Prothomalo:
2025-10-21@17:53:38 GMT

সিয়াটল এবং আরও কিছু সাদা পালক

Published: 21st, October 2025 GMT

পাখিদের সঙ্গে থেকেও তোমরা তাদের ভাষা বোঝোনি, তারাদের সান্নিধ্যে থেকেও বোঝোনি উজ্জলতার মূল্য! শোনো, প্রজাপতিদের উড়াল দেখেই শিখতে হয় ওড়ার নিয়ম, কীভাবে পুরো শরীরটাকে বানাতে হয় মন

আলোর যেমন জীবন আছে, আছে অন্ধকারেরও; দুই জীবনের ক্ষমতাই অসীম, দুই জীবন মিলেই তৈরি হয় আত্মা; আলোর সঙ্গে থেকে আমরা আলোর ভাষা বুঝেছি, অন্ধকারের সঙ্গে থেকে বুঝেছি অন্ধকারের ভাষা—

আমরা যদি তোমাদের আলো দিয়ে দিই, তোমরাও আমাদের মতো ওদের জড়িয়ে রেখো। যদি অন্ধকার দিয়ে দিই, অন্ধকারকে সমান যত্নে রেখো; তবে তোমরাও নিজেদের আত্মার সঙ্গে কথা বলতে পারবে, বুঝবে গাছের সঙ্গে কোন ভাষায় কথা বলতে হয়, কোন ভাষায় কথা বলতে হয় মাটির সঙ্গে.

..


ওই বিরল বনের নির্জনতাও তোমরা কিনতে চাও, কিনতে চাও ঈগলের উড়ে যাওয়া; ওই যে ছোট্ট পাখিটি গাইছে, তার সরল গানও—আমি কান পেতে যে মাটিপোকার গান শুনেছি, সেই সংগীত কতটা বিক্রিযোগ্য, আমি ভেঙে যাওয়া পাতার মর্মর শুনেছি, সেই মর্মর আমি বিক্রি করব কী করে! আমার অসংখ্য স্মৃতি আছে, সেগুলো বিক্রি সম্ভব?

এই যে তোমাদের মানুষ নিরুদ্দেশ হয়ে যায়—কারও অনুপস্থিতি কি বিক্রি সম্ভব! আমি বহুদিন ঝোপের ধারে বসে ব্যাঙের ঝগড়া শুনেছি, ওই ঝগড়া বিক্রির মালিক আমি হতেই পারি না।


মনে রেখো, এই মাটি তোমার পূর্বপুরুষের শরীর থেকে তৈরি। এই মাটিতেই তোমার পূর্বপুরুষ গান পুঁতে গেছে; এখন যে শস্য দেখছ, এখন যে বাতাসের সুর শুনছ, এসব তোমার পূর্বপুরুষের ধমণিতে বয়ে চলা রক্তের গান।

এই মাটি তোমাকে জন্ম দিয়েছে এবং একদিন এই মাটিকে তুমিও জন্ম দেবে। পৃথিবীর জন্য এই দুই জন্মই ভীষণ মূল্যবান। তুমি এই মাটিকে স্পর্শ করো, যদি মনে করো নিজেকে স্পর্শ করেছ, তবেই মনে করবে তুমি পুরো পৃথিবীর সমান, প্রকৃতিরও।


লাল মানুষটার ছায়া দেখো, ছায়া দেখো সাদা মানুষটার—তারপর ভাগ করো; আর ওই সরু পাইনগাছটা, মাথার ওপর দাঁড়াতে চাইছে ঠায়—তার ছায়াটাও দেখো; ওই যে প্রেইরির পাহাড়, ঘন ছায়া ঢেলে দেয়া মেঘ—সবার ছায়া জড়ো করো; দেখো ছায়ারাও কথা বলে, ওদেরও হৃদয়ের ধ্বনি আছে, ওদেরও আছে প্রাণসঞ্চারের ভাষা—এবং ওরা যেন অস্তিত্বময় একই ভূমির, ঈশ্বরের অংশ—প্রেইরিতে ঘুরে বেড়ানো প্রতিটি ছায়াই ভাই ভাই;

চলো ছায়াদের আত্মা দিয়ে মানুষ বানাই।


নিজেকে বিক্রির জন্য মানুষ এতটা পাগল হয় কী করে, আমি বুঝি না—সমস্ত মানুষ এখন শুধু নিজেকে বিক্রি নিয়ে ব্যস্ত—কথা বিক্রি হচ্ছে, হাসি বিক্রি হচ্ছে, দুঃখও বিক্রি হচ্ছে, কেউ কেউ তো বিক্রি করে দেয় নিজের তাবৎ স্বপ্নও, কেউ দেখছি পরকালও!

