ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা: শিশুসহ ৭ জন নিহতের দাবি পাকিস্তানের
Published: 7th, May 2025 GMT
ভারতের হামলায় পাকিস্তানে শিশুসহ নিহতের সংখ্যা বেড়ে সাতজনে দাঁড়িয়েছে বলে দাবি করেছে দেশটির আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। হামলায় আহতের সংখ্যাও ১২ জন থেকে বেশি।
পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র আহমেদ শরীফ তাদের দেশের গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, হামলায় অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুজন শিশু রয়েছে।
৭ মে পাকিস্তানের ভেতরে ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরে এই হামলা চালায় ভারতের সামরিক বাহিনী। এক বিবৃতিতে ভারত বলছে, পহেলাগামে হামলার সমুচিত জবাব দেওয়া হয়েছে। সন্ত্রাসী স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে। কোনো বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়নি।
আরো পড়ুন:
ভারতের হামলা: বিস্ফোরণে ঘুম ভেঙে যায় মুজাফফরাবাদের বাসিন্দাদের
পাকিস্তানে ভারতের হামলার প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প বললেন, এটা দুঃখজনক
আহমেদ শরীফ অবশ্য সর্বশেষ ব্রিফিংয়ে হামলার স্থানের সংখ্যা বলেননি। এর আগে তিনি পাঁচটি স্থানে ভারতের হামলার কথা নিশ্চিত করেছিলেন।
আইএসপিআর কর্মকর্তা শরীফ বলেছেন, ভারতের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত হানা স্থাপনাগুলোর মধ্যে একটি মসজিদ রয়েছে।
তিনি বলেন, “এটি আন্তর্জাতিক আইনের প্রকাশ্য লঙ্ঘন।”
বিবিসি লিখেছে, ভারত সরকার বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামে একটি সামরিক অভিযান চালিয়েছে, যার লক্ষ্য পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অবস্থিত ‘সন্ত্রাসবাদী অবকাঠামো’, যেখান থেকে ভারতের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা ও হামলা পরিচালিত হচ্ছে।
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগামে ২২ এপ্রিল সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন ২৬ জন, যাদের বেশিরভাগই পর্যটক। এই হামলায় পাকিস্তানের দায় দেখছে ভারত। নয়াদিল্লির অভিযোগ, সন্ত্রাসীদের মদদ দেয় ইসলামাবাদ। এর প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে পাকিস্তান বরাবরই বলে আসছে, পহেলগাম হামলার সঙ্গে তাদের কোনো যোগসূত্র নেই। উপরন্তু, ভারতের কাছে কোনো প্রমাণ থাকলে তা দেখানোর চ্যালেঞ্জ দিয়েছে তারা।
সেই থেকে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছিল। সেই উত্তেজনার মধ্যেই ৭ মে গভীর রাতে পাকিস্তানের ৯টি স্থানে হামলা করল ভারত। এখন পাকিস্তান কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখায় বা জবাব দেয়, তারপর ওপর নির্ভর করছে বাকিটা।
অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই হামলার ঘটনাকে দুঃখজনক বলে বর্ণনা করে শিগগির তা বন্ধ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ভারত-পাকিস্তানের উভয়ের প্রতি সর্বোচ্চ সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
ঢাকা/রাসেল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
পাকিস্তান–ভারত যুদ্ধবিরতিতে ট্রাম্পের ভূমিকার প্রশংসা করলেন আসিম মুনির
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে গতকাল বুধবার উচ্চপর্যায়ের বিরল এক বৈঠক করেছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। এ সময় তিনি ভারতের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে ট্রাম্পের গঠনমূলক ও কার্যকর ভূমিকার প্রশংসা করেন।
হোয়াইট হাউসের ক্যাবিনেট কক্ষে মধ্যাহ্নভোজে ট্রাম্পের সঙ্গে আসিম মুনিরের বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্পের সঙ্গে ছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক মার্কিন বিশেষ প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফ। ফিল্ড মার্শাল মুনিরের সঙ্গে ছিলেন ইসলামাবাদের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা।
পাকিস্তান আইএসপিআরের এক বিবৃতির বরাত দিয়ে জিওনিউজ জানায়, সেনাপ্রধান মুনির মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের রাষ্ট্রনায়কসুলভ মানসিকতা ও বৈশ্বিক জটিলতা বোঝার ও মোকাবিলা করার দক্ষতার প্রশংসা করেন। ট্রাম্পও ফিল্ড মার্শাল মুনিরের নেতৃত্ব ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতার প্রশংসা করেন। তিনি জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সহযোগিতার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
প্রাথমিকভাবে বৈঠকটি এক ঘণ্টা নির্ধারিত থাকলেও তা দুই ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হয়। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বাড়ানোর নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয়, যার মধ্যে ছিল বাণিজ্য, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, খনিজ সম্পদ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, জ্বালানি ইত্যাদি।
আইএসপিআরের বিবৃতিতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত অংশীদারত্বের ভিত্তিতে লাভজনক বাণিজ্য চুক্তির আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
দুজনের বৈঠকে ইরান-ইসরায়েল সংকট নিয়েও আলোচনা হয় বলে জানা গেছে। বৈঠকে চলমান সংঘাতের ‘শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রয়োজনীয়তার’ ওপর জোর দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির।
উষ্ণ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রতীক হিসেবে ফিল্ড মার্শাল মুনির প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ জানান, যা পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়।
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘ফিল্ড মার্শাল মুনিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সুযোগ পাওয়া ছিল আমার জন্য সম্মানের। আমি তাঁকে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য ধন্যবাদ জানাতে চেয়েছিলাম।’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘পাকিস্তান ইরানকে ভালো করে চেনে—বেশির ভাগ দেশের চেয়ে ভালো।’ তিনি বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি নিয়েও আলোচনা চলছে।
মুনিরের সফর কেন গুরুত্বপূর্ণ
ফিল্ড মার্শাল মুনিরের এই সফর খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, গত মাসে ভারতের সঙ্গে সংঘর্ষের পর ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়।
গত এপ্রিলে ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার পর দিল্লি এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছিল। ইসলামাবাদ দিল্লির অভিযোগ নাকচ করে বলেছে, তারা কোনো তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করেনি।
ওই হামলার ঘটনার জেরে গত ৭ মে ভারত পাকিস্তানে চালায়। পাকিস্তানও পাল্টা হামলা চালায়। ওই সংঘাতে পাকিস্তানে ৪০ জন সাধারণ নাগরিক ও ১৩ জন সেনাসদস্য নিহত হন।
সংঘাতে পাকিস্তান ভারতের ছয়টি যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করার দাবি করেছে, যার মধ্যে তিনটি ছিল ফ্রান্সের তৈরি রাফাল যুদ্ধবিমান।
শেষ পর্যন্ত গত ১০ মে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়, যা এই রক্তক্ষয়ী সংঘাতের ইতি টানে। যুদ্ধবিরতির পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট কাশ্মীর ইস্যুতে মধ্যস্থতা করারও আগ্রহ দেখিয়েছেন।