাদিকরাও সকাল সোয়া ১১টা পর্যন্ত প্রবেশের অনুমতি পাননি। ১ নম্বর ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া অন্য কেউ আশপাশে যেতেও পারেননি।
নতুন ১ নম্বর ভবনের সামনে বসানো হয়েছে আর্চওয়ে ও চেকপোস্ট। ভবনজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে।
এর আগে গত বছরের ২০ নভেম্বর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস প্রথমবার সচিবালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে যোগ দেন। তখন তিনি ৬ নম্বর ভবনের ১৩ তলায় মন্ত্রিসভা কক্ষে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। এবারের বৈঠকটি নতুন নির্মিত ভবনে হওয়ায় একে নতুন দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকগুলো রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ‘যমুনা’য় হয়ে আসছিল। পরে প্রধানমন্ত্রীর পুরনো কার্যালয় সংস্কার করে সেটিকে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টা সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠকে মিলিত হতে পারেন বলে জানা গেছে। সেখানে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত কিছু দিকনির্দেশনা দেওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
ঢাকা/এএএম/রফিক
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলিম সভ্যতায় রসায়নের সোনালি যুগ
গোলাপজলের মিষ্টি সুবাস থেকে শুরু করে কেরোসিনের জ্বালানি শক্তি—মুসলিম সভ্যতার রসায়নবিদরা একটি সমৃদ্ধ রসায়নের জগত উপহার দিয়েছেন। নবম শতাব্দী থেকে তারা পাতন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জীবনকে আরও সুন্দর ও কার্যকর করেছেন। তাদের আবিষ্কার আধুনিক রসায়নের ভিত্তি স্থাপন করেছে, যা আজও আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হয়।
এই নিবন্ধে জাবির ইবন হাইয়ান, আল-রাজি ও আল-কিন্দির মতো পথপ্রদর্শকদের হাত ধরে মুসলিম সভ্যতার রসায়নের সোনালি যুগের সন্ধান করা হয়েছে।
পাতনের প্রথম ফল ছিল গোলাপজল, যা ছিল খাবার, পানীয়, সুগন্ধি ও প্রসাধনীতে অপরিহার্য। আল-কিন্দি সুগন্ধির রসায়ন বিষয়ে একটি গ্রন্থ লিখেছিলেন, যাতে ছিল ১০৭টি ভিন্ন সুগন্ধির রেসিপি।পাতন প্রক্রিয়া: রসায়নের হৃৎপিণ্ডনবম শতকের মাঝামাঝি মুসলিম রসায়নবিদরা স্ফটিকায়ন, জারণ, বাষ্পীভবন, পরিশোধন ও ফিল্টারেশনের মতো প্রক্রিয়া সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। (১০০১ ইনভেনশনস: দি এন্ডিউরিং লিগ্যাসি অব মুসলিম সিভিলাইজেশন, ৪র্থ সংস্করণ, পৃ. ৯০)
তাদের পরীক্ষাকে নির্ভুল করতে তারা সূক্ষ্ম দাঁড়িপাল্লা আবিষ্কার করেন, যা রাসায়নিক নমুনা ওজনের জন্য ব্যবহৃত হতো। এই পরীক্ষাগুলোর পাশাপাশি তারা নতুন তাত্ত্বিক ধারণা ও রাসায়নিক ধারণা প্রবর্তন করেন, যার কিছু কিছু টিকে ছিল শতাব্দীর পর শতাব্দী। পাতন প্রক্রিয়া ছিল তাদের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান, যা তরল পদার্থকে ফুটিয়ে তার বিশুদ্ধ উপাদান আলাদা করার একটি শিল্প ছিল।
পাতনের প্রথম ফল ছিল গোলাপজল, যা ছিল খাবার, পানীয়, সুগন্ধি ও প্রসাধনীতে অপরিহার্য। আল-কিন্দি সুগন্ধির রসায়ন বিষয়ে একটি গ্রন্থ লিখেছিলেন, যাতে ছিল ১০৭টি ভিন্ন সুগন্ধির রেসিপি। (১০০১ ইনভেনশনস: দি এন্ডিউরিং লিগ্যাসি অব মুসলিম সিভিলাইজেশন, ৪র্থ সংস্করণ, পৃ. ৯১)
এই প্রক্রিয়া আধুনিক সুগন্ধি শিল্পের ভিত্তি স্থাপন করেছে।
আরও পড়ুনমুসলিম সমাজকে বিজ্ঞানমুখী করার উপায়০২ আগস্ট ২০২৫জাবির ইবন হাইয়ান: রসায়নের পথিকৃৎজাবির ইবন হাইয়ান (৭২২-৮১৫), পশ্চিমে গেবার নামে পরিচিত, ছিলেন রসায়নের জনক। কুফায় একজন ওষুধ ব্যবসায়ীর পুত্র হিসেবে তিনি পরিশোধন, স্ফটিকায়ন, পাতন, জারণ ও ফিল্টারেশনের মতো প্রক্রিয়াগুলো উন্নত করেন। (আর. আরনালদেজ-এল. ম্যাসিগনন, ইন অ্যানসিয়েন্ট অ্যান্ড মেডিয়েভাল সায়েন্স, লন্ডন: থেমস অ্যান্ড হাডসন: ১৯৬৩, পৃ. ৪১৩)
তিনি এমন কাগজ তৈরির চেষ্টা করেছিলেন যা পুড়ত না এবং এমন কালি যা অন্ধকারে পড়া যায়।তিনি অ্যালেম্বিক স্টিল ব্যবহার করে পাতন প্রক্রিয়া পরিচালনা করতেন, যা তরলকে ফুটিয়ে বিশুদ্ধ উপাদান সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত হতো। তিনি এমন কাগজ তৈরির চেষ্টা করেছিলেন যা পুড়ত না এবং এমন কালি যা অন্ধকারে পড়া যায়।
জাবির পদার্থের শ্রেণিবিভাগ ও রাসায়নিক জ্ঞান সংগঠনের নতুন পদ্ধতি প্রবর্তন করেন। তাঁর রচিত গ্রন্থগুলো পরবর্তী শতাব্দীতে ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত হয় এবং ১৭শ শতাব্দী পর্যন্ত পুনঃপ্রকাশিত হয়। (১০০১ ইনভেনশনস: দি এন্ডিউরিং লিগ্যাসি অব মুসলিম সিভিলাইজেশন, ৪র্থ সংস্করণ, পৃ. ৯৩)
তাঁর কাজ আধুনিক রসায়নের ভিত্তি স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
মদ পাতন করে বিশুদ্ধ অ্যালকোহল তৈরি