নির্ধারিত সময় অর্থাৎ ২৫ সেপ্টেম্বরেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন চায় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবির।

সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টায় রাকসুর কোষাধ্যক্ষ কার্যালয়ের সামনে এ কথা বলেন রাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ।

আরো পড়ুন:

রাকসু ভোট নিয়ে উপাচার্য: পর্দার আড়ালে অনেক মেকানিজম হচ্ছে

রাকসু সম্পন্ন করতে সক্রিয় অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত শিক্ষক পরিষদের

তিনি বলেন, “দীর্ঘ ৩৫ বছর পর রাকসু নির্বাচন হচ্ছে। প্রার্থী- শিক্ষার্থী সবারই অনেক সময় ব্যয় হয়েছে এ নির্বাচনের পিছনে। অনেক প্রার্থী পরীক্ষার পাশাপাশি নির্বাচনি প্রচারণা চালিয়েছে। রাকসু নির্বাচনের যে আমেজ তৈরি হয়েছে, যথাসময়ে নির্বাচন না হলে সেটা আর থাকবে না। তাই আমাদের বোল্ড স্টেটমেন্ট হচ্ছে, ২৫ তারিখের নির্বাচন ২৫ তারিখেই চাই। আমরা ছাত্রশিবিরসহ অনেক প্যানেলের প্রার্থীরা চায়, যথাসময়ে নির্বাচন হোক। তা না হলে সবাই এটার প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলবে।”

২৫ তারিখে নির্বাচন হলে কেমন অংশগ্রহণমূলক হবে- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আমরা চাই নির্বাচনে ভোট কাস্টিং যাতে সর্বোচ্চ পর্যায়ে হয়। শিক্ষার্থীদের ধরে রাখার দায়িত্ব প্রশাসনের এবং প্রশাসন যেখানে নিশ্চিত করতে পারছে না ২৫ তারিখ নির্বাচন হবে, সেজন্য শিক্ষার্থীরা দোলাচলে পড়ে বাসায় চলে যাচ্ছে। আমি মনে করি, প্রশাসন যদি একটা বোল্ড স্টেটমেন্ট দেয় যে, ২৫ তারিখেই রাকসু হবে, তাহলে শিক্ষার্থীরা সেক্রিফাইস করে ক্যাম্পাসে থাকবে এবং নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে।”

এর আগে, রাবিতে কর্মরতদের সন্তানদের ভর্তির জন্য আগে থেকেই ৪ শতাংশ পোষ্য কোটা ছিল। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে চলতি বছরের ২ জানুয়ারি পোষ্য কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন রাবি উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব। এরপর থেকেই শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পোষ্য কোটাকে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা দাবি করে একের পর এক আন্দোলন শুরু করেন।

সর্বশেষ গত ১৭ সেপ্টেম্বর এক চিঠিতে ১৮ তারিখের মধ্যে দাবি আদায় না হলে ২১ সেপ্টেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পূর্ণদিবস কর্মবিরতির ঘোষণা দেন তারা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে জরুরি অ্যাকাডেমিক কমিটির সভা ডাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সভায় ১০ শর্তে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু এর বিরুদ্ধে আবার টানা আন্দোলনে নামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) মাঈন উদ্দিনসহ প্রশাসনে থাকা তিনজন কর্মকর্তা জুবেরী ভবনে শিক্ষার্থীদের হাতে লাঞ্ছিত হন। পরে জুবেরী ভবনে উপ-উপাচার্যসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক-কর্মকর্তাকে অবরুদ্ধ করে সেখানে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ করতে থাকেন। রাতে জুবেরী ভবনের সামনে থেকে অবরোধ উঠিয়ে নিয়ে শিক্ষার্থী উপাচার্যের বাসভবনের সামনে জড়ো হন। পরে গভীর রাতে হল থেকে বের হয়ে এসে ছাত্রীরাও তাদের সঙ্গে যোগ দেন। তারা মাঝরাত পর্যন্ত উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ করতে থাকেন।

পরে উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব মধ্যরাতে বাসার প্রধান ফটকের সামনে এসে ঘোষণা দেন, প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধায় ভর্তি আপাতত স্থগিত। এ নিয়ে রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হবে।

এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শনিবার রাতেই কর্মসূচি ঘোষণা করেন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। ঘোষণা অনুযায়ী রবিবার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেন তারা। এদিন তারা ঘোষণা দেন, প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধায় সন্তানদের ভর্তির সুযোগ না দিলে সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) থেকে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিতে যাচ্ছেন তারা। তবে ২৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য রাকসু নির্বাচন এ কর্মসূচির বাইরে থাকবে।

এ ঘোষণা পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি অব্যাহত আছে।

অন্যদিকে, সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ, রাকসু ফর র‍্যাডিকাল চেঞ্জ, সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ ও ইউনাইটেড ফর রাইটস প্যানেলের প্রার্থীরা দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মাকেটে সংবাদ সম্মেলন করে। সেখানে তারা পোষ্য কোটা ইস্যুতে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চলমান আন্দোলন কর্মসূচির মধ্যে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে পারে না দাবি করে নির্বাচনের তারিখ পেছানোর দাবি জানিয়েছেন।

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স প ট ম বর কর মকর ত উপ চ র য ২৫ ত র খ র স মন

এছাড়াও পড়ুন:

বিবাহে ‘মোহরে ফাতেমি‘ কী?

“মোহরে ফাতেমি” মুসলিম বিবাহে একটি বহুল আলোচিত ধারণা, যাকে মূলত নারীর অধিকার, সম্মান ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতীক বলা যায়।

‘মোহর’ বা ‘মাহর’ শব্দটি আরবি “মাহর” থেকে এসেছে, যার অর্থ, স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে নির্ধারিত অর্থ বা সম্পদ, যা বিবাহের অধিকার হিসেবে বাধ্যতামূলকভাবে প্রদান করতে হয়।

‘মোহরে ফাতেমি’ বলতে বোঝানো হয় সেই পরিমাণ মাহর, যা নবীজি (স.) তাঁর কন্যা ফাতিমা (রা.)-এর বিয়েতে নির্ধারণ করেছিলেন। এটি মুসলিম ইতিহাসে আদর্শ মাহরের মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয়।

মোহরে ফাতেমির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কন্যা ফাতিমা (রা.)-এর বিয়ে হয়েছিল আলী ইবনে আবি তালিব (রা.)-এর সঙ্গে। এই বিয়েতে নবীজি (স.) যে পরিমাণ মোহর নির্ধারণ করেছিলেন, সেটিই পরে “মোহরে ফাতেমি” নামে পরিচিত হয়।

ইমাম বায়হাকি ও ইবনে মাজাহ-এর বর্ণনা অনুযায়ী, মোহরে ফাতেমি ছিল ৫০০ দিরহাম রূপা (প্রায় ১.৫ কেজি রূপা)। (সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৮৮৭; আল-বায়হাকি, আস-সুনান আল-কুবরা, খণ্ড ৭, পৃ. ২৩৩)

আরও পড়ুনমুসলিম বিবাহে ‘কুফু’ অর্থ কী২৩ অক্টোবর ২০২৫

মোহরের গুরুত্ব

কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “তোমরা নারীদের মাহর (মোহরানা) স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রদান করো।” (সুরা আন-নিসা, আয়াত: ৪)

অর্থাৎ, এটি কোনো উপহার নয়, বরং স্ত্রীর ন্যায্য অধিকার।

নবীজি (স.) বলেছেন, “সবচেয়ে উত্তম বিবাহ হলো সেই বিবাহ, যার মোহর সবচেয়ে সহজ।” (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৮৮৭)

এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, ইসলাম চায় না মোহর এমন ভারী হোক যাতে বিবাহ কঠিন হয়ে যায়। বরং, সহজ, পরিমিত ও সম্মানজনক পরিমাণ হওয়াই সুন্নাহ।

মোহরে ফাতেমির প্রতীকী অর্থ

“মোহরে ফাতেমি” কেবল একটি অর্থমূল্য নয়, বরং এটি মুসলিম সমাজে নারীর মর্যাদা ও আত্মসম্মানের প্রতীক। এর মাধ্যমে নবীজি (স.) মুসলিম সমাজকে একটি বার্তা দিয়েছেন যে, নারী কোনো বোঝা নয়, বরং মর্যাদাপূর্ণ একজন মানুষ, যার নিজের অধিকার আল্লাহ নির্ধারণ করেছেন।

