রাকসু নির্বাচন পেছানোয় ক্যাম্পাস ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা
Published: 23rd, September 2025 GMT
পোষ্য কোটা ইস্যুতে অচলাবস্থার কারণে বাড়িমুখী হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। ইতোমধ্যে গত দুই দিনে অধিকাংশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। বাকি যারা ক্যাম্পাসে ছিলেন, রাকসু নির্বাচন পেছানোর ঘোষণা আসার পর তারাও মঙ্গলবার সকাল থেকে ধীরে ধীরে ক্যাম্পাস ছাড়তে শুরু করেছেন।
এদিকে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের পূর্বঘোষিত কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করছেন।
আরো পড়ুন:
রাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি
জাবিতে হলের ছাদে মদ ও গাঁজা সেবন করছিলেন ছাত্রদল নেতাসহ ১৫ শিক্ষার্থী
গত দুইদিন কর্মবিরতি থাকা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির রিডিং রুম খোলা ছিল। তবে মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) নির্ধারিত সময় সকাল ৮টায় রিডিং রুম বন্ধ ছিল। ফলে শিক্ষার্থীরা রিডিং রুম খোলার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর রিডিং রুম শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে কর্মবিরতি শুরু হয়। বন্ধ আছে সকল বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা এবং প্রশাসনিক সকল কার্যক্রম। প্রশাসন ভবনের সামনে ও বুদ্ধিজীবী চত্বরে বসে সময় কাটাচ্ছেন কর্মবিরতিতে অংশগ্রহণকারীরা। বিভিন্ন ভবনের তালা খোলা হয়। তবে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি খুবই কম। খাবার দোকানগুলোতে আসন ফাঁকা।
সরেজমিনে ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, পরিবহন মার্কেট, আমতলা, টুকিটাকি চত্বরসহ জনবহুল এলাকায় শিক্ষার্থীদের আনাগোনা কম। ক্যাম্পাস সংলগ্ন বিনোদপুর গেইট ও কাজলা গেইটে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা ব্যাগপত্র নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন।
বাড়ি যাচ্ছিলেন ঐশ্বর্য বিশ্বাস নামে এক রাবি শিক্ষার্থী। বিনোদপুর গেইটে তার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, “রাজশাহীতে কিছু কাজ ছিল, তাই ক্যাম্পাসে ছিলাম। যেহেতু নির্বাচন পেছানোর ঘোষণা এসেছে, আর পোষ্য কোটার বিষয় সমাধান হয়নি, তাই বাড়ি চলে যাচ্ছি। পূজার ছুটি শেষে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ক্যাম্পাসে ফিরব।”
ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল বলেন, “ক্লাস-পরীক্ষা কিছু হচ্ছে না, আর হবে বলেও মনে হচ্ছে না। এখানে থেকে এখন আর লাভ নেই। ভাবছিলাম রাকসুতে ভোট দিয়ে বাসায় যাব। কিন্তু রাকসুও পেছাল। সবাই চলে যাচ্ছে আমিও কাল চলে যাব।”
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তন্ময় বলেন, “ক্যাম্পাসের যে অবস্থা মেস থেকে অলরেডি সবাই চলে যাচ্ছে। ক্লাসও হচ্ছে না, এখন আর রাজশাহী থেকে কি করি। আমার বন্ধুরা প্রায় সবাই চলে গেছে। তাই আমিও আজ বাসায় চলে যাচ্ছি।”
ক্যাম্পাসের দোকানদার সুরুজ আলী বলেন, “আজ ক্যাম্পাস খোলার দিন। কিন্তু তারপরও শিক্ষার্থীরা নেই। তেমন ব্যবসা হচ্ছে না।”
গত রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) পোষ্য কোটা নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি সিন্ডিকেট মিটিং শেষে পোষ্য কোটা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। সেই সঙ্গে গত শনিবারের শিক্ষক লাঞ্ছনার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ।
তবে কোটা স্থগিতের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার ও শিক্ষক লাঞ্ছনার বিচারের দাবিতে কমপ্লিট শাটডাউনের ঘোষণা দেন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) নানা উত্তেজনার পর রাতে নির্বাচন কমিশনের সভায় নির্বাচন ২১ দিন পিছিয়ে ১৬ অক্টোবর ধার্য করা হয়। কমিশন জানায়, উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিতে নির্বাচন পরিচালনা সম্ভব নয়।
এদিন রাতে বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, চলমান কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
আশুলিয়ায় থানার সামনে ৬ লাশ পোড়ানোর পর কেউ সেগুলো মসজিদের সামনে রেখে আসে
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ৫ আগস্ট আশুলিয়া থানার সামনে ছয়জনের লাশ পোড়ানো হয় বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন ভাঙারি ব্যবসায়ী মতিবর রহমান (বুইদ্দা)। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, কেউ রাতের বেলায় বাইপাইল মসজিদের সামনে পোড়া লাশগুলো রেখে আসে।
