অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গী জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেনকে নিউইয়র্কে হেনস্তার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দলটির নেতারা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ঘটনার সমালোচনা চলছে। প্রশ্ন উঠেছে, প্রতিবাদের ভাষা কি ডিম ছুড়ে মারা হতে পারে, নাকি এটি যুক্তরাষ্ট্রে ফৌজদারি অপরাধ?

বাংলাদেশ সময় সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে আখতার হোসেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি (জেএফকে) বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার সময় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের হাতে হেনস্তার শিকার হন। বাংলাদেশে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা দলটির নেতা-কর্মীরা আখতারের পিঠে ডিম ছুড়ে মারেন।

পশ্চিমা দেশসহ বিভিন্ন দেশেই ডিম ছুড়ে মারার ঘটনা ঘটে। এর ইতিহাসও পুরোনো।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের ২০১৫ সালের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ৬৩ খ্রিষ্টাব্দে রোমান গভর্নর ভেসপাসিয়ানকে শাস্তিমূলক নীতিতে ক্ষুব্ধ প্রজারা শালগম ছুড়ে মেরেছিল।

মধ্যযুগে ডিম প্রবেশ করে এ তালিকায়। তখন বন্দীদের প্রকাশ্যে একসঙ্গে বেঁধে ডিম ছুড়ে মারা ছিল নিয়মিত ঘটনা। এলিজাবেথীয় যুগে নাট্যমঞ্চে খারাপ অভিনয়ের প্রতিবাদে দর্শকেরা পচা ডিম ছুড়ত, যা আজকের রাজনৈতিক নাট্যমঞ্চে ব্যবহারের সঙ্গে খুব একটা বেমানান মনে হয় না।

তবে ডিম ছুড়ে মেরে ব্যক্তিকে আঘাত করা বা সম্পদের ক্ষতি করা কি বৈধ?

যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের ওয়েবসাইট ঘেঁটে ও আইনকানুন পড়ে জানা যায়, সেখানে কোনো ব্যক্তিকে যেকোনো বস্তু দিয়ে আঘাত করা অপরাধ। বিচারের ক্ষেত্রে দেখা হয়, ঘটনাটি মজার ছলে করা হয়েছে কি না, ঘটনাটি কারও প্রতি ঘৃণা থেকে করা হয়েছে কি না, অথবা বড় কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে কি না?

অভিযুক্ত ব্যক্তির মূল উদ্দেশ্য কী ছিল, সেটি পুলিশের তদন্তে প্রমাণিত হতে হবে।

আরও পড়ুনআখতারকে ডিম নিক্ষেপ: নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের শাস্তি চায় এনসিপি৪ ঘণ্টা আগে

আইনজীবী যা বললেন

অন্তর্বর্তী সরকারের কেউ পশ্চিমা দেশগুলো সফরে গেলে তাঁদের কেন্দ্র করে বিক্ষোভ করছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। ডিম ছুড়ে মারার ঘটনাও ঘটেছে।

যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ১২ সেপ্টেম্বর তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের গাড়ি লক্ষ্য করে ডিম ছুড়ে মারেন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। যদিও পরে বাংলাদেশ হাইকমিশন জানায়, মাহফুজ গাড়িতে ছিলেন না। এবার আখতারকে লক্ষ্য করে ডিম ছুড়ে মারা হলো নিউইয়র্কে।

আখতার হোসেনকে যুবলীগ কর্মী মিজানুর ডিম ছোড়েন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। তাঁকে পুলিশ আটক করেছে। অবশ্য আটক করা হয়েছে বিএনপির এক কর্মীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে। বিএনপি কর্মী পুলিশকে বলেছিলেন, মিজানুর তাঁকে ছুরি দিয়ে আঘাত করতে চেয়েছিলেন।

ডিম ছোড়ার বিষয়টি নিয়ে নিউইয়র্কে কর্মরত আইনজীবী মীর মো.

মিজানুর রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জেএফকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আখতারের ওপর ডিম নিক্ষেপের ঘটনাটি কোনো হালকা ঘটনা নয়। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ফৌজদারি আইন অনুযায়ী অপরাধ। এ ধরনের অপরাধের জন্য জেলও হতে পারে, শারীরিক আঘাত হলে শাস্তি আরও কঠিন হয়।

আরও পড়ুননিউইয়র্কে এনসিপি নেতা আখতারকে হেনস্তা করলেন আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীরা, ডিম নিক্ষেপ১২ ঘণ্টা আগে

মিজানুর রহমান আরও বলেন, নিউইয়র্ক রাজ্যের কিছু সাধারণ আইনে এ ঘটনাকে হয়তো হয়রানি বা আক্রমণ বলা যেত। কিন্তু যেহেতু ভুক্তভোগী জাতিসংঘের ৮০তম অধিবেশনে অংশ নিতে একটি দেশের সরকারপ্রধানের সফরসঙ্গী হিসেবে এসেছেন, তাই এ ক্ষেত্রে ফেডারেল আইন প্রযোজ্য হবে।

‘যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো বিদেশি প্রতিনিধিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এ ঘটনার গুরুত্ব তাই অত্যন্ত বেশি’, বলেন মীর মো. মিজানুর রহমান। তিনি মনে করেন, আখতার যেহেতু জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে বাংলাদেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গে এসেছেন, সেহেতু তিনি আন্তর্জাতিকভাবে সুরক্ষিত ব্যক্তি হিসেবে গণ্য হবেন।

জাতিসংঘের কনভেনশন অন দ্য প্রিভেনশন অ্যান্ড পানিশমেন্ট অব ক্রাইমস অ্যাগেইনস্ট ইন্টারন্যাশনালি প্রোটেক্টেড পারসনস, ইনক্লুডিং ডিপ্লোমেটিক এজেন্টস, ১৯৭৩ অনুযায়ী, যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে আন্তর্জাতিকভাবে সুরক্ষিত কোনো ব্যক্তির ওপর আক্রমণ চালায়, হুমকি দেয়, হামলায় সহযোগিতা বা অংশ নেয়, তাহলে প্রতিটি দেশকে তাদের নিজস্ব আইনে একে অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে।

আরও পড়ুনএটি ব্যক্তি আখতার হোসেনের ওপর আক্রমণ নয়: তাসনিম জারা৪ ঘণ্টা আগে

অধ্যাপক ইউনূসের সফরসঙ্গী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া আখতার হোসেন আন্তর্জাতিকভাবে সুরক্ষিত ব্যক্তি হিসেবে গণ্য হবেন কি না, জানতে চাওয়া হয়েছিল সাবেক কূটনীতিকের এম হুমায়ুন কবিরের কাছে। তিনি আরও বলেন, সাধারণত রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান এ মর্যাদা পান। তাঁদের সফরসঙ্গীরা সাধারণত পান না।

ডিম ছোড়া অপরাধ কি না, সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত আরেক আইনজীবীর বক্তব্য নিয়েছে প্রথম আলো। তাঁর নাম খাইরুল বাশার। প্রথম আলোর নিউইয়র্ক প্রতিনিধি খাইরুল বাশারকে তিনি বলেন, নিউইয়র্কে এটা অপরাধ, তবে গুরুতর নয়। তবে নির্ভর করে পুলিশ কীভাবে অভিযোগপত্র লিখছে, তার ওপর।

খাইরুল বাশার বলেন, সাধারণত এসব অপরাধে প্রবেশনমূলক শাস্তি হয়ে থাকে এবং মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। অঙ্গীকার নেওয়া হয় যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এ ধরনের অপরাধ আর করবেন না।

আরও পড়ুনআখতারকে ডিম ছোড়ার পর যুবলীগ কর্মী মিজানুর আটক, বিএনপি কর্মীকে মারার অভিযোগ৯ ঘণ্টা আগে

গালাগাল করা কী অপরাধ

অধ্যাপক ইউনূসের সফরসঙ্গী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছেন ছয়জন রাজনীতিবিদ। তাঁরা হলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির এবং জামায়াতের সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে নকিবুর রহমান তারেক, যিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকেই প্রতিনিধিদলে যোগ দেবেন।

সোমবার রাতে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা শুধু আখতারকে হেনস্তা করেনি, মির্জা ফখরুল ও তাসনিম জারার উদ্দেশে তাঁরা কটূক্তি করেছেন। বিশেষ করে জারার উদ্দেশে অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে।

আইনজীবীরা বলছেন, মৌখিকভাবে যা-ই বলা হোক, তাঁকে অপরাধ হিসেবে প্রমাণ করা যুক্তরাষ্ট্রের আইনে কঠিন। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। তবে কারও ওপর আঘাত করার সুযোগ নেই।

আরও পড়ুননিউইয়র্কের বিমানবন্দরের ঘটনা নিয়ে ফেসবুকে মির্জা ফখরুলের প্রতিক্রিয়া৪ ঘণ্টা আগে

বাংলাদেশে শাস্তি কী

বাংলাদেশের আইনজীবীরা বলছেন, দেশে কোনো ব্যক্তি কাউকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ডিম নিক্ষেপ করলে আদালতে তার প্রতিকার চাওয়ার সুযোগ আছে।