একইসাথে এটি ইসলামে সামাজিক ভারসাম্যের একটি নিদর্শন—যেখানে মোহর এমন নির্ধারণ করা হয়, যা গরিব ও ধনীর উভয়ের জন্যই বাস্তবসম্মত।

মোহরে ফাতেমির আর্থিক মান

ইতিহাসবিদ ইমাম নববী ও ইবনে হাজার আসকালানি উল্লেখ করেছেন, এক দিরহাম প্রায় ২.৯৭৫ গ্রাম রূপা সমান।

তাহলে ৫০০ দিরহাম × ২.৯৭৫ গ্রাম = প্রায় ১৪৮৭.৫ গ্রাম (১.৫ কেজি রূপা)।

বর্তমান সময়ের হিসাবে, বাংলাদেশে যদি প্রতি ভরি (প্রায় ১১.৬৬ গ্রাম) রূপার দাম ধরা হয় প্রায় ১৫০০ টাকা, তাহলে মোহরে ফাতেমির আর্থিক মান দাঁড়ায় প্রায় ১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা। বাজারদর অনুসারে পরিবর্তনশীল।

এই হিসাব শুধুমাত্র একটি রেফারেন্স—মূল উদ্দেশ্য হলো, মাহর যেন পরিমিত, বাস্তবসম্মত ও সম্মানজনক হয়।

আরও পড়ুননারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে কী বলে ইসলাম২৮ আগস্ট ২০২৫

মোহরে ফাতেমি কি বাধ্যতামূলক?

না, মোহরে ফাতেমি বাধ্যতামূলক নয়। ইসলামি শরিয়তে প্রতিটি বিবাহের মোহর দুই পক্ষের আর্থিক ও সামাজিক অবস্থার ওপর নির্ভরশীল।

তবে নবীজি (স.)-এর কন্যার মোহরকে আদর্শ ধরা হয়, কারণ এটি বিনয়, সরলতা ও ন্যায়ের প্রতীক। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন, “মোহরে ফাতেমি একটি সুন্নাহস্বরূপ নির্ধারণ। চাইলে এর কম বা বেশি নির্ধারণ করা বৈধ।” (আল-ফাতাওয়া আল-হিন্দিয়া, খণ্ড ১, পৃ. ২৯৪, দারুল ইহইয়া, কায়রো সংস্করণ)

অতএব, কেউ মোহরে ফাতেমি পরিমাণ নির্ধারণ করলে তা মুস্তাহাব (পছন্দনীয়), কিন্তু তার চেয়ে কম বা বেশি করলেও বিবাহ বৈধ।

আধুনিক প্রেক্ষাপটে মোহরে ফাতেমির তাৎপর্য

বর্তমান সমাজে অনেকেই মোহরকে “আনুষ্ঠানিকতা” মনে করেন, আবার কেউ কেউ মোহরকে “চাপ বা মূল্য” হিসেবে বিবেচনা করেন—যা ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ ভুল।

মোহর নারীর আত্মসম্মানের প্রতীক, পুরুষের দায়িত্ববোধের প্রকাশ এবং বিবাহ বন্ধনের আর্থিক নিশ্চয়তা।

একজন আধুনিক মুসলিম নারী হিসেবে ফাতিমা (রা.) ছিলেন নবীজির গৃহের মর্যাদার কেন্দ্রবিন্দু। তাঁর নামেই নির্ধারিত এই মোহর আজও মুসলিম সমাজে “সুন্নাহ মোহর” হিসেবে সম্মানিত।

সমাজে বিবাহ সহজ করা ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার দৃষ্টিকোণ থেকে, মোহরে ফাতেমি আমাদের সামনে এক সমতা ও সংযমের মডেল হিসেবে দাঁড়ায়।

অতএব, মুসলিম সমাজের উচিত মোহরকে বোঝা নয়, বরং ভালোবাসা, দায়িত্ব ও সম্মানের প্রতিশ্রুতি হিসেবে দেখা।

আরও পড়ুনবিবাহের সুন্নত 'ওয়ালিমা'১২ জানুয়ারি ২০১৮

সম্পর্কিত নিবন্ধ