পবিত্র হজ ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের একটি, যা প্রতিটি সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় দায়িত্ব। তবে হজযাত্রার সময় ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা, স্থানীয় অবকাঠামো সম্পর্কে অজ্ঞতা, স্বাস্থ্যগত সমস্যা এবং জরুরি সহায়তার প্রয়োজনীয়তার মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে মোবাইল অ্যাপ—‘লাব্বাইক’ উন্মোচন করেছে। এই অ্যাপ হজযাত্রীদের সফরকে নিরাপদ, সুবিন্যস্ত এবং আধ্যাত্মিকভাবে সমৃদ্ধ করছে, পাশাপাশি হজ ব্যবস্থাপনাকে আরও গতিশীল ও কার্যকর করছে।

লাব্বাইক অ্যাপ হজযাত্রীদের নিরবচ্ছিন্ন সহায়ক

লাব্বাইক অ্যাপ সম্পর্কে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিস্ট কর্মকর্তা জানান, ‘লাব্বাইক’ অ্যাপটি হজযাত্রীদের জন্য একটি সর্বাঙ্গীন ডিজিটাল মাধ্যম, যা তাঁদের হজ পালনকে সহজ, নিরাপদ এবং আধ্যাত্মিকভাবে পরিপূর্ণ করেছে। হজযাত্রীর ফ্লাইট তথ্য, আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা, লোকেশন ট্র্যাকিং, ধর্মীয় সহায়িকা এবং জরুরি সহায়তার মতো সব প্রয়োজনীয় সেবা একত্র করেছে। হজযাত্রীরা বিপদে পড়লে বা হারিয়ে গেলে এসওএস বাটনের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক সহায়তা পাবেন। ফ্লাইট কোড, বোর্ডিং সময় এবং লাগেজের ওজন সীমার বিস্তারিত তথ্য পাবেন। গুগল ম্যাপের মাধ্যমে ব্যক্তিগত ও গ্রুপ ট্র্যাকিং, মিনা-আরাফার তাঁবুর অবস্থান নির্ণয় করতে পারবেন। হোটেলের নাম, ঠিকানা, চেক-ইন ও চেক-আউট তারিখসহ বিস্তারিত তথ্য থাকবে এই অ্যাপে। ডিজিটাল স্বাস্থ্য প্রোফাইল, মেডিকেল সেন্টার তথ্য, এবং জরুরি স্বাস্থ্য সহায়তা, কোরআন, হাদিস, কিবলা নির্দেশনা, ডিজিটাল তসবি, এবং হজ-ওমরাহে নির্দেশনা রয়েছে । হজ প্রিপেইড কার্ড ও কোরবানি কুপন, নামাজের সময়সূচি ও আবহাওয়ার পূর্বাভাস পাওয়া যাবে। ঐতিহাসিক স্থানের বিবরণ, মক্কা-মদিনার জিয়ারত স্থানের তথ্য, গ্রুপ যোগাযোগ ও হজ এজেন্সি তথ্য রয়েছে।

‘লাব্বাইক’ অ্যাপ হজযাত্রীদের জন্য এক উদ্যোগ, যা আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে ইসলামি আধ্যাত্মিকতার সমন্বয় ঘটিয়েছে। এই অ্যাপ হজযাত্রীদের নিরাপদ, সুন্দর এবং স্মরণীয় হজ পালনে সহায়তা করছে। ২০২৫ সালে বাংলাদেশ থেকে ৮৭ হাজার ১০০ হজযাত্রী এই অ্যাপের মাধ্যমে তাঁদের যাত্রাকে আরও সুবিন্যস্ত ও আধ্যাত্মিকভাবে সমৃদ্ধ করতে পারবেন।

কীভাবে ডাউনলোড ও রেজিস্ট্রেশন করবেন

হজের সরকারি ওয়েব সাইটে পাওয়া যাবে লাব্বাইক অ্যাপ। এছাড়া গুগল প্লে স্টোর ও অ্যাপলের অ্যাপ স্টোর থেকে ‘লাব্বাইক’ অ্যাপ ডাউনলোড করুন। মোবাইল নম্বর, পিলগ্রিম আইডি (পিআইডি), এবং জন্মতারিখ দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করুন। ওটিপি যাচাইয়ের পর চার সংখ্যার পিন সেট করুন। পরিবারের সদস্যদের আমন্ত্রণ জানিয়ে তাঁদের যুক্ত করা যায়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অ য প হজয ত র দ র হজয ত র র এই অ য প সহ য ত

এছাড়াও পড়ুন:

প্যানেলে গাঁথা পিয়ালের স্বপ্ন

যখন পর্দায় একেকটি দৃশ্য বদলে যায় নিখুঁতভাবে, যখন দর্শকের হৃদয় কাঁপে কোনো সংলাপের টানটান আবেগে, তখন খুব কম মানুষই খেয়াল করে, এসবের পেছনে একজন মানুষ আছেন– যিনি নিজ হাতে গড়েন গল্পের ছন্দ। এখন ঢাকার পোস্ট-প্রোডাকশন জগতে এক পরিচিত নাম জোবায়ের আবির পিয়াল। বগুড়ার এ তরুণের পথচলাটা ছিল যেমন পরিশ্রমে ভরা, তেমনি প্রেরণায়। 

