জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলের ছাদে মাদক সেবনকালে হাতেনাতে ছাত্রদল নেতা মো. জাবেরসহ অন্তত ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে।

সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ২টার দিকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ হলের ছাদ থেকে তাদের আটক করা হয়।

আরো পড়ুন:

পোষ্য কোটা চান না রাবির অনেক শিক্ষক

চীনা রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ডাকসু নেতাদের সাক্ষাৎ 

আটক জাবের শাখা ছাত্রদকের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও মওলানা ভাসানী হলের বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১ ব্যাচের (২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ) আইবিএ এর শিক্ষার্থী।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, হলের ছাদে নবীন শিক্ষার্থীদের র‍্যাগ দেয়া হচ্ছে এমন খবর পেয়ে সেখানে যান হল সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধি ও শিক্ষার্থীরা। এ সময় হলের ছাদের পানির ট্যাংকের উপরে অন্তত ১৫ জনের একটি দল নিয়ে মদ পান ও গাঁজা সেবন করছিলেন জাবের। মাদক সেবনকালে তাদের দেখতে পেয়ে পরিচয় জানতে চান প্রতিনিধিরা। তবে তারা পরিচয় দিতে অস্বীকৃতি জানায়।

এক পর্যায়ে হলের প্রাধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে খবর দিতে গেলে জাবের ও তার সাথে থাকা মাদকসেবীরা ক্ষেপে গিয়ে মারমুখী আচরণ করেন। এছাড়া জাকসুর এক প্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত হলে তাকেও দেখে নেওয়ার হুমকি দেন তারা।

মাদক সেবনের সময় জাবেরের সঙ্গে ৪৭ ব্যাচের আদিত্য, ৪৯ ব্যাচের সামির, ৫০ ব্যাচের নোমান, প্রসেনজিৎ, তৌহিদ, জিহাদ, ৫১ ব্যাচের রেজওয়ান, প্রথম, ৫২ ব্যাচের লাবিব, ৫৩ ব্যাচের সাখাওয়াত উপস্থিত ছিলেন। তবে বাকিদের নাম জানা যায়নি। আটকদের সবাই আইবিএ এর শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে।

এদিকে, এ ঘটনার পর হল প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন শিক্ষার্থীরা। তবে তিনি ঢাকার বাইরে থাকায় ঘটনাস্থলে আসতে পারেননি। এছাড়া গভীর রাত হওয়ায় মোবাইল কলে সাড়া দেননি হলের দায়িত্বরত অন্যান্য শিক্ষকরাও। এক পর্যায়ে প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলমকে অবহিত করেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক হল প্রাধ্যক্ষের অনুমতি ছাড়া প্রক্টর হলে প্রবেশ করতে না পারায় তিনি মাদকসহ ধরা পড়াদের পরিচয় ও প্রমাণ নিয়ে রাখতে বলেন। এছাড়া মঙ্গলবার এ ঘটনায় ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের খাদ্য ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সম্পাদক হুসনে মোবারক বলেন, “মাদকসেবনরত অবস্থায় তাদের আটক করে শিক্ষার্থীরা। তারা কয়েকজন এই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নয়। অন্য হল থেকে এখানে এসেছেন মদ খাওয়ার জন্য। এ বিষয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে জানালে তারা আমাদের তাদের পরিচয়সহ ভিডিও করে রাখতে বলেন।”

তিনি বলেন, “আমরা তাদের পরিচয় জানতে গেলে তারা আমাদের সঙ্গে আক্রমণাত্নকভাবে কথা বলেন। এছাড়া তারা চলে যাওয়ার সময় আমাদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়৷ এ অবস্থায় আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে সংঙ্কিত বোধ করছি।”

তাজউদ্দীন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী শরিফুল আলম সাকিব বলেন, “হলের ছাদে মদ ও গাঁজা সেবনের খবর পেয়ে আমরা সেখানে যাই। এ সময় তাদের কাছে বাংলা মদ, গাঁজা ও অন্যন্য মাদক দ্রব্য পাওয়া যায়। পরে তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা আমাদের সাথে আক্রমণাত্মক আচরণ শুরু করেন।”