অথচ তার কোনো কিছু বিক্রির অধিকার নেই—যে পাতাটা তাকে নিশ্বাস দিয়ে বাঁচায়, যে শস্য তার ক্ষুধা নিবারণ করে, যে পানীয় তার তৃষ্ণা মেটায়... তাদের অনুমতি ছাড়া সে কিছুই বিক্রি করতে পারে না... কারণ, তার নিশ্বাসের ভেতর ঢুকে আছে সেই পাতার নিশ্বাস, তার হাড়-মাংসে ঢুকে আছে সেই সব শস্যের প্রাণরস, তার ধমণিতে বইছে সেই সব জলের প্রবাহ...


নদীর জলে যে প্রতিচ্ছবি পড়ল—ওটা তোমার নয়, ঈশ্বরের। ঈশ্বরই মানুষকে এভাবে হাঁটিয়ে হাঁটিয়ে নদীর সামনে নিয়ে আসে আর শেখায়—তোমার ভেতর তুমি এক ঈশ্বরকে বয়ে নিয়ে যাচ্ছ, কিন্তু সে মোটেও অতীন্দ্রিয় নয়। এই যে দেখো, তুমিই তোমার ঈশ্বর।

নদীর জলে যে প্রতিচ্ছবি দেখছ—কখনো ঢেউয়ে ঢেউয়ে নেচে উঠছ—মনে রেখো, ঠিক এভাবেই প্রতি মুহূর্তে মুহূর্তে তুমি ভাবনার বিচ্ছিন্নতায় জড়িয়ে পড়ছ—বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছ নিজের থেকে, ঈশ্বরের থেকেও...


যদি বিশ্বাস করো, পাইনগাছের প্রতিটি পাতা পবিত্র, আসন্ন মেঘের ফাঁকে উঁকি দেয়া প্রতিটি আলোর রেখা পবিত্র, তবে এটাই সত্যি, তোমার ভেতর লুকিয়ে থাকা প্রতিটি স্বপ্নই পবিত্র; কেননা মানুষ তার স্বপ্নের সমান পবিত্র।

সুতরাং নিজেকে বিশ্বাস করো, তুমি দেখতে এই বিশাল জীবতরঙ্গের এক ছোট্ট কণা হয়েও সমস্তকে ধারণ করছ, তোমার হাতে ধারণ করছ সমস্তের বাঁশি—কেবল বিশ্বাস দিয়ে ধরে রাখছ পুরো সৃষ্টির পবিত্রতা।


তুমি যদি বাবা হও, তবে ওই তৃণলতাটারও তুমি বাবা, তুমি যদি মা হও, তবে ওই কদর্য কুকুরটারও তুমি মা, তুমি যদি ভাই হও, তবে তুমি বনমোরগেরও ভাই, তুমি যদি বোন হও, তবে ওই বামনটারও বোন, তুমি যদি ছেলে হও, তবে ওই কীটেরও তুমি ছেলে, যদি মেয়ে হও, তবে কালো পাখিটারও তুমি মেয়ে;

কেননা তুমি মনে রেখো, তুমিই সৃষ্টি।


যখন শিশু জন্ম নেয়—আমরা ভাবি পৃথিবীতে নতুন স্পন্দন জন্ম নিল, প্রকৃতিতে জন্ম নিল নতুন প্রশ্বাস, জন্ম নিল নতুন বাতাস; একদিন এই স্পন্দন বিস্তীর্ণ বিরানে ঘুরে বেড়াবে, একদিন এই প্রশ্বাস বেলাভূমি ও বনাঞ্চলকে চঞ্চল করবে এবং একদিন এই বাতাস মেঘমালার মতো জীবনের অর্থ দাঁড় করাবে

আর তোমাদের শিশু জন্ম নিলে তোমরা শহর বানাও, একটার পর একটা দেয়াল দাঁড় করাও; দেয়ালের দুর্যোগে হারিয়ে যাওয়া স্পন্দনেরা কীভাবে সভ্য মানুষ হয়, আমি বুঝি না...

