হোয়াইট হাউস থেকে বিদায় নেওয়ার আগ মুহূর্তে পরিবারের কয়েকজন সদস্যসহ বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তাকে আগাম ক্ষমা করে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। জো বাইডেন তার ভাই জেমস, ফ্রান্সিস ও ফ্রাঙ্ক বাইডেন এবং বোন ভ্যালেরি বাইডেন ওয়েনসসহ পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যকে ক্ষমা করেন।

এ প্রসঙ্গে জো বাইডেন বলেন, ক্ষমার উদ্দেশ্য ছিল তার পরিবারকে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আক্রমণ থেকে রক্ষা করা। 

প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ নেওয়ার আগে তিনি আরও কয়েকজন কর্মকর্তাকে আগাম ক্ষমা করেন যাদের মধ্যে রয়েছে প্রেসিডেন্টের প্রধান চিকিৎসা উপদেষ্টা ও দেশটির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজের (এনআইএআইডি) পরিচালক অ্যান্থনি ফাউচি এবং জয়েন্ট চিফের সাবেক চেয়ারম্যান মার্ক মাইলি। ২০২১ সালের৬ জানুয়ারির যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীতে দাঙ্গা এবং ওই দিনের ঘটনায় ট্রাম্পের ভুমিকা নিয়ে তদন্ত করেছিলেন এই কমিটির কর্মকর্তারা।

বিদায়ী রাষ্ট্রপতি বাইডেন বলেছেন, এই সরকারি কর্মচারীদের অক্লান্ত প্ররিশ্রমের কারণে তাদের কাছে আমাদের জাতি কৃতজ্ঞ।

এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, যেসব কর্মকর্তাদের ক্ষমা করা হয়েছে তারা হাউস সিলেক্ট কমিটিতে সাক্ষ্য দিয়েছেন এমন ব্যক্তি। একই সাথে সদস্য ও কর্মীরাও রয়েছেন এই ক্ষমার আওতায়।

কোভিড মহামারির সময়ে অ্যান্থনি ফাউচি যুক্তরাষ্ট্রে বেশ তৎপর ছিলেন। তবে ট্রাম্প ও তার রাজনৈতিক মিত্ররা তার সমালোচনায় মুখর ছিলেন। মাইলি ট্রাম্পের একজন কট্টর সমালোচক ছিলেন। তিনি ট্রাম্পকে ‘আপাদমস্তক ফ্যাসিবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

হোয়াইট হাউস বিবৃতিতে বলেছে, এই সরকারি কর্মচারীরা আমাদের জাতিকে সম্মান ও মর্যাদার সাথে সেবা করেছেন। তাদের অন্যায় ও রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিচারের লক্ষ্যবস্তু হওয়া কাম্য নয়।

ট্রাম্পের অভিষেকের জন্য ক্যাপিটল রোটুন্ডায় আসার আগে ওই বিবৃতিতে বাইডেন বলেছেন, ‘আমার পরিবার সবসময় আক্রমণ ও হুমকির শিকার হয়েছে। শুধুমাত্র আমাকে আঘাত করার ইচ্ছা থেকে এমন করা হয়েছিল। দুর্ভাগ্যবশত আমার বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই যে, এই আক্রমণগুলো শেষ হবে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

কক্সবাজার মেরিনড্রাইভ সড়কে পাকা কলার বাজার, ক্রেতারা সবাই পর্যটক

কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ দিয়ে টেকনাফের দিকে যাতায়াতের সময় রাস্তার পাশে দেখা যায় রাশি রাশি কলার ছড়ি। গাড়ি থামিয়ে বাজার থেকে কলা কেনেন পর্যটকেরা। উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের রূপপতী গ্রামের টেকব্রিজ এলাকায় সকাল ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চলে পাকা কলা বেচাবিক্রি।

