রাজশাহীতে বিএনপির দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালা, মারধরের অভিযোগ
Published: 7th, May 2025 GMT
রাজশাহী পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভার একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালা দেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে এ ঘটনা ঘটে।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নওহাটা পৌরসভার বাগধানী উচ্চবিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসা. মঞ্জু মনোয়ারার অভিযোগ, ঘটনার সময় তাঁকে মারধরও করা হয়েছে।
বিদ্যালয়, বিএনপি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের আগে বাগধানী উচ্চবিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ছিলেন নওহাটা পৌরসভার সাবেক মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা হাফিজুর রহমান। এরপর ৩ মার্চ কমিটির নতুন সভাপতি হন বিএনপি–সমর্থিত মামুন-অর-রশিদ। তিনি নওহাটা পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। রফিকুলের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নাজিম উদ্দিন মোল্লা। তিনি পৌর বিএনপির সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। নাজিম সাবেক পৌর মেয়র ও পৌর বিএনপির সভাপতি মো.
গতকাল মঙ্গলবার কমিটির সভা ছিল। সেখানে পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলামের যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি যাওয়ার আগে সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়ায়। দুই পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির একপর্যায়ে প্রধান শিক্ষককে বাইরে বের করে তাঁর কক্ষে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় গতকাল দুপুরে নওহাটা পৌরসভার বাঘাটা গ্রামের বাসিন্দা ও পৌর যুবদলের মো. আতাউর (৩৫), বাগাসার উচ্চবিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক ও পৌর যুবদলের মো. মকসেদ আলী (৩৫), সাবেক কাউন্সিলর নাজিম উদ্দিন মোল্লা (৫০), বাগধানী গ্রামের মো. জমসেদসহ (৪০) অজ্ঞাতনামা আরও ১০ থেকে ১২ জনের বিরুদ্ধে পবা থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক।
অভিযোগে বলা হয়, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিবাদীরা বাগধানী উচ্চবিদ্যালয়ের কমিটির সভার সময় জোর করে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ঢুকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকেন। তিনি গালাগাল করতে নিষেধ করলে তাঁরা অফিসকক্ষ ভাঙচুর করেন এবং তাঁকে মারধর করে বের করে দিয়ে অফিসকক্ষে তালা দিয়ে চলে যান। অভিযুক্তরা তাঁকে ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নানা ধরনের ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দেন।
আজ বুধবার সকালে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষকের কক্ষের দুটি দরজায় চারটি তালা লাগানো। বিদ্যালয়ের সামনে একটি ডোবা। সেখানে ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে প্রধান শিক্ষকের চেয়ার। বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে পাশের একটি কক্ষে বসে ছিলেন প্রধান শিক্ষক।
জানতে চাইলে মোসা. মঞ্জু মনোয়ারা বলেন, এটা বিএনপির নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব। এখানকার কোনো ইস্যু না। তিনি বিষয়টি ইউএনও ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাকে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন।
আবেগতাড়িত হয়ে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘বাগসারা স্কুলের পিয়ন এসে এখানে স্কুল চলাকালে এসে কী করে আমাকে গালিগালাজ করেন? আমি নিরাপত্তা চাই।’
পবার নওহাটা পৌরসভার বাগধানী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালা দিয়ে তাঁর চেয়ার ফেলে দেওয়া হয়। বুধবার বেলা ১১টার দিকে তোলাউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ বন দ ব প রসভ র কম ট র
এছাড়াও পড়ুন:
ইইউর বাজারে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ চীনের কাছাকাছি
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে দীর্ঘদিন ধরেই শীর্ষে রয়েছে চীন। তবে এবারে পোশাক রপ্তানিতে দেশটির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি চীনের চেয়ে মাত্র ৩২ কোটি ডলার কম হয়েছে।
ইইউর পরিসংখ্যান কার্যালয়ের (ইউরোস্ট্যাট) তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে চলতি বছরের প্রথম চার মাস জানুয়ারি-এপ্রিলে ৩ হাজার ২৪৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কোম্পানিগুলো। এ আমদানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি।
আলোচ্য চার মাসে ইইউর বাজারে চীন ৮৩৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। এ রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে একই সময়ে ইইউর বাজারে বাংলাদেশ ৮০৭ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশি।
ইউরোস্ট্যাটের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে ইইউর বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীনের তুলনায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেশ পিছিয়ে ছিল। যদিও গত বছর চীনের চেয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি বেশি ছিল।
২০২৩ সালে ইইউর বাজারে চীন ২ হাজার ৫৪১ কোটি ডলার ও বাংলাদেশ ১ হাজার ৮৮৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। পরের বছর (২০২৪) চীনের রপ্তানি ২ দশমিক ৬১ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ৬০৭ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। অন্যদিকে বাংলাদেশের রপ্তানি দাঁড়ায় ১ হাজার ৯৭৮ কোটি ডলার। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
ইইউর বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে অর্থের হিসাবে পিছিয়ে থাকলেও পরিমাণে চীনকে টপকে যায় বাংলাদেশ, ২০২২ সালে। সেবার বাজারটিতে বাংলাদেশ ১৩৩ কোটি ও চীন ১৩১ কোটি কেজি কাপড়ের সমপরিমাণ তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। গত বছর চীনের চেয়ে ২ কোটি কেজির সমপরিমাণ তৈরি পোশাক কম রপ্তানি করে বাংলাদেশ। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ চীনকে ছাড়িয়ে গেছে। এ সময়ে বাংলাদেশ ৪৮ কোটি ও চীন ৩৮ কোটি কেজি কাপড়ের সমপরিমাণ তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে।
বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানির আর্থিক মূল্যে শেষ পর্যন্ত চীনকে টপকে শীর্ষ স্থানে পৌঁছাতে পারবে কি না, এমন প্রশ্ন করা হয় তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেলকে। জবাবে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ইইউর বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশের ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এটি বজায় থাকলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে চীনকে টপকে যেতে পারে বাংলাদেশ।
ইইউর বাজারে চীন ও বাংলাদেশের পর শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হচ্ছে তুরস্ক, ভারত, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, মরক্কো, শ্রীলঙ্কা ও ইন্দোনেশিয়া। এর মধ্যে চলতি বছরের প্রথম চার মাসে তুরস্ক ৩১০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। দেশটির রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ৪১ শতাংশ কমেছে। এ বাজারে গত বছর তুরস্ক ১ হাজার ৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে।
চলতি বছরের জানুয়ারি-এপ্রিল সময়ে ইইউর বাজারে ভারত ২০১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সাড়ে ২০ শতাংশ বেশি। একই সময়ে কম্বোডিয়া ১৫৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। তাদের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩১ দশমিক ৭৭ শতাংশ।