এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের অর্থপাচার তদন্তে বিএস
Published: 18th, October 2025 GMT
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেসরকারি ব্যাংক এনআরবিসি ব্যাংক পিএলসির চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল ও এসকেএফ ফাউন্ডেশন ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদ আহমেদ লিটনসহ তাদের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাত করার অভিযোগ রয়েছে।
ব্যাংকটির সহযোগী দুই প্রতিষ্ঠান এনআরবিসি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড ও এনআরবিসি ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে জালিয়াতি ও কারসাজি করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করার বিষয়টি তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
আরো পড়ুন:
ডায়রিয়া প্রাদুর্ভারের কারণ জানতে নাটোরে তদন্ত দল
বাকৃবিতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন
পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কিছু নির্দেশনা সাপেক্ষে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছে কমিশন।
সম্প্রতি বিএসইসির মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগ থেকে এ বিষয়ে একটি আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। তদন্তের বিষয়ে আভিভা ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মো.
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) গোয়েন্দা প্রতিবেদনে পারভেজ তমাল, রাশেদ আহমেদ লিটন এবং তাদের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে এসেছে। এছাড়া ব্যাংকটির সহযোগী প্রতিষ্ঠান এনআরবিসি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড এবং এনআরবিসি ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে জালিয়াতি ও কারসাজির দ্বারা কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের বিষয়টি তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে। তাই পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে বিএফআইইউর গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লিখিত অন্যান্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পুজিবাজারে জালিয়াতি ও কারসাজির বিষয়টি তদন্ত করবে গঠিত তদন্ত কমিটি।
বিএসইসির তদন্তের আদেশ
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন মনে করে, পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে এনআরবিসি ব্যাংক পিএলসির চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল ও এসকেএফ ফাউন্ডেশন ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদ আহমেদ লিটন এবং তাদের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তদন্ত করা প্রয়োজন।
তাই, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ (১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশ নম্বর ১৭) এর ধারা ২১, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ এর ধারা ১৭ক এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (২০১৫ সালের সংশোধনীসহ) এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন তিন কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কর্মকর্তারা এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন এবং কমিশনের কাছে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
তদন্ত কমিটি যেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে
বিএসইসির কাছে পাঠানো বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লিখিত এনআরবিসি ব্যাংক পিএলসির চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল ও এসকেএফ ফাউন্ডেশন ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদ আহমেদ লিটন এবং তাদের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এনআরবিসি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড এবং এনআরবিসি ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের মাধ্যমে পুজিবাজারে জালিয়াতি ও কারসাজির দ্বারা কি পরিমাণ টাকা আত্মসাত করা হয়েছে- সে বিষয়টি অনুসন্ধান ও তদন্ত করা প্রয়োজন।
বিগত সরকারের আমলে আইন বা বিধি-বিধান লঙ্ঘন করা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম পারভেজ তমালের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। একইসঙ্গে দুদকের মামলায় তাকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। এদিকে চলতি বছরের ১২ মার্চ এনআরবিসি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। চতুর্থ প্রজন্মের এসব ব্যাংক ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের এ দফায় সরকারে আসার প্রথম মেয়াদে অনুমোদন পেয়েছিল।
২০১২ সালে একসঙ্গে অনুমোদন পাওয়া ৯ ব্যাংকের মধ্যে ছিল এনআরবিসি ব্যাংক। এগুলোর উদ্যোক্তা হিসেবে ছিলেন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতা এবং বিদেশে ক্ষমতাসীন দলটির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতা ও অনুসারী প্রবাসীরা। পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার আগ পর্যন্ত মেঘনা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য এইচ এন আশিকুর রহমান, মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমান ছিলেন এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন পারভেজ তমাল।
ঢাকা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অর থ প চ র র শ দ আহম দ ল তদন ত কর ব এসইস র এনআরব স ও ক রস জ তদন ত ক ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
নেগেটিভ ইক্যুইটি ও লস প্রভিশনিংয়ের সময় পাচ্ছে আরো ১১ প্রতিষ্ঠান
পুঁজিবাজারের মধ্যস্থতাকারী আরো ১১ প্রতিষ্ঠানের নেগেটিভ ইক্যুইটি ও আনরিয়েলাইজড লসের প্রভিশন সংরক্ষণ ও সমন্বয়ের জন্য শর্তসাপেক্ষে সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
এই তালিকায় স্টকব্রোকার, ডিলার ও মার্চেন্ট ব্যাংকসহ একাধিক বাজার মধ্যস্থতাকারী রয়েছে।
আরো পড়ুন:
দুই কোম্পানির ক্রেডিট রেটিং নির্ণয়
প্রিমিয়ার ব্যাংক পারপেচুয়াল বন্ডের কুপন প্রদানের রেকর্ড ডেট ঘোষণা
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৮৬তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানগুলো হলো-ফিন্ট্রা সিকিউরিটিজ লিমিটেড, শেলটেক ব্রোকারেজ লিমিটেড, জয়তুন সিকিউরিটিজ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, বিডিবিএল ইনভেস্টমেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেড, হযরত আমানত শাহ সিকিউরিটিজ লিমিটেড, জিএমএফ সিকিউরিটিজ লিমিটেড, ওয়াইফাং সিকিউরিটিজ লিমিটেড, বিআরবি সিকিউরিটিজ লিমিটেড, বিএনবি সিকিউরিটিজ লিমিটেড, বিএমএসএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও মিডাস ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।
বিএসইসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কমিশন সভায় স্টক ব্রোকার, স্টক ডিলার ও মার্চেন্ট ব্যাংকার কর্তৃক কমিশনের নিকট দাখিলকৃত বোর্ড অনুমোদিত নেগেটিভ ইক্যুইটি ও আনরিয়েলাইজড লসের প্রভিশন সংরক্ষণ ও সমন্বয় সংক্রান্ত অ্যাকশন প্ল্যান বিবেচনাপূর্বক উল্লিখিত ছকের স্টক ব্রোকার, স্টক ডিলার ও মার্চেন্ট ব্যাংকারদের নেগেটিভ ইক্যুইটি ও আনরিয়েলাইজড লসের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ ও সমন্বয় করার সময়সীমা বর্ধিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
স্টক ব্রোকার, স্টক ডিলার ও মার্চেন্ট ব্যাংকাদের নেগেটিভ ইকুইটি ও আনরিয়েলাইজড লস এর প্রভিশন ও সমন্বয়ের সময়সীমা কমিশনের আদেশ (বিএসইসি/এসএমএমআইডি/এনই/এপি/২০২৫/১০৮/৬২৯; তারিখ ১৩ নভেম্বর ২০২৫) পরিপালন সাপেক্ষে বর্ধিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে যার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো নেগেটিভ ইক্যুইটি ও আনরিয়েলাইজড লস এর বিপরীতে বর্ধিত সময়কালে প্রভিশন সংরক্ষণ ও সমন্বয়ের ক্ষেত্রে স্টক ব্রোকার, স্টক ডিলার ও মার্চেন্ট ব্যাংকারের নিট সম্পদের ঘাটতি সংক্রান্ত বিধান পরিপালনে সাময়িক শিথিলতা থাকবে। এতদসংক্রান্ত কমিশনের আদেশটি কমিশনের ওয়েবসাইটের ‘সিকিউরিটিজ ল’স মেনুর ‘সিকিউরিটিজ ল’স, রুলস, রেগুরেশনস সাব মেনুতে পাওয়া যাবে।
এর আগে গত ১৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ৯৮৪তম কমিশন সভায় ২৮ প্রতিষ্ঠানকে নেতিবাচক ইক্যুইটি ও অবাস্তব লোকসানের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ ও সমন্বয়ের জন্য শর্তসাপেক্ষে সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি।
পরবর্তীতে ২৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ৯৮৫তম কমিশন সভায় পুঁজিবাজারের মধ্যস্থতাকারী আরো ৮ প্রতিষ্ঠানের নেগেটিভ ইক্যুইটি ও আনরিয়েলাইজড লসের প্রভিশন সংরক্ষণ ও সমন্বয়ের জন্য শর্তসাপেক্ষে সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি।
ঢাকা/এনটি/এসবি