Samakal:
2025-05-11@22:02:38 GMT

আজ বিশ্ব মা দিবস

Published: 11th, May 2025 GMT

আজ বিশ্ব মা দিবস

আজ বিশ্ব মা দিবস। বিশ্বের প্রতি মায়ের জন্য শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা আর ভালবাসা প্রকাশের দিন আজ। প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার মা দিবস পালন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে সূচনা হলেও বর্তমানে বাংলাদেশসহ প্রায় সারা বিশ্বেই দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে।

আসলে মাকে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানাতে কোনো দিনক্ষণের প্রয়োজন হয় না। প্রতিটি মায়েরই সন্তানের ভালোবাসা প্রাপ্য প্রতিদিনই। তবুও দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারণ করে যে মা সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখান, নিজের সব স্বাদ-আহ্লাদ সন্তানের নামে করে দেন যে মা, তার সম্মানে আলাদা করে একটু ভালোবাসা জানাতেই আজকের দিনটি।

মায়ের সঙ্গে সন্তানের আত্মিক বন্ধন জন্ম-জন্মান্তরের। অটুট এ বন্ধনের প্রগাঢ় আবেগে তাড়িত হয়ে যুগে যুগে রচিত হয়েছে বহু গান, কবিতা, গল্প, আর উপন্যাস। সৃষ্টি হয়েছে বহু কালজয়ী শিল্পকর্ম। বাংলা সাহিত্যেও মাকে নিয়ে অসংখ্য কবিতা রয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘মনে পড়া’, শামসুর রাহমানের ‘কখনো আমার মাকে’, হুমায়ুন আজাদের ‘আমাদের মা’, আল মাহমুদের ‘নোলক’, কালিদাসের ‘মাতৃভক্তি’ এমনই কিছু কালজয়ী বন্দনা।

পৃথিবীর সকল যুগের সকল ধর্মে মা সম্মান  রাখা হয়েছে সবচেয়ে উঁচুতে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আমি মানুষকে তার মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্টের পর কষ্ট ভোগ করে তাকে গর্ভধারণ করে। তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে। সুতরাং আমার শোকরিয়া ও তোমার মা-বাবার শোকরিয়া আদায় করো।’ (সুরা লোকমান, আয়াত: ১৪)।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষায় ‘মা’ ডাকের শব্দগুলোর মধ্যেও আছে উচ্চারণগত অদ্ভুত এক মিল। সবগুলো শব্দের শুরুই ‘এম’ অথবা ‘ম’বর্ণটি দিয়ে। জার্মান ভাষায় ‘মাট্টার’, ওলন্দাজ ভাষায় ‘ময়েদার’, ইতালিয়ান ভাষায় ‘মাদর’, চীনা ভাষায় ‘মামা’, প্রাচীন মিশরীয় ভাষায় ‘মাত’, সোয়াহিলি ভাষায় ‘মামা’ এবং আফ্রিকান, হিন্দি ও বাংলা ভাষায় ‘মা’।

কীভাবে এই সাদৃশ্য ঘটল তা আজও এক বিরাট রহস্য। তবে ভাষাবিদ রোমান জ্যাকবসন এর পেছনে যুক্তি দেখিয়েছেন যে, শিশুরা যখন তার মায়ের দুধ পান করে, তখন তারা তাদের মুখভর্তি অবস্থায় কিছু শব্দ করে। সেই শব্দগুলো নাক দিয়ে বের হয় বলে উচ্চারণগুলো অনেকটা ‘ম’-এর মতো শোনা যায়। তাই প্রায় সব ভাষায়ই ‘মা’ ডাকে ব্যবহৃত শব্দগুলো ‘ম’ বা ‘এম’ দিয়ে শুরু হয়।

‘মা’ শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘মম’, যা পূর্বে ব্যবহৃত শব্দ ‘মাম্মা’র পরিবর্তিত রূপ। ধারণা করা হয়, ইংরেজি শব্দ মাম্মা এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘মাম্মা’ থেকে। যা ‘স্তন’ বোঝাতে ব্যবহৃত হতো। এই শব্দ থেকে ‘ম্যামেল’ উৎপত্তি। যা কিনা স্তন্যপায়ী প্রাণীর ইংরেজি প্রতিশব্দ। 

