যুক্তরাষ্ট্রে দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেনসহ অন্যদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের শনাক্ত করে তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। নিউ ইয়র্কের বিমানবন্দরে আখতার হোসেনকে হেনস্তা ও তাঁর ওপর ডিম নিক্ষেপের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে এই দাবি জানিয়েছে দলটি।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার বাংলা মোটরে জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এই দাবি জানান।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি ও তাঁর সফরসঙ্গীরা স্থানীয় সোমবার বিকেলে নিউ ইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। সফরসঙ্গীদের মধ্যে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক তাসনিম জারা, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েকজন বিমানবন্দর থেকে বেরোনোর সময় আওয়ামী লীগের একদল নেতা–কর্মীর সামনে পড়েন। এ সময় আখতার ও তাসনিম জারাকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন ও কটূক্তি করেন। আখতার হোসেনকে হেনস্তার এক পর্যায়ে তাঁর গায়ে ডিম নিক্ষেপ করা হয়।

বাংলাদেশ সময় সোমবার দিবাগত মধ্যরাত ৩টার দিকের এই ঘটনা নিয়ে বিকেলে জরুরি ওই সংবাদ সম্মেলন করেন এনসিপির নেতারা। সেখানে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃবৃন্দকে দেশ–বিদেশে হামলার টার্গেটে (নিশানা) পরিণত করেছে। গোপালগঞ্জে জুলাই পদযাত্রায় তাঁদেরকে হত্যাচেষ্টা, উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর বিদেশে হামলার চেষ্টা এবং সর্বশেষ নিউ ইয়র্কের এয়ারপোর্টে ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এগুলো আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী তৎপরতারই ধারাবাহিকতা।

সরকার ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাজনৈতিক নেতাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে অভিযোগ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘প্রশাসনের ভেতরের একটি অংশের মদদেই এসব হামলা ঘটছে। আমরা দেখেছি ট্রাইব্যুনালের বাইরে সাধারণ কোর্টে যে মামলাগুলো হয়েছে সেগুলোতে জামিন দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। জামিনে এসে আসামিরা অনেকে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং শহীদ পরিবার ও আহতদের হুমকি দিচ্ছে। দেশে ছোট ও বড় পর্যায়ে ঘটতে ঘটতে এখন দেশের বাইরেও একই ঘটনা ঘটছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটানোর দায়িত্ব সরকারের। সেটার জন্য সরকারের যে সর্বস্তরে ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো রয়ে গেছে তাদেরকে অপসারণ করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’

সংবাদ সম্মেলন নিউ ইয়র্কের কনসাল জেনারেলের পদত্যাগসহ কয়েকটি দাবি জানানো হয়। সেগুলো হলো— যুক্তরাষ্ট্রে আখতার হোসেনের ওপর হামলাকারী সবাইকে চিহ্নিত ও অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। নিউইয়র্কের কনসাল জেনারেলকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে এবং ঘটনার পূর্ণ তদন্ত করে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। ফ্যাসিবাদের জমানায় নিয়োগকৃত আওয়ামী লীগের দোসরদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অপসারণ করতে হবে। উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর হামলাকারী হিসেবে যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। জুলাই গণহত্যার বিচার স্বচ্ছ ও ত্বরাণ্বিত করতে হবে। দল হিসেবে সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এখনো দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার শুরু হয়নি উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা ট্রাইব্যুনালের কাছে আবেদন জানাব এবং সরকারের পক্ষ থেকে যাতে উদ্যোগ নেওয়া হয়। দল হিসেবে আওয়ামী লীগের জুলাই গণঅভ্যুত্থানসহ গত ১৫ বছরের মানবতাবিরোধী অপকর্মের তদন্ত করে সেটার বিচার কার্যক্রম যেন শুরু করা হয়।’

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা নিউ ইয়র্কে বিমানবন্দরে অবস্থান নিলেও এনসিপির ‘ডায়াসপোরা কমিটির’ কেউ সেখানে ছিল না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমাদের প্রবাসী কমিটির সঙ্গে জড়িত অনেকেই সেখানে ছিলেন। কিন্তু তাদেরকে মিসগাইড করা হয়েছে। তাদেরকে বলা হয়েছিল যে তারা অন্য একটা গেট দিয়ে বের হবে। আমাদের সমর্থকদের অন্য একটা স্থানে থাকতে বলা হয়েছিল। কিন্তু পরে দেখা গেছে তাদের বের হওয়ার রাস্তাটা ভিন্ন করা হয়েছিল, যেটা আমাদের সমর্থকরা জানতো না। এটা যারা প্রোটোকলে জড়িত ছিল, যারা নিরাপত্তায় জড়িত ছিল তারাই করেছে। এজন্যই আমরা বলেছি যে, এই ঘটনার তদন্ত করে যারা নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা এবং কনস্যুলেট জেনারেলের অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। কারণ এটি সম্পূর্ণ তার ব্যর্থতার পরিচয়।’

