পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ মঙ্গলবার দেশটির সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা–আইএসআইয়ের প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন করেছেন। এ সময় ভারতের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার মধ্যে ‘বহিঃশক্তির সামরিক হুমকি’ মোকাবিলায় নিজ দেশের প্রস্তুতি সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করা হয়।

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার পর দেশটি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে, ইসলামাবাদের এমন আশঙ্কার প্রায় এক সপ্তাহ পর উচ্চপর্যায়ের কেউ আইএসআইয়ের প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন করল। পাকিস্তানের অভিযোগ, কোনো তদন্ত বা প্রমাণ ছাড়াই ভারত এই হামলায় পাকিস্তানকে জড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে। ইসলামাবাদ এই দাবি দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করে একটি নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়ে আসছে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (পিএমও) এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘পরিদর্শনের অংশ হিসেবে একটি বিস্তারিত ব্রিফিং করা হয়। এতে বিশেষ করে পাকিস্তানের পূর্ব সীমান্তে ভারতের ক্রমবর্ধমান আক্রমণাত্মক ও উসকানিমূলক মনোভাবের প্রেক্ষাপটে বহিঃশক্তির সামরিক হুমকি মোকাবিলার প্রস্তুতির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।’

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এ সময় আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং ক্রমবর্ধমান হুমকি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়। এর মধ্যে প্রথাগত সামরিক পদক্ষেপ, হাইব্রিড যুদ্ধের কৌশল এবং ছায়া সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ডের বিষয়গুলোও ছিল।’

এ সময় উপপ্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার, প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ, সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল নাভিদ আশরাফ এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল জহির আহমেদ বাবর উপস্থিত ছিলেন।

এ ছাড়া আইএসআই পরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুহাম্মদ আসিম মালিক ও সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী এ সময় উপস্থিত ছিলেন। আসিম মালিককে সম্প্রতি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং তাঁর সঙ্গে থাকা পদস্থ কর্মকর্তারা পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এবং কঠোর জবাব দিতে জাতীয় পর্যায়ে সতর্কতা বাড়ানো, সংস্থাগুলোর মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন সমন্বয় এবং আভিযানিক প্রস্তুতি জোরদারের ওপর গুরুত্ব দেন।

আরও পড়ুনভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদে রুদ্ধদ্বার বৈঠক১১ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনভারত যেকোনো সময় নিয়ন্ত্রণরেখায় হামলা চালাতে পারে, পাকিস্তানের সতর্কবার্তা১১ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস ত ত এ সময়

এছাড়াও পড়ুন:

বিকল্প পরিচ্ছন্ন জ্বালানির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশকে এখনই পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী জ্বালানি সমাধানের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। যাতে দেশ টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন পথে এগিয়ে যেতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এখন সময় এসেছে বাংলাদেশকে গুরুত্বসহকারে বিকল্প পরিচ্ছন্ন জ্বালানি বিবেচনা করার, যার মধ্যে বৃহৎ পরিসরে সৌরবিদ্যুৎ স্থাপন অন্যতম।’

গত বৃহস্পতিবার রাতে অ্যানথ্রোপোসিন ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান কার্ল পেজ এবং তাঁর সহকর্মীদের সঙ্গে এক ভার্চ্যুয়াল সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বিশ্বের ঘনবসতিপূর্ণ এবং জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি হিসেবে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল থাকার সামর্থ্য রাখে না।

কার্ল পেজ তাঁর বক্তব্যে নতুন প্রজন্মের পারমাণবিক প্রযুক্তি ও হাইব্রিড সিস্টেমের সাম্প্রতিক অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘এসব প্রযুক্তি নির্ভরযোগ্য, শূন্য-কার্বন বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম। বিশেষ করে ভাসমান বা বার্জ-মাউন্টেড রিঅ্যাক্টর তুলনামূলকভাবে কম খরচে, কম রক্ষণাবেক্ষণে, দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান শিল্প খাতের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ করতে পারবে।’

পেজ আরও বলেন, ‘পারমাণবিক শক্তি আজ আর বিশ্বব্যাংকের মতো বড় উন্নয়ন অর্থায়ন সংস্থাগুলোর কাছে নিষিদ্ধ বিষয় নয়। ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশ ইতিমধ্যেই তাদের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা পূরণে এ প্রযুক্তি গ্রহণ করছে।’ তিনি উল্লেখ করেন, উদ্ভাবনে বাংলাদেশের শক্তিশালী রেকর্ড রয়েছে, তাই দেশটি পরিচ্ছন্ন জ্বালানির রূপান্তরে নেতৃত্ব দিতে পারে। এর সুফল হবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জ্বালানির দাম স্থিতিশীল রাখা এবং শিল্প খাতের প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি।

পেজ আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ উদীয়মান প্রযুক্তির জন্য একটি কৌশলগত কেন্দ্র এবং পারমাণবিক উদ্ভাবনে শান্তিপূর্ণ নেতৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে।’

অধ্যাপক ইউনূস জানান, অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি নতুন জাতীয় বিদ্যুৎনীতি প্রণয়ন করেছে, যাতে সৌর জ্বালানির গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

তবে তিনি উল্লেখ করেন, পারমাণবিক বিকল্প নিয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কঠোর গবেষণা ও সম্ভাব্যতা যাচাই অপরিহার্য।

অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, ‘আমরা অবশ্যই এসব সুযোগ অনুসন্ধান করব। তবে প্রতিশ্রুতিশীল এসব প্রযুক্তি নিয়ে গভীর গবেষণা দরকার। কোনো সন্দেহ নেই—বাংলাদেশকে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা দ্রুত হ্রাস করতেই হবে।’

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এবং সরকারের সিনিয়র সচিব ও এসডিজি–বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিকল্প পরিচ্ছন্ন জ্বালানির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা