প্রায় ১০ মাস পর দলীয় ব্যানারে রাজনৈতিক কর্মসূচির ওপর নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করেছে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এখন থেকে ক্যাম্পাসে ছাত্রসংগঠনগুলোকে রাজনৈতিক কর্মসূচি আয়োজন করতে হলে প্রক্টরের অনুমতি নিতে হবে।

আজ সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সৈয়দ ছলিম মো. আবদুল কাদির স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত বছরের ৬ নভেম্বর ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়ে ১৮ সেপ্টেম্বর প্রক্টরিয়াল কমিটির সঙ্গে সর্বদলীয় ছাত্রসংগঠনের মতবিনিময় সভা হয়। সেখানে সর্বসম্মত সুপারিশের ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষ নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করেছে। শিক্ষার্থীদের কল্যাণমূলক রাজনৈতিক কার্যক্রম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের অনুমোদনক্রমে পরিচালনা করা যাবে। তবে একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন ও আবাসিক হলে সভা-সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ থাকবে।

আরও পড়ুনশাকসু নির্বাচন : ক্যাম্পাসে রাজনীতি চালুর পর ‘যৌক্তিক সময়’ চায় ছাত্রদল, পরে নির্বাচন২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (শাকসু) নির্বাচনের আগে প্যানেল গঠন ও পরিচিতিমূলক অনুষ্ঠানগুলো হল প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে আয়োজন করা যাবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, আগামী নভেম্বরের প্রথমার্ধে শাকসু নির্বাচনের পরিকল্পনা করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত

এছাড়াও পড়ুন:

নদী সুরক্ষা প্রকল্প কেন অগ্রাধিকারভিত্তিক হয় না 

১৫ বছরের নদী সুরক্ষা কাজের অভিজ্ঞতা থেকে জেনেছি, নদী সুরক্ষায় বাজেট বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে কখনো যুক্তির আশ্রয় নেওয়া হয় না। অতীতে যে এলাকার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-উপমন্ত্রী ছিলেন, সেই এলাকায় প্রচুর প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। কখনো কখনো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবও ব্যক্তিগত পছন্দে প্রকল্প অনুমোদন করেছেন। যেহেতু প্রকল্প অনুমোদন প্রক্রিয়ায় আমাদের কিছু করার থাকে না, তাই দর্শকের মতো দেখে যাচ্ছি।

নদীবান্ধব তথা দেশবান্ধব প্রকল্প গ্রহণ করা হলে এত দিনে নদীর সব বড় বড় সমস্যা সমাধান হতো। বিদ্যমান বাস্তবতায় হাজার হাজার কোটি টাকা অপচয় হয়।

অগ্রাধিকারভিত্তিক নদী সুরক্ষার কাজ অনেক আগে শুরু হওয়া প্রয়োজন ছিল। ক্ষমতাকেন্দ্রিক কাজ অনুমোদন হওয়ার কারণে যেখানে কম প্রয়োজন, সেখানে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। যেখানে কাজ করা সবচেয়ে জরুরি, সেখানে এখনো কাজই হয়নি।

ছোট উদাহরণ দেওয়া যাক। কয়েক দশক ধরে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলায় ব্রহ্মপুত্রের বাঁ তীরে সীমাহীন ভাঙন চলছে। সেখানে ভাঙন বন্ধে কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি।

কয়েক বছর আগে ব্রহ্মপুত্র-যমুনায় অনেক বড় একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। সেই প্রকল্পে কোনো ফল পাওয়া যায়নি। নদী খননের সেই প্রকল্পের পরিবর্তে যদি রৌমারী-রাজীবপুরের মানুষের আবাসন-জমি সুরক্ষার কাজ করা যেত, এতে মানুষ বেশি উপকৃত হতো। তবে এ বছরই প্রথম জরুরিভিত্তিক বেশি কাজ হয়েছে। এখানে ভাঙন বন্ধে স্থায়ী সমাধান করতে হবে। এই ভাঙনে হাজার হাজার মানুষ উদ্বাস্তু হচ্ছে।

বাংলাদেশে ভারত থেকে যে পানি আসে, তার প্রায় তিন-চতুর্থাংশ আসে কুড়িগ্রাম দিয়ে। বাংলাদেশে এই জেলার যত শতাংশ হারে এলাকাজুড়ে নদী, দেশের আর কোনো জেলায় এত শতাংশজুড়ে নদী নেই। ২০২১ সালের পর থেকে রংপুর বিভাগে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো প্রকল্প গ্রহণ করেনি। এ সময়ে অসংখ্য প্রকল্প নেওয়া হলেও রংপুর বিভাগের জন্য নেওয়া হয়নি। যে প্রকল্পগুলো গ্রহণ করা হয়েছিল, তা–ও খুব পরিকল্পিত ছিল না। ২০২১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত একটি জোনে একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়নি, যা চরম বৈষম্যমূলক।

খবর নিয়ে জেনেছি, অনেকগুলো প্রকল্প সমীক্ষা হওয়ার পর অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে, সেগুলো বছরের পর বছর ধরে ফেলে রাখা হয়েছে। একনেকে যাওয়ার আগে প্রকল্প প্রস্তাবনাগুলোকে ‘সবুজপাতা’য় নিতে হয়। রংপুর অঞ্চলের প্রস্তাবগুলো সবুজপাতা পর্যন্ত পৌঁছায় না। জানতে পেরেছি, এ বছর কিছু প্রকল্প অনুমোদনের জন্য সবুজপাতায় তোলা হবে।

মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যন্ত বহু স্তর পার হয়ে এই প্রকল্পগুলো চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করে। উপজেলা, জেলা এবং বিভাগীয় নদী রক্ষা কমিটিতে যদি অগ্রাধিকার ঠিক করে দেওয়া যেত, এতেও কিছুটা কাজ হতো। যদি নদী রক্ষা কমিটিতে প্রকল্প গ্রহণকারী দপ্তরের পক্ষে কেউ সভায় প্রকল্পগুলো উপস্থাপন করতেন, তাহলে সংশ্লিষ্ট নদী রক্ষা কমিটি এসব বিষয়ে মতামত দিতে পারত। এতে মাঠপর্যায়ে অগ্রাধিকার ঠিক করা যেত।

এ কাজ করা গেলে আরও একটি বড় সমস্যার সমাধান করা যেত। একই নদীর বিভিন্ন অংশে পানি উন্নয়ন বোর্ড, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কাজ করে। একেক দপ্তরের একেক রকম ডিজাইনে কাজ হয়। ফলে এখানে সমন্বয়হীনতা দেখা দেয়। সেই সমন্বয়হীনতাও দূর করা সম্ভব। প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প নির্বাচন করতে পারে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে নদী সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন, এমন ব্যক্তিদের মতামত নেওয়ার প্রয়োজন আছে।

দেশের উন্নয়নে যেকোনো প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি অবলম্বন করা প্রয়োজন। তাহলে কেউ এ কথা বলতে পারবে না চট্টগ্রাম বিভাগে অনেক উপদেষ্টা আছেন, তাই সেখানে উন্নয়নের জোয়ার; রাজশাহী-রংপুর বিভাগে কোনো উপদেষ্টা নেই, তাই এখানকার জন্য কোনো প্রকল্প নেই। গত কয়েকটি একনেক সভায় প্রকল্প গ্রহণের চিত্র দেখলেও সেটাই প্রতীয়মান হয়।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান অগ্রাধিকারভিত্তিক রংপুরের কিছু কাজের চেষ্টা করছেন। ২০১৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিস্তা নদী সুরক্ষায় কোনো টাকাই আগাম বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। উপদেষ্টা নিজ চেষ্টায় ভাঙন রোধে গত বছর ২৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। তিস্তা নদীর ইতিহাসে এটি মাইলফলক। তিনি তিস্তা মহাপরিকল্পনা বিজ্ঞানসম্মতভাবে বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছেন। ধরলা নদী সুরক্ষার একটি প্রকল্প সবুজপাতায় শিগগিরই উঠবে বলে মনে করি। ব্রহ্মপুত্রের প্রস্তাবিত এলাকাসহ এ অঞ্চলে আরও যেসব প্রকল্প অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত, সেগুলোরও বাস্তবায়ন হবে বলে মনে করি।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় অনেকগুলো অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাতিল করেছে। নদী–সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাতিল করেনি।

আমরা মনে করি, অন্তর্বর্তী সরকার বর্তমানে নদীর প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারে। জেলা, বিভাগ এবং কেন্দ্রীয়ভাবে নদীবিষয়ক সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের সব প্রকল্পের পর্যালোচনা থাকবে। এতে নদী সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন, এমন ব্যক্তিদের যুক্ত করতে হবে।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় বর্তমানে অনেক কাজে নদী কর্মীদের যুক্ত করছে। এতে দুটি কাজ হবে। এক হচ্ছে অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প গ্রহণ। এতে দেশবাসী অনেক উপকৃত হবে। আরেকটি হলো ক্ষমতাধর হলেই নিজ এলাকায় প্রকল্প গ্রহণ করার সুযোগ থাকবে না। আমরা চাই রাষ্ট্রের প্রতিটি টাকা অগ্রাধিকারভিত্তিক জনস্বার্থে ব্যয় হোক।

তুহিন ওয়াদুদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক এবং নদী রক্ষাবিষয়ক সংগঠন রিভারাইন পিপলের পরিচালক।

[email protected] 

সম্পর্কিত নিবন্ধ