একটি বিদেশি গণমাধ্যমে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের ইসলাম আলমগীরের দেওয়া বক্তব্য নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমি বক্তব্যের কোনো প্রতিক্রিয়া দিতে চাই না। শুধু বলতে চাই, আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার রাজনীতি যদি এখন বিএনপি গ্রহণ করে থাকে তাহলে সেই রাজনীতি বিএনপির জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে। ফলে আমরা বলব যে, বিএনপিকে আমরা গণঅভ্যুত্থানের অংশীদার মনে করি। আমাদের ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ের অংশীদার মনে করি। বিএনপি যাতে ভুল রাজনীতি না করে। বিএনপির প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, বাংলাদেশকে নতুন করে গঠন করতে হলে সংস্কার, বিচার এবং বাংলাদেশের পুনর্গঠন প্রশ্নে এখানে আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগ যে সকল বৈদেশিক শক্তির সমর্থনে দেশে ক্ষমতায় ছিল, জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে, তাদের সাথে আপস করে আসলে বাংলাদেশে আর রাজনীতি করা সম্ভব নয়।’

এনসিপি এখন আর কোনো রাজনৈতিক শক্তি না মির্জা ফখরুলের এমন বক্তব্যের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি কোনো শক্তি কি শক্তি না এটা আসলে রাজপথে ভোটের মাঠে জনগণই এটার রায় দেবে। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, জাতীয় নাগরিক পার্টি যাতে নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে না পারে সেই জন্য কিন্তু চতুর্মুখে আক্রমণের শিকার আমরা হচ্ছি। গত এক বছর ধরেই হচ্ছি। কারণ যারা বাংলাদেশকে নতুন করে পুনর্গঠন করতে চায় না, যারা পুরনো ক্ষমতা কাঠামোই রাখতে চায় এটা শুধু আওয়ামী লীগ না আওয়ামী লীগের বাইরেও বিভিন্ন শক্তি তারা কিন্তু চায় না যে তরুণদের একটি শক্তির উত্থান ঘটুক। জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্থান ঘটুক।’

এ প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘গত ১৫ বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াই যারা করেছেন, নির্যাতিত হয়েছেন, তাদের প্রতি আমাদের সমবেদনা রয়েছে, সহমর্মিতা রয়েছে কিন্তু তাদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থান হয় নাই। তাঁরা বারবার আহ্বান করার পরেও কিন্তু জনতা রাজপথে নেমে আসেনি। ফলে জনগণ কাদের কথায় নেমে আসবে, জনগণ কাদেরকে সমর্থন করবে, এটা আসলে আমরা ভোটের মাঠে এবং রাজপথে বুঝতে পারব। তাই বিএনপির প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, আওয়ামী পুনর্বাসনের রাজনীতি থেকে সরে এসে বাংলাদেশ পুনর্গঠনের রাজনীতিতে শরিক হোন। তাহলে তারা তরুণদের সমর্থন পাবে।’

আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আনার সুযোগ নেই উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি একদিকে যেমন আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী কার্যক্রম করছে, অন্যদিকে দেশের কোনো কোনো রাজনীতিবিদ আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আনার ষড়যন্ত্র করছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আনার অথবা আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে পুনর্বাসন করার কোনো সুযোগ নাই। যারা এটা করার চেষ্টা করবে জনগণ তাদের বিরুদ্ধেই দাঁড়াবে। তাদের রাজনীতি বাংলাদেশ থেকে নাই হয়ে যাবে।’

ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য জোরদারের আহ্বান জানিয়ে এনসিপির আহবায়ক বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ৩৬ জুলাই বাংলাদেশের ছাত্রজনতা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তাদের রায় জানিয়ে দিয়েছে। সে রায়টি ছিল আওয়ামী লীগ এবং মুজিববাদীদের কোনো রাজনীতি বাংলাদেশে থাকবে না। তারা যে অপকর্ম করেছে বাংলাদেশে সেজন্য তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। ফলে আমি আহ্বান জানাব, ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল রাজনৈতিক পক্ষকে যাতে এই আওয়ামী লীগ প্রশ্নে, মুজিব প্রশ্নে আমরা সবাই এক থাকি। বিচারের মাধ্যমে আমরা যাতে তাদের রাজনৈতিক ফয়সালা করতে পারি। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন এবং দেশকে অস্থিতিশীল করতে আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র যাতে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দিতে পারি।’