তাজউদ্দীন হল সংসদের সাধারণ সম্পাদক সাকিব আহমেদ বলেন, “তাদের আমরা মদ ও গাঁজাসহ হলের ছাদ থেকে ধরি এবং প্রক্টর স্যারকে এ ব্যাপারে জানাই। তিনি আমাদের ভিডিও করে তাদের পরিচয় জানতে বলেন। আমরা তাদের কাছে পরিচয় জানতে চাইলে আক্রমণাত্নক আচরণ করেন৷ মদ-গাঁজাসহ মাদকদ্রব্যগুলো প্রক্টর স্যারের নির্দেশে জব্দ করা হয়েছে। এগুলো প্রসাশনের কাছে জমা দেওয়া হবে।”

এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক রাশিদুল আলম বলেন, “হলের শিক্ষার্থীরা বিষয়টি জানিয়েছে। গভীর রাত হওয়ায় হল প্রাধ্যক্ষসহ দায়িত্বরতদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে সাড়া পাইনি। যার কারণে বিধি অনুসারে আমি হলে প্রবেশ করতে পারছি না। তাদের নাম পরিচয় ও সঙ্গে থাকা মাদকদ্রব্য প্রক্টর অফিসে জমা দিতে বলেছি। আমরা ব্যবস্থা নেব।”

সম্প্রতি মাদক সেবনের উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে  জাবি প্রশাসন। এক বিজ্ঞপ্তিতে জাবি প্রশাসন জানিয়েছে, মাদক সেবন করলেই দোষী শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হবে।

ঢাকা/আহসান/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আটক হল র ছ দ আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

এশিয়া কাপে আচরণবিধি ভঙ্গের শাস্তি পেলেন রউফ-সূর্যকুমারসহ পাঁচজন

এশিয়া কাপ-২০২৫ এ ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ ঘিরে উত্তেজনা কেবল মাঠেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, পৌঁছে গেছে শৃঙ্খলাজনিত ব্যবস্থাতেও। খেলোয়াড়দের আচরণবিধি ভঙ্গের ঘটনায় এবার শাস্তির মুখে পড়েছেন দুই দেশের কয়েকজন তারকা ক্রিকেটার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) সূর্যকুমার যাদব ও হারিস রউফের ওপর জরিমানা ও ‘ডিমেরিট পয়েন্ট’ আরোপ করেছে। আর ভারতীয় পেসার জাসপ্রিত বুমরাহ পেয়েছেন আনুষ্ঠানিক সতর্কবার্তা।

আইসিসির এলিট প্যানেল অব ম্যাচ রেফারিরা সেপ্টেম্বর ১৪, ২১ ও ২৮ তারিখে অনুষ্ঠিত ভারত-পাকিস্তান ম্যাচগুলোর কয়েকটি ঘটনার তদন্ত করেন।

প্রথমবার, সেপ্টেম্বর ১৪:
প্রথম ম্যাচেই মাঠ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ওই ম্যাচে ভারতের সূর্যকুমার যাদব এবং পাকিস্তানের হারিস রউফ ও সাহিবজাদা ফারহানকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় আইসিসির আচরণবিধির ২.২১ অনুচ্ছেদ ভঙ্গের দায়ে। যেখানে বলা আছে, এমন আচরণ যা খেলাটির সুনাম ক্ষুণ্ন করে।

ফলাফল হিসেবে সূর্যকুমারকে জরিমানা করা হয় ম্যাচ ফি’র ৩০ শতাংশ এবং দেওয়া হয় দুই ডিমেরিট পয়েন্ট। ফারহান পান আনুষ্ঠানিক সতর্কবার্তা ও এক ডিমেরিট পয়েন্ট। রউফের শাস্তিও একই; ৩০ শতাংশ জরিমানা ও দুই ডিমেরিট পয়েন্ট।

