জাবিতে হলের ছাদে মদ ও গাঁজা সেবন করছিলেন ছাত্রদল নেতাসহ ১৫ শিক্ষার্থী
Published: 23rd, September 2025 GMT
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলের ছাদে মাদক সেবনকালে হাতেনাতে ছাত্রদল নেতা মো. জাবেরসহ অন্তত ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ২টার দিকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ হলের ছাদ থেকে তাদের আটক করা হয়।
আরো পড়ুন:
পোষ্য কোটা চান না রাবির অনেক শিক্ষক
চীনা রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ডাকসু নেতাদের সাক্ষাৎ
আটক জাবের শাখা ছাত্রদকের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও মওলানা ভাসানী হলের বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১ ব্যাচের (২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ) আইবিএ এর শিক্ষার্থী।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, হলের ছাদে নবীন শিক্ষার্থীদের র্যাগ দেয়া হচ্ছে এমন খবর পেয়ে সেখানে যান হল সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধি ও শিক্ষার্থীরা। এ সময় হলের ছাদের পানির ট্যাংকের উপরে অন্তত ১৫ জনের একটি দল নিয়ে মদ পান ও গাঁজা সেবন করছিলেন জাবের। মাদক সেবনকালে তাদের দেখতে পেয়ে পরিচয় জানতে চান প্রতিনিধিরা। তবে তারা পরিচয় দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
এক পর্যায়ে হলের প্রাধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে খবর দিতে গেলে জাবের ও তার সাথে থাকা মাদকসেবীরা ক্ষেপে গিয়ে মারমুখী আচরণ করেন। এছাড়া জাকসুর এক প্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত হলে তাকেও দেখে নেওয়ার হুমকি দেন তারা।
মাদক সেবনের সময় জাবেরের সঙ্গে ৪৭ ব্যাচের আদিত্য, ৪৯ ব্যাচের সামির, ৫০ ব্যাচের নোমান, প্রসেনজিৎ, তৌহিদ, জিহাদ, ৫১ ব্যাচের রেজওয়ান, প্রথম, ৫২ ব্যাচের লাবিব, ৫৩ ব্যাচের সাখাওয়াত উপস্থিত ছিলেন। তবে বাকিদের নাম জানা যায়নি। আটকদের সবাই আইবিএ এর শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে।
এদিকে, এ ঘটনার পর হল প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন শিক্ষার্থীরা। তবে তিনি ঢাকার বাইরে থাকায় ঘটনাস্থলে আসতে পারেননি। এছাড়া গভীর রাত হওয়ায় মোবাইল কলে সাড়া দেননি হলের দায়িত্বরত অন্যান্য শিক্ষকরাও। এক পর্যায়ে প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলমকে অবহিত করেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক হল প্রাধ্যক্ষের অনুমতি ছাড়া প্রক্টর হলে প্রবেশ করতে না পারায় তিনি মাদকসহ ধরা পড়াদের পরিচয় ও প্রমাণ নিয়ে রাখতে বলেন। এছাড়া মঙ্গলবার এ ঘটনায় ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের খাদ্য ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সম্পাদক হুসনে মোবারক বলেন, “মাদকসেবনরত অবস্থায় তাদের আটক করে শিক্ষার্থীরা। তারা কয়েকজন এই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নয়। অন্য হল থেকে এখানে এসেছেন মদ খাওয়ার জন্য। এ বিষয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে জানালে তারা আমাদের তাদের পরিচয়সহ ভিডিও করে রাখতে বলেন।”
তিনি বলেন, “আমরা তাদের পরিচয় জানতে গেলে তারা আমাদের সঙ্গে আক্রমণাত্নকভাবে কথা বলেন। এছাড়া তারা চলে যাওয়ার সময় আমাদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়৷ এ অবস্থায় আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে সংঙ্কিত বোধ করছি।”
তাজউদ্দীন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী শরিফুল আলম সাকিব বলেন, “হলের ছাদে মদ ও গাঁজা সেবনের খবর পেয়ে আমরা সেখানে যাই। এ সময় তাদের কাছে বাংলা মদ, গাঁজা ও অন্যন্য মাদক দ্রব্য পাওয়া যায়। পরে তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা আমাদের সাথে আক্রমণাত্মক আচরণ শুরু করেন।”
তাজউদ্দীন হল সংসদের সাধারণ সম্পাদক সাকিব আহমেদ বলেন, “তাদের আমরা মদ ও গাঁজাসহ হলের ছাদ থেকে ধরি এবং প্রক্টর স্যারকে এ ব্যাপারে জানাই। তিনি আমাদের ভিডিও করে তাদের পরিচয় জানতে বলেন। আমরা তাদের কাছে পরিচয় জানতে চাইলে আক্রমণাত্নক আচরণ করেন৷ মদ-গাঁজাসহ মাদকদ্রব্যগুলো প্রক্টর স্যারের নির্দেশে জব্দ করা হয়েছে। এগুলো প্রসাশনের কাছে জমা দেওয়া হবে।”
এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক রাশিদুল আলম বলেন, “হলের শিক্ষার্থীরা বিষয়টি জানিয়েছে। গভীর রাত হওয়ায় হল প্রাধ্যক্ষসহ দায়িত্বরতদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে সাড়া পাইনি। যার কারণে বিধি অনুসারে আমি হলে প্রবেশ করতে পারছি না। তাদের নাম পরিচয় ও সঙ্গে থাকা মাদকদ্রব্য প্রক্টর অফিসে জমা দিতে বলেছি। আমরা ব্যবস্থা নেব।”
সম্প্রতি মাদক সেবনের উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাবি প্রশাসন। এক বিজ্ঞপ্তিতে জাবি প্রশাসন জানিয়েছে, মাদক সেবন করলেই দোষী শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হবে।
ঢাকা/আহসান/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আটক হল র ছ দ আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
লন্ডনে চ্যাটজিপিটি থেকে নেওয়া ভুয়া মামলা উদ্ধৃত করায় তদন্তের মুখে বাংলাদেশি আইনজীবী
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একজন আইনজীবী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার টুল চ্যাটজিপিটি থেকে নেওয়া ভুয়া মামলা উদ্ধৃত করে অপেশাদার আচরণ করেছেন বলে রায় দিয়েছেন লন্ডনের আপার ট্রাইব্যুনাল (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড অ্যাসাইলাম চেম্বার)। ব্যারিস্টার মুহাম্মদ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে বিষয়টি তদন্ত করার জন্য আদালত থেকে বার স্ট্যান্ডার্ড বোর্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।
মামলাটি যুক্তরাজ্যে প্রথম বড় কোনো উদাহরণ, যেখানে একজন আইনজীবী চ্যাটজিপিটি দ্বারা তৈরি ভুয়া রায় আদালতে ব্যবহার করেছেন। ফলে এটি পুরো আইন পেশায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারের ঝুঁকি ও নৈতিকতা নিয়ে বড় আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
মামলার শুনানি হয় চলতি বছরের ২৩ জুলাই এবং রায় প্রকাশিত হয় ১২ আগস্ট। রায়ে বলা হয়, ব্যারিস্টার মুজিবুর রহমান তাঁর আপিলের খসড়ায় ‘Y (China) [2010] EWCA Civ 116’ নামে একটি মামলা উদ্ধৃত করেন। কিন্তু বাস্তবে এই মামলার কোনো অস্তিত্ব নেই। প্রথমে তিনি অস্বীকার করলেও আদালতে জেরার মুখে এক পর্যায়ে তিনি স্বীকার করতে বাধ্য হন যে এই মামলার উদ্ধৃতি এসেছে চ্যাটজিপিটি নামক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুল থেকে। তবে আদালতে জমা দেওয়ার আগে তিনি এর সত্যতা যাচাই করেননি।
আদালতের বিচারপতি জাস্টিস ডভ ও জজ লিন্ডসলি বলেন, যেকোনো আইনজীবীর প্রথম দায়িত্ব হলো আদালতকে সত্য ও সঠিক তথ্য প্রদান করা। যাচাই ছাড়া এআই-সৃষ্ট কনটেন্ট ব্যবহার করা বিপজ্জনক ও অপেশাদার আচরণ। এ ঘটনায় একাধিকবার মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর ব্যাখ্যা দিয়ে ব্যারিস্টার মুজিবুর রহমান সততা ও পেশাদারত্বের মানদণ্ড ভঙ্গ করেছেন।
ট্রাইব্যুনাল মনে করেন, এটি ইচ্ছাকৃত ভুয়া মামলা তৈরি করার ঘটনা নয়। তাই পুলিশি তদন্ত বা আদালত অবমাননা প্রক্রিয়ার প্রয়োজন নেই। তবে এ ধরনের আচরণ আদালত ও পেশার প্রতি আস্থাকে ক্ষুণ্ন করে। এ জন্য বিষয়টি বার স্ট্যান্ডার্ড বোর্ডের কাছে পাঠানো হলো, যাতে তারা তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে। বিচারপতিরা আরও উল্লেখ করেন, আদালতকে বিভ্রান্ত করার মতো শর্টকাট কোনো পথ বেছে নেওয়া কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।
বার স্ট্যান্ডার্ড বোর্ড হলো যুক্তরাজ্যের আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এটি আইনজীবীদের পেশাগত নীতি, আচরণবিধি ও মানদণ্ড নির্ধারণ করে এবং শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মান তদারক করে। কোনো আইনজীবী যদি আদালতে ভুয়া তথ্য দেন, অনৈতিক আচরণ করেন অথবা তাঁদের পেশাগত দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন না করেন, তাহলে বার স্ট্যান্ডার্ড বোর্ড শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে, যেমন সতর্কীকরণ, জরিমানা, সাসপেনশন বা চূড়ান্তভাবে ব্যারিস্টারি লাইসেন্স বাতিল করা।
প্রথম আলোর পক্ষ থেকে ব্যারিস্টার মুজিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ মামলায় তিনি আদালতে যথেষ্ট পরিমাণ নথিপত্র (সাবমিশন) জমা দিয়েছেন। কিন্তু আদালত সেগুলোকে বিবেচনায় না নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন। তিনি এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন। তাঁর আইনজীবী আপিলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।