বিষয়টি নিয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী প্রথম আলোকে বলেন, কোনো ব্যক্তি কাউকে সামাজিকভাবে হেনস্তা করতে ডিম ছুড়ে মারলে ভুক্তভোগী ব্যক্তি মানহানির মামলা করতে পারেন।

দেশের আদালত চত্বরে সাম্প্রতিক ডিম ছোড়ার ঘটনাগুলোর বিষয়ে পিপি ফারুকী বলেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ থেকে আদালত চত্বরে ডিম ছোড়ার ঘটনা ঘটেছিল। তবে তাঁরা এ ধরনের ঘটনাকে সমর্থন করেন না।

ফারুকী আরও বলেন, আখতার হোসেনের ওপর ডিম নিক্ষেপের ঘটনাটি প্রতিশোধের নেশায় তাঁর সম্মানহানি করার জন্য করা হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র আখত র হ স ন র সফরসঙ গ প রথম আল ন উইয়র ক র রহম ন আইনজ ব কর ম র প রক শ উদ দ শ ব এনপ ঘটন ট র ওপর এনস প অপর ধ সরক র র ঘটন আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

গণ–অভ্যুত্থানে বিদেশি শক্তির ইন্ধন ছিল না: নাহিদ ইসলাম

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে বিদেশি ‘শক্তির’ ইন্ধন থাকার যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা অসত্য বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। গতকাল রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্র নিযুক্ত আসামিপক্ষের আইনজীবী আমির হোসেন জেরা করেন তাঁকে।

জেরার এক পর্যায়ে নাহিদকে আসামিপক্ষের আইনজীবী প্রশ্ন করেন, ‘দেশি-বিদেশি শক্তির ইন্ধন ছিল বিধায় আপনারা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।’

জবাবে নাহিদ বলেন, এ কথা সত্য নয়।

এরপর নাহিদকে আইনজীবী প্রশ্ন করেন, ‘৩ আগস্ট (২০২৪ সাল) সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচি ছিল আপনাদের দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার ফলশ্রুতি।’

জবাবে নাহিদ বলেন, এ কথাও সত্য নয়।

তখন আইনজীবী বলেন, জুলাই আন্দোলনের পেছনে দেশি-বিদেশি শক্তির হাত ছিল।

নাহিদের জবাব ছিল আগের মতোই—এ কথাও সত্য নয়।

এ সময় প্রসিকিউশনের (রাষ্ট্রপক্ষ) পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়। প্রসিকিউশনের পক্ষে প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম বলেন, এখানে সরকার পরিবর্তনের বিচার হচ্ছে না। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হচ্ছে। সরকার পরিবর্তনের বিষয়টিকে কোনো চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, এর সঙ্গে এটা প্রাসঙ্গিক।

এরপর নাহিদের উদ্দেশে আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট পদত্যাগ করেননি। তখন নাহিদ বলেন, এ কথা সত্য নয়।

পরে আসামিপক্ষের আইনজীবী আবার বলেন, পালিয়ে নয়, বাধ্য হয়ে ভারতে যান শেখ হাসিনা। তখন নাহিদ বলেন, এটাও সত্য নয়। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেছেন।

যে মামলায় নাহিদকে আসামিপক্ষের আইনজীবী জেরা করেছেন, সেই মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনও আসামি। এর মধ্যে মামুন দোষ স্বীকার করে ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল তাঁকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

ষড়যন্ত্রের কিছু নেই

জেরার মাধ্যমে নাহিদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। জেরা শেষে গতকাল দুপুরে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সে সময় নাহিদকে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। কিন্তু পতনের আগে ৪ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে সরকারপ্রধান হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এ জায়গাটা ধরেই প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, তাহলে ষড়যন্ত্র বা পরিকল্পনা আগে থেকেই হয়েছে কি না?

জবাবে নাহিদ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সে সময় জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। ১৬ বছর ধরে ভোটাধিকার হরণ করে, নাগরিক অধিকার হরণ করে তারা ক্ষমতায় ছিল। শান্তিপূর্ণ জুলাই–আগস্টের আন্দোলনে গুলি চালিয়েছে, হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে এক দফা ঘোষণা করা, সরকার উৎখাত করার প্রস্তুতি নেওয়াটা বৈধ। এখানে ষড়যন্ত্রের কিছু নেই। এটা জনগণের পক্ষ থেকে বৈধ ছিল। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে এসেছিল, জীবন দিয়ে প্রতিরোধ করে এই সফলতা নিয়ে এসেছে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার এ মামলার জবানবন্দিতে নাহিদ বলেছেন, পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে তাঁরা নতুন সরকার গঠনের জন্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগেই তাঁকে নতুন সরকারের প্রধানের দায়িত্ব নিতে প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

