নিউজিল্যান্ডে সন্তানদের হত্যা করে স্যুটকেসে লুকিয়ে রাখার ঘটনায় মা দোষী সাব্যস্ত
Published: 23rd, September 2025 GMT
নিউজিল্যান্ডে দুই সন্তানকে হত্যা করে তাদের মৃতদেহ স্যুটকেসে লুকিয়ে রাখার ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এক নারী। প্রায় দুই সপ্তাহ বিচারকাজ চলার পর আজ মঙ্গলবার অকল্যান্ড হাইকোর্টে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন।
৪৪ বছর বয়সী ওই নারীর নাম হাকইয়ুং লি। তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।
আদালতে লির আইনজীবীরা যুক্তি দেখিয়েছিলেন, হত্যাকাণ্ডের সময় তাঁদের মক্কেল মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। তাঁর স্বামীর ক্যানসারে মৃত্যু হওয়ার কয়েক মাস পর এ ঘটনা ঘটেছিল। তবে সরকারি কৌঁসুলি দাবি করেন, লির কর্মকাণ্ড পরিকল্পিত ছিল।
২০২২ সালে অকল্যান্ডের একটি পরিবার লির সন্তানদের মরদেহগুলো খুঁজে পায়। পরিবারটি অকল্যান্ডের নিলাম থেকে একটি পরিত্যক্ত গুদামের জিনিসপত্র কিনেছিল। সেখানকারই একটি স্যুটকেসে দেহাবশেষগুলো খুঁজে পায় তারা। ধারণা করা হয়, কয়েক বছর ধরে দেহাবশেষগুলো গুদামে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছিল।
লি ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার উলসান থেকে গ্রেপ্তার হন। সে বছরের শেষদিকে তাঁকে নিউজিল্যান্ডে ফেরত পাঠানো হয়।
মামলা চলাকালে আদালতে বলা হয়, লির সন্তানদের মৃতদেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। তবে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল যে তাদের হত্যা করা হয়েছে।
ময়না তদন্তকারী চিকিৎসকের বরাতে কৌঁসুলিরা বলেছেন, ওই শিশুদের হত্যা করা হয়েছে। তবে ঠিক কী পদ্ধতিতে করা হয়েছে, তা নিশ্চিত নয়। তাদের বিষণ্নতারোধী একটি ওষুধ দেওয়া হয়েছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
কৌঁসুলিরা বলছেন, লি যথেষ্ট বুঝেশুনেই কাজ করেছেন। সন্তানদের মৃতদেহ লুকিয়ে রাখা, নিজের নাম পাল্টানো এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় ফিরে যাওয়ার মতো সিদ্ধান্তগুলো তিনি সুচিন্তিতভাবেই নিয়েছিলেন।আদালতে বলা হয়েছে, লি ২০১৭ সালের আগস্টে একটি ফার্মেসি থেকে ওই ওষুধ কেনার জন্য প্রেসক্রিপশন নিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর স্বামী ইয়ান জোর ক্যানসার ধরা পড়ার পাঁচ মাস পরের ঘটনা এটি।
লির আইনজীবীর দাবি, স্বামীর মৃত্যুর পরে তাঁর মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যায় এবং তিনি মনে করতে শুরু করেন যে সবার একসঙ্গে মরে যাওয়াটাই ভালো। আর সে ভাবনা থেকেই তিনি নিজেকে ও সন্তানদের মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন। তবে তিনি ওই ওষুধের ভুল ডোজ নেওয়ায় প্রাণে বেঁচে যান। ঘুম ভাঙার পর তিনি দেখেন তাঁর সন্তানেরা মারা গেছে।
নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডের একটি পরিত্যক্ত গুদাম থেকে ২০২২ সালে লির সন্তানদের মরদেহ উদ্ধার হয়.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনবেন সর্বোচ্চ আদালত
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনবেন সর্বোচ্চ আদালত।
পঞ্চদশ সংশোধনীর অংশবিশেষ অসাংবিধানিক ও বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিল মঞ্জুর (আপিলের অনুমতি) করে আজ বৃহস্পতিবার আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে পরিবর্তন করে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর পুরো আইন ও আইনের কয়েকটি ধারার বৈধতা নিয়ে গত বছর হাইকোর্টে আলাদা দুটি রিট আবেদন হয়।
সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ ব্যক্তি একটি এবং নওগাঁর বাসিন্দা মো. মোফাজ্জল হোসেন আরেকটি রিট আবেদন করেন।
চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন।
রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তিসংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করা হয়। এই দুটিসহ পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে সংবিধানে যুক্ত ৭ ক,৭ খ, ৪৪ (২) অনুচ্ছেদ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করা হয়।
রায়ে গণভোটের বিধানসংক্রান্ত ১৪২ অনুচ্ছেদ (দ্বাদশ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে আনা) পুনর্বহাল করা হয়েছিল। পঞ্চদশ সংশোধনী আইন সম্পূর্ণ বাতিল না করে বাকি বিধানগুলোর বিষয়ে আইন অনুসারে পরবর্তী সংসদ সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
চলতি বছরের ৮ জুলাই ১৩৯ পৃষ্ঠার হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এরপর পঞ্চদশ সংশোধনী আইন সম্পূর্ণ বাতিল চেয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ চার ব্যক্তি। অন্য তিন ব্যক্তি হলেন এম হাফিজ উদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান।
মোফাজ্জল হোসেন নামের এক ব্যক্তি আরেকটি লিভ টু আপিল করেন।
এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার একটি লিভ টু আপিল করেন।
লিভ টু আপিলগুলো একসঙ্গে শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ওঠার পর গতকাল বুধবার ও আজ শুনানি হয়। শুনানি নিয়ে লিভ মঞ্জুর করে আজ আদেশ দিলেন আপিল বিভাগ।
আদালতে চার বিশিষ্ট ব্যক্তির পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী কারিশমা জাহান ও রিদুয়ানুল করিম।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল গোলাম পরওয়ারের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন।
মোফাজ্জল হোসেনের পক্ষে আইনজীবী এ এস এম শাহরিয়ার কবির এবং রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক শুনানিতে অংশ নেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে পরিবর্তন এনে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী এনেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। ২০১১ সালের ৩০ জুন পঞ্চদশ সংশোধনী আইন জাতীয় সংসদে পাস হয়। এই সংশোধনীতে সংবিধানে ৫৪টি ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছিল।
পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পাশাপাশি অবৈধ ক্ষমতা দখল করলে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা। সংরক্ষিত নারী আসন ৫০-এ উন্নীত করা হয়। জাতির পিতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সংবিধানে জাতীয় চার মূলনীতি—জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনা হয়। সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয় বঙ্গবন্ধুর ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণ, ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা ও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র।
একই সঙ্গে অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকে রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে দোষী করে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান যুক্ত করা হয়।
আগে মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনে নির্বাচন করার বিধান ছিল। পঞ্চদশ সংশোধনীতে পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিষয়টি সংযোজন করা হয়।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে পৃথক রিট হয়। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাসংক্রান্ত মূল বিধান ও গণভোট পুনর্বহাল হয়। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা–সংক্রান্ত বিধানগুলো পুরোপুরি ফিরে আসেনি।
পঞ্চদশ সংশোধনীর অংশবিশেষ অসাংবিধানিক ও বাতিল ঘোষণার রায়ের বিরুদ্ধে আজ আপিল করার অনুমতি পেল আবেদনকারীপক্ষ। আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষে আপিলের ওপর শুনানি হওয়ার কথা।