আখতারকে ডিম নিক্ষেপ: নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের শাস্তি চায় এনসিপি
Published: 23rd, September 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রে দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেনসহ অন্যদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের শনাক্ত করে তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। নিউ ইয়র্কের বিমানবন্দরে আখতার হোসেনকে হেনস্তা ও তাঁর ওপর ডিম নিক্ষেপের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে এই দাবি জানিয়েছে দলটি।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার বাংলা মোটরে জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এই দাবি জানান।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি ও তাঁর সফরসঙ্গীরা স্থানীয় সোমবার বিকেলে নিউ ইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। সফরসঙ্গীদের মধ্যে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক তাসনিম জারা, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েকজন বিমানবন্দর থেকে বেরোনোর সময় আওয়ামী লীগের একদল নেতা–কর্মীর সামনে পড়েন। এ সময় আখতার ও তাসনিম জারাকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন ও কটূক্তি করেন। আখতার হোসেনকে হেনস্তার এক পর্যায়ে তাঁর গায়ে ডিম নিক্ষেপ করা হয়।
বাংলাদেশ সময় সোমবার দিবাগত মধ্যরাত ৩টার দিকের এই ঘটনা নিয়ে বিকেলে জরুরি ওই সংবাদ সম্মেলন করেন এনসিপির নেতারা। সেখানে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃবৃন্দকে দেশ–বিদেশে হামলার টার্গেটে (নিশানা) পরিণত করেছে। গোপালগঞ্জে জুলাই পদযাত্রায় তাঁদেরকে হত্যাচেষ্টা, উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর বিদেশে হামলার চেষ্টা এবং সর্বশেষ নিউ ইয়র্কের এয়ারপোর্টে ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এগুলো আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী তৎপরতারই ধারাবাহিকতা।
সরকার ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাজনৈতিক নেতাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে অভিযোগ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘প্রশাসনের ভেতরের একটি অংশের মদদেই এসব হামলা ঘটছে। আমরা দেখেছি ট্রাইব্যুনালের বাইরে সাধারণ কোর্টে যে মামলাগুলো হয়েছে সেগুলোতে জামিন দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। জামিনে এসে আসামিরা অনেকে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং শহীদ পরিবার ও আহতদের হুমকি দিচ্ছে। দেশে ছোট ও বড় পর্যায়ে ঘটতে ঘটতে এখন দেশের বাইরেও একই ঘটনা ঘটছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটানোর দায়িত্ব সরকারের। সেটার জন্য সরকারের যে সর্বস্তরে ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো রয়ে গেছে তাদেরকে অপসারণ করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলন নিউ ইয়র্কের কনসাল জেনারেলের পদত্যাগসহ কয়েকটি দাবি জানানো হয়। সেগুলো হলো— যুক্তরাষ্ট্রে আখতার হোসেনের ওপর হামলাকারী সবাইকে চিহ্নিত ও অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। নিউইয়র্কের কনসাল জেনারেলকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে এবং ঘটনার পূর্ণ তদন্ত করে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। ফ্যাসিবাদের জমানায় নিয়োগকৃত আওয়ামী লীগের দোসরদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অপসারণ করতে হবে। উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর হামলাকারী হিসেবে যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। জুলাই গণহত্যার বিচার স্বচ্ছ ও ত্বরাণ্বিত করতে হবে। দল হিসেবে সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এখনো দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার শুরু হয়নি উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা ট্রাইব্যুনালের কাছে আবেদন জানাব এবং সরকারের পক্ষ থেকে যাতে উদ্যোগ নেওয়া হয়। দল হিসেবে আওয়ামী লীগের জুলাই গণঅভ্যুত্থানসহ গত ১৫ বছরের মানবতাবিরোধী অপকর্মের তদন্ত করে সেটার বিচার কার্যক্রম যেন শুরু করা হয়।’
