পৌরসভার ময়লার ভাগাড় যেন টাকার খনি
Published: 11th, October 2025 GMT
ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ময়লার ভাগাড় যেন টাকার খনি। ময়লায় হাত দিলেই টাকা আর টাকা! ময়লাতেই ভাগ্য ফিরছে পৌর কর্মকর্তাদের। শুধু আশ্রয় নিতে হয়েছে খানিকটা দুর্নীতির।
রাইজিংবিডির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমনই কিছু তথ্য। যেনো অনিয়ম ও দুর্নীতির পশরা খুলে বসেছে ঠাকুরগাঁও পৌরসভা। শুধুমাত্র পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বেতন খাত থেকেই বছরে লোপাট হচ্ছে ১২ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা। অন্যায়ভাবে লোপাট করা সম্পূর্ণ অর্থই যাচ্ছে পৌরা কর্তাদের পকেটে।
পৌরসভার সূত্র মতে, ১৯৯৭ সালে ৩০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীত হয় ঠাকুরগাঁও। শুরুর লগ্ন থেকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলা এই পৌরসভায় ১৩৮ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মীর বিপরীতে খরচ দেখানো হয়েছে ৯ লক্ষ ৪১ হাজার ১০০ টাকা।
পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বেতন শিটে দেখা যায়, পৌরসভার বেতন শিটে ঝাড়ুদার হিসেবে দেখানো হয়েছে ৩৬ জনকে। তবে বাস্তবে শহরে ঝাড়ুদার হিসেবে কাজ করছেন মাত্র ২২ জন। সেই সাথে বেতন শিটে দেখা গেছে একই নামে একাধিক খাত থেকে টাকা উত্তোলন হচ্ছে, কিছু পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়মিত বেতন নিলেও তারা বাস্তবে কাজ করছে না। বেশ কিছু ভূয়া নাম বসিয়ে টাকা উত্তোলন হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ টাকার বিনিময়ে নির্দিষ্ট কিছু কর্মচারীকে দিচ্ছে অতিরিক্ত বেতন ও সুযোগ সুবিধা, কেউবা বেতন শিটে স্ত্রীর নাম বসিয়েও অর্থ আত্মসাৎ করছে।
এই অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের প্রধান সুপার ভাইজার ও হিসাব রক্ষক দায় চাপিয়ে দেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার উপর।
ঠাকুরগাঁও পৌরসভার হিসাব রক্ষক লিটন ইসলাম বলেন, “আমি পৌরসভার শুধুমাত্র একজন একাউন্টেন। আমার হাতে তেমন কিছুই নেই। আমি যা করি আমাদের নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে করি। তিনি আমাকে আদেশ করেছেন, আমি টাকা দিয়েছি। আমি আদেশ মানতে বাধ্য। আমার হাত-পা বাঁধা।”
ঠাকুরগাঁও পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মী সুপারভাইজার নজরুল ইসলাম বলেন, “আমি যা করেছি নির্বাহী কর্মকর্তার পরামর্শে করেছি। আমি একটু অতিরিক্ত কাজ করি। তাই আমার বউয়ের নামে একটু বাড়তি টাকা নেই। বাইরের তো কারো নাম দেইনি। নিজের বউয়ের নাম দিয়েছি।”
এদিকে অনিয়ম, দুর্নীতির সত্যতা স্বীকার করে নিম্ন পদস্থ কর্মকর্তা কর্মচারীদের দিকে তীর চালালেন পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিব উজ জামান। তিনি বলেন, “আপনাকে ধন্যবাদ, আপনি চোখে আঙ্গুল দিয়ে আমাদের ভুলগুলো ধরিয়ে দিয়েছেন। এমন হয়তো আরো বিভিন্ন ভুল ক্রমাগত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এত নিচু স্তরের বিষয়গুলো আমার জানার কোনো সুযোগ নেই।”
পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বেতন শিটে জালিয়াতি হয়েছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, “কিছু কিছু বিষয় আমি জানতাম। তবে এগুলো আরো আগে থেকে হয়ে আসছিল। আমি আর বাধা দিয়ে স্বাভাবিক কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে চাইনি।”
এদিকে পৌর কর্তাদের দুর্নীতির প্রভাব পড়েছে শহরজুড়ে। অধিকাংশ বাজারে ও রাস্তায় ঝাড়ু দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।
পৌর শহরের ব্যাসায়ী আলী হোসেন বলেন, “আমার দোকানের সামনে প্রতিদিন ময়লার স্তুপ জমে যায়। পৌরসভার কেউ এসে পরিষ্কার করে না। নিজেকেই করতে হয়। নিজে করতে না পারলে দুর্গন্ধের কারণে দোকানে বসতে পারি না।”
একই অভিযোগ ব্যবসায়ী সুজন ইসলামেরও। তিনি বলেন, “আমার ১০ বছর ব্যবসার অভিজ্ঞতায় কখনো দেখিনি আমার প্রতিষ্ঠানের সামনের রাস্তা কেউ ঝাড়ু দিয়েছে। বছরে একবার কখনো ড্রেন পরিষ্কার হয়, কখরনা হয় না। আমরা নিয়মিত পৌর কর পরিশোধ করি। তাহলে আমাদের রাস্তা ঝাড়ু দেওয়া হয় না কেনো?”
সানজিদা আক্তার নামের এক বাসিন্দা বলেন, “আমার বাসার সামনের ড্রেন বছরে একবার পরিষ্কার করা হয় না। বর্ষাকালে রাস্তায় পানি জমে। অনেক সময় বাড়িতে পানি উঠে যায়।”
যথেষ্ট লোকবল না থাকা, স্বল্প বেতনের বিনিময়ে অর্ধ বেলা কাজের চুক্তিসহ বিভিন্ন কারণে শহরজুড়ে সঠিকভাবে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের।
ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ঝাড়ুদার বিজয় বলেন, “আমি একা প্রায় তিন চারজনের জায়গা ঝাড়ু দিচ্ছি। তবুও বেতন মাত্র তিন হাজার। কীভাবে আর মনযোগ থাকবে কাজে?”
ড্রেনেজ পরিচ্ছন্ন কর্মী গোবিন্দ বলেন, “আমার বেতন ৯ হাজার টাকা। কাজ করি আধা বেলা। আমাদের আরকিছু বেতন বাড়ায় দিলে সারাদিন কাজ করতে পারি। এতে কাজ ভালো হবে। সেইসাথে কিছু লোকবল বাড়ানো প্রয়োজন।”
পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বেতন শিটে অসঙ্গতি থাকার কথা নিশ্চিত করে দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে পৌরসভার প্রশাসক সরদার মোস্তফা শাহীন। তিনি বলেন, “আমি খোঁজ নিয়েছি। এখানে কিছু অসঙ্গতি আমি পেয়েছি। এটা নিয়ে এরইমধ্যে আমি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।”
ঢাকা/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ও প রসভ র কর মকর ত আম দ র ক জ কর ঠ ক রগ ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন মির্জা আব্বাস, রিজভীসহ ১৬৭ জন
সাত বছর আগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, তাঁর স্ত্রী আফরোজা আব্বাস, দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ ১৬৭ ব্যক্তি।
ঢাকার মহানগর দায়রা জজ সাব্বির ফয়েজ আজ সোমবার এ আদেশ দেন। প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন মির্জা আব্বাসের আইনজীবী মহিউদ্দিন চৌধুরী।
মহিউদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকার সড়ক বন্ধ করে মিছিল করা, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি ও পুলিশকে মারধরের অভিযোগে ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর মামলাটি করা হয়। পল্টন থানায় মামলাটি করে পুলিশ। মামলায় মির্জা আব্বাস, তাঁর স্ত্রী আফরোজা আব্বাসসহ অন্যদের আসামি করা হয়। মামলায় সম্প্রতি আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় পুলিশ। এতে মামলা থেকে ১৬৭ জনকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করা হয়। আদালত পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে মির্জা আব্বাসসহ অন্যদের মামলা থেকে অব্যাহতির আদেশ দেন।
আরও পড়ুনমাকে ৩৬ কোটি টাকার শেয়ার উপহার দিলেন মির্জা আব্বাসের ছেলে০৫ অক্টোবর ২০২৫মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়া অন্যদের মধ্যে আছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কফিল উদ্দিন, দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য হাবিবুর রশিদ হাবিব প্রমুখ।
আরও পড়ুননির্বাচন সামনে রেখে আরও অনেক কিছু দেখতে পাবেন: মির্জা আব্বাস০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