মূলত যুক্তরাষ্ট্রে মা দিবস পালনের প্রচলন শুরু হয় আমেরিকান সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্ড হোই নামের এক নারীর হাত ধরে। ১৮৭০ সালে আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় শান্তির প্রত্যাশায় জুলিয়া একটি ঘোষণাপত্র লেখেন। এটি মাদারস ডে প্রোক্লেমেশন নামে পরিচিত ছিল। এ ঘোষণার মধ্যে জুলিয়া রাজনৈতিক স্তরে সমাজ প্রতিষ্ঠায় নারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে স্পষ্ট বক্তব্য রাখেন। এরপর যুদ্ধ শেষে পরিবারহীন অনাথদের সেবায় ও একত্রীকরণে নিয়োজিত হন মার্কিন সমাজকর্মী অ্যান মারিয়া রিভস জার্ভিস ও তার মেয়ে আনা মেরি জার্ভিস। এ সময় তারা জুলিয়া ওয়ার্ড ঘোষিত মা দিবস পালন করতে শুরু করেন। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে আনা রিভিজ জার্ভিস ১৯০৫ সালের ৫ মে মারা যান। তার মৃত্যুর পর মেয়ে আনা মায়ের স্বপ্ন পূরণে কাজ শুরু করেন।

১৯০৮ সালে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার একটি গির্জায় আনা তার মায়ের স্মরণে অনুষ্ঠান করেন। একই বছর মার্কিন কংগ্রেস মা দিবসকে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি ছুটি ঘোষণার প্রস্তাব নাকচ করে। তবে হার মানেননি আনা। তিনি তার চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মা দিবস পালিত হতে থাকে। অবশেষে আনার প্রচেষ্টা সফল হয়। ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। দিনটিকে সরকারি ছুটি হিসেবেও ঘোষণা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পরপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও মে মাসের দ্বিতীয় রোববার মা দিবস হিসেবে পালিত হতে থাকে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম দ বস

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্বাসীদের সাফল্যের সাত গুণ

সুরা মুমিনুন পবিত্র কোরআনের ২৩তম সুরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ। এতে ১১৮টি আয়াত রয়েছে। এই সুরা বিশ্বাসীদের গুণাবলি, মানুষের সৃষ্টির রহস্য, আল্লাহর নিয়ামত, নবীদের কাহিনি ও কিয়ামতের ভয়াবহতার ওপর আলোকপাত করে। মুমিনদের সাফল্যের সাতটি গুণ উল্লেখ করায় এটি ‘সুরা মুমিনুন’ (বিশ্বাসীগণ) নামে পরিচিত। এই সুরা বিশ্বাসীদের জীবনে সফলতার পাথেয় হিসেবে কাজ করে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনার শিক্ষা দেয়। (মাওলানা মুহাম্মদ শফি, মা’আরিফুল কুরআন, সুরা মুমিনুন)

সফলকাম বিশ্বাসীদের সাত গুণ

সুরা মুমিনুনের শুরুতে বিশ্বাসীদের সাতটি গুণ বর্ণনা করা হয়েছে, যাঁরা এই গুণাবলি অর্জন করবেন, তাঁরা ফেরদৌসের অধিকারী হবেন, ‘নিশ্চয়ই সফলকাম হয়েছে বিশ্বাসীরা, যারা তাদের নামাজে বিনয় ও নম্র, যারা অসার ক্রিয়াকলাপ থেকে বিরত থাকে, যারা জাকাত দানে সক্রিয়, যারা তাদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে, তবে তাদের স্ত্রী বা দাসীদের ক্ষেত্রে নয়, কারণ এতে তারা নিন্দনীয় নয়। কিন্তু যারা এদের বাইরে অন্য কাউকে কামনা করে, তারা সীমা লঙ্ঘনকারী। আর যারা তাদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে এবং যারা তাদের নামাজে যত্নবান, তারাই হবে ফেরদৌসের অধিকারী, যেখানে তারা চিরকাল থাকবে।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত: ১-১১)

এই গুণগুলো বিশ্বাসীদের জীবনে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শৃঙ্খলার ভিত্তি স্থাপন করে এবং জান্নাতের পথ সুগম করে।

আরও পড়ুনআল্লাহর কাছে যে দোয়া করেছিলেন নবী সোলায়মান (আ.) ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

