পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেসরকারি ব্যাংক এনআরবিসি ব্যাংক পিএলসির চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল ও এসকেএফ ফাউন্ডেশন ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদ আহমেদ লিটনসহ তাদের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাত করার অভিযোগ রয়েছে।

ব্যাংকটির সহযোগী দুই প্রতিষ্ঠান এনআরবিসি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড ও এনআরবিসি ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে জালিয়াতি ও কারসাজি করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করার বিষয়টি তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

আরো পড়ুন:

ডায়রিয়া প্রাদুর্ভারের কারণ জানতে নাটোরে তদন্ত দল

বাকৃবিতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন

পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কিছু নির্দেশনা সাপেক্ষে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছে কমিশন।

সম্প্রতি বিএসইসির মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগ থেকে এ বিষয়ে একটি আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। তদন্তের বিষয়ে আভিভা ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মো.

কাওসার আলী, উপ-পরিচালক ও সহকারী পরিচালক মো. ফয়সাল ইসলাম।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) গোয়েন্দা প্রতিবেদনে পারভেজ তমাল, রাশেদ আহমেদ লিটন এবং তাদের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে এসেছে। এছাড়া ব্যাংকটির সহযোগী প্রতিষ্ঠান এনআরবিসি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড এবং এনআরবিসি ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে জালিয়াতি ও কারসাজির দ্বারা কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের বিষয়টি তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে। তাই পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে বিএফআইইউর গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লিখিত অন্যান্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পুজিবাজারে জালিয়াতি ও কারসাজির বিষয়টি তদন্ত করবে গঠিত তদন্ত কমিটি।

বিএসইসির তদন্তের আদেশ
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন মনে করে, পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে এনআরবিসি ব্যাংক পিএলসির চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল ও এসকেএফ ফাউন্ডেশন ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদ আহমেদ লিটন এবং তাদের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তদন্ত করা প্রয়োজন।

তাই, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ (১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশ নম্বর ১৭) এর ধারা ২১, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ এর ধারা ১৭ক এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (২০১৫ সালের সংশোধনীসহ) এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন তিন কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কর্মকর্তারা এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন এবং কমিশনের কাছে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করবেন।

তদন্ত কমিটি যেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে
বিএসইসির কাছে পাঠানো বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লিখিত এনআরবিসি ব্যাংক পিএলসির চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল ও এসকেএফ ফাউন্ডেশন ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদ আহমেদ লিটন এবং তাদের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এনআরবিসি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড এবং এনআরবিসি ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের মাধ্যমে পুজিবাজারে জালিয়াতি ও কারসাজির দ্বারা কি পরিমাণ টাকা আত্মসাত করা হয়েছে- সে বিষয়টি অনুসন্ধান ও তদন্ত করা প্রয়োজন।

বিগত সরকারের আমলে আইন বা বিধি-বিধান লঙ্ঘন করা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।

প্রসঙ্গত, এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম পারভেজ তমালের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। একইসঙ্গে দুদকের মামলায় তাকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। এদিকে চলতি বছরের ১২ মার্চ এনআরবিসি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। চতুর্থ প্রজন্মের এসব ব্যাংক ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের এ দফায় সরকারে আসার প্রথম মেয়াদে অনুমোদন পেয়েছিল।

২০১২ সালে একসঙ্গে অনুমোদন পাওয়া ৯ ব্যাংকের মধ্যে ছিল এনআরবিসি ব্যাংক। এগুলোর উদ্যোক্তা হিসেবে ছিলেন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতা এবং বিদেশে ক্ষমতাসীন দলটির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতা ও অনুসারী প্রবাসীরা। পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার আগ পর্যন্ত মেঘনা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য এইচ এন আশিকুর রহমান, মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমান ছিলেন এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন পারভেজ তমাল।

ঢাকা/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অর থ প চ র র শ দ আহম দ ল তদন ত কর ব এসইস র এনআরব স ও ক রস জ তদন ত ক ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

নয় মাসে মুনাফা থেকে লোকসানে এনআরবি ব্যাংক

পুঁজিবাজারে ব্যাংক খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এনআরবি ব্যাংক পিএলসির পরিচালনা পর্ষদ চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর, ২০২৫) ও নয় মাসের (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর, ২০২৫) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী আলোচ্য নয় মাসের প্রান্তিকে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি লোকসান থেকে মুনাফায় নেমেছে।

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই-সিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

আরো পড়ুন:

বদলে যাচ্ছে পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের নাম

পুঁজিবাজারে বড় পতন, কমেছে লেনদেন

এর আগে বুধবার (১৫ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত কোম্পানিগুলো পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে সর্বশেষ বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদনের পর লভ্যাংশের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে (০.৭৮) টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ০.১২ টাকা। সে হিসেবে আলোচ্য প্রান্তিকে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি মুনাফা থেকে লোকসানে নেমেছে।

এছাড়া চলতি হিসাব বছরের নয় মাস বা তিন প্রান্তিক মিলে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে (২.০১) টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ০.২৮ টাকা। সে হিসেবে আলোচ্য প্রান্তিকে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি মুনাফা থেকে লোকসানে নেমেছে।

২০২৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১০.৭০ টাকা।

ঢাকা/এনটি/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নয় মাসে মুনাফা থেকে লোকসানে এনআরবি ব্যাংক