‘আওয়ামী লীগকে বিচারের আওতায় আনা উচিত’

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নে নাহিদ ইসলাম বলেন, ব্যক্তি হিসেবে শেখ হাসিনাকে আসামি করে এই মামলা চলমান। তাঁরা মনে করেন, এটা শুধু ব্যক্তিগত সংঘটিত অপরাধ নয়; বরং এটা রাজনৈতিক অপরাধ। ফলে দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে বিচারের আওতায় আনা উচিত। ট্রাইব্যুনালের সে সুযোগ আছে। এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের কাছে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ এসেছে।

নাহিদ বলেন, শেখ হাসিনা দলীয় প্রধান এবং রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করতে, ক্ষমতায় টিকে থাকতে জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে জনগণকে হত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। জনগণ প্রতিরোধ করে তাঁকে উৎখাত করেছে। ফলে এটা আওয়ামী লীগের সংঘটিত অপরাধ। আওয়ামী লীগকে দল হিসেবে বিচারের আওতায় দ্রুত সময়ের মধ্যে আনা উচিত।

পরে এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠন এবং ১৪–দলীয় জোটের সম্পৃক্ততার অকাট্য প্রমাণ ট্রাইব্যুনালে আসছে। সুতরাং এই সিদ্ধান্ত (দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার) নেওয়ার সুযোগ আছে। প্রসিকিউশন এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। এটা নিয়ে প্রসিকিউশন ভাববে।

‘মার্চ টু ঢাকা’

নাহিদ ইসলামের পর এই মামলার ৪৮তম সাক্ষী হিসেবে গতকাল ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দেন ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশের (আপ বাংলাদেশ) আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলার সময়ে প্রায় ১৩৪ জনের লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করা হয়।

গত বছরের ৩০ জুলাই সরকার পক্ষ থেকে ‘শোক দিবস’ ঘোষণা করা হলে আন্দোলনকারীরা তা প্রত্যাখ্যান করেন—এ বিষয়টি জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন আলী আহসান। তিনি বলেন, শোক দিবস পালন কর্মসূচি প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনকারীরা চোখেমুখে লাল কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ কর্মসূচি নেন এবং ফেসবুক প্রোফাইল লাল করার আহ্বান জানানো হয়। এই কর্মসূচিতে ব্যাপকভাবে সাড়া পড়ে এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ বিভিন্ন পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের ফেসবুক প্রোফাইল লাল হয়ে যায়।

জবানবন্দিতে আলী আহসান উল্লেখ করেন, ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি এক দিন এগিয়ে আনার পরামর্শ সমন্বয়ক আসিফ (স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া) ও সাদিক কায়েমকে (এখন ডাকসুর ভিপি) তিনি দিয়েছিলেন। পরে ৪ আগস্ট রাতে মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি এক দিন এগিয়ে এনে ৫ আগস্ট করার ঘোষণা দেওয়া হয়।

দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে যান আবু সাঈদ

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ষষ্ঠ সাক্ষী হিসেবে গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ জবানবন্দি দেন শিক্ষার্থী মো. সিয়াম আহসান। তিনি বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপের প্রতিবাদে আবু সাঈদ দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে যান। পুলিশ তাঁকে গুলি করে। আহত আবু সাঈদকে উদ্ধার করে আনতে গিয়ে নিজেও গুলিবিদ্ধ হন বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন সিয়াম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জামিনে মুক্তির পর কাঁদলেন মা শাহাজাদী, বাদীর কাছে চাইলেন ক্ষমা
  • নিউজিল্যান্ডে সন্তানদের হত্যা করে স্যুটকেসে লুকিয়ে রাখার ঘটনায় মা দোষী সাব্যস্ত
  • মা-মেয়ে হত্যার বিচার দাবিতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মোমবাতি প্রজ্বালন
  • খুলনায় কারাগার থেকে সেই প্রসূতি ও নবজাতককে হাসপাতালে ভর্তি, জামিন নামঞ্জুর
  • আমিনুলের চিঠি হাইকোর্টে স্থগিত, দেড় ঘণ্টা পর আবার বহাল
  • আইনজীবীর জেরায় জুনায়েদ বললেন, জুলাই আন্দোলনে ষড়যন্ত্রকারী ছিলাম, সত্য নয়
  • গণ–অভ্যুত্থানে বিদেশি শক্তির ইন্ধন ছিল না: নাহিদ ইসলাম
  • ৯ বছর পর কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলন, পুরোনো নেতৃত্বেই আস্থা কাউন্সিলরদের
  • ঝালকাঠিতে আইনজীবীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার, মিলল চিরকুট