গণ-অভ্যুত্থানের সময় আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মতিবর রহমান জবানবন্দি দিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ ষষ্ঠ সাক্ষী হিসেবে তিনি এ জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দিতে মতিবর রহমান বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট বেলা দুইটার পর যখন আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ করে, তখন ছেলেরা মিছিল বের করে। আশুলিয়া থানার সামনে দিয়ে মিছিল যাওয়ার সময় পুলিশ গুলি করে। এরপর গুলিতে নিহত ব্যক্তিদের লাশগুলো (একজন জীবিত ছিলেন) থানার সামনে পুলিশের গাড়িতে রেখে গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। বিকেল চারটা পর্যন্ত গুলি চলতে থাকে। পরে সাড়ে চারটার দিকে পুলিশ গুলি করতে করতে সেনাবাহিনীর গাড়ি দিয়ে চলে যায়।
সেদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই জায়গাতেই (আশুলিয়া থানা) ছিলেন বলেও জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন মতিবর রহমান। তিনি বলেন, রাতের বেলা তিনি বাসায় চলে যান। এই লাশগুলো থানার সামনেই পোড়ানো হয় এবং কেউ রাতের বেলায় বাইপাইল মসজিদের সামনে রেখে আসে।
পরদিন ৬ আগস্ট দুপুর ১২টার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আসেন এবং বেলা দুইটার সময় সেনাবাহিনী আসে বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন মতিবর রহমান। তিনি বলেন, ‘ছয়টি লাশ গাড়ি থেকে বের করে পলিথিনে প্যাকেট করি এবং জানাজা পড়ানো হয়।’
এর মধ্যে চারজনের মোবাইল নম্বর পাওয়া যায় এবং তাঁদের অভিভাবকদের ফোন করা হলে তাঁরা এসে লাশ নিয়ে যান বলে জানান মতিবর রহমান। তিনি বলেন, ‘দুটি লাশের অভিভাবকদের পাওয়া যায়নি। সেগুলো আমতলা কবরস্থানে দাফন করা হয়। একদিন পর আবুলের স্ত্রী হলুদ গেঞ্জি ও লুঙ্গি পড়া কোনো লাশ দাফন করেছি কি না, জিজ্ঞাসা করলে আমি বলি যে হলুদ গেঞ্জি ও লুঙ্গি পড়া একটি লাশ পেয়েছি এবং দাফন করেছি।’
আরও পড়ুনআশুলিয়ায় ৬ জনের লাশ পোড়ানো: রাজসাক্ষী হলেন সাবেক এসআই আবজালুল২১ আগস্ট ২০২৫সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করেন
এ মামলায় সপ্তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন বাইপাইলের বাঘাবাড়ি বাজারের ফল ব্যবসায়ী মো. শফিকুল ইসলাম। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট তাঁরা বাইপাইল থেকে নবীনগরের দিকে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী নিয়ে অবস্থান করেন। বেলা একটার দিকে তাঁরা আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি ছোড়েন। সে সময় সাইফুল ইসলাম, তাঁর সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী ও পুলিশ একত্র হয়ে বাইপাইল এলাকায় ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করেন। ২০ থেকে ২৫ জন ছাত্র-জনতা নিহত হন এবং অনেকেই আহত হন। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার দাবি করেন তিনি।
আশুলিয়ায় ছয়জন আন্দোলনকারীকে পোড়ানোর ঘটনায় হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনার বিবরণে বলা হয়, গত বছরের ৫ আগস্ট বেলা তিনটার দিকে আশুলিয়া থানার সামনে পাঁচজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর বাইরে আরও একজন গুলিতে গুরুতর আহত হন। একজনকে জীবিত ও পাঁচজনকে মৃত অবস্থায় প্রথমে একটি ভ্যানে তোলা হয়। সেখান থেকে পুলিশের একটি গাড়িতে তোলে পুলিশ। পুলিশের গাড়িতে এই ছয়জনকে (যাঁর মধ্যে একজন জীবিত) আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় পুলিশ।
এ মামলায় মোট ১৬ জন আসামি। এর মধ্যে আট আসামি গ্রেপ্তার আছেন। আজ তাঁদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। তাঁরা হলেন সাভার সার্কেলের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শহিদুল ইসলাম, ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) উত্তরের সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন, আশুলিয়া থানার সাবেক উপপরিদর্শক আবদুল মালেক, আরাফাত উদ্দীন, কামরুল হাসান ও শেখ আবজালুল হক এবং সাবেক কনস্টেবল মুকুল চোকদার। তাঁদের মধ্যে শেখ আবজালুল হক ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী হিসেবে পরিচিত) হয়েছেন।
আরও পড়ুনভ্যানে লাশের স্তূপ করছে পুলিশ, ভাইরাল ভিডিও নিয়ে যা জানা গেল৩১ আগস্ট ২০২৪