১৮ শয্যার আইসিইউ বিভাগ দেড় মাস ধরে বন্ধ
Published: 5th, May 2025 GMT
নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) দেড় মাস ধরে বন্ধ। এ কারণে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে মুমূর্ষু রোগী ভর্তি করা যাচ্ছে না। জরুরি মুহূর্তে আইসিইউ শয্যা না পাওয়ায় অনেকের জীবন পড়ে ঝুঁকিতে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে গত ছয় মাসে পাঁচবার চিঠি পাঠিয়েও হচ্ছে না সমস্যার সমাধান।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালটি ২৫০ শয্যা হলেও ১৫০ শয্যার জনবল দিয়ে চালানো হচ্ছে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত ছিল না আইসিইউ শয্যা। করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর এ হাসপাতালকে কভিড-১৯ ডেডিকেটেড ঘোষণা করা হয়। সে জন্য ২০২০ সালে ১৮টি আইসিইউ শয্যা স্থাপন করা হয়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, আইসিইউ শয্যার জন্য ২২টি ভেন্টিলেটর রয়েছে। এর মধ্যে ২০টি নষ্ট। বাকি দুটি সচল থাকলেও কর্মক্ষমতা কমে গেছে। এ কারণে প্রতিটি ভেন্টিলেটর ২৪ ঘণ্টা পরপর পরিবর্তন করতে হয়। ৩৩টি বাইপ্যাপ মেশিন থাকলেও ২৮টি অকার্যকর। ৩৯টি হাই ফ্লো ন্যাসাল ক্যানুলার মধ্যে ৩৬টি অচল। নেই কোনো সিনিয়র কনসালট্যান্ট। দু’জন জুনিয়র কনসালট্যান্ট আছেন। এদের আবার ছুটতে হয় অন্য বিভাগে। রয়েছেন একজন মেডিকেল অফিসার। আইসিইউ সচল না থাকায় মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয় হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিটে।
পরিস্থিতি উত্তরণের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সর্বশেষ চিঠি পাঠায় গত ২৬ এপ্রিল। এর আগে ৬ এপ্রিল, ২৭ মার্চ, ২৩ ফেব্রুয়ারি এবং গত বছরের ১৭ নভেম্বর চিঠি পাঠানো হয়। এর অনুলিপি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, লাইন ডিরেক্টর, বিভাগীয় পরিচালকসহ বেশ কিছু দপ্তরের দায়িত্বশীলদের বরাবর পাঠানো হয়েছে।
এই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, সরকারি সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ এবং রোগীদের চিকিৎসার স্বার্থে অকেজো যন্ত্রপাতিগুলো মেরামত করা প্রয়োজন। আইসিইউ বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কমপক্ষে তিনজন কনসালট্যান্ট ও ছয়জন মেডিকেল অফিসার প্রয়োজন। তা ছাড়া প্রয়োজন প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ চিকিৎসক। ২৪ চিকিৎসকের সংযুক্তি বাতিল হওয়ায় আইসিইউ সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবীর চৌধুরী জানান, সরকারিভাবে জেনারেল হাসপাতাল চট্টগ্রামের দ্বিতীয় বৃহত্তম চিকিৎসাকেন্দ্র। প্রতিদিন কয়েকশ মুমূর্ষু রোগীর জন্য আইসিইউ প্রয়োজন। যেসব শয্যা আছে, সেগুলোও বন্ধ থাকায় হুমকিতে পড়ে অনেকের জীবন।
গতকাল সোমবার সরেজমিন দেখা যায়, হাসপাতালের নিচতলায় থাকা আইসিইউ বিভাগটি দুটি কক্ষে ভাগ করা। একটি কক্ষে ১০টি ও অন্য কক্ষে রাখা ৮টি শয্যা। একটি কক্ষের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, ঘুটঘুটে অন্ধকার; বন্ধ লাইট-ফ্যান। কেউ নেই। পাশের কক্ষে বসে থাকা দুই ব্যক্তির কাছে এ প্রতিবেদক জানতে চান, আইসিইউ বিভাগটি কোথায়? উত্তরে একজন বলেন, ‘এটিই।’ তারা জানান, যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে সবকিছু নষ্ট। নেই ডাক্তার। তাই কক্ষটি বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকে। অনুরোধ করে ভেতরে প্রবেশ করেন এ প্রতিবেদক। অনুরোধ করে জ্বালানো হয় কয়েকটি লাইট। তখন দেখা যায়, সারিবদ্ধ আটটি শয্যা। নেই ভেন্টিলেটর, মনিটর, বাইপ্যাপ মেশিন, হাই ফ্লো ন্যাসাল ক্যানুলা থেকে শুরু করে আনুষঙ্গিক কোনো সরঞ্জাম। শয্যাগুলোর অবস্থাও নাজুক। কোনোটির স্ক্রু ভাঙা, কোনোটির চাকা নষ্ট। বিভাগের চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে নষ্ট নানা যন্ত্রাংশ। কোনো শয্যার অংশ রশি দিয়ে বেঁধে রাখা। দীর্ঘদিন ধরে রোগী ভর্তি বন্ধ থাকায় নোংরা হয়ে গেছে পুরো বিভাগ। এরই মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে লাইট-ফ্যানও। জং পড়েছে শয্যা থেকে শুরু করে নানা যন্ত্রাংশে।
এর বিপরীত পাশে আরেকটি কক্ষে রয়েছে ১০টি শয্যা। সেখানকার অবস্থা একই। কেবল দুটি শয্যায় দুই রোগীকে এইচডিইউ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
গতকাল বিভিন্ন স্থান থেকে মুমূর্ষু কয়েকজন রোগী আসেন। ভর্তি হতে না পেরে তারা ফিরে যান।
আইসিইউ বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক মৌমিতা দাশ বলেন, ‘লাইফ সাপোর্ট প্রয়োজন হওয়া এমন রোগী এলেও ভর্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে অনেককে বাইরে রেফার করা ছাড়া উপায় নেই। বিষয়টি নিয়ে আমরা বিব্রত।’
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা.
এ ছাড়া সম্প্রতি এসেছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান। এ বিষয়ে কথা বলতে তাঁর মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘জরুরি এই বিভাগের এমন নাজুক পরিস্থিতি নিয়ে আমরা বিব্রত। বিষয়টি এরই মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তরসহ একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। চট্টগ্রামে বিভিন্ন সময় নানা অনুষ্ঠানে আসা অনেককে এ ব্যাপারে অবগত করেছি। এখনও আশানুরূপ সাড়া মেলেনি।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
বিরে শিফা: একটি অলৌকিক কুয়ার গল্প
মদিনা থেকে প্রায় ১০২ কিলোমিটার দূরে বদর যুদ্ধের প্রান্তরের কাছে একটি কুয়া রয়েছে, যার নাম বিরে শিফা বা নিরাময় কুয়া। কুয়ার নামের মধ্যেই লুকিয়ে আছে এর মহিমা। আরবি ‘বির’ অর্থ কুয়া এবং ‘শিফা’ অর্থ নিরাময় বা আরোগ্য। এই কুয়ার পানি রোগমুক্তি ও সুস্থতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। বদর যুদ্ধের পর এই কুয়ার পানি মহানবী (সা.)-এর একটি অলৌকিক মুজিজার মাধ্যমে বিষাক্ত ও লবণাক্ত অবস্থা থেকে সুপেয় ও সুস্বাদু পানিতে পরিণত হয়। আজও এই কুয়ার পানি মুসলমানদের জন্য রোগমুক্তির আশীর্বাদ হিসেবে বিবেচিত হয়।
বিরে শিফা কুয়াটি মদিনা থেকে বদর যাওয়ার পথে মূল সড়ক থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার ভেতরে একেবারে বদর যুদ্ধের প্রান্তরের কাছাকাছি এলাকায় অবস্থিত। বদর যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই যুদ্ধে মুসলমানরা সংখ্যায় কম হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহর সাহায্যে বিজয় লাভ করে। যুদ্ধ শেষে মহানবী (সা.) এবং তাঁর সাহাবিরা মদিনায় ফিরে আসার পথে পানির সংকটে পড়েন। তখন তাঁরা বিরে শিফা কুয়ার কাছে এসে পৌঁছান।
বিরে শিফা কুয়া, মদিনা