ভারত যেকোনো সময় নিয়ন্ত্রণরেখায় হামলা চালাতে পারে, পাকিস্তানের সতর্কবার্তা
Published: 6th, May 2025 GMT
ভারত যেকোনো সময় নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর হামলা চালাতে পারে বলে গতকাল সোমবার সতর্ক করে দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। তিনি বলেছেন, ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার পর পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা উত্তেজনা বেড়েই চলেছে।
ইসলামাবাদে সাংবাদিকদের খাজা আসিফ বলেন, ‘গোপন সূত্রে জানা যাচ্ছে, ভারত এলওসির যেকোনো পয়েন্টে হামলা চালাতে পারে…নয়াদিল্লিকে এর উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।’
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ পেহেলগামে ঘটনা তদন্তে একটি আন্তর্জাতিক কমিশন গঠন করার আহ্বান জানিয়েছেন, উল্লেখ করে খাজা আসিফ বলেন, ‘এই তদন্তের মাধ্যমে পরিষ্কার হবে, ঘটনাটিতে ভারত নিজে বা কোনো অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠী জড়িত কি না এবং এতে নয়াদিল্লির ভিত্তিহীন অভিযোগ নিয়ে সত্য উঠে আসবে।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে এ অঞ্চলকে পারমাণবিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিচ্ছেন’—অভিযোগ করেন খাজা আসিফ। খাইবার-পাখতুনখাওয়া ও বেলুচিস্তান প্রদেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ভারতের জড়িত থাকার পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের অভিযোগও আবার তুলে ধরেন তিনি।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ পেহেলগামে ঘটনা তদন্তে একটি আন্তর্জাতিক কমিশন গঠন করার আহ্বান জানিয়েছেন, উল্লেখ করে খাজা আসিফ বলেন, ‘এই তদন্তের মাধ্যমে পরিষ্কার হবে, ঘটনাটিতে ভারত নিজে বা কোনো অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠী জড়িত কি না এবং এতে নয়াদিল্লির ভিত্তিহীন অভিযোগ নিয়ে সত্য উঠে আসবে।’‘জাতিসংঘে আমরা ২০১৬ ও ২০১৭ সালে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ভারতের অর্থ জোগানোর প্রমাণ দিয়েছিলাম, এমনকি ভিডিও ফুটেজও সরবরাহ করেছিলাম’, দাবি করেন খাজা আসিফ। বলেন, ‘খাইবার-পাখতুনখাওয়া ও বেলুচিস্তানে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসের ঢেউ আফগানিস্তান থেকে পরিচালিত গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে যুক্ত, যাদের ভারত সমর্থন করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
আরও পড়ুন‘ভারতের সঙ্গে বড় ধরনের যুদ্ধের সম্ভাবনা দেখছি না, তবে প্রস্তুত থাকতে হবে’০৪ মে ২০২৫খাজা আসিফ প্রশ্ন তোলেন, পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দল কেন একদিন আগে অনুষ্ঠিত গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ব্রিফিংয়ে অংশ নেয়নি। তিনি বলেন, ‘আমি জানি না, পিটিআই কেন এ ব্রিফিংয়ে অংশ নিল না।’ তিনি আরও বলেন, ‘সংসদের উভয় কক্ষ চলতি সংকট নিয়ে প্রস্তাব পাস করেছে এবং চাইলে যেকোনো দল সর্বদলীয় সম্মেলন (এপিসি) ডাকার স্বাধীনতা রাখে।’
আরও পড়ুনভারত–পাকিস্তান উত্তেজনা: আতঙ্কে দিন কাটছে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখার দুই পাশের বাসিন্দাদের০৩ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
পাকিস্তানি রেঞ্জারকে আটক করল ভারত, নিয়ন্ত্রণরেখায় বড় সংঘর্ষ
ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য রাজস্থানের আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে এক পাকিস্তানি রেঞ্জারকে আটক করেছে বলে দাবি করেছে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)। তবে ওই পাকিস্তানি সীমান্তরক্ষীর পরিচয় প্রকাশ করেনি তারা।
এদিকে পাকিস্তানি রেঞ্জারকে আটকের দাবি করার পর কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) পাকিস্তান ও ভারতের সেনাদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এটিকে সাম্প্রতিক সময়ে উভয় দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংঘর্ষ বলে মনে করা হচ্ছে।
রোববার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) শনিবার রাজস্থানের আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে এক পাকিস্তানি রেঞ্জারকে আটক করেছে। এ ঘটনা এমন সময় ঘটল, যখন পাকিস্তান গত ২৩ এপ্রিল বিএসএফ কনস্টেবল পূর্ণম কুমার সাহুকে আটক করে। পাঞ্জাবের ফিরোজপুর সেক্টরে কৃষকদের পাহারা দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন সাহু।
এদিকে আটক হওয়া পাকিস্তানি রেঞ্জারের পরিচয় এখনও প্রকাশ করা হয়নি। তিনি বর্তমানে বিএসএফের রাজস্থান ফ্রন্টিয়ারের হেফাজতে আছেন।
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্তে ভুল করে পার হওয়া সৈন্যদের ফেরত দেওয়ার একটি প্রচলিত প্রক্রিয়া আছে। কিন্তু সম্প্রতি উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় পাকিস্তান সাহুকে ফেরত দিচ্ছে না, ফলে ভারতও পাকিস্তানি রেঞ্জারের ফেরতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি।
এদিকে এনডিটিভির প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, রেঞ্জারকে আটক করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তানের সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণরেখার (এলওসি) বিভিন্ন সেক্টরে বিনা উসকানিতে গুলি চালাতে শুরু করে। এটি ১০ দিন ধরে চলা সংঘর্ষের ধারাবাহিকতার অংশ।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, কাশ্মিরের কুপওয়ারা, বারামুলা, পুঞ্চ, রাজৌরি, মেন্ধর, নৌশেরা, সুন্দরবানি এবং আখনুর সেক্টর জুড়ে এই হামলা হয়। ভারতীয় সেনাবাহিনীও উপযুক্ত জবাব দিয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
এটি সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংঘর্ষ, যেখানে একসঙ্গে সবচেয়ে বেশি পাকিস্তানি পোস্ট অংশ নেয়। অবশ্য এখনও পর্যন্ত কোনও প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে বিএসএফ সদস্য সাহুর মুক্তির জন্য একাধিক বৈঠক হলেও পাকিস্তান এখনও কোনও সময়সীমা বা অবস্থান স্পষ্ট করেনি।
এই গোলাগুলির ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটল যখন কয়েকদিন আগেই জম্মু ও কাশ্মিরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছেন। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মিরে এটিই সবচেয়ে বড় হামলা।
সম্প্রতি অধিকৃত কাশ্মিরে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলার জেরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে।
এদিকে পেহেলগামের ভয়াবহ ওই হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান।
এই পরিস্থিতির মধ্যে পাকিস্তান শনিবার “আবদালি” ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করেছে। ভারতের কর্মকর্তারা এটিকে “খোলামেলা উসকানি” বলে মন্তব্য করেছেন। ৪৫০ কিমি রেঞ্জের এই ক্ষেপণাস্ত্র পাকিস্তান “সিন্ধু মহড়ার” অংশ হিসেবে পরীক্ষা করেছে বলে জানিয়েছে।