জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, পাসপোর্ট করতে পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগবে না।

রোববার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তিনি।

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলনের নিজ কার্যালয়ের শাপলা হলে উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূস। এবার ডিসি সম্মেলন শেষ হবে ১৮ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার)।

অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ডিসিদের মুক্ত আলোচনা হবে আজ। সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টা সঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভা হবে। রাতে হবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে নৈশভোজ।

প্রতিবছরই জেলা প্রশাসক সম্মেলনে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর প্রস্তাব করেন ডিসিরা। তবে এবার তারা আইনি ক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন। এ জন্য ৬৪ ডিসি এবং ৮ বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স লিয়াজোঁ অফিসারের পদ দ্রুত সৃষ্টি করতে বলেছেন তারা। 

এ ছাড়া বিদ্যমান পিবিআইকে (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) উন্নীত করে একজন স্বতন্ত্র ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশের (আইজিপি) অধীনে আলাদা পুলিশ তদন্ত বিভাগ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব এসেছে। স্বতন্ত্র তদন্ত বিভাগ প্রতিষ্ঠা হলে ফৌজদারি মামলাগুলো যথাসময়ে এবং সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করা সহজ হবে।

ঢাকা ডিসি কার্যালয়ের কর্মচারীদের জন্য বাস কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে। কারণ, ঢাকায় তীব্র যানজটের সম্মুখীন হতে হয় এবং দাপ্তরিকভাবে কোনো যানবাহনের ব্যবস্থা না থাকায় নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন পরিবহনে যাতায়াত করেন কর্মচারীরা। এতে যথাসময়ে অফিসে উপস্থিতি ও অফিস শেষে বাড়ি পৌঁছতে প্রতিদিন দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়। এ সমস্যা সমাধানে ঢাকা জেলার ডিসি অফিসের কর্মচারীদের জন্য চারটি বাস কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে। 

এবারের সম্মেলনে ৫৬টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ, কার্যালয় ও সংস্থা সম্পর্কে ৩৫৪টি প্রস্তাব কার্যপত্রে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এসব নিয়ে আলোচনা করবেন সংশ্লিষ্টরা।

গতকাল শনিবার সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ বলেন, গত বছর ডিসি সম্মেলনে নেওয়া সিদ্ধান্তের মাত্র ৪৬ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। আগের সরকারের অগ্রাধিকারমূলক অনেক বিষয় বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকারের মধ্যে পড়ে না। এ কারণেই অনেক বিষয় কম বাস্তবায়ন হয়েছে। ভূমি ব্যবস্থাপনা, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম জোরদার করা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পুনর্বাসন কার্যক্রম বাড়ানো, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন বিষয়ে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হবে এ সম্মেলনে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, কাগজে-কলমে প্রায় প্রতিবছরই ডিসি সম্মেলনে গৃহীত ৯০ শতাংশের বেশি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এ চিত্র ৬০ শতাংশেরও নিচে বলে জানিয়েছেন এ বিভাগের এক কর্মকর্তা।
 
ডিসি-বিভাগীয় কমিশনারদের ৩৫৪ সুপারিশ
ঢাকা জেলায় প্রধান সহকারী কাম হিসাব সহকারী পদ সৃষ্টির প্রস্তাব এসেছে। ঢাকা জেলার পাঁচটি উপজেলায় প্রধান সহকারী কাম হিসাব সহকারী পদ সৃজন করা হলেও ১৪টি রাজস্ব সার্কেলে প্রধান এ পদ সৃজন না করায় সেবা প্রদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এজন্য ১৪টি রাজস্ব সার্কেলে একটি করে প্রধান সহকারী পদ সৃজন করা যেতে পারে।

সারাদেশে ৩৬টি জেলায় দুদকের কার্যালয় আছে। এখন প্রতিটি জেলায় দুদকের কার্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব করেছেন ডিসিরা। কার্যালয় স্থাপনের পাশাপাশি পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগেরও প্রস্তাব করেছেন তারা। তিনজন জেলা প্রশাসক এই প্রস্তাব করেছেন।

বর্তমানে ডিসি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকদের বদলি ও পদায়নের কাজটি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) পদায়নের জন্য মন্ত্রণালয় বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে ন্যস্ত করে। এখন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের বদলি ও পদায়নের কাজটিও বিভাগীয় কমিশনারের হাতে ন্যস্ত করার প্রস্তাব দিয়েছেন তারা।

এ ছাড়া প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে জেলা পুলিশের এসিআর দেওয়া, কনস্টেবল নিয়োগ কমিটিতে তাদের প্রতিনিধি রাখা, ডিসির অধীনে বিশেষ ফোর্স গঠন, অপরাধ ডেটাবেজ ও এনআইডি ডেটাবেজ সার্ভারে ডিসি এবং ইউএনওদের প্রবেশাধিকার, উপজেলা পরিষদের কর্মচারী নিয়োগ ও বদলির ক্ষমতা এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের বদলে উপজেলার সরকারি বাসা বরাদ্দের ক্ষমতা। উপজেলা পরিষদের কর্মচারীদের নিয়োগ ও বদলি ডিসিদের হাতে দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন ফরিদপুরের ডিসি মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্যা।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মন ত র সরক র সহক র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

বরকতের শত্রু অহংকার

আমরা প্রায়ই নিজেদের সবচেয়ে বড় শত্রু হয়ে উঠি। নেতিবাচক চিন্তা আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই ‘তুমি অবশ্যই সফল হবে’, এমন উক্তি আমাদের মধ্যে উৎসাহ জাগায়। কিন্তু এই বিশ্বাস আমাদের সীমাবদ্ধ করে ফেলতে পারে।

‘আমি মহান কিছুর জন্য নির্ধারিত’, এই চিন্তা আমাদের মধ্যে অহংকার জাগিয়ে তুলতে পারে, যা আমাদের জীবনের বরকত নষ্ট করে।

অহংকারের ক্ষতি

আমাদের সম্ভাবনা কী? সাফল্যের রূপ কেমন? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর না থাকায় আমরা নিজেরাই সাফল্যের সংজ্ঞা তৈরি করি। আমি ভাবি, আমি একটি বড় কোম্পানির সিইও হতে পারি এবং এটি না হওয়া পর্যন্ত আমি থামব না। অথবা আমার কোনো বন্ধু, যাকে আমি নিজের চেয়ে কম প্রতিভাবান মনে করি, একটি বিশাল ব্যবসা শুরু করেছে। তাই আমি ভাবি, আমি তার চেয়ে ভালো করতে পারি।

অহংকার আত্মবিশ্বাস নয়, অহংকার একটি অস্বাস্থ্যকর বিশ্বাস, যা আমাদের কানে ফিসফিস করে যে আমরা অন্যদের চেয়ে উন্নত, নিয়ম আমাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।রায়ান হলিডে

যখন আমি নিজেকে মহান মনে করি, আমি সেই অনুযায়ী কাজ করি। সামান্য অনৈতিক পথও বেছে নিতে পারি। কারণ, আমি ভাবি, এটি আমার ‘নির্ধারিত’ সাফল্যের জন্য প্রয়োজন। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর পরিবর্তে রাতে কাজের ভেতর সর্বদা ডুবে থাকা আমাদের ন্যায্য মনে হয়। এটি আমাদের স্বার্থপর করে তোলে।

আরও পড়ুনসম্পদের অহংকার ধ্বংস করে কারুনকে১৯ মার্চ ২০২৪

রায়ান হলিডে অহংকারের একটি সংজ্ঞা দিয়েছেন, ‘অহংকার আত্মবিশ্বাস নয়, অহংকার একটি অস্বাস্থ্যকর বিশ্বাস, যা আমাদের নিজেদের গুরুত্বের ওপর অতিরিক্ত জোর দেয়। এটি আমাদের কানে ফিসফিস করে যে আমরা অন্যদের চেয়ে উন্নত, আমাদের চাহিদা বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং আমরা এতটাই ব্যতিক্রমী যে নিয়ম আমাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।’

ইসলামি শিক্ষায় নফসের বিরুদ্ধে সংগ্রামের ধারণা আছে। আবু আলিয়া সুরখিল ব্যাখ্যা করেছেন যে, ‘এটা হলো আত্মার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত সংগ্রাম, যেখানে একজন ব্যক্তি প্রলোভন, শারীরিক আকাঙ্ক্ষা ও শয়তানের প্রবঞ্চনা কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করে।’

নফস আল–আম্মারা বা ‘মন্দের দিকে প্ররোচনাকারী আত্মা’ আমাদের সম্পদ, খ্যাতি, ক্ষমতা বা শারীরিক তৃপ্তির দিকে ঠেলে দেয়, যা আমাদের আল্লাহর পথ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়।

‘আমি মহান কিছুর জন্য নির্ধারিত’, এই চিন্তা আমাদের মধ্যে অহংকার জাগিয়ে তুলতে পারে, যা আমাদের জীবনের বরকত নষ্ট করে।অহংকারের বিরুদ্ধে লড়াই

অহংকারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে আমাদের সাফল্যের ধারণাকে পুনর্গঠন করতে হবে। এর অর্থ হলো, দুনিয়ার সাফল্যের পরিবর্তে আখিরাতের পুরস্কারকে প্রাধান্য দেওয়া এবং ফলাফলের পরিবর্তে কাজের প্রক্রিয়ায় মনোযোগ দেওয়া। ‘আমি কীভাবে ওটা অর্জন করব’, এর পরিবর্তে ‘আজ আমি কীভাবে নিজেকে উন্নত করতে পারি’, এই চিন্তা আমাদের কাজের ধরন বদলে দেয়।

আরও পড়ুনমন্দ প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণের উপায়০৬ এপ্রিল ২০২৫

নিজেকে কিছুর ‘প্রাপ্য’ মনে করার ধারণা থেকে মুক্ত হতে হবে। নবীজি (সা.), যিনি সব মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জান্নাতের প্রাপ্য ছিলেন, তিনিও বলেছেন, ‘সঠিক পথ অনুসরণ করো, নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করো এবং সুসংবাদ দাও। নিশ্চয়ই তোমাদের কেউ শুধু তার কাজের দ্বারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ সাহাবিরা বললেন, ‘এমনকি আপনিও নন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)?’ নবীজি বললেন, ‘এমনকি আমিও নয়, যদি না আল্লাহ আমাকে তাঁর রহমত দান করেন। জেনে রাখো, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কাজ হলো যা নিয়মিত করা হয়, যদিও তা ছোট হয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৪৬৪; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৮১৮)

‘আমি কীভাবে ওটা অর্জন করব’, এর পরিবর্তে ‘আজ আমি কীভাবে নিজেকে উন্নত করতে পারি’, এই চিন্তা আমাদের কাজের ধরন বদলে দেয়।

এই হাদিসে দুটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা রয়েছে। প্রথমত, আল্লাহর সামনে আমাদের অবস্থান স্বীকার করা, মানে আল্লাহ আমাদের রিজিক দান করেন, কিন্তু তিনি আমাদের কিছু দিতে বাধ্য নন। দ্বিতীয়ত, প্রক্রিয়ার ওপর মনোযোগ দেওয়া—জান্নাতে প্রবেশ একটি অসাধারণ অর্জন, কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন ছোট ও নিয়মিত কাজ। এটি আমাদের তাড়াহুড়ার সংস্কৃতি থেকে বরকতের সংস্কৃতির দিকে নিয়ে যায়।

কর্মক্ষেত্রে বরকতের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হলে আমাদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। সমালোচনাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ হিসেবে না নিয়ে উন্নতির সুযোগ হিসেবে দেখা, দক্ষতা বাড়িয়ে অন্যদের সেবা করা এবং নিজের পরিবর্তে অন্যদের অবদানের কৃতিত্ব দেওয়া এর অন্যতম উপায় হতে পারে।

 সূত্র: প্রোডাক্টিভ মুসলিম ডটকম

আরও পড়ুনইবলিসের কাহিনি১২ মে ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