মানুষ সৃষ্টির রহস্য

সুরায় মানুষের সৃষ্টির ধাপগুলো বর্ণনা করে আল্লাহর সৃষ্টিশক্তির মহিমা তুলে ধরা হয়েছে, ‘আমি তো মানুষকে মাটির উপাদান থেকে সৃষ্টি করেছি। তারপর তাকে শুক্র বিন্দুরূপে এক নিরাপদ আধারে রাখি, পরে আমি শুক্রকে জমাট রক্তে পরিণত করি, তারপর জমাট রক্তকে এক চর্বিতপ্রতিম মাংসপিণ্ডে, আর চর্বিতপ্রতিম মাংসপিণ্ডকে অস্থিপঞ্জরে। তারপর অস্থিপঞ্জরকে মাংস দিয়ে ঢেকে দিই, শেষে তাকে আরেক রূপ দিই। নিপুণ স্রষ্টা আল্লাহ কত মহান!’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত: ১২–১৪)

এই আয়াতগুলো মানুষের সৃষ্টির বিস্ময়কর প্রক্রিয়া ও আল্লাহর অপরিমেয় ক্ষমতার প্রমাণ বহন করে। সুরায় আরও বলা হয়েছে, মৃত্যুর পর কিয়ামতের দিন মানুষকে পুনরুত্থিত করা হবে। (আয়াত: ১৫–১৬)

বৃষ্টি আল্লাহর নিয়ামত

বৃষ্টির মাধ্যমে আল্লাহ পৃথিবীকে সজীব রাখেন, যা তাঁর অসংখ্য নিয়ামতের অন্যতম। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আর আমি আকাশ থেকে পরিমিতভাবে বারিবর্ষণ করি, তারপর আমি তা মাটিতে ধরে রাখি এবং আমি তা সরিয়ে নিতেও পারি। তারপর আমি তা দিয়ে তোমাদের জন্য খেজুর ও আঙুরের বাগান সৃষ্টি করি; তার মধ্যে তোমাদের জন্য থাকে প্রচুর ফল; আর তা থেকে তোমরা খেয়ে থাক।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত: ১৮–১৯)

আরও পড়ুনইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরামের ফজিলত১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বৃষ্টির পানি পৃথিবীকে সবুজ করে, ফল–ফসল উৎপন্ন করে এবং প্রাণীদের জীবন ধারণে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। এটি আল্লাহর সৃষ্টি ও রিজিক প্রদানের প্রক্রিয়ার একটি অলৌকিক নিদর্শন। (তাফসির ইবনে কাসির, সুরা মুমিনুনের ব্যাখ্যা)

নবীদের কাহিনি

সুরায় নুহ (আ.), হুদ (আ.), সালেহ (আ.), মুসা (আ.), হারুন (আ.) ও ঈসা (আ.)–এর কাহিনি উল্লেখ করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, নুহ (আ.)–এর সম্প্রদায় তাঁকে অবিশ্বাস করায় তাদের প্লাবনের মাধ্যমে নিমজ্জিত করা হয়। এই কাহিনিগুলো সত্য প্রত্যাখ্যানের পরিণতি ও নবীদের প্রতি আনুগত্যের গুরুত্ব শিক্ষা দেয়। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তারপর আমি নুহর পরে অনেক সম্প্রদায়ের মধ্যে রাসুল প্রেরণ করেছি। তারা তাদের কাছে স্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে এসেছিল, কিন্তু তারা এমন কিছুতে বিশ্বাস করেনি, যাকে তারা পূর্বে মিথ্যা বলেছিল।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত: ৪৪)

কিয়ামতের ভয়াবহতা ও ক্ষমাপ্রার্থনা

সুরায় কিয়ামতের দিনের ভয়াবহতা বর্ণনা করে বিশ্বাসীদের আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। এটি মানুষকে তাদের কর্মের প্রতি সচেতন হতে ও আল্লাহর রহমত অন্বেষণে তৎপর থাকতে উৎসাহিত করে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘বলো, হে আমার বান্দারা, যারা নিজেদের ওপর অত্যাচার করেছ, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত: ১১৮)

আরও পড়ুনসুরা কারিয়াতে কিয়ামতের ভয়াবহতার বর্ণনা০৪ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