১০
আমাদের সব বাইসনকে তোমরা একে একে হত্যা করছ—আমরা দেখছি একটা একটা করে তোমরা ঈশ্বরকেই হত্যা করছ; আমাদের সব বন্য ঘোড়াকে তোমরা বন্দী করে পোষ মানাচ্ছ—আমরা দেখছি বনের কাছ থেকে তোমরা কেড়ে নিচ্ছ বন্যতা; আমাদের সব বনে বনে তোমরা ঢুকে পড়েছ, আমরা দেখছি তোমরা মেরে ফেলছ সব নির্জনতা—আমাদের সব বন তাঁবুবাড়ি তোমরা পুড়িয়ে দিয়েছ—আমরা দেখছি তোমরা পুড়িয়ে দিচ্ছ তোমাদেরকেই।

১১
তোমরা আমাদের ভূমি কিনতে চাও, বাতাস কিনতে চাও, আকাশের নক্ষত্ররাজি আর মেঘমালা কিনতে চাও; এই যে আমাদের বনহরিণীর ডাক, এই যে পাহাড়ের প্রতিধ্বনি... সব কিনে নিতে চাও। এই যে ভূমি দেখছ, এটাও আমি; ওই যে বাতাস দেখছ, ওটাও আমি; ওই যে আকাশের নক্ষত্র–মেঘ, অপার নীল... ওগুলোও আমিই; আমাদের বনহরিণীর ডাক বা ধরো পর্বতের গা–ঘেঁষা প্রতিধ্বনি আমিই...

আমরা জানি না, নিজেদের কীভাবে বিক্রি করতে হয়। আমরা জানি না, নিজেদের কীভাবে অন্যদের হাতে তুলে দিতে হয়। জানি না নিজেকে সবকিছু থেকে আলাদা করে ফেলতে...

১২
তুমি কাকে পরিবার বলো, প্রতিদিন যে পালকবিছানায় তুমি ঘুমাও, যার উজ্জ্বলতা নাও, প্রতিদিন যে শিশিরবিন্দু দেখে তুমি আপ্লুত হও, যে ঝিঙেনাচ দেখে তোমার চোখ বিস্ফারিত হয়, পাহাড়ের যেসব খাঁজ তোমার সঙ্গে গোপন সুরে কথা বলে, যেসব ফুল তোমার জন্য ফোটে, যে বনহাঁস তোমার জন্য উড়াল দেয়, যে ঘোড়া তোমাকে বয়ে বেড়ায়—তারা তোমার আত্মীয় নয়?

আমি বুঝি না পাখির কলতান, খরগোশের লাফিয়ে চলা কীভাবে মানুষের পরিবার হয় না...

১৩
আমরা আমাদের শিশুদের নদীর মমতা শেখাই, গাছের ধৈর্য শেখাই, মাঠের প্রাচুর্য শেখাই আর শেখাই বাতাসের বিস্ময়।

বাতাস—যে তোমাকে জন্ম দিয়েছে, তাকে তুমি সদা পবিত্র রেখো; নদী—যে তোমাকে জীবনের বয়ে চলার গল্প শেখাচ্ছে তাকে তুমি পবিত্র রেখো; গাছ—যে তোমাকে জীবনতরঙ্গে অটলতা শেখাচ্ছে, তাকে তুমি পবিত্র রেখো; মাঠ—যে তোমার শরীর পুরুষ্ঠ করছে, তাকে তুমি পবিত্র রেখো—

কেননা এই সব ছাড়া তুমি কখনোই তুমি নও।

১৪
কী অবলীলায় তোমরা মানুষ খুন করছ আর আমরা দেখছি, তোমরা পৃথিবীকে খুন করছ; তোমরা আমাদের গাছ কেটে বন ধ্বংস করছ আর আমরা দেখছি তোমরা পৃথিবীকে খুন করছ; তোমরা আমাদের বুনো মহিষগুলো মেরে সাফ করছ আর আমরা দেখছি তোমরা পৃথিবীকে খুন করছ; তোমরা পাহাড়গুলো কেটে রাস্তা বানাচ্ছ আর আমরা দেখছি তোমরা পৃথিবীকে খুন করছ।

এই পৃথিবী আমাদের মা। তোমরা আসলে মাকেই খুন করো। আর আমাদের বলো খুনি, আমাদের বলো পাপী। আমরা তোমাদের খুন করি সত্যি, কিন্তু সেটা খুন নয়। মায়ের খুনিকে খুন করা আমাদের পুণ্যের কাজ। আমরা তোমাদের খুন করি, যেন তোমাদের দেহাবশেষ থেকে জন্ম হয় পবিত্র মাটির।

