নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সাত খুন মামলায় হাইকোর্টের দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সারসংক্ষেপ জমা দিতে চার সপ্তাহ সময় পেয়েছে আসামিপক্ষ। এ–সংক্রান্ত শুনানি চার সপ্তাহের জন্য মুলতবি করেছেন আপিল বিভাগ।

আসামিপক্ষের আইনজীবীর সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ ওই সময় পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন।

সাত খুন মামলায় ২০১৭ সালের ২২ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) তৎকালীন নেতা নূর হোসেন, র‍্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.

) তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, সাবেক কোম্পানি কমান্ডার মেজর (অব.) আরিফ হোসেনসহ ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। অপর ১১ জনের মৃত্যুদণ্ড পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

২০১৮ সালের ২০ নভেম্বর হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে দণ্ডিতরা ২০১৯ সালে পৃথক আপিল এবং লিভ টু আপিল করেন। এর মধ্যে ‘তারেক সাঈদ মোহাম্মদ বনাম রাষ্ট্র’ শিরোনামে আপিলটি আজ আদালতের কার্যতালিকায় ওঠে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী (অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড) আব্দুল হাই।

পরে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক প্রথম আলোকে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আপিল শুনানির দিন ধার্যের জন্য আবেদন করা হয়। চার সপ্তাহ পর শুনানি হবে। রাষ্ট্রপক্ষ ইতিমধ্যে আপিলের সারসংক্ষেপ জমা দিয়েছে। আসামিপক্ষ এখনো দেয়নি।

আসামিপক্ষ থেকে সারসংক্ষেপ জমা দেওয়ার জন্য ছয় সপ্তাহ সময় চাওয়া হয় বলে জানিয়েছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুল হাই। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আদালত চার সপ্তাহ সময় দিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে আপিলের সারসংক্ষেপ জমা দিতে বলা হয়েছে।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে একে একে ভেসে ওঠে ছয়টি লাশ, পরদিন মেলে আরেকটি লাশ। নিহত অন্য ব্যক্তিরা হলেন নজরুলের বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম ও চন্দন সরকারের গাড়িচালক মো. ইব্রাহীম।

ঘটনার এক দিন পর কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বাদী হয়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা (পরে বহিষ্কৃত) নূর হোসেনসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন। আইনজীবী চন্দন সরকার ও তাঁর গাড়িচালক ইব্রাহিম হত্যার ঘটনায় ১১ মে একই থানায় আরেকটি মামলা হয়। এ মামলার বাদী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল। পরে দুটি মামলা একসঙ্গে তদন্ত করে পুলিশ।

দুই মামলায় ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালত রায় দেন। রায়ে র‍্যাবের সাবেক ১৬ কর্মকর্তা-সদস্য এবং নারায়ণগঞ্জের সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেন ও তাঁর অপরাধজগতের ৯ সহযোগীসহ মোট ২৬ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। এ ছাড়া র‍্যাবের আরও ৯ সাবেক কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

আরও পড়ুননারায়ণগঞ্জের সাত খুন: বিচার শেষ হচ্ছে না, স্বজনেরা হতাশ ২৭ এপ্রিল ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ আইনজ ব

এছাড়াও পড়ুন:

গবি রেজিস্টারের ফেরা নিয়ে দুই গ্রুপে উত্তেজনা

ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় ৪ বছরের আইনি লড়াই শেষে স্বপদ ফিরে পেয়েছেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) রেজিস্ট্রার দেলোয়ার হোসেন। তিনি তার পদে যোগ দিতে এলে একপক্ষ স্বাগত জানালেও আরেকপক্ষ বিক্ষোভ করেন। এ নিয়ে ক্যাম্পাসে উত্তপ্ত পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রবিবার (১৯ অক্টোবর) সকাল ৭টার দিকে উপজেলার নলাম এলাকায় অবস্থিত গবি ক্যাম্পাসে আসেন দেলোয়ার হোসেন। তার সঙ্গে তার আইনজীবী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী, স্থানীয় বাসিন্দা ও বহিরাগতসহ অন্তত ৩০-৪০ জন ছিলেন।

আরো পড়ুন:

গকসুর নবনির্বাচিতদের শপথ গ্রহণ

গবিতে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আর্কাইভস নিয়ে সেমিনার

এ সময় অন্তত ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী তাকে স্বাগত জানিয়ে ফুল দিয়ে বরণ করেন। এরপর তিনি ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনের নিচে অবস্থান নেন। প্রায় ২ ঘণ্টা পর সকাল ৯টার দিকে তিনি ২০-২৫ জন সঙ্গীসহ গবি উপাচার্যের কক্ষে প্রবেশ করেন। তিনি উপাচার্যের কাছে স্বপদে (রেজিস্টার) ফিরতে আদালতের রায় ও চাকরিতে পুনর্বহালসহ যোগদানের জন্য আবেদনপত্র দিয়ে এ বিষয়ে কথা বলেন।

এদিকে, খবর পেয়ে শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়ে সেখানে আসেন গবি ছাত্র সংসদের (গকসু) ভিপি, কোষাধ্যক্ষসহ একাংশ নেতৃবৃন্দ এবং তারা উপাচার্যের কক্ষে প্রবেশ করে দেলোয়ার হোসেনের স্বপদে (রেজিস্টার) যোগদানের বিষয়ে প্রতিবাদ জানান। এরই জেরে ওই যোগদানপত্র নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। পরে তিনি যোগদান না করেই ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।

দেলোয়ার হোসেনের পুনর্বাহলের প্রতিবাদ জানিয়ে শিক্ষার্থীদের একটি অংশের দাবি, আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য-প্রমাণ তুলে ধরে এই রায় পেয়েছেন দেলোয়ার হোসেন। তিনি দুর্নীতিগ্রস্থ ও চারিত্রিকভাবে অসৎ।

এ বিষয়ে দেলোয়ার হোসেনের আইনজীবী কৃষ্ণ বলেন, “আদালতের রায়ের ভিত্তিতে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে আবেদন দিতে এসেছি আমরা। তবে কিছু শিক্ষার্থী এ নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। পরে উপাচার্য চাকরিতে বহালের আবেদন গ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।” এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান এই আইনজীবী।

গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক রেজিস্ট্রার দেলোয়ার হোসেন জানান, আদালতের রায়ে তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। আদালতের রায়ে তিনি স্বপদে বহাল রয়েছেন। আদালত তার অব্যাহতিকে অবৈধ ঘোষণা করে তাকে বিগত সময়ের বেতন-ভাতা পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন। চাকরিতে যোগ দিয়ে পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করার কথা জানান তিনি।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) আবুল হোসেন জানান, আদালতের রায়ে দেলোয়ার হোসেনের চাকরি পুণর্বহালে কোনো বাধা নেই। শিক্ষার্থীরা তাকে পুনর্বহালের বিষয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানানোর কারণে আপাতত তার আবেদন গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। শিক্ষার্থীরা আবেদন গ্রহণ না করার জন্য চাপ দিয়েছে। পুণর্বহালের বিষয়েও বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন।”

তিনি বলেন, “আপাতত নথি গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে পরবর্তী করণীয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।”

২০২০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন অভিযোগ এনে রেজিস্ট্রার পদ থেকে মো. দেলোয়ার হোসেনকে অব্যাহতি দেয় গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড। পরের বছর ৪ এপ্রিল ওই আদেশের বিরুদ্ধে ঢাকার নবম সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন তিনি। ৪ বছর আইনি লড়াইয়ের পর তার পক্ষে রায় দেন আদালত।

গত ৮ অক্টোবর ঢাকার সিনিয়র সহকারী জজ (সাভার) মো. হাবিবুর রহমানের আদালতের রায়ে রেজিস্ট্রার পদ থেকে মো. দেলোয়ার হোসেনকে অব্যাহতির আদেশ অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এছাড়া তার চাকরি পুণর্বহাল ও চাকরিচ্যুত সময় থেকে বর্তমান পর্যন্ত সব বেতন-ভাতাসহ পাওনাদি পরিশোধের আদেশ দেন।

ঢাকা/আরিফুল/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আলোচিত সাত খুন, আপিল বিভাগের শুনানি পেছালো
  • টাঙ্গাইলে জালিয়াতির মামলায় অধ্যক্ষ কারাগারে
  • চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপি নেতার কারাদণ্ড
  • শেখ হাসিনার ‘মেটিকুলাস প্ল্যান’ ছিল: ট্রাইব্যুনাল
  • ৫ মামলায় জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন সাবেক প্রধান বিচারপতির
  • অধ্যাপক কবিরুল বাশারের গবেষণা হুবহু আরেক জার্নালে শেকৃবি ভিসিসহ দুজনের নামে প্রকাশ
  • ট্রাইব্যুনাল আইনে বিচার মানে 'হাত-পা বেঁধে নদীতে ফেলে আসামিকে বলা সাঁতার কাটো’: আমির হোসেন
  • গবি রেজিস্টারের ফেরা নিয়ে দুই গ্রুপে উত্তেজনা
  • জাতীয় যুবনীতি পুনর্মূল্যায়ন ও আদিবাসীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের দাবি