গত রোববার সকালে কলার বাজারে নেমে দেখা গেল, বাঁশের সঙ্গে রশি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে ৪০-৪৫টি পাকা কলার ছড়া। প্রতিটি ছড়াতে ৫০ থেকে ১২০টি কলা আছে। প্রতিটি কলা বিক্রি হচ্ছে পাঁচ টাকায়। পাহাড়ে চাকমা সম্প্রদায়ের চাষিদের কলার বাগান রয়েছে। স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী সেখান থেকে গাছে পাকা ফলমূল কিনে মেরিন ড্রাইভের বাজারে বিক্রি করেন। পর্যটকেরা পাকা কলা কিনে বাজারেই খেয়ে নেন, কেউ কেউ কলার ছড়া কিনে নিয়ে রওনা হন গন্তব্যে।

ঢাকার ধানমন্ডির ঠিকাদার সালাহ উদ্দিন (৪৮) বাজার থেকে ২১৫ টাকায় কিনেছেন একটি কলার ছড়া। ছড়াতে কলা আছে ৪৩টি। সালাহ উদ্দিন বলেন, ঢাকা শহরে বাংলা কলা খুব একটা পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও প্রতিটির দাম ১০-১২ টাকা। কক্সবাজার শহরেও প্রতিটি বাংলা কলার দাম ১২ টাকা। অথচ এখানে পাঁচ টাকা। তা–ও গাছ পাকা। সড়কের অন্য কোথাও পাকা কলা বিক্রির এ রকম বাজার চোখে পড়ে না।

দেখা গেছে, পাহাড় থেকে লোকজন পাকা কলার ছড়া কাঁধে নিয়ে বাজারের দিকে আসছেন। বিক্রেতারা জানান, প্রতিদিন গড়ে ২০০ ছড়া কলা বিক্রি হয় এ বাজারে। চাহিদা অনুযায়ী গাছ থেকে ছড়া কাটা হয়। পর্যটকের সমাগম বাড়লে কলা বিক্রিও বেড়ে যায়।

স্থানীয় লোকজন জানান, সাত বছর আগে রূপপতী গ্রামের কৃষক আবুল হোসেনের বাড়িতে একসঙ্গে চারটি গাছের বাংলা কলা পেকে যায়। এত কলা খাওয়ার লোক ঘরে নেই। উপায় না দেখে তিনটি কলার ছড়া বাড়ির পাশের মেরিন ড্রাইভের টেকব্রিজে নিয়ে আসেন। কলাগুলো সড়কের পাশে রেখে দাঁড়িয়ে থাকেন আবুল হোসেন। পর্যটকেরা পাকা কলা দেখে গাড়ি থামান। দুই ঘণ্টায় সব কলা বিক্রি হয়ে যায়। এর পর থেকে আবুল হোসেন গ্রামের লোকজনের কাছ থেকে পাকা কলা কিনে মেরিন ড্রাইভ সড়কে এনে বেচাবিক্রি শুরু করেন। তিন মাসের মাথায় বাজারে কলা বিক্রি শুরু করেন আরেক কৃষক আবদুল নবী। এখন বাজারে কলা ব্যবসায়ীর সংখ্যা ১৪।

বাজারে কথা হয় মো. সেলিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, মেরিন ড্রাইভের কয়েকটি স্থানে ডাব বিক্রি হয়। কিন্তু বাংলা কলা কোথাও বিক্রি হয় না। বাংলা কলা সব জায়গাতে পাওয়াও যায় না। রূপপতী, চেইনছড়ির পাহাড়ে চাকমাদের বসতি। সেখানে তাঁরা বাংলা কলার চাষ করেন। কলার বাজারটি চালুর পর গ্রামের পরিচিতিও দ্রুত বাড়তে থাকে। দিন দিন কলার চাহিদাও বাড়ছে।

রূপপতী গ্রামের স্কুলছাত্রী সেনুয়ারা বেগম বাজারে নিয়ে এসেছে তিনটি কলার ছড়া। সঙ্গে কিছু থোড়, ঢেঁকিশাক ও অন্য ফলমূল। সে বলে, তার বাবা দিন মজুর। সেনুয়ারা সোনারপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে পড়ে। বাড়ি থেকে ১০ কিলোমিটার দূরের স্কুলে যাতায়াতে খরচ লাগে ৬০ টাকা। এ টাকা বাবার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। লেখাপড়া যেন মাঝপথে বন্ধ হয়ে না যায়, সে জন্য কলার ব্যবসায় নেমেছে সে। যা আয় হয়, তা দিয়ে লেখাপড়া খরচ চলে যাচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