অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সকালে দ্বিতীয়বারের মতো সচিবালয়ে গেছেন। তার আগমনকে কেন্দ্র করে সচিবালয়ে নেওয়া হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে প্রেস ক্লাব-সংলগ্ন ৫ নম্বর গেট দিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নতুন এক নম্বর ভবনের পঞ্চম তলায় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করছেন ড.

ইউনূস। উপস্থিত আছেন সরকারের অন্য উপদেষ্টারা।

সচিবালয়ের চারপাশে ও ভেতরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো হয়েছে গোটা এলাকা। শুধু ১ নম্বর গেট দিয়ে যানবাহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ওই গেটে সোয়াট টিম মোতায়েন থাকতে দেখা গেছে। পাশাপাশি বিজিবি, র‍্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও অবস্থান নিয়েছেন বিভিন্ন পয়েন্টে।

আরো পড়ুন:

শহীদ ও আহতদের স্মরণে সচিবালয়ে দোয়া

বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়াই এখন সময়ের দাবি: সেতু সচিব

সকাল থেকে সচিবালয়ে স্টিকারবিহীন কোনো গাড়িকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এমনকি সাংবাদিকরাও সকাল সোয়া ১১টা পর্যন্ত প্রবেশের অনুমতি পাননি। ১ নম্বর ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া অন্য কেউ আশপাশে যেতেও পারেননি।

নতুন ১ নম্বর ভবনের সামনে বসানো হয়েছে আর্চওয়ে ও চেকপোস্ট। ভবনজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে।

এর আগে গত বছরের ২০ নভেম্বর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস প্রথমবার সচিবালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে যোগ দেন। তখন তিনি ৬ নম্বর ভবনের ১৩ তলায় মন্ত্রিসভা কক্ষে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। এবারের বৈঠকটি নতুন নির্মিত ভবনে হওয়ায় একে নতুন দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকগুলো রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ‘যমুনা’য় হয়ে আসছিল। পরে প্রধানমন্ত্রীর পুরনো কার্যালয় সংস্কার করে সেটিকে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টা সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠকে মিলিত হতে পারেন বলে জানা গেছে। সেখানে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত কিছু দিকনির্দেশনা দেওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

ঢাকা/এএএম/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

বিবাহে ‘মোহরে ফাতেমি‘ কী?

“মোহরে ফাতেমি” মুসলিম বিবাহে একটি বহুল আলোচিত ধারণা, যাকে মূলত নারীর অধিকার, সম্মান ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতীক বলা যায়।

‘মোহর’ বা ‘মাহর’ শব্দটি আরবি “মাহর” থেকে এসেছে, যার অর্থ, স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে নির্ধারিত অর্থ বা সম্পদ, যা বিবাহের অধিকার হিসেবে বাধ্যতামূলকভাবে প্রদান করতে হয়।

‘মোহরে ফাতেমি’ বলতে বোঝানো হয় সেই পরিমাণ মাহর, যা নবীজি (স.) তাঁর কন্যা ফাতিমা (রা.)-এর বিয়েতে নির্ধারণ করেছিলেন। এটি মুসলিম ইতিহাসে আদর্শ মাহরের মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয়।

মোহরে ফাতেমির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কন্যা ফাতিমা (রা.)-এর বিয়ে হয়েছিল আলী ইবনে আবি তালিব (রা.)-এর সঙ্গে। এই বিয়েতে নবীজি (স.) যে পরিমাণ মোহর নির্ধারণ করেছিলেন, সেটিই পরে “মোহরে ফাতেমি” নামে পরিচিত হয়।

ইমাম বায়হাকি ও ইবনে মাজাহ-এর বর্ণনা অনুযায়ী, মোহরে ফাতেমি ছিল ৫০০ দিরহাম রূপা (প্রায় ১.৫ কেজি রূপা)। (সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৮৮৭; আল-বায়হাকি, আস-সুনান আল-কুবরা, খণ্ড ৭, পৃ. ২৩৩)

আরও পড়ুনমুসলিম বিবাহে ‘কুফু’ অর্থ কী২৩ অক্টোবর ২০২৫

মোহরের গুরুত্ব

কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “তোমরা নারীদের মাহর (মোহরানা) স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রদান করো।” (সুরা আন-নিসা, আয়াত: ৪)

অর্থাৎ, এটি কোনো উপহার নয়, বরং স্ত্রীর ন্যায্য অধিকার।

নবীজি (স.) বলেছেন, “সবচেয়ে উত্তম বিবাহ হলো সেই বিবাহ, যার মোহর সবচেয়ে সহজ।” (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৮৮৭)

এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, ইসলাম চায় না মোহর এমন ভারী হোক যাতে বিবাহ কঠিন হয়ে যায়। বরং, সহজ, পরিমিত ও সম্মানজনক পরিমাণ হওয়াই সুন্নাহ।

মোহরে ফাতেমির প্রতীকী অর্থ

“মোহরে ফাতেমি” কেবল একটি অর্থমূল্য নয়, বরং এটি মুসলিম সমাজে নারীর মর্যাদা ও আত্মসম্মানের প্রতীক। এর মাধ্যমে নবীজি (স.) মুসলিম সমাজকে একটি বার্তা দিয়েছেন যে, নারী কোনো বোঝা নয়, বরং মর্যাদাপূর্ণ একজন মানুষ, যার নিজের অধিকার আল্লাহ নির্ধারণ করেছেন।

একইসাথে এটি ইসলামে সামাজিক ভারসাম্যের একটি নিদর্শন—যেখানে মোহর এমন নির্ধারণ করা হয়, যা গরিব ও ধনীর উভয়ের জন্যই বাস্তবসম্মত।

মোহরে ফাতেমির আর্থিক মান

ইতিহাসবিদ ইমাম নববী ও ইবনে হাজার আসকালানি উল্লেখ করেছেন, এক দিরহাম প্রায় ২.৯৭৫ গ্রাম রূপা সমান।

তাহলে ৫০০ দিরহাম × ২.৯৭৫ গ্রাম = প্রায় ১৪৮৭.৫ গ্রাম (১.৫ কেজি রূপা)।

বর্তমান সময়ের হিসাবে, বাংলাদেশে যদি প্রতি ভরি (প্রায় ১১.৬৬ গ্রাম) রূপার দাম ধরা হয় প্রায় ১৫০০ টাকা, তাহলে মোহরে ফাতেমির আর্থিক মান দাঁড়ায় প্রায় ১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা। বাজারদর অনুসারে পরিবর্তনশীল।

এই হিসাব শুধুমাত্র একটি রেফারেন্স—মূল উদ্দেশ্য হলো, মাহর যেন পরিমিত, বাস্তবসম্মত ও সম্মানজনক হয়।

আরও পড়ুননারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে কী বলে ইসলাম২৮ আগস্ট ২০২৫

মোহরে ফাতেমি কি বাধ্যতামূলক?

না, মোহরে ফাতেমি বাধ্যতামূলক নয়। ইসলামি শরিয়তে প্রতিটি বিবাহের মোহর দুই পক্ষের আর্থিক ও সামাজিক অবস্থার ওপর নির্ভরশীল।

তবে নবীজি (স.)-এর কন্যার মোহরকে আদর্শ ধরা হয়, কারণ এটি বিনয়, সরলতা ও ন্যায়ের প্রতীক। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন, “মোহরে ফাতেমি একটি সুন্নাহস্বরূপ নির্ধারণ। চাইলে এর কম বা বেশি নির্ধারণ করা বৈধ।” (আল-ফাতাওয়া আল-হিন্দিয়া, খণ্ড ১, পৃ. ২৯৪, দারুল ইহইয়া, কায়রো সংস্করণ)

অতএব, কেউ মোহরে ফাতেমি পরিমাণ নির্ধারণ করলে তা মুস্তাহাব (পছন্দনীয়), কিন্তু তার চেয়ে কম বা বেশি করলেও বিবাহ বৈধ।

আধুনিক প্রেক্ষাপটে মোহরে ফাতেমির তাৎপর্য

বর্তমান সমাজে অনেকেই মোহরকে “আনুষ্ঠানিকতা” মনে করেন, আবার কেউ কেউ মোহরকে “চাপ বা মূল্য” হিসেবে বিবেচনা করেন—যা ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ ভুল।

মোহর নারীর আত্মসম্মানের প্রতীক, পুরুষের দায়িত্ববোধের প্রকাশ এবং বিবাহ বন্ধনের আর্থিক নিশ্চয়তা।

একজন আধুনিক মুসলিম নারী হিসেবে ফাতিমা (রা.) ছিলেন নবীজির গৃহের মর্যাদার কেন্দ্রবিন্দু। তাঁর নামেই নির্ধারিত এই মোহর আজও মুসলিম সমাজে “সুন্নাহ মোহর” হিসেবে সম্মানিত।

সমাজে বিবাহ সহজ করা ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার দৃষ্টিকোণ থেকে, মোহরে ফাতেমি আমাদের সামনে এক সমতা ও সংযমের মডেল হিসেবে দাঁড়ায়।

অতএব, মুসলিম সমাজের উচিত মোহরকে বোঝা নয়, বরং ভালোবাসা, দায়িত্ব ও সম্মানের প্রতিশ্রুতি হিসেবে দেখা।

আরও পড়ুনবিবাহের সুন্নত 'ওয়ালিমা'১২ জানুয়ারি ২০১৮

সম্পর্কিত নিবন্ধ