আখতার হোসেনের ওপর হামলার প্রতিবাদে আজ সোমবার বিকেল পাঁচটায় শাহবাগে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল করার ঘোষণা দিয়েছে এনসিপি। একই সঙ্গে দেশের সব জেলা ও মহানগরে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্তও জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব নাহুদা সারওয়ার নিভা, যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনূভা জাবীন, যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তরে সংযুক্ত) সালেহ উদ্দিন সিফাত, যুগ্ম সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল-আমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণঅভ য ত থ ন আখত র হ স ন ন উ ইয়র ক র র জন ত ক র র জন ত র আহ ব ন ব এনপ র এনস প র আম দ র কর ম র ত দ রক র জন য র ওপর র সমর আওয় ম সদস য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

চার আসনে বিক্ষোভ, ফরিদপুরে সংঘর্ষ, আহত ২৩

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণার পঞ্চম দিনেও অন্তত চারটি আসনে প্রার্থিতা নিয়ে দলটির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, বিক্ষোভ ও মিছিল হয়েছে। প্রার্থিতা বদল ও মনোনয়ন প্রত্যাশাকে ঘিরে এসব ঘটনা ঘটে।

এর মধ্যে গতকাল শুক্রবার ফরিদপুর ১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পুলিশের তিন সদস্যসহ অন্তত ২৩ জন আহত হয়েছেন। এর বাইরে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে গতকাল পর্যন্ত প্রার্থী বদলের দাবিতে অন্তত তিনটি আসনে বিক্ষোভ হয়েছে।

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে গত সোমবার ২৩৭টি আসনে প্রাথমিকভাবে মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এরপর থেকে প্রার্থী বদল ও মনোনয়ন প্রত্যাশাকে কেন্দ্র করে দেশের অন্তত ১২টি আসনে বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে।

ফরিদপুরে দুই পক্ষের সংঘর্ষ

ফরিদপুর-১ আসনে (বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা ও মধুখালী) বিএনপি এখনো কাউকে প্রার্থী ঘোষণা করেনি। তবে প্রতিদ্বন্দ্বী দুটি পক্ষ এখানে মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশায় মাঠে রয়েছে। জেলার বোয়ালমারীতে গতকাল বিকেলে দলটির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশের তিন সদস্যসহ উভয় পক্ষের অন্তত ২৩ জন আহত হন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম ও বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শামসুদ্দীন মিয়ার নেতৃত্বে বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপি দুই ভাগে বিভক্ত। দুই নেতাই আসন্ন সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-১ আসন থেকে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী।

গতকাল সংঘর্ষের সময় বিএনপির এক পক্ষের একটি কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। আগুন দেওয়া হয় অন্তত ১০টি মোটরসাইকেলে। এ ছাড়া আশপাশের কয়েকটি দোকানে ভাঙচুর করা হয়। হামলাকারীদের হাতে রামদা, চাইনিজ কুড়ালসহ বিভিন্ন দেশি অস্ত্র দেখা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বেলা তিনটার দিকে শামসুদ্দীন মিয়ার সমর্থকেরা ওয়াপদার মোড় এলাকায় ও নাসিরুল ইসলামের সমর্থকেরা প্রায় এক কিলোমিটার দূরে কাজী সিরাজুল ইসলাম মহিলা কলেজ মোড়ে জড়ো হন। তাঁদের হাতে বাঁশের লাঠির মাথায় ধানের শীষ বাঁধা ছিল। বিকেল চারটার দিকে নাসিরুল ইসলামের অনুসারীরা মিছিল নিয়ে ওয়াপদার মোড়ের দিকে এগোতে থাকেন। তখন শামসুদ্দীনের সমর্থকেরা কলেজের দিকে যেতে থাকেন। উভয় পক্ষ বোয়ালমারী পৌরসভার সামনে এলে পরস্পরের দিকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে শুরু করে। একপর্যায়ে শামসুদ্দীনের সমর্থকেরা পিছু হটে ওয়াপদার মোড়ে হারুন শপিং কমপ্লেক্সের সামনে অবস্থান নেন।

