বিএনপির সম্মেলন ঘিরে উপজেলাজুড়ে সংঘর্ষ
Published: 11th, May 2025 GMT
ওয়ার্ড বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন নিয়ে নাঙ্গলকোট উপজেলাজুড়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন ইউনিয়নে দলীয় পদপ্রার্থীদের মধ্যে এসব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহত হয়েছেন অর্ধশত নেতাকর্মী। গত এক সপ্তাহে পেরিয়া ইউনিয়নের ২, ৩, ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড, ঢালুয়া ইউনিয়নের ১, ২, ৩ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড, দৌলখাঁড় ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড, আদ্রা উত্তর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড, হেসাখাল ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড, সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের ১ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড, বাঙ্গড্ডা ইউনিয়নের ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড সম্মেলন ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনাগুলো ঘটে।
এসব সংঘর্ষের ঘটনাকে একতরফা হামলা দাবি করেছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপি যুগ্ম আহ্বায়ক ও নাঙ্গলকোট উপজেলা আহ্বায়ক নজির আহমদ ভূঁইয়া। তাঁর ভাষ্য, এসব হামলা করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল গফুর ভূঁইয়া সমর্থিত নেতাকর্মীরা। হামলার বিষয়ে আব্দুল গফুর ভূঁইয়া বলেন, ‘যারা হামলা করেছে, আমি তাদের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’
গত শুক্রবার রাতে ঢালুয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি পদপ্রার্থী মোহাম্মদ জালালের মালিকানাধীন তেজের বাজারের রহিম বস্ত্রালয়, মদিনা ডেকোরেটর, রহিম পল্ট্রি, রহিম ডিমের আড়ত ও তাঁর ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। একই দিন সন্ধ্যায় ঢালুয়া ইউনিয়ন বিএনপি কার্যালয় ভাঙচুর করে প্রতিপক্ষ। আব্দুল গফুর ভূঁইয়া সমর্থিত বিএনপি নেতা ইসহাক মজুমদার, আলমগীর, জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে এ হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানান ভুক্তভোগী মোহাম্মদ জালাল।
শুক্রবার বিকেলে ও সন্ধ্যায় পেরিয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সম্মেলনের শুরুতে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী গাজী জাফরের নেতৃত্বে অপর প্রার্থী হায়াতুন্নবী সমর্থিত নেতাকর্মীর ওপর হামলা হয়। হামলায় বিএনপি নেতা মোহাম্মদ ফারুক ভূঁইয়া, তাঁর বড় ভাই রবিউল হক ভূঁইয়া রুবেল, ছোট ভাই জনি ভূঁইয়া, প্রার্থী হায়াতুন্নবীর ভাগিনা আবু নোমান ও ভাতিজা আহসান উল্লাহ আহত হন। একই দিন দুপুরে ৭ নম্বর ওয়ার্ড সম্মেলনে সংঘর্ষের ঘটনায় শ্রীফলিয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর, রবিউল হোসেন, সাগর, কাজী জোড়পুকুরিয়া গ্রামের ইলিয়াস, তাজুল ইসলাম আহত হন।
গত বৃহস্পতিবার সকালে আদ্রা উত্তর ইউনিয়নের দক্ষিণ শাকতলী উচ্চ বিদ্যালয় ও দুপুরে দৌলখাঁড় ইউনিয়নের ভোলাকোট কবি জসীম উদ্দীন একাডেমি প্রাঙ্গণে বিএনপি নেতাকর্মীর সংঘর্ষ হয়। উত্তর শাকতলী উচ্চ বিদ্যালয়ে সম্মেলনে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হন নাঙ্গলকোট উপজেলা বিএনপি যুগ্ম আহ্বায়ক ও আদ্রা উত্তর ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি শহীদ উল্লাহ ভূঁইয়া, দক্ষিণ শাকতলী গ্রামের বিএনপি কর্মী সাহাব উদ্দিন, একই গ্রামের আল আমিন, বাছির, সাকিল। ভোলাকোট কবি জসীম উদ্দীন একাডেমির সম্মেলনের সংঘর্ষে আহত হন দৌলখাঁড় ইউনিয়ন ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি পদপ্রার্থী মোহাম্মদ শাহ আলম, জামাতা মিজানুর রহমান, ছেলে আলমগীর হোসেন, বিএনপি কর্মী আবুল হাশেম, মোহাম্মদ জসিম, মোহাম্মদ টিটু, জাহাঙ্গীর আলম।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপি যুগ্ম আহ্বায়ক ও নাঙ্গলকোট উপজেলা বিএনপি আহ্বায়ক নজির আহমদ ভূঁইয়া বলেন, উপজেলার সব ওয়ার্ড সম্মেলনে আব্দুল গফুর ভূঁইয়া সমর্থিত নেতাকর্মীরা বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটিয়েছে। এই হামলার পরও নেতাকর্মীরা ভোট দিয়ে বিএনপির প্রকৃত ও ত্যাগী নেতাদের বিজয়ী করেছে। হামলা ভঙচুরের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ও দলীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল গফুর ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি নজির ভূঁইয়াকে বলেছি, যারা গণ্ডগোল করেছে– তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে এবং অ্যাকশন নিতে। আমিও তাদের বলেছি, তোমরা আমার দল করতে পারবে না। ওয়ার্ড সম্মেলনগুলোতে শতভাগ আমার লোকেরা বিজয়ী হয়েছে।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ স ঘর ষ ন ঙ গলক ট উপজ ল স ঘর ষ র ঘটন ত ন ত কর ম ন ত কর ম র পদপ র র থ ম হ ম মদ সমর থ ত
এছাড়াও পড়ুন:
মা দিবস : ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার একটি বিশেষ দিন
একটি শব্দ ‘মা’। তাতেই যেন মিশে আছে পৃথিবীর সবচেয়ে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, আত্মত্যাগ আর আশ্রয়ের গল্প। মা দিবস সেই ভালোবাসারই এক মহোৎসব, একটি দিন যেটি আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর উপলক্ষ।
মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার বিশ্বের অনেক দেশেই উদযাপন করা হয় মা দিবস। বাংলাদেশেও দিনটি তরুণ প্রজন্মের মধ্যে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
মাতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর ইতিহাস বহু পুরনো। প্রাচীন গ্রিসে মাতৃদেবী রিয়া এবং রোমে সিবেলের সম্মানে বসন্তকালে উৎসব পালন হতো। রোমানদের ‘হিলারিয়া’ উৎসব ছিল মায়েদের প্রতি ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ। মধ্যযুগে ইউরোপে চালু হয় ‘মাদারিং সানডে’-যে দিনে সন্তানেরা উপহারসহ মায়ের কাছে ফিরে যেত।
আধুনিক মা দিবসের সূচনা হয় ২০ শতকে যুক্তরাষ্ট্রে। সমাজকর্মী অ্যানা জার্ভিস তাঁর প্রয়াত মা অ্যান জার্ভিসের স্মৃতিতে ১৯০৮ সালে প্রথমবারের মতো মা দিবস উদযাপন করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় ১৯১৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে জাতীয় মা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেন। ধীরে ধীরে এটি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
বাংলাদেশে মা দিবসের প্রচলন অপেক্ষাকৃত সাম্প্রতিক। এর পেছনে রয়েছে বিশ্বায়ন, ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাব। যদিও আমাদের সংস্কৃতিতে মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রতিদিনের জীবনের অংশ, তবে এই দিনটি মায়ের জন্য বিশেষ কিছু করার একটি সুযোগ এনে দেয়।
শহরের তরুণ-তরুণীরা মাকে শুভেচ্ছাবার্তা, উপহার বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্টের মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানান। অনেকে মায়ের প্রিয় খাবার রান্না করেন, কোথাও বেড়াতে নিয়ে যান বা শুধু পাশে বসে সময় কাটান-যেটাই হোক, দিনটি হয়ে ওঠে এক গভীর আবেগের বহিঃপ্রকাশ।
একজন মা শুধুই জন্মদাত্রী নন, তিনি সন্তান গড়ারও কারিগর। তার স্নেহ, শিক্ষা, আত্মত্যাগেই একটি মানুষ সামাজিক ও নৈতিক ভিত্তি লাভ করে। একটি শিশুর প্রথম শিক্ষক মা, যিনি কথা শেখান, নৈতিকতা শেখান, স্বপ্ন দেখতে শেখান।
মা দিবস সেই নিঃস্বার্থ অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। এমন একটি দিনে হয়তো একটি সাদা কার্নেশন, একটি চিঠি বা কেবল একটি আলিঙ্গনই মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে পারে। যারা মা-কে হারিয়েছেন, তাদের জন্য দিনটি হয়তো স্মৃতিময় বেদনায় মোড়া, তবুও মা দিবস হয়ে ওঠে স্মরণ ও ভালোবাসার দিন।
পৃথিবীর এক প্রান্তে যখন সন্তান মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে ব্যস্ত, অন্য প্রান্তে তখন কিছু মা তাদের সন্তানদের হারিয়ে শূন্য হাতে বসে আছেন। ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান কিংবা সিরিয়ার মতো অঞ্চলগুলোতে হাজারো মা সন্তান হারিয়েছেন যুদ্ধ ও সহিংসতায়। সন্তান প্রসব সেখানে আনন্দ নয় বরং এক আতঙ্কের নাম। চিকিৎসার অভাবে, নিরাপত্তাহীনতায় অনেক মা প্রতিদিন মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে বেঁচে থাকেন। এই বাস্তবতা মনে করিয়ে দেয়-মা দিবস শুধুই একটি দিবস নয়, এটি এমন একটি দিন, যা মায়ের নিরাপত্তা, মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করার অঙ্গীকারও হতে পারে।
বাংলাদেশ সরকার নারীর ক্ষমতায়ন ও মায়েদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বেশ কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করছে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি)’ কর্মসূচির মাধ্যমে দরিদ্র মায়েরা পাচ্ছেন আর্থিক সহায়তা ও দক্ষতা উন্নয়নের প্রশিক্ষণ। জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে নারীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানে অংশগ্রহণ বাড়ানো হচ্ছে।
‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ কর্মসূচিতে সফল নারীদের সম্মান জানানো হচ্ছে। এছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে হটলাইন, আইন সহায়তা এবং বাল্যবিবাহ নিরোধ কর্মপরিকল্পনা মায়েদের সুরক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
এইসব উদ্যোগের মূল লক্ষ্য-একটি মায়ের হাতে যেন শুধু চুলোর খুন্তি নয়, থাকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার, আয় করার সুযোগ এবং মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা।
ইসলামে মায়ের মর্যাদা অপরিসীম। প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন- “তোমার জান্নাত রয়েছে তোমার মায়ের পদতলে।” এই বার্তাটি মা দিবসের তাৎপর্যের সঙ্গে দারুণভাবে মিলে যায়। বাংলাদেশের মতো ধর্মপ্রবণ সমাজে মা দিবসকে ধর্মীয় ভাবনা ও সংস্কৃতির সঙ্গে মিলিয়ে উদযাপন করলে এর গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়তে পারে।
“প্রতিদিনই তো মা দিবস”- এই বাক্যটি যতই সত্য হোক, বাস্তবে আমরা প্রায়ই মাকে সময় দিতে ভুলে যাই। সেই ব্যস্ত জীবনে এই দিনটি হয়ে উঠতে পারে আমাদের অবহেলা পূরণের একটি উপলক্ষ। মাকে একটু সময় দেওয়া, ভালোবাসার কথা বলা, কিংবা শুধুই পাশে বসে থাকা-এই ছোট ছোট কাজেই ফুটে ওঠে মা দিবসের আসল সৌন্দর্য।
মাকে খুশি করতে আজ প্রিয় ফুল উপহার দিন। মায়ের জন্য নিজ হাতে রান্না করুন। হাতে লেখা চিঠি বা কার্ড দিন। মায়ের সঙ্গে পুরোনো অ্যালবাম দেখুন। সামাজিক মাধ্যমে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার পোস্ট দিন। দূরে থাকলে ভিডিও কলে কথা বলুন। শুধু পাশে বসে কিছু সময় কাটানোও হতে পারে শ্রেষ্ঠ উপহার।
মা দিবস একটি দিনে সীমাবদ্ধ নয়, এটি একটি চেতনা-ভালোবাসার, সম্মানের, কৃতজ্ঞতার। আসুন, আমরা শুধু একটি দিন নয়, প্রতিদিন মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশ করি। কারণ মায়ের মুখের হাসি-সেটিই তো আমাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান ধন।
ঢাকা/টিপু