১৫
তোমার সাদা শরীরে যেমন মানুষের গন্ধ আছে, আমার লাল শরীরেও তা–ই; তবে আমার শরীরে বন আছে, পাহাড় আছে, আছে প্রজাপতি; ওই যে দূরের অপার আকাশ, সে–ও আছে; ওই যে বেলাভূমি দেখছ, আছে সে–ও; সেই সব বনফুল, ক্যাকটাসের কষ কিংবা ধরো রাতের আঁধার, সে–ও মিশে আছে আমার শরীরে।

তোমরা বলতেই পারো, কীভাবে সম্ভব! তবে শোনো, আসলে এভাবেই আমরা আমাদের শরীরে ঈশ্বরকে লুকিয়ে রাখি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: একদ ন এই ছ আর আমর আম দ র ব দ র সব ব জন ম ন ল খ ন করছ র জন য এই ম ট খ ন কর

এছাড়াও পড়ুন:

এক ঘন্টায় ২০ লাখ রিয়্যাক্ট! প্রথমবার কন্যার মুখ দেখালেন দীপিকা–রণবীর

এ যেন উৎসবের চমক, দীপিকার ভক্তদের জন্য এক বড় উপহার। দীপাবলির দিনেই অবশেষে প্রকাশ্যে এল দীপিকা পাড়ুকোন ও রণবীর সিংয়ের কন্যা দুয়া। প্রায় এক বছর আগে প্রথম দীপাবলিতেই মেয়ের নাম জানিয়েছিলেন এই তারকা দম্পতি। এ বছর উৎসবের আবহে দেখালেন মেয়ের মুখও।
আজ (মঙ্গলবার) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাঁচটি ছবি শেয়ার করেছেন দীপিকা ও রণবীর। ছবি প্রকাশের পর যেন অপেক্ষায় ছিলেন ভক্তরা—মুহূর্তেই ভাইরাল হয় পোস্টটি। মাত্র এক ঘন্টায় রিয়্যাক্ট পড়ে ২০ লাখলাখের বেশি! মন্তব্যের বন্যা বইছে ইনস্টাগ্রামে।

দীপাবলির সাজে মা-মেয়ে
ছবিতে দেখা যাচ্ছে দীপিকার সঙ্গে রং মিলিয়ে সেজেছে ছোট্ট দুয়া। দুজনের পরনেই লাল রঙের জমকালো চুড়িদার, সঙ্গে মানানসই সোনার গয়না। দুয়ার মাথার দুই দিকে ঝুঁটি বেঁধেছেন দীপিকা। পাশে রণবীর সিং, সাদা ও ঘিয়ে রঙের শেরওয়ানিতে দীপাবলির ভাবনায় সাজা।

ছবিগুলোয় কখনো দুয়া হাসছে, কখনো আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছু দেখাচ্ছে—মা-বাবার আদরে মাখামাখি প্রতিটি ফ্রেম। শেষ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, দীপিকার কোলে বসে মা-মেয়ে দুজনেই জোড়হাতে প্রার্থনা করছেন। ছবির ক্যাপশনে লেখা, ‘দীপাবলির শুভেচ্ছা’।

ভক্তদের কেউ লিখেছেন, ‘দুয়া ঠিক দীপিকার মতো,’ কেউ বলছেন, ‘রণবীরের ছাপ স্পষ্ট।’ নেট দুনিয়ায় ছোট্ট দুয়াকে ঘিরে উচ্ছ্বাসের ঝড়।
২০২৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর কন্যাসন্তানের জন্ম দেন দীপিকা পাড়ুকোন। গত বছর গণেশচতুর্থীর পরের দিনেই ইনস্টাগ্রামে মেয়ের নাম ‘দুয়া’ জানিয়েছিলেন তিনি, দিয়েছিলেন ছোট্ট পায়ের ছবি। ঠিক এক বছর পর দীপাবলিতেই মুখ প্রকাশ করে যেন পূর্ণতা দিলেন সেই মুহূর্তকে।

প্রেম থেকে পরিবার
রণবীর সিং ও দীপিকা পাড়ুকোন ২০১৮ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। দীর্ঘ প্রেমের পর তাঁদের জীবনে এসেছে ছোট্ট দুয়া, ভালোবাসার পরিপূর্ণ প্রতীক হয়ে। দীপাবলির আলোয় তাঁদের পরিবারে এই খুশির রোশনাই ছড়িয়ে দিয়েছে বলিউডজুড়ে আনন্দের আলো।

সম্পর্কিত নিবন্ধ