শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত সংস্থা প্রতিবেদন জমা দেবে সোমবার
Published: 9th, May 2025 GMT
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করা মামলায় আগামী সোমবার তদন্ত সংস্থা প্রতিবেদন জমা দেবে। ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আজ শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টের মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছেন।
নিয়ম অনুযায়ী, ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা প্রথমে চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। এরপর চিফ প্রসিকিউটর সেই তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করেন এবং আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আকারে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন।
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম তাঁর ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই গণহত্যার তদন্ত রিপোর্ট আগামী সোমবার চিফ প্রসিকিউটর বরাবরে দাখিল করবে আশা করছি। তদন্ত রিপোর্ট দাখিল হওয়ার পর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ, অর্থাৎ ফরমাল চার্জ দাখিলের মাধ্যমে হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু হবে।’
গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে গণ-অভ্যুত্থানের সময় হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে প্রথম মামলাটি (মিস কেস বা বিবিধ মামলা) হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। এ মামলায় পরে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকেও (গণ–অভ্যুত্থানের সময় আইজিপির দায়িত্বে ছিলেন) আসামি করা হয়।
এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদনের দাখিলের সময় এ পর্যন্ত তিনবার বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ গত ২০ এপ্রিল এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য সময় বৃদ্ধির আবেদন করে প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ)। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় দুই মাস বাড়িয়ে আগামী ২৪ জুনের মধ্যে জমা দেওয়ার সময় নির্ধারণ করেন ট্রাইব্যুনাল। অবশ্য এর আগেই তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করার কাজ শেষ হচ্ছে, যা গতকাল ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর।
ফেসবুক পোস্টটি সন্ধ্যায় ট্রাইব্যুনালে কর্মরত সাংবাদিকদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেও দিয়েছেন (শেয়ার করা) প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম। পরে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য যে সময় দেওয়া হয়েছে, তার আগেই প্রতিবেদন প্রস্তুত হয়ে গেছে। তদন্ত সংস্থা এমনটি জানিয়েছে।
এই মামলা ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের আরও দুটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগ শাসনামলের সাড়ে ১৫ বছরে গুম ও খুনের ঘটনায় তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অপর মামলাটি হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম একাধিকবার উল্লেখ করেছেন, গণ-অভ্যুত্থানের সময় গত বছরের ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ‘সুপিরিয়র কমান্ডার’ (সর্বোচ্চ নির্দেশদাতা) ছিলেন শেখ হাসিনা।
‘আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলও চলতি সপ্তাহে’গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার আগে রাজধানীর চানখাঁরপুলে গুলি করে হত্যা করা হয় ছয়জনকে। গণহত্যার এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করা মামলায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আটজনকে আসামি করে ইতিমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। গত ২১ এপ্রিল এই প্রতিবেদন চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে জমা দেয় তারা।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো মামলায় এটিই ছিল তদন্ত সংস্থার প্রথম কোনো চূড়ান্ত প্রতিবেদন। তদন্ত সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আকারে জমা দিতে চার সপ্তাহ সময় নিয়েছে প্রসিকিউশন। আগামী ২৫ মের মধ্যে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করার কথা রয়েছে। অবশ্য তার আগেই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা যাবে বলে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।
এ বিষয়ে ফেসবুক পোস্টে তাজুল ইসলাম লিখেছেন, ‘ইতিমধ্যে চানখাঁরপুল হত্যাকাণ্ডের দায়ে সিনিয়র পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছে। ওই হত্যকাণ্ডের দায়ে আনুষ্ঠানিক বিচারের জন্য ফরমাল চার্জ চলতি সপ্তাহেই দাখিল করা হবে এবং এর মাধ্যমে জুলাই গণহত্যার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র তদন ত স স থ ফ সব ক প স ট ত জ ল ইসল ম ম নবত ব র ধ ফরম ল চ র জ ল র তদন ত দ খ ল কর জ ল ই গণ গণহত য প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
আবদুল হামিদের দেশত্যাগ: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাদের পদত্যাগ দাবি
ফ্যাসিবাদের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদসহ গণহত্যার কুশীলবদের ক্রমান্বয়ে দেশত্যাগে সহায়তার দায়ে সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তার এবং আগামী তিনদিনের মধ্যে স্বরাষ্ট্র ও ছাত্র উপদেষ্টাদের পদত্যাগের দাবি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) বিকেল ৫টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিনের সামনে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ।
সংবাদ সম্মেলনে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি বলেন, “ফ্যাসিবাদের দোসর আবদুল হামিদকে দেশ থেকে নিরাপদে বাইরে যাওয়ার সুযোগ যারা দিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। আগামী তিনদিনের মধ্যে বলতে হবে বর্তমান রাষ্ট্রপতির অফিস থেকে হামিদকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য কে ফোন করেছিল? যদি বলতে না পারেন- এই দায় প্রধানত স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার।”
আরো পড়ুন:
আবদুল হামিদের দেশত্যাগ: অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার, বরখাস্ত ২
নতুন বাংলাদেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে সাংবাদিকদের প্রতি রাষ্ট্রপতির আহ্বান
তিনি বলেন, “এখন পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ভদ্রতার সঙ্গে বলছি, এরপরে ভদ্রতাও থাকবে না। পরে আমরা বাথরুম পরিষ্কারের ঝাড়ু, স্যান্ডেল নিয়ে রাস্তায় নামব। যদি আমাদের জীবনই চলে যায়, শহীদদের পরিবারের ওপর আবারো গণহত্যা চালানো হয়, তবে ইন্টেরিম সুদ্ধ রক্তের বন্যা বয়ে যাবে।”
ছাত্রজনতার দাবি না মানা, জুলাই গণহত্যার বিচারে অগ্রগতি না থাকাসহ বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে ছাত্র উপদেষ্টাদের পদত্যাগ চেয়ে তিনি আরো বলেন, “এখনো চুপ্পুর অপসারণ করা যায়নি, সংবিধান বাতিল করা যায়নি, জুলাই ঘোষণাপত্র হয়নি, ফ্যাসিস্ট গণহত্যাকারী নিষিদ্ধ করা যায়নি, গণহত্যার বিচার শুরু করা যায়নি। এসব দাবি নিয়ে সচিবালয়ের দিকে গেলে ছাত্র উপদেষ্টারা বলেন সরকার চাপে পড়ে। ডজন ডজন উপদেষ্টার মাঝে তোমরা মাত্র দুজন। তোমরা আমাদের থামাইতে আসো কেন?”
হাদি বলেন, “তোমরা চেয়ারে থেকে কাজ করতে পারো না। ছাত্র-জনতার একটা দাবিও বাস্তবায়ন করাতে পারিনি- এটা মেনে নিয়ে পদত্যাগ করো। গণহত্যায় জড়িতদের বিচারের আগে রাতের আধারে প্রোটোকোল নিয়ে লুকিয়ে পালাতে পারছে, তখন এই চেয়ারে বসে থাকার বৈধতা তোমাদের নেই।”
ছাত্র-জনতার কাতারে আসার আহ্বান জানিয়ে হাদি আরো বলেন, “জুলাইয়ের প্রতি আপনাদের দরদ যদি থেকে থাকে, তবে আগামী তিনদিনের মধ্যে উপদেষ্টার চেয়ারে লাথি মেরে আমাদের কাতারে চলে আসেন।”
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আপনি ডজন খানেক আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ এনেছেন, আমরা সাদুবাদ জানিয়েছি। কিন্তু আগামী ৩৬ জুলাইয়ের আগে জুলাই গণহত্যার বিচারের জন্য কোনো বিশেষজ্ঞ আনছেন না? এটা আমরা বুঝি। গণহত্যার বিচারের জন্য যা কিছু করা লাগে, আপনাকে সেটা করতে হবে। না হলে জনরোষ থেকে বাঁচা যাবে না। উন্নয়ন করে যদি কেউ টিকে থাকতে পারত, তবে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালাত না।”
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী