বগুড়া-রাজশাহীতে এনসিএল টি-টোয়েন্টি
Published: 7th, August 2025 GMT
জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে গত বছর জাতীয় ক্রিকেট লিগ টি-টোয়েন্টি আসর হয়েছিল। সিলেটের দুই মাঠে খেলেছিল লিগের আট দল। স্থানীয় ক্রিকেটারদের এই আয়োজন ব্যাপক সাড়া পেয়েছিল। এবারও একই প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে যাচ্ছে বিসিবি। তবে শুধু সিলেটে নয়, আয়োজন ছড়িয়ে দিতে যাচ্ছে বগুড়া ও রাজশাহীতে।
বিসিবি প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট করতে যাচ্ছে দুই ভেনু্যতে। অংশগ্রহণকারী আট দল, স্পন্সর প্রতিষ্ঠান, ব্রডকাস্ট এবং স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান নিয়ে বৃহস্পতিবার মিরপুরে বৈঠক করেছেন টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান। বৈঠকে এনসিএল টি-টোয়েন্টির ভেনু্য চূড়ান্ত হয়েছে।
আকরাম খান গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘‘এটা (ভেনু্য) নিয়ে লম্বা আলোচনা হয়েছে আমাদের। ভেনু্য পাওয়াটা আসলেই কঠিন ছিল। একই জায়গায় দুইটি মাঠ দরকার। অনেক চিন্তাভাবনা করে বগুড়া, রাজশাহী ও সিলেটে আমরা খেলা চালাব। এটা সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’
আরো পড়ুন:
এনসিএল টি-টোয়েন্টি দিয়ে ফিরবেন তামিম, থাকবেন মুশফিকুর-মাহমুদউল্লাহও
ওয়ানডে লড়াইয়ে প্রস্তুত ক্যারিবীয়রা, পাকিস্তানের বিপক্ষে দল ঘোষণা
ভেন্যু হিসেবে বগুড়া ও রাজশাহীকে বেছে নেয়ার ব্যাখ্যা দিয়ে আকরাম বলেন, ‘‘ওদের তো বিপিএল নিয়ে অনেক চাহিদা আছে, ওরা সবসময় বলে। আমরা চেষ্টা করেছি ক্রিকেটটা যেন সারা বাংলাদেশে হয়, ভালো জায়গায় হয়। বগুড়ায় কিন্তু অনেকগুলো ম্যাচ হয়েছে, সেটা আমাদের মাথায় আছে। তারপর রাজশাহীতে প্রচুর ক্রিকেট সমর্থক আছে। রাজশাহী থেকে ভালো ভালো খেলোয়াড়ও আসছে।’’
গ্রুপ পর্বের ম্যাচগুলো দিনের বেলা হলেও দিবা-রাত্রির সেমিফাইনাল ও ফাইনাল আয়োজন করতে চায় বিসিবি, ‘‘সিলেটে আমাদের দিবা-রাত্রির একটা পরিকল্পনা আছে। সেমিফাইনাল ও ফাইনাল হয়ত আমরা দিবা-রাত্রির করব, সেটার জন্যই সিলেটে আমরা পরিকল্পনা করেছি।’’
ঢাকা/ইয়াসিন
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বিবাহে ‘মোহরে ফাতেমি‘ কী?
“মোহরে ফাতেমি” মুসলিম বিবাহে একটি বহুল আলোচিত ধারণা, যাকে মূলত নারীর অধিকার, সম্মান ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতীক বলা যায়।
‘মোহর’ বা ‘মাহর’ শব্দটি আরবি “মাহর” থেকে এসেছে, যার অর্থ, স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে নির্ধারিত অর্থ বা সম্পদ, যা বিবাহের অধিকার হিসেবে বাধ্যতামূলকভাবে প্রদান করতে হয়।
‘মোহরে ফাতেমি’ বলতে বোঝানো হয় সেই পরিমাণ মাহর, যা নবীজি (স.) তাঁর কন্যা ফাতিমা (রা.)-এর বিয়েতে নির্ধারণ করেছিলেন। এটি মুসলিম ইতিহাসে আদর্শ মাহরের মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয়।
মোহরে ফাতেমির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কন্যা ফাতিমা (রা.)-এর বিয়ে হয়েছিল আলী ইবনে আবি তালিব (রা.)-এর সঙ্গে। এই বিয়েতে নবীজি (স.) যে পরিমাণ মোহর নির্ধারণ করেছিলেন, সেটিই পরে “মোহরে ফাতেমি” নামে পরিচিত হয়।
ইমাম বায়হাকি ও ইবনে মাজাহ-এর বর্ণনা অনুযায়ী, মোহরে ফাতেমি ছিল ৫০০ দিরহাম রূপা (প্রায় ১.৫ কেজি রূপা)। (সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৮৮৭; আল-বায়হাকি, আস-সুনান আল-কুবরা, খণ্ড ৭, পৃ. ২৩৩)
আরও পড়ুনমুসলিম বিবাহে ‘কুফু’ অর্থ কী২৩ অক্টোবর ২০২৫মোহরের গুরুত্ব
কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “তোমরা নারীদের মাহর (মোহরানা) স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রদান করো।” (সুরা আন-নিসা, আয়াত: ৪)
অর্থাৎ, এটি কোনো উপহার নয়, বরং স্ত্রীর ন্যায্য অধিকার।
নবীজি (স.) বলেছেন, “সবচেয়ে উত্তম বিবাহ হলো সেই বিবাহ, যার মোহর সবচেয়ে সহজ।” (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৮৮৭)
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, ইসলাম চায় না মোহর এমন ভারী হোক যাতে বিবাহ কঠিন হয়ে যায়। বরং, সহজ, পরিমিত ও সম্মানজনক পরিমাণ হওয়াই সুন্নাহ।
মোহরে ফাতেমির প্রতীকী অর্থ
“মোহরে ফাতেমি” কেবল একটি অর্থমূল্য নয়, বরং এটি মুসলিম সমাজে নারীর মর্যাদা ও আত্মসম্মানের প্রতীক। এর মাধ্যমে নবীজি (স.) মুসলিম সমাজকে একটি বার্তা দিয়েছেন যে, নারী কোনো বোঝা নয়, বরং মর্যাদাপূর্ণ একজন মানুষ, যার নিজের অধিকার আল্লাহ নির্ধারণ করেছেন।
একইসাথে এটি ইসলামে সামাজিক ভারসাম্যের একটি নিদর্শন—যেখানে মোহর এমন নির্ধারণ করা হয়, যা গরিব ও ধনীর উভয়ের জন্যই বাস্তবসম্মত।
মোহরে ফাতেমির আর্থিক মান
ইতিহাসবিদ ইমাম নববী ও ইবনে হাজার আসকালানি উল্লেখ করেছেন, এক দিরহাম প্রায় ২.৯৭৫ গ্রাম রূপা সমান।
তাহলে ৫০০ দিরহাম × ২.৯৭৫ গ্রাম = প্রায় ১৪৮৭.৫ গ্রাম (১.৫ কেজি রূপা)।
বর্তমান সময়ের হিসাবে, বাংলাদেশে যদি প্রতি ভরি (প্রায় ১১.৬৬ গ্রাম) রূপার দাম ধরা হয় প্রায় ১৫০০ টাকা, তাহলে মোহরে ফাতেমির আর্থিক মান দাঁড়ায় প্রায় ১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা। বাজারদর অনুসারে পরিবর্তনশীল।
এই হিসাব শুধুমাত্র একটি রেফারেন্স—মূল উদ্দেশ্য হলো, মাহর যেন পরিমিত, বাস্তবসম্মত ও সম্মানজনক হয়।
আরও পড়ুননারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে কী বলে ইসলাম২৮ আগস্ট ২০২৫মোহরে ফাতেমি কি বাধ্যতামূলক?
না, মোহরে ফাতেমি বাধ্যতামূলক নয়। ইসলামি শরিয়তে প্রতিটি বিবাহের মোহর দুই পক্ষের আর্থিক ও সামাজিক অবস্থার ওপর নির্ভরশীল।
তবে নবীজি (স.)-এর কন্যার মোহরকে আদর্শ ধরা হয়, কারণ এটি বিনয়, সরলতা ও ন্যায়ের প্রতীক। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন, “মোহরে ফাতেমি একটি সুন্নাহস্বরূপ নির্ধারণ। চাইলে এর কম বা বেশি নির্ধারণ করা বৈধ।” (আল-ফাতাওয়া আল-হিন্দিয়া, খণ্ড ১, পৃ. ২৯৪, দারুল ইহইয়া, কায়রো সংস্করণ)
অতএব, কেউ মোহরে ফাতেমি পরিমাণ নির্ধারণ করলে তা মুস্তাহাব (পছন্দনীয়), কিন্তু তার চেয়ে কম বা বেশি করলেও বিবাহ বৈধ।
আধুনিক প্রেক্ষাপটে মোহরে ফাতেমির তাৎপর্য
বর্তমান সমাজে অনেকেই মোহরকে “আনুষ্ঠানিকতা” মনে করেন, আবার কেউ কেউ মোহরকে “চাপ বা মূল্য” হিসেবে বিবেচনা করেন—যা ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ ভুল।
মোহর নারীর আত্মসম্মানের প্রতীক, পুরুষের দায়িত্ববোধের প্রকাশ এবং বিবাহ বন্ধনের আর্থিক নিশ্চয়তা।
একজন আধুনিক মুসলিম নারী হিসেবে ফাতিমা (রা.) ছিলেন নবীজির গৃহের মর্যাদার কেন্দ্রবিন্দু। তাঁর নামেই নির্ধারিত এই মোহর আজও মুসলিম সমাজে “সুন্নাহ মোহর” হিসেবে সম্মানিত।
সমাজে বিবাহ সহজ করা ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার দৃষ্টিকোণ থেকে, মোহরে ফাতেমি আমাদের সামনে এক সমতা ও সংযমের মডেল হিসেবে দাঁড়ায়।
অতএব, মুসলিম সমাজের উচিত মোহরকে বোঝা নয়, বরং ভালোবাসা, দায়িত্ব ও সম্মানের প্রতিশ্রুতি হিসেবে দেখা।
আরও পড়ুনবিবাহের সুন্নত 'ওয়ালিমা'১২ জানুয়ারি ২০১৮