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা নিউ ইয়র্কে বিমানবন্দরে অবস্থান নিলেও এনসিপির ‘ডায়াসপোরা কমিটির’ কেউ সেখানে ছিল না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমাদের প্রবাসী কমিটির সঙ্গে জড়িত অনেকেই সেখানে ছিলেন। কিন্তু তাদেরকে মিসগাইড করা হয়েছে। তাদেরকে বলা হয়েছিল যে তারা অন্য একটা গেট দিয়ে বের হবে। আমাদের সমর্থকদের অন্য একটা স্থানে থাকতে বলা হয়েছিল। কিন্তু পরে দেখা গেছে তাদের বের হওয়ার রাস্তাটা ভিন্ন করা হয়েছিল, যেটা আমাদের সমর্থকরা জানতো না। এটা যারা প্রোটোকলে জড়িত ছিল, যারা নিরাপত্তায় জড়িত ছিল তারাই করেছে। এজন্যই আমরা বলেছি যে, এই ঘটনার তদন্ত করে যারা নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা এবং কনস্যুলেট জেনারেলের অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। কারণ এটি সম্পূর্ণ তার ব্যর্থতার পরিচয়।’
একটি বিদেশি গণমাধ্যমে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের ইসলাম আলমগীরের দেওয়া বক্তব্য নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমি বক্তব্যের কোনো প্রতিক্রিয়া দিতে চাই না। শুধু বলতে চাই, আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার রাজনীতি যদি এখন বিএনপি গ্রহণ করে থাকে তাহলে সেই রাজনীতি বিএনপির জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে। ফলে আমরা বলব যে, বিএনপিকে আমরা গণঅভ্যুত্থানের অংশীদার মনে করি। আমাদের ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ের অংশীদার মনে করি। বিএনপি যাতে ভুল রাজনীতি না করে। বিএনপির প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, বাংলাদেশকে নতুন করে গঠন করতে হলে সংস্কার, বিচার এবং বাংলাদেশের পুনর্গঠন প্রশ্নে এখানে আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগ যে সকল বৈদেশিক শক্তির সমর্থনে দেশে ক্ষমতায় ছিল, জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে, তাদের সাথে আপস করে আসলে বাংলাদেশে আর রাজনীতি করা সম্ভব নয়।’
এনসিপি এখন আর কোনো রাজনৈতিক শক্তি না মির্জা ফখরুলের এমন বক্তব্যের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি কোনো শক্তি কি শক্তি না এটা আসলে রাজপথে ভোটের মাঠে জনগণই এটার রায় দেবে। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, জাতীয় নাগরিক পার্টি যাতে নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে না পারে সেই জন্য কিন্তু চতুর্মুখে আক্রমণের শিকার আমরা হচ্ছি। গত এক বছর ধরেই হচ্ছি। কারণ যারা বাংলাদেশকে নতুন করে পুনর্গঠন করতে চায় না, যারা পুরনো ক্ষমতা কাঠামোই রাখতে চায় এটা শুধু আওয়ামী লীগ না আওয়ামী লীগের বাইরেও বিভিন্ন শক্তি তারা কিন্তু চায় না যে তরুণদের একটি শক্তির উত্থান ঘটুক। জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্থান ঘটুক।’
এ প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘গত ১৫ বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াই যারা করেছেন, নির্যাতিত হয়েছেন, তাদের প্রতি আমাদের সমবেদনা রয়েছে, সহমর্মিতা রয়েছে কিন্তু তাদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থান হয় নাই। তাঁরা বারবার আহ্বান করার পরেও কিন্তু জনতা রাজপথে নেমে আসেনি। ফলে জনগণ কাদের কথায় নেমে আসবে, জনগণ কাদেরকে সমর্থন করবে, এটা আসলে আমরা ভোটের মাঠে এবং রাজপথে বুঝতে পারব। তাই বিএনপির প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, আওয়ামী পুনর্বাসনের রাজনীতি থেকে সরে এসে বাংলাদেশ পুনর্গঠনের রাজনীতিতে শরিক হোন। তাহলে তারা তরুণদের সমর্থন পাবে।’
আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আনার সুযোগ নেই উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি একদিকে যেমন আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী কার্যক্রম করছে, অন্যদিকে দেশের কোনো কোনো রাজনীতিবিদ আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আনার ষড়যন্ত্র করছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আনার অথবা আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে পুনর্বাসন করার কোনো সুযোগ নাই। যারা এটা করার চেষ্টা করবে জনগণ তাদের বিরুদ্ধেই দাঁড়াবে। তাদের রাজনীতি বাংলাদেশ থেকে নাই হয়ে যাবে।’
ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য জোরদারের আহ্বান জানিয়ে এনসিপির আহবায়ক বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ৩৬ জুলাই বাংলাদেশের ছাত্রজনতা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তাদের রায় জানিয়ে দিয়েছে। সে রায়টি ছিল আওয়ামী লীগ এবং মুজিববাদীদের কোনো রাজনীতি বাংলাদেশে থাকবে না। তারা যে অপকর্ম করেছে বাংলাদেশে সেজন্য তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। ফলে আমি আহ্বান জানাব, ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল রাজনৈতিক পক্ষকে যাতে এই আওয়ামী লীগ প্রশ্নে, মুজিব প্রশ্নে আমরা সবাই এক থাকি। বিচারের মাধ্যমে আমরা যাতে তাদের রাজনৈতিক ফয়সালা করতে পারি। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন এবং দেশকে অস্থিতিশীল করতে আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র যাতে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দিতে পারি।’
আখতার হোসেনের ওপর হামলার প্রতিবাদে আজ সোমবার বিকেল পাঁচটায় শাহবাগে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল করার ঘোষণা দিয়েছে এনসিপি। একই সঙ্গে দেশের সব জেলা ও মহানগরে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্তও জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব নাহুদা সারওয়ার নিভা, যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনূভা জাবীন, যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তরে সংযুক্ত) সালেহ উদ্দিন সিফাত, যুগ্ম সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল-আমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণঅভ য ত থ ন আখত র হ স ন ন উ ইয়র ক র র জন ত ক র র জন ত র আহ ব ন ব এনপ র এনস প র আম দ র কর ম র ত দ রক র জন য র ওপর র সমর আওয় ম সদস য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ার কমপার্টমেন্টে লুকিয়ে দিল্লিতে নামলো আফগান কিশোর
যাত্রীবাহী বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ার কমপার্টমেন্টে লুকিয়ে কাবুল থেকে দিল্লিতে গিয়েছে ১৩ বছর বয়সী এক আফগান কিশোর। মঙ্গলবার বিবিসি এ তথ্য জানিয়েছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উত্তর আফগানিস্তানের কুন্দুজ শহরের বাসিন্দা ওই কিশোরকে সোমবার বিমানটি অবতরণের পর দিল্লির আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়েতে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে।
ভারতীয় নিরাপত্তা কর্মীরা তাকে আটক করে কয়েক ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে একই ফ্লাইটে তাকে কাবুলে ফেরত পাঠানো হয়।
ছেলেটি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে, সে কৌতূহলবশত এই যাত্রা করেছিল।
ভারতীয় কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনীর একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, ছেলেটি কাম এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট আরকিউ-৪৪০১- এ করে রবিবার রাত ১১টা ১০ মিনিট নাগাদ দিল্লিতে অবতরণ করে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, ১৩ বছর বয়সী ওই কিশোর ইরানে ভ্রমণ করতে চেয়েছিল এবং সে জানত না যে সে যে বিমানে উঠেছিল তা দিল্লির উদ্দেশ্যে যাত্রা করছে, তেহরানের উদ্দেশ্যে নয়। এর আগে ছেলেটি কাবুল বিমানবন্দরে লুকিয়ে ছিল এবং যাত্রীদের একটি দলের পিছু পিছু বিমানবন্দরের ভেতরে ঢুকে পরে। নিরাপত্তা চোখ এড়িয়ে সে বিমানের পিছনের চাকায় - ল্যান্ডিং গিয়ার রাখার কমাপার্টমেন্টে লুকিয়ে পড়ে। তার সঙ্গী হিসেবে ছিল শুধু লাল রঙের একটি স্পিকার।
ঢাকা/শাহেদ