কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ম্যুরালে কালো রঙের কালি লাগিয়ে বিকৃতির অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া তার নামের বানানও বিকৃত করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় কালি লাগানো একটি ছবি ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি জানাজানি হয়। এ ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন রবীন্দ্র ভক্ত ও গবেষকরা। ম্যুরালটি কুষ্টিয়া-রাজবাড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কের কুমারখালীর প্রবেশপথ জিলাপিতলা এলাকায় অবস্থিত।

শুক্রবার (৪ এপ্রিল) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, মহাসড়কের দক্ষিণপাশে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ম্যুরাল। ম্যুরালে থাকা কবির ছবির মুখমণ্ডল কালো রঙে ঢাকা। রবীন্দ্রনাথ ও ঠাকুর বানান দুটিও বিকৃতি করা। 

দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ম্যুরাল চত্বরটিতে জন্মেছে আগাছা ও লতাপাতা। চটে গেছে রং। সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা থাকলেও বেশ কিছুদিন ধরে সেটি অকেজো।

এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিজয় কুমার জোয়ার্দার বলেন, “খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। কে বা কারা কখন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ম্যুরালে কালি লাগিয়েছে সেটি জানা যায়নি। অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। এছাড়াও দ্রুত ম্যুরালটির সংস্কার কাজ করা হবে।” 

এ ব্যাপারে স্থানীয় কবি ও সাহিত্যিক লিটন আব্বাস বলেন, “রবীন্দ্রনাথ নয়, এ কালি পুরো বাঙালি জাতির মুখে লেগেছে। কে বা কারা কী উদ্দেশে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে সেটি তদন্ত করে প্রকাশ্যে আনার দাবি করছি।”

কুমারখালীর রবীন্দ্র গবেষক রেফুল করিম আক্ষেপ করে বলেন, “যে স্থানে বসে রবীন্দ্রনাথ গীতাঞ্জলী কাব্যগ্রন্থের সিংহভাগ রচনা করেছিলেন। সেখানে মানুষের বিকৃত মস্তিষ্ক উদ্ভাসিত হলো কীভাবে?”

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

সোলায়মান শেখ বলেন, “খবর পেয়ে রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” 

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম মিকাইল ইসলাম বলেন, “ঈদের ছুটিতে দুর্বৃত্তরা হয়তো এ ঘটনা ঘটাতে পারে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/কাঞ্চন/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর রব ন দ র

এছাড়াও পড়ুন:

চার আসনে বিক্ষোভ, ফরিদপুরে সংঘর্ষ, আহত ২৩

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণার পঞ্চম দিনেও অন্তত চারটি আসনে প্রার্থিতা নিয়ে দলটির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, বিক্ষোভ ও মিছিল হয়েছে। প্রার্থিতা বদল ও মনোনয়ন প্রত্যাশাকে ঘিরে এসব ঘটনা ঘটে।

এর মধ্যে গতকাল শুক্রবার ফরিদপুর ১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পুলিশের তিন সদস্যসহ অন্তত ২৩ জন আহত হয়েছেন। এর বাইরে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে গতকাল পর্যন্ত প্রার্থী বদলের দাবিতে অন্তত তিনটি আসনে বিক্ষোভ হয়েছে।

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে গত সোমবার ২৩৭টি আসনে প্রাথমিকভাবে মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এরপর থেকে প্রার্থী বদল ও মনোনয়ন প্রত্যাশাকে কেন্দ্র করে দেশের অন্তত ১২টি আসনে বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে।

ফরিদপুরে দুই পক্ষের সংঘর্ষ

ফরিদপুর-১ আসনে (বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা ও মধুখালী) বিএনপি এখনো কাউকে প্রার্থী ঘোষণা করেনি। তবে প্রতিদ্বন্দ্বী দুটি পক্ষ এখানে মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশায় মাঠে রয়েছে। জেলার বোয়ালমারীতে গতকাল বিকেলে দলটির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশের তিন সদস্যসহ উভয় পক্ষের অন্তত ২৩ জন আহত হন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম ও বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শামসুদ্দীন মিয়ার নেতৃত্বে বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপি দুই ভাগে বিভক্ত। দুই নেতাই আসন্ন সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-১ আসন থেকে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী।

গতকাল সংঘর্ষের সময় বিএনপির এক পক্ষের একটি কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। আগুন দেওয়া হয় অন্তত ১০টি মোটরসাইকেলে। এ ছাড়া আশপাশের কয়েকটি দোকানে ভাঙচুর করা হয়। হামলাকারীদের হাতে রামদা, চাইনিজ কুড়ালসহ বিভিন্ন দেশি অস্ত্র দেখা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বেলা তিনটার দিকে শামসুদ্দীন মিয়ার সমর্থকেরা ওয়াপদার মোড় এলাকায় ও নাসিরুল ইসলামের সমর্থকেরা প্রায় এক কিলোমিটার দূরে কাজী সিরাজুল ইসলাম মহিলা কলেজ মোড়ে জড়ো হন। তাঁদের হাতে বাঁশের লাঠির মাথায় ধানের শীষ বাঁধা ছিল। বিকেল চারটার দিকে নাসিরুল ইসলামের অনুসারীরা মিছিল নিয়ে ওয়াপদার মোড়ের দিকে এগোতে থাকেন। তখন শামসুদ্দীনের সমর্থকেরা কলেজের দিকে যেতে থাকেন। উভয় পক্ষ বোয়ালমারী পৌরসভার সামনে এলে পরস্পরের দিকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে শুরু করে। একপর্যায়ে শামসুদ্দীনের সমর্থকেরা পিছু হটে ওয়াপদার মোড়ে হারুন শপিং কমপ্লেক্সের সামনে অবস্থান নেন।