শামসুদ্দীন মিয়া প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, নাসিরুলের লোকজন আওয়ামী লীগের লোকদের সঙ্গে নিয়ে অতর্কিতে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। ১০টি মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছে। এতে তাঁর ১৫ জন সমর্থক আহত হয়েছেন। তাদের কার্যালয়ে থাকা বেগম খালেদা জিয়ার ছবি ভাঙচুর করা হয়েছে।

তবে খন্দকার নাসিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ছিলাম মধুখালী। আমাদের লোকজনের ওপর হামলা করা হয়েছে। একজনকে কুপিয়ে জখম করেছে। ওরা হারুন শপিং কমপ্লেক্সের ওপরে উঠে আমার সমর্থদের ওপর ইট ছুড়ে মারলে চার-পাঁচজন আহত হন। এতে জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে শপিং কমপ্লেক্সে হামলা করে।’

বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান সন্ধ্যা ছয়টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।

আরও বিক্ষোভ

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম চৌধুরীকে সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর) আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার দাবিতে মিছিল ও সমাবেশ করেছেন স্থানীয় বিএনপির একাংশের নেতা-কর্মীরা। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে তিন উপজেলার অন্তত ১৫টি স্থানে পৃথকভাবে এ কর্মসূচি পালিত হয়।

সিলেট জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে সিলেট-৪ ও সিলেট-৫ ছাড়া অন্য চারটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছিল। এর মধ্যে সিলেট-১ আসনে প্রার্থী করা হয় দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদিরকে। ওই আসনে সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরীও মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। আরিফুলের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, ঢাকায় ডেকে গত বুধবার রাতে আরিফুলকে সিলেট-৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আরিফুল হক চৌধুরী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিলেটে ফেরেন। তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘তিন মাস লাগবে না। আগামী তিন দিনেই সিলেট-৪ আসনে আওয়াজ উঠে যাবে। কাজ দিয়েই নিজেকে জনগণের কাছে প্রমাণ করব।’

দিনাজপুর-২ আসনে (বিরল-বোচাগঞ্জ) বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে গতকাল বেলা ১১টার দিকে উপজেলা শহরে কাফনের কাপড় পরে মৌন মিছিল করেছেন মনোনয়ন না পাওয়া তিন নেতার অনুসারীরা।

‘মনোনয়নবঞ্চিত’ তিনজন হলেন জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ, সহসভাপতি মোজাহারুল ইসলাম এবং শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম। এই আসনে প্রার্থী করা হয়েছে সাদিক রিয়াজকে। তিনি জেলা বিএনপির নির্বাহী সদস্য।

দুপুরে উপজেলার শহীদ মিনার চত্বরে ‘বিপ্লব ও সংহতি’ দিবসের আলোচনা সভায় উপস্থিত হন মনোনয়নবঞ্চিত ওই তিন নেতা। পরে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে বক্তব্য দেন তাঁরা। এ সময় বজলুর রশিদ বলেন, ‘সাদিক রিয়াজ রাজনীতির মাঠে কোনো আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন না। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে সব আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেছেন। তাঁকে বাদ দিয়ে বিরল-বোচাগঞ্জের যে কাউকে মনোনয়ন দিলে আমরা মেনে নেব।’

রাজশাহীর পবা উপজেলায় গতকাল ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ এর এক অনুষ্ঠান থেকে রাজশাহী-৩ আসনের প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি উঠেছে। রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয় সম্পাদক শফিকুল হক মিলন।

মাদারীপুরে স্থগিতের প্রতিবাদ

মাদারীপুর-১ আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী কামাল জামান মোল্লার মনোনয়ন স্থগিত করার প্রতিবাদ ও প্রার্থিতা পুনর্বহালের দাবিতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বিকেলে উপজেলার হাতির মাঠে এ সমাবেশ হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কামাল জামান মোল্লা নিজে। মনোনয়ন ঘোষণার পরদিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাঁর মনোনয়ন স্থগিত করেছিল বিএনপি।

জামান মোল্লা জেলা বিএনপির এক নেতাকে ইঙ্গিত করে বলেন, তিনি আওয়ামী লীগের দোসরের লোক। তাঁর নির্দেশেই অপপ্রচার চালিয়ে তাঁর (জামান মোল্লা) ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা চলছে।

গতকাল বিকেলে কুমিল্লার হোমনা সদরে ঝাড়ু মিছিল করেছে বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের একাংশের নেতা-কর্মীরা। কুমিল্লা-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী বিভাগীয় এক নেতার বিরুদ্ধে এ মিছিল হয়। এ আসনে বিএনপি এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