বিখ্যাত অ্যানিমেশন সিনেমা ‘ফাইন্ডিং নিমো’ দেখেছেন অনেকেই। সেই সিনেমার মূল চরিত্রে ছিল একটি ক্লাউনফিশ। উজ্জ্বল কমলা রঙের ও ডোরাকাটা মাছ ক্লাউনফিশ। সমুদ্রের বন্য পরিবেশে সি অ্যানিমোনি নামের সামুদ্রিক উদ্ভিদের বনে তারা সুরক্ষা ও আশ্রয় পায়। সাম্প্রতিক সময়ে সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে ক্লাউনফিশ কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়ছে। গত তিন বছরে লোহিত সাগরের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় তাপমাত্রা স্বাভাবিক ৮৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট থেকে ৯০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বেড়ে গেছে। এই তাপমাত্রা বৃদ্ধি ক্লাউনফিশসহ বিভিন্ন মাছের জীবনকে অস্বস্তিকর করে তুলছে।

ক্লাউনফিশ ও সামুদ্রিক অ্যানিমোনি একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। ক্লাউনফিশ অ্যানিমোনির হুলযুক্ত শুঁড়ের মধ্যে লুকিয়ে থাকে। এ ছাড়া ডিম পাড়া ও শিকারিদের হাত থেকে সুরক্ষিত থাকার নিরাপত্তা দেয়। ক্লাউনফিশ অ্যানিমোনিকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। এ ধরনের পারস্পরিক সহযোগিতা মহাসাগর জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অ্যানিমোনিরাও তাদের কোষে বসবাসকারী ক্ষুদ্র শৈবাল জুওক্সান্থেলের ওপর নির্ভর করে। এই শৈবাল তাদের শক্তির প্রধান উৎস। এই একই ধরনের শৈবাল কোরালের মধ্যে বাস করে। যখন সমুদ্রের তাপমাত্রা খুব বেশি বেড়ে যায়, তখন শৈবাল মরে যায়। এ ঘটনাকে ব্লিচিং বলা হয়। ব্লিচিং হওয়া অ্যানিমোনি সাদা রং ধারণ করে। শৈবাল না থাকায় তারা ধীরে ধীরে অনাহারে মারা যেতে শুরু করে। এতে সামগ্রিকভাবে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে গবেষকেরা সৌদি আরবের কেন্দ্রীয় উপকূল বরাবর তিনটি প্রবালপ্রাচীরে লোহিত সাগরের ক্লাউনফিশ ও তাদের আশ্রয়দাতা অ্যানিমোনিকে নিয়ে গবেষণা করেন। এই সময়ে পুরো অঞ্চল ২০২৩ সালে একটি বড় সামুদ্রিক তাপপ্রবাহের শিকার হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন ইউনিভার্সিটির মেরিন ইভল্যুশনারি ইকোলজি ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানী মরগান বেনেট-স্মিথ বলেন, ‘আমরা সব সময় আশা করি, অ্যানিমোনি ও ক্লাউনফিশের দল ব্লিচিংয়ের ঘটনার পরে ফিরে আসবে। গত ১০ বছরে বারবার এমনটা দেখে যায়। যদিও এবার ভিন্ন এক চরম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অ্যানিমোনি প্রায় ছয় মাস ধরে ব্লিচিংয়ের শিকার হয়েছে। এর ফলে ৯৪ থেকে ১০০ শতাংশ ক্লাউনফিশ মারা যায়। আর অ্যানিমোনি ৬৬ থেকে ৯৪ শতাংশ মারা যায়।’

এক দশকের বেশি সময় ধরে বিজ্ঞানীরা মাছ ও সামুদ্রিক উদ্ভিদের এ সম্পর্ক পর্যবেক্ষণ করছেন। বিজ্ঞানী বেনেট-স্মিথ বলেন, এটি বেশ বেদনাদায়ক। লোহিত সাগর এমন একটি জায়গা, যেখানে এটি তাপীয় আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করবে বলে অনেকেই আশা করেন। এই তাপীয় আশ্রয়স্থল বিভিন্ন উপায়ে ভেঙে পড়ছে।

সুস্থ অ্যানিমোনি ছাড়া ক্লাউনফিশ বিপদে পড়ে গেছে। এই ছোট মাছ তাদের বাসস্থান থেকে খুব বেশি দূরে সাঁতার কাটতে যায় না। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, সাম্প্রতিক তাপীয় ঘটনার প্রতিক্রিয়া হিসেবে ক্লাউনফিশের জনসংখ্যার প্রায় ১০০ শতাংশ বিলুপ্তির মুখে পড়ছে।

লোহিত সাগরসহ বিভিন্ন সাগরে এমন অবস্থা দেখা যাচ্ছে। একই ধরনের ব্লিচিং ঘটনা বিশ্বের অন্যান্য অংশেও আঘাত হেনেছে। বিজ্ঞানীরা এখন পাপুয়া নিউগিনিতে কী ঘটছে, তা পর্যবেক্ষণ করছেন। সেখানে ক্লাউনফিশ ও অ্যানিমোনিরা ঝুঁকির মধ্যে আছে। তাপের চাপ থেকে বাঁচতে পাপুয়া নিউগিনির ক্লাউনফিশের সংখ্যা সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। সেখানকার মাছগুলো তাদের শরীরকে সংকুচিত করে ফেলছে। এসব তথ্য এনপিজে বায়োডাইভার্সিটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

সূত্র: আর্থ ডটকম

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

আখতারের ওপর আ.লীগের হামলার নিন্দা জানিয়েছে ডাকসু

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতারের উপর নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ডাকসু।

মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক এস এম ফরহাদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আরো পড়ুন:

আখতার হোসেনের ওপর হামলা ঘটনায় ডাকসুর নিন্দা 

চীনা রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ডাকসু নেতাদের সাক্ষাৎ 

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সফরসঙ্গীদের ওপর জুলাই গণহত্যা পরিচালনাকারী নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মুখ আখতার হোসেনের ওপর সংগঠিত এ হামলা শুধু গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানবাধিকারের ওপর নগ্ন আঘাতই নয়, বরং ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির জন্য সতর্কবার্তাও বটে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিলম্বিত বিচার প্রক্রিয়াসহ সামাজিক প্রতিরোধ সৃষ্টিতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে না পারায় এমন ন্যাক্কারজনক হামলার সাক্ষী হতে হচ্ছে।

 ডাকসু এই ধরনের বর্বরোচিত ঘটনা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে এবং প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটিতে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে বলে মনে করে বলে জানানো হয় বিবৃতিতে। 

বিবৃতিতে আরো জানানো হয়, আমরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। একইসঙ্গে বাংলাদেশ সরকার ও যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে, তার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) গণতন্ত্রকামী জনগণ ও ভিন্নমতের প্রতি সহনশীলতার লড়াইয়ে সবসময় দৃঢ় অবস্থানে ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে বলে জানানো হয় বিবৃতিতে।
 

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