শামসুদ্দীন মিয়া প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, নাসিরুলের লোকজন আওয়ামী লীগের লোকদের সঙ্গে নিয়ে অতর্কিতে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। ১০টি মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছে। এতে তাঁর ১৫ জন সমর্থক আহত হয়েছেন। তাদের কার্যালয়ে থাকা বেগম খালেদা জিয়ার ছবি ভাঙচুর করা হয়েছে।

তবে খন্দকার নাসিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ছিলাম মধুখালী। আমাদের লোকজনের ওপর হামলা করা হয়েছে। একজনকে কুপিয়ে জখম করেছে। ওরা হারুন শপিং কমপ্লেক্সের ওপরে উঠে আমার সমর্থদের ওপর ইট ছুড়ে মারলে চার-পাঁচজন আহত হন। এতে জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে শপিং কমপ্লেক্সে হামলা করে।’

বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান সন্ধ্যা ছয়টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।

আরও বিক্ষোভ

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম চৌধুরীকে সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর) আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার দাবিতে মিছিল ও সমাবেশ করেছেন স্থানীয় বিএনপির একাংশের নেতা-কর্মীরা। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে তিন উপজেলার অন্তত ১৫টি স্থানে পৃথকভাবে এ কর্মসূচি পালিত হয়।

সিলেট জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে সিলেট-৪ ও সিলেট-৫ ছাড়া অন্য চারটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছিল। এর মধ্যে সিলেট-১ আসনে প্রার্থী করা হয় দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদিরকে। ওই আসনে সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরীও মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। আরিফুলের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, ঢাকায় ডেকে গত বুধবার রাতে আরিফুলকে সিলেট-৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আরিফুল হক চৌধুরী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিলেটে ফেরেন। তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘তিন মাস লাগবে না। আগামী তিন দিনেই সিলেট-৪ আসনে আওয়াজ উঠে যাবে। কাজ দিয়েই নিজেকে জনগণের কাছে প্রমাণ করব।’

দিনাজপুর-২ আসনে (বিরল-বোচাগঞ্জ) বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে গতকাল বেলা ১১টার দিকে উপজেলা শহরে কাফনের কাপড় পরে মৌন মিছিল করেছেন মনোনয়ন না পাওয়া তিন নেতার অনুসারীরা।

‘মনোনয়নবঞ্চিত’ তিনজন হলেন জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ, সহসভাপতি মোজাহারুল ইসলাম এবং শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম। এই আসনে প্রার্থী করা হয়েছে সাদিক রিয়াজকে। তিনি জেলা বিএনপির নির্বাহী সদস্য।

দুপুরে উপজেলার শহীদ মিনার চত্বরে ‘বিপ্লব ও সংহতি’ দিবসের আলোচনা সভায় উপস্থিত হন মনোনয়নবঞ্চিত ওই তিন নেতা। পরে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে বক্তব্য দেন তাঁরা। এ সময় বজলুর রশিদ বলেন, ‘সাদিক রিয়াজ রাজনীতির মাঠে কোনো আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন না। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে সব আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেছেন। তাঁকে বাদ দিয়ে বিরল-বোচাগঞ্জের যে কাউকে মনোনয়ন দিলে আমরা মেনে নেব।’

রাজশাহীর পবা উপজেলায় গতকাল ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ এর এক অনুষ্ঠান থেকে রাজশাহী-৩ আসনের প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি উঠেছে। রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয় সম্পাদক শফিকুল হক মিলন।

মাদারীপুরে স্থগিতের প্রতিবাদ

মাদারীপুর-১ আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী কামাল জামান মোল্লার মনোনয়ন স্থগিত করার প্রতিবাদ ও প্রার্থিতা পুনর্বহালের দাবিতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বিকেলে উপজেলার হাতির মাঠে এ সমাবেশ হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কামাল জামান মোল্লা নিজে। মনোনয়ন ঘোষণার পরদিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাঁর মনোনয়ন স্থগিত করেছিল বিএনপি।

জামান মোল্লা জেলা বিএনপির এক নেতাকে ইঙ্গিত করে বলেন, তিনি আওয়ামী লীগের দোসরের লোক। তাঁর নির্দেশেই অপপ্রচার চালিয়ে তাঁর (জামান মোল্লা) ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা চলছে।

গতকাল বিকেলে কুমিল্লার হোমনা সদরে ঝাড়ু মিছিল করেছে বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের একাংশের নেতা-কর্মীরা। কুমিল্লা-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী বিভাগীয় এক নেতার বিরুদ্ধে এ মিছিল হয়। এ আসনে বিএনপি এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