দ্বিতীয়বার, সেপ্টেম্বর ২১:
এক সপ্তাহ পরের ম্যাচে আবার বিতর্ক। ভারতীয় পেসার অর্শদীপ সিং অভিযুক্ত হন আইসিসির ২.৬ অনুচ্ছেদে, “অপমানজনক ভঙ্গি প্রদর্শনের” অভিযোগে। তবে ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফটের শুনানিতে প্রমাণ না মেলায় তিনি মুক্তি পান। কোনো শাস্তি হয়নি তার।

ফাইনালের উত্তেজনা, সেপ্টেম্বর ২৮:
এশিয়া কাপের ফাইনালও ছাড় পায়নি শৃঙ্খলাভঙ্গের ছোঁয়া থেকে। ভারতের জাসপ্রিত বুমরাহ স্বীকার করেন যে তিনি খেলাটির মর্যাদাবিরোধী আচরণ করেছেন। ফলে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সতর্ক করা হয় ও দেওয়া হয় এক ডিমেরিট পয়েন্ট। যেহেতু তিনি অপরাধ স্বীকার করেছিলেন, তাই আলাদা শুনানির প্রয়োজন হয়নি।

অন্যদিকে, হারিস রউফ আবারও জড়িয়ে পড়েন একই ধরনের ঘটনায়। ম্যাচ রেফারি রিচি রিচার্ডসনের শুনানিতে দোষী প্রমাণিত হয়ে তিনি আবার জরিমানা পান ম্যাচ ফি’র ৩০ শতাংশ এবং আরও দুই ডিমেরিট পয়েন্ট। এতে তার মোট ডিমেরিট পয়েন্ট দাঁড়ায় চার। যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাকে দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞায় ফেলে। ফলে নভেম্বর ৪ ও ৬ তারিখে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পাকিস্তানের দুইটি ওয়ানডে থেকে ছিটকে গেলেন তিনি।

আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, লেভেল–১ ধরনের অপরাধে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ম্যাচ ফি জরিমানা এবং দুই ডিমেরিট পয়েন্ট পর্যন্ত দেওয়া যায়। কোনো খেলোয়াড় যদি ২৪ মাসের মধ্যে চার বা তার বেশি ডিমেরিট পয়েন্ট পান, তবে তা রূপান্তরিত হয় সাসপেনশন পয়েন্টে। অর্থাৎ পরবর্তী ম্যাচে নিষেধাজ্ঞা অবশ্যম্ভাবী।

এশিয়া কাপে শাস্তিপ্রাপ্ত খেলোয়াড়দের তালিকা:

সূর্যকুমার যাদব (ভারত): ম্যাচ ফি’র ৩০% জরিমানা, ২ ডিমেরিট পয়েন্ট।

সাহিবজাদা ফারহান (পাকিস্তান): আনুষ্ঠানিক সতর্কবার্তা, ১ ডিমেরিট পয়েন্ট।

হারিস রউফ (পাকিস্তান): দুই আলাদা অপরাধে দু’বার জরিমানা, মোট ৪ ডিমেরিট পয়েন্ট ও ২ ম্যাচ নিষেধাজ্ঞা।

জাসপ্রিত বুমরাহ (ভারত): সতর্কবার্তা, ১ ডিমেরিট পয়েন্ট।

অর্শদীপ সিং (ভারত): অভিযোগ থেকে মুক্ত, কোনো শাস্তি নয়।

এশিয়া কাপের মাঠে যেমন ব্যাট-বল লড়াই জমেছিল, মাঠের বাইরে ঠিক তেমনই শৃঙ্খলাভঙ্গের নাটকও কম আলোচনার জন্ম দেয়নি। ক্রিকেটের সৌন্দর্য রক্ষায় এবার স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে আইসিসি- “খেলা উত্তেজনার হতে পারে, কিন্তু সীমা অতিক্রম নয়।”

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মেক্সিকোর প্রেসিডেন্টকে চুমু দেওয়ার চেষ্টা, একজন গ্রেপ্তার
  • চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীদের মধ্যে বাড়ছে মানসিক সমস্যা
  • এশিয়া কাপে আচরণবিধি ভঙ্গের শাস্তি পেলেন রউফ-সূর্যকুমারসহ পাঁচজন
  • তালেবান এই ‘সুযোগ’ কেন হাতছাড়া করল