শেয়ারবাজারে আজীবন নিষিদ্ধ হলেন এলআর গ্লোবালের রিয়াজ ইসলাম
Published: 21st, October 2025 GMT
শেয়ারবাজারের সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহী ও প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা রিয়াজ ইসলামকে পুঁজিবাজারে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনায় থাকা ছয়টি মিউচুয়াল ফান্ডের অর্থের অপব্যবহারের দায়ে তাঁর বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কমিশনের আজ মঙ্গলবারের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
একই ঘটনায় যোগসাজশের দায়ে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামকেও পুঁজিবাজারে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও এর আগে বেক্সিমকোর বন্ডের অনিয়মের দায়ে শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এখন আরেকটি অনিয়মের ঘটনায় তাঁকে পুনরায় শেয়ারবাজারে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে বিএসইসি। এ নিয়ে শেয়ারবাজারে দুই প্রতিষ্ঠানের দুই অনিয়মের ঘটনায় দুই দফায় আজীবনের জন্য পুঁজিবাজারে নিষিদ্ধ হলেন বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম। বিএসইসির সভা শেষে আজ এসব সিদ্ধান্তের কথা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়।
ছয়টি মিউচুয়াল ফান্ডের অর্থের অপব্যবহারের দায়ে উল্লিখিত এই দুই ব্যক্তিকে নিষিদ্ধ ঘোষণার পাশাপাশি ছয়টি ফান্ডের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব থেকে সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছে বিএসইসি। পাশাপাশি এই অনিয়মের ঘটনায় ছয় ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানকে ৯ কোটি ১১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে, তাঁরা হলেন এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশে প্রধান নির্বাহী রিয়াজ ইসলাম, রেজাউর রহমান সোহাগ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) শরীফ আহসান, মদিনা আলী, সৈয়দ কামরুল হুদা, ওমর শোয়েব চৌধুরী ও বাংলাদেশ জেনারেল ইনস্যুরেন্স কোম্পানি (বিজিআইসি)। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৩ কোটি টাকা জরিমানা করা হয় বিজিআইসিকে। আর ছয় ব্যক্তিকে ১ কোটি টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এই ১ কোটি টাকার বাইরে রেজাউর রহমান সোহাগকে আরও ১০ লাখ টাকা এবং শরীফ আহসানকে আরও ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।
বিএসইসি জানিয়েছে, শেয়ারবাজারে ওটিসি বাজারে থাকা বন্ধ কোম্পানি পদ্মা প্রিন্টার্সের শেয়ারে বিনিয়োগের নামে এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের ছয়টি মিউচুয়াল ফান্ড থেকে প্রায় ৬৯ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়। দুই দফায় এই বিনিয়োগ করা হয়েছিল। প্রথম দফায় বন্ধ ও লোকসানি কোম্পানি পদ্মা প্রিন্টার্স অ্যান্ড কালারের ৫১ শতাংশ শেয়ার চড়া মূল্যে অধিগ্রহণের জন্য প্রায় ২৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছিল। এই শেয়ার অধিগ্রহণের পর কোম্পানিটির নাম বদলে করা হয় কোয়েস্ট বিডিসি লিমিটেড। নামবদলের পর কোয়েস্ট বিডিসির মূলধন বাড়াতে প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে নতুন শেয়ার ইস্যু করে ছয়টি ফান্ড থেকে দ্বিতীয় দফায় ৪৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়। বিএসইসি বলছে, বন্ধ ও লোকসানি কোম্পানির শেয়ার চড়া মূল্যে কিনে ছয়টি মিউচুয়াল ফান্ড থেকে এই অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে মূলত ফান্ডগুলোর ইউনিটধারীদের অর্থেরই অপচয় করা হয়েছে। এ কারণে সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানটি ও তার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে বিএসইসি। সেই সঙ্গে ছয়টি ফান্ড থেকে বিনিয়োগ করা অর্থ–সুদসহ ৯০ কোটি টাকা ৩০ দিনের মধ্যে ফেরত আনার নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।
বিএসইসি জানিয়েছে, এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী রিয়াজ ইসলামকে এই অর্থ ফান্ডগুলোতে ফেরত আনতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই অর্থ ফেরত আনতে না পারলে তার জন্য রিয়াজ ইসলামকে ৯৮ কোটি টাকা এবং এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের পরিচালক জর্জ এম স্টক ও রেজাউর রহমান সোহাগকে ১ কোটি টাকা করে মোট ২ কোটি টাকা জরিমানা করা হবে বলেও বিএসইসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনায় থাকা যে ছয়টি মিউচুয়াল ফান্ডের অর্থ নিয়ে এই অনিয়ম ও অপব্যবহারের ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো হলো এনসিসিবিএল মিউচুয়াল ফান্ড, এলআর গ্লোবাল মিউচুয়াল ফান্ড ওয়ান, এআইবিএল ফার্স্ট ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড, এমবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ও গ্রিন ডেলটা মিউচুয়াল ফান্ড।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এলআর গ ল ব ল ব র য় জ ইসল ম ব ন য় গ কর শ য় রব জ র ব এসইস র অর থ র জন য র ঘটন ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
মতামত জানতে অতালিকাভুক্ত সরকারি কোম্পানিগুলোকে ডেকেছে বিএসইসি
দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য নতুন প্রাথমিক গণপ্রস্তাব রুলস বা আইপিও আইনের খসড়া সম্প্রতি অনুমোদন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আইনের বিভিন্ন বিষয়ে মতামত জানতে ইতোমধ্যে বেশ কিছু অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করেছে সংস্থাটি।
এরই ধরাবাহিকতায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় বা অতালিকাভুক্ত সরকারি লাভজনক কিছু কোম্পানিকে আইপিও আইনের খসড়ার ওপর মতামত জানতে ডেকেছে বিএসইসি।
৮ ডিসেম্বর বিকাল তিনটায় বিএসইসির সম্মেলন কক্ষে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে।
সম্প্রতি এ বিষয়ে কোম্পানিগুলোকে ডেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত নয়টি কোম্পানিকে চিঠি দিয়েছে বিএসইসি। কোম্পানিগুলো হলো- ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড, কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড, নেসলে বাংলাদেশ লিমিটেড, সিনজেন্টা বাংলাদেশ লিমিটেড, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড, সিনোভিয়া ফার্মা পিএলসি, সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড এবং নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড।
বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিএসইসি বাংলাদেশে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির নিয়ন্ত্রক কাঠামো আধুনিকীকরণ এবং শক্তিশালী করার লক্ষ্যে পাবলিক অফার অফ ইক্যুইটি সিকিউরিটিজ বিধিমালা-২০২৫ এর খসড়া প্রস্তুত করেছে। বিস্তৃত অংশীদারদের সম্পৃক্ততা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য কমিশনের প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে, গুরুত্বপূর্ণ সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো সঙ্গে অংশগ্রহণমূলক আলোচনার আয়োজন করেছে।
এ বিষয়ে আগামীকাল সোমবার আগারগাঁও বিএসইসির কার্যালয়ে আলোচনা সভায় উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ঢাকা/এনটি//