তাঁর ভিডিও এডিটিংয়ের শুরুটা ছিল কৌতূহল থেকে। ছোটবেলায় সিনেমা দেখার সময় তাঁর মাথায় ঘুরত ‘এই দৃশ্যগুলো বানানো হয় কীভাবে?’ আলোর খেলা, শব্দের ছন্দ আর সময়ের নিখুঁত ব্যবস্থাপনায় কীভাবে তৈরি হয়? সেই আগ্রহই তাঁকে টেনে নিয়ে যায় ভিডিও এডিটিংয়ের এক নতুন জগতে। প্রথমে একটি সাধারণ ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যারের মাধ্যমে হাতেখড়ি। এরপর তাঁর সামনে খুলে যায় ভিজ্যুয়াল মাধ্যমে নতুন নতুন সব দরজা। প্রতিটি কাট, প্রতিটি ট্রানজিশন যেন হয়ে উঠল গল্প বলার নিজস্ব এক টুল। প্রতিদিন এডিটিং টেবিলে তিনি শুরু করেন এক নিঃসঙ্গ অথচ রোমাঞ্চকর যাত্রা। পিয়াল বললেন, ‘শুরুর দিকে কিছুই জানতাম না। তখন শুধু জানতে চেয়েছি দৃশ্যগুলো কীভাবে তৈরি হয়। যখন কাটা শুরু করলাম তখনই খুঁজে পেলাম নিজের ভাষা। প্রতিটি কাটই তখন মনে হতো একেকটা শব্দ, যা দিয়ে আমি একটি গল্প বলতে পারি।’ এই কৌতূহলই তাঁকে টেনে নিয়ে আসে ঢাকায়। পোস্ট-প্রোডাকশন হাউসে সহকারী সম্পাদক হিসেবে শুরু হয় পিয়ালের জীবন। সেখানেই পান ভিডিও এডিটিংয়ের প্রথম গুরু ইকবাল কবির জুয়েলকে। পিয়াল বলেন, ‘জুয়েল ভাই শুধু বস ছিলেন না, ছিলেন আমার শিক্ষক। তাঁর হাত ধরেই বুঝতে শিখি, এডিটিং মানে শুধু দৃশ্য সাজানো নয়, গল্পের ভেতরের আবেগ বের করে আনা।’

এরপর এক দশকেরও বেশি সময়ের যাত্রা। বর্তমানে পিয়াল কাজ করছেন আলফাআই লিমিটেড-এ চিফ ভিডিও এডিটর হিসেবে। তাঁর প্রতিটি কাজেই যেন থাকে এক ধরনের ভিজ্যুয়াল সংবেদনশীলতা। শাহরিয়ার শাকিলের নেতৃত্বে কাজ করতে গিয়ে পেয়েছেন নতুন দৃষ্টিভঙ্গি। 

পিয়াল বলেন, ‘শাকিল ভাই সবসময় বলেন, একজন সম্পাদক যদি নির্মাণের সব স্তরে থাকতে পারে, তাহলে সে কেবল কাজ করে না, নির্মাণের আত্মাকেও ধরতে পারে।’ এই কথাটা আমি হৃদয় দিয়ে বিশ্বাস করি।

পিয়ালের কাজের পরিসর বিশাল। ওয়েব সিরিজ মহানগর, সিন্ডিকেট, আগস্ট ১৪, জিম্মি, কথোপকথন– এসব জনপ্রিয় প্রজেক্টের পেছনে তাঁর নিখুঁত কাট, আবেগ তৈরি করা টাইমিং, আর গল্পের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে। পিয়াল বলেন, ‘আমি প্রতিবার ভাবি– এই গল্পটা যদি আমার হতো, আমি কীভাবে বলতাম? সেই ভাবনা থেকেই আমি কাজ শুরু করি।’

ফিচার ফিল্ম দাগি-তে প্রধান এডিটর, সুড়ঙ্গ-এ পোস্ট-প্রোডাকশন সুপারভাইজার, তুফান ও তাণ্ডব-এ সহ-সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করেছেন পিয়াল। একক নাটকের সংখ্যাও তিনশর বেশি। তবে শুধু এডিটর হিসেবে নয়, তিনি কাজ করেছেন নন-ফিকশন প্রজেক্টেও। এক ডিশ দুই কুক, হলিডে প্ল্যানার, দ্য বক্স এসব কাজের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন সহযোগী পরিচালকও। এই অভিজ্ঞতা তাঁকে দিয়েছে নির্মাণের সম্পূর্ণ প্রেক্ষাপট বোঝার সুযোগ। আর ভিএফএক্স? সেটিও তাঁর আরেক দক্ষতার ক্ষেত্র। 

‘সিন্ডিকেট’, ‘আগস্ট ১৪’, ‘মাইসেলফ অ্যালেন স্বপন’, ‘কাছের মানুষ দূরে থুইয়া’ এগুলোতে ভিএফএক্স ডিজাইন ও এক্সিকিউশনের কাজেও রেখেছেন নিজের ছাপ। পিয়ালের ভাষায়, ‘ভিএফএক্স যদি ঠিকভাবে ব্যবহার না হয়, তাহলে সেটি গল্পের শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন একটি চাকচিক্য হয়ে দাঁড়ায়। যখন গল্পের ছন্দে থাকে, তখন সেটি জাদুর মতো কাজ করে।’

পিয়াল তাঁর এই দীর্ঘ যাত্রায় পাশে পেয়েছেন দেশের বহু খ্যাতিমান নির্মাতা– শিহাব শাহীন, আসফাক নিপুণ, কাজল আরেফিন অমি, মিজানুর রহমান আরিয়ান, ভিকি জাহেদ, সুমন আনোয়ারকে– যাদের সান্নিধ্য তাঁকে করেছে আরও পরিপক্ব, আরও গভীর দর্শনসম্পন্ন। পিয়ালের কাজগুলো দেখে বলা যায় পর্দার আড়ালে থেকেও তিনি হয়ে উঠেছেন হাজারো গল্পের নেপথ্য নায়ক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