মানিকগঞ্জে ফ্ল্যাট থেকে মা ও ২ সন্তানের লাশ উদ্ধার
Published: 23rd, September 2025 GMT
মানিকগঞ্জ পৌরসভার আবাসিক ভবনের ফ্ল্যাট থেকে মা এবং দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মানিকগঞ্জ শহরের পশ্চিম বান্দুটিয়া এলাকার যৌথ মালিকানাধীন মুক্তাদির এবং রাহাত সালমানের ভবন থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতরা হলেন, মা শিখা আক্তার (২৯), ছেলে আরাফাত ইসলাম আলভী (৯) এবং মেয়ে সাইফা আক্তার (২)।
আরো পড়ুন:
সাবেক স্ত্রীকে ছুরিকাঘাত করে স্বামীর আত্মহত্যা
নিজ ঘর থেকে বৃদ্ধার গলাকাটা লাশ উদ্ধার
মৃত শিখা আক্তার প্রবাসী শাহীন আহমেদের (৪২) স্ত্রী। শাহীন এক মাস আগে জীবিকার তাগিদে মালয়েশিয়া পাড়ি জমিয়েছেন। এর আগে তিনি এলাকায় ইজিবাইক চালাতেন। প্রবাসী শাহীন আহমেদ বছর পাঁচেক আগে শিখা আক্তারকে বিয়ে করেন। এটি শাহীন এবং শিখা আক্তার উভয়ের দ্বিতীয় বিয়ে।
এ ঘটনায় পুলিশ সুপার ইয়াসমিন খাতুন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘‘বন্ধ ফ্ল্যাট থেকে মা এবং দুই সন্তানের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইডের উপকরণ মিলেছে। যেহেতু ফ্ল্যাট ভেতর থেকে তালাবদ্ধ ছিল, সেহেতু মা দুই শিশুসন্তানকে বিষ পান করিয়ে নিজে বিষ পান করেছেন। বিষক্রিয়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। বাকিটা ময়নাতদন্তে জানা যাবে।’’
পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, দাম্পত্য কলহ থেকে এ ঘটনা ঘটেছে।’’
স্বামী শাহীন আহমেদের মামা আমান আনসারী বলেন, ‘‘শাহীনের বাবা-মা নেই। বোনের বাড়ি হরিরামপুরের লেছরাগঞ্জ থেকেছেন। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর শিখা আক্তারকে পাঁচ বছর আগে বিয়ে করেন। এ ঘরে তার এক কন্যা সন্তান। দেশে থাকা অবস্থায় শাহীন ইজিবাইক চালাতেন। এক মাস ধরে শাহীন মালয়েশিয়া গিয়েছেন। যাওয়ার আগে তিনি তার স্ত্রী-সন্তানদের ভাড়া বাসায় তোলেন। এ বাসায় শিখা আক্তারের আগের ঘরের ৯ বছর বয়সী ছেলে আলভীও থাকত।’’
পাশের ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া আলমগীর হোসেন বলেন, ‘‘মাস দেড়েক হয় তারা ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছেন। একবারই তার স্বামীকে দেখেছিলাম। পরে শিখা এবং তার ছেলে-মেয়ে এ বাসায় থাকেন। তাদের বাসার বাইরে কখনো দেখা যায়নি। কারেন্ট বিলের টাকা চাওয়ার জন্য আজ মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে তাদের দরজায় নক করলে সাড়া পাওয়া যায়নি। কয়েক দফায় চেষ্টা করার পরও সাড়া না পেয়ে বাড়িওয়ালাকে বিষয়টি অবগত করি। পরে তিনি আসেন এবং দীর্ঘক্ষণ ডেকেও সাড়া পাননি।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘কোনো সাড়া না পেয়ে জরুরি জাতীয় সেবা নম্বর ৯৯৯ ফোন দিলে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে এবং পাশের ফ্ল্যাট থেকে ওই ফ্ল্যাটে ঢোকার চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হয়ে দরজা ভেঙে প্রবেশ করলে খাটের উপর মা এবং মেঝেতে দুই শিশুর লাশ পাওয়া যায়।’’
ঢাকা/চন্দন/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উদ ধ র র ল শ উদ ধ র সন ত ন
এছাড়াও পড়ুন:
বিবাহে ‘মোহরে ফাতেমি‘ কী?
“মোহরে ফাতেমি” মুসলিম বিবাহে একটি বহুল আলোচিত ধারণা, যাকে মূলত নারীর অধিকার, সম্মান ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতীক বলা যায়।
‘মোহর’ বা ‘মাহর’ শব্দটি আরবি “মাহর” থেকে এসেছে, যার অর্থ, স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে নির্ধারিত অর্থ বা সম্পদ, যা বিবাহের অধিকার হিসেবে বাধ্যতামূলকভাবে প্রদান করতে হয়।
‘মোহরে ফাতেমি’ বলতে বোঝানো হয় সেই পরিমাণ মাহর, যা নবীজি (স.) তাঁর কন্যা ফাতিমা (রা.)-এর বিয়েতে নির্ধারণ করেছিলেন। এটি মুসলিম ইতিহাসে আদর্শ মাহরের মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয়।
মোহরে ফাতেমির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কন্যা ফাতিমা (রা.)-এর বিয়ে হয়েছিল আলী ইবনে আবি তালিব (রা.)-এর সঙ্গে। এই বিয়েতে নবীজি (স.) যে পরিমাণ মোহর নির্ধারণ করেছিলেন, সেটিই পরে “মোহরে ফাতেমি” নামে পরিচিত হয়।
ইমাম বায়হাকি ও ইবনে মাজাহ-এর বর্ণনা অনুযায়ী, মোহরে ফাতেমি ছিল ৫০০ দিরহাম রূপা (প্রায় ১.৫ কেজি রূপা)। (সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৮৮৭; আল-বায়হাকি, আস-সুনান আল-কুবরা, খণ্ড ৭, পৃ. ২৩৩)
আরও পড়ুনমুসলিম বিবাহে ‘কুফু’ অর্থ কী২৩ অক্টোবর ২০২৫মোহরের গুরুত্ব
কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “তোমরা নারীদের মাহর (মোহরানা) স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রদান করো।” (সুরা আন-নিসা, আয়াত: ৪)
অর্থাৎ, এটি কোনো উপহার নয়, বরং স্ত্রীর ন্যায্য অধিকার।
নবীজি (স.) বলেছেন, “সবচেয়ে উত্তম বিবাহ হলো সেই বিবাহ, যার মোহর সবচেয়ে সহজ।” (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৮৮৭)
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, ইসলাম চায় না মোহর এমন ভারী হোক যাতে বিবাহ কঠিন হয়ে যায়। বরং, সহজ, পরিমিত ও সম্মানজনক পরিমাণ হওয়াই সুন্নাহ।
মোহরে ফাতেমির প্রতীকী অর্থ
“মোহরে ফাতেমি” কেবল একটি অর্থমূল্য নয়, বরং এটি মুসলিম সমাজে নারীর মর্যাদা ও আত্মসম্মানের প্রতীক। এর মাধ্যমে নবীজি (স.) মুসলিম সমাজকে একটি বার্তা দিয়েছেন যে, নারী কোনো বোঝা নয়, বরং মর্যাদাপূর্ণ একজন মানুষ, যার নিজের অধিকার আল্লাহ নির্ধারণ করেছেন।
একইসাথে এটি ইসলামে সামাজিক ভারসাম্যের একটি নিদর্শন—যেখানে মোহর এমন নির্ধারণ করা হয়, যা গরিব ও ধনীর উভয়ের জন্যই বাস্তবসম্মত।
মোহরে ফাতেমির আর্থিক মান
ইতিহাসবিদ ইমাম নববী ও ইবনে হাজার আসকালানি উল্লেখ করেছেন, এক দিরহাম প্রায় ২.৯৭৫ গ্রাম রূপা সমান।
তাহলে ৫০০ দিরহাম × ২.৯৭৫ গ্রাম = প্রায় ১৪৮৭.৫ গ্রাম (১.৫ কেজি রূপা)।
বর্তমান সময়ের হিসাবে, বাংলাদেশে যদি প্রতি ভরি (প্রায় ১১.৬৬ গ্রাম) রূপার দাম ধরা হয় প্রায় ১৫০০ টাকা, তাহলে মোহরে ফাতেমির আর্থিক মান দাঁড়ায় প্রায় ১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা। বাজারদর অনুসারে পরিবর্তনশীল।
এই হিসাব শুধুমাত্র একটি রেফারেন্স—মূল উদ্দেশ্য হলো, মাহর যেন পরিমিত, বাস্তবসম্মত ও সম্মানজনক হয়।
আরও পড়ুননারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে কী বলে ইসলাম২৮ আগস্ট ২০২৫মোহরে ফাতেমি কি বাধ্যতামূলক?
না, মোহরে ফাতেমি বাধ্যতামূলক নয়। ইসলামি শরিয়তে প্রতিটি বিবাহের মোহর দুই পক্ষের আর্থিক ও সামাজিক অবস্থার ওপর নির্ভরশীল।
তবে নবীজি (স.)-এর কন্যার মোহরকে আদর্শ ধরা হয়, কারণ এটি বিনয়, সরলতা ও ন্যায়ের প্রতীক। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন, “মোহরে ফাতেমি একটি সুন্নাহস্বরূপ নির্ধারণ। চাইলে এর কম বা বেশি নির্ধারণ করা বৈধ।” (আল-ফাতাওয়া আল-হিন্দিয়া, খণ্ড ১, পৃ. ২৯৪, দারুল ইহইয়া, কায়রো সংস্করণ)
অতএব, কেউ মোহরে ফাতেমি পরিমাণ নির্ধারণ করলে তা মুস্তাহাব (পছন্দনীয়), কিন্তু তার চেয়ে কম বা বেশি করলেও বিবাহ বৈধ।
আধুনিক প্রেক্ষাপটে মোহরে ফাতেমির তাৎপর্য
বর্তমান সমাজে অনেকেই মোহরকে “আনুষ্ঠানিকতা” মনে করেন, আবার কেউ কেউ মোহরকে “চাপ বা মূল্য” হিসেবে বিবেচনা করেন—যা ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ ভুল।
মোহর নারীর আত্মসম্মানের প্রতীক, পুরুষের দায়িত্ববোধের প্রকাশ এবং বিবাহ বন্ধনের আর্থিক নিশ্চয়তা।
একজন আধুনিক মুসলিম নারী হিসেবে ফাতিমা (রা.) ছিলেন নবীজির গৃহের মর্যাদার কেন্দ্রবিন্দু। তাঁর নামেই নির্ধারিত এই মোহর আজও মুসলিম সমাজে “সুন্নাহ মোহর” হিসেবে সম্মানিত।
সমাজে বিবাহ সহজ করা ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার দৃষ্টিকোণ থেকে, মোহরে ফাতেমি আমাদের সামনে এক সমতা ও সংযমের মডেল হিসেবে দাঁড়ায়।
অতএব, মুসলিম সমাজের উচিত মোহরকে বোঝা নয়, বরং ভালোবাসা, দায়িত্ব ও সম্মানের প্রতিশ্রুতি হিসেবে দেখা।
আরও পড়ুনবিবাহের সুন্নত 'ওয়ালিমা'১২ জানুয়ারি ২০১৮