Samakal:
2025-06-28@04:49:40 GMT

আজ বিশ্ব মা দিবস

Published: 11th, May 2025 GMT

আজ বিশ্ব মা দিবস

আজ বিশ্ব মা দিবস। বিশ্বের প্রতি মায়ের জন্য শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা আর ভালবাসা প্রকাশের দিন আজ। প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার মা দিবস পালন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে সূচনা হলেও বর্তমানে বাংলাদেশসহ প্রায় সারা বিশ্বেই দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে।

আসলে মাকে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানাতে কোনো দিনক্ষণের প্রয়োজন হয় না। প্রতিটি মায়েরই সন্তানের ভালোবাসা প্রাপ্য প্রতিদিনই। তবুও দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারণ করে যে মা সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখান, নিজের সব স্বাদ-আহ্লাদ সন্তানের নামে করে দেন যে মা, তার সম্মানে আলাদা করে একটু ভালোবাসা জানাতেই আজকের দিনটি।

মায়ের সঙ্গে সন্তানের আত্মিক বন্ধন জন্ম-জন্মান্তরের। অটুট এ বন্ধনের প্রগাঢ় আবেগে তাড়িত হয়ে যুগে যুগে রচিত হয়েছে বহু গান, কবিতা, গল্প, আর উপন্যাস। সৃষ্টি হয়েছে বহু কালজয়ী শিল্পকর্ম। বাংলা সাহিত্যেও মাকে নিয়ে অসংখ্য কবিতা রয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘মনে পড়া’, শামসুর রাহমানের ‘কখনো আমার মাকে’, হুমায়ুন আজাদের ‘আমাদের মা’, আল মাহমুদের ‘নোলক’, কালিদাসের ‘মাতৃভক্তি’ এমনই কিছু কালজয়ী বন্দনা।

পৃথিবীর সকল যুগের সকল ধর্মে মা সম্মান  রাখা হয়েছে সবচেয়ে উঁচুতে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আমি মানুষকে তার মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্টের পর কষ্ট ভোগ করে তাকে গর্ভধারণ করে। তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে। সুতরাং আমার শোকরিয়া ও তোমার মা-বাবার শোকরিয়া আদায় করো।’ (সুরা লোকমান, আয়াত: ১৪)।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষায় ‘মা’ ডাকের শব্দগুলোর মধ্যেও আছে উচ্চারণগত অদ্ভুত এক মিল। সবগুলো শব্দের শুরুই ‘এম’ অথবা ‘ম’বর্ণটি দিয়ে। জার্মান ভাষায় ‘মাট্টার’, ওলন্দাজ ভাষায় ‘ময়েদার’, ইতালিয়ান ভাষায় ‘মাদর’, চীনা ভাষায় ‘মামা’, প্রাচীন মিশরীয় ভাষায় ‘মাত’, সোয়াহিলি ভাষায় ‘মামা’ এবং আফ্রিকান, হিন্দি ও বাংলা ভাষায় ‘মা’।

কীভাবে এই সাদৃশ্য ঘটল তা আজও এক বিরাট রহস্য। তবে ভাষাবিদ রোমান জ্যাকবসন এর পেছনে যুক্তি দেখিয়েছেন যে, শিশুরা যখন তার মায়ের দুধ পান করে, তখন তারা তাদের মুখভর্তি অবস্থায় কিছু শব্দ করে। সেই শব্দগুলো নাক দিয়ে বের হয় বলে উচ্চারণগুলো অনেকটা ‘ম’-এর মতো শোনা যায়। তাই প্রায় সব ভাষায়ই ‘মা’ ডাকে ব্যবহৃত শব্দগুলো ‘ম’ বা ‘এম’ দিয়ে শুরু হয়।

‘মা’ শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘মম’, যা পূর্বে ব্যবহৃত শব্দ ‘মাম্মা’র পরিবর্তিত রূপ। ধারণা করা হয়, ইংরেজি শব্দ মাম্মা এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘মাম্মা’ থেকে। যা ‘স্তন’ বোঝাতে ব্যবহৃত হতো। এই শব্দ থেকে ‘ম্যামেল’ উৎপত্তি। যা কিনা স্তন্যপায়ী প্রাণীর ইংরেজি প্রতিশব্দ। 

মূলত যুক্তরাষ্ট্রে মা দিবস পালনের প্রচলন শুরু হয় আমেরিকান সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্ড হোই নামের এক নারীর হাত ধরে। ১৮৭০ সালে আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় শান্তির প্রত্যাশায় জুলিয়া একটি ঘোষণাপত্র লেখেন। এটি মাদারস ডে প্রোক্লেমেশন নামে পরিচিত ছিল। এ ঘোষণার মধ্যে জুলিয়া রাজনৈতিক স্তরে সমাজ প্রতিষ্ঠায় নারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে স্পষ্ট বক্তব্য রাখেন। এরপর যুদ্ধ শেষে পরিবারহীন অনাথদের সেবায় ও একত্রীকরণে নিয়োজিত হন মার্কিন সমাজকর্মী অ্যান মারিয়া রিভস জার্ভিস ও তার মেয়ে আনা মেরি জার্ভিস। এ সময় তারা জুলিয়া ওয়ার্ড ঘোষিত মা দিবস পালন করতে শুরু করেন। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে আনা রিভিজ জার্ভিস ১৯০৫ সালের ৫ মে মারা যান। তার মৃত্যুর পর মেয়ে আনা মায়ের স্বপ্ন পূরণে কাজ শুরু করেন।

১৯০৮ সালে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার একটি গির্জায় আনা তার মায়ের স্মরণে অনুষ্ঠান করেন। একই বছর মার্কিন কংগ্রেস মা দিবসকে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি ছুটি ঘোষণার প্রস্তাব নাকচ করে। তবে হার মানেননি আনা। তিনি তার চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মা দিবস পালিত হতে থাকে। অবশেষে আনার প্রচেষ্টা সফল হয়। ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। দিনটিকে সরকারি ছুটি হিসেবেও ঘোষণা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পরপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও মে মাসের দ্বিতীয় রোববার মা দিবস হিসেবে পালিত হতে থাকে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম দ বস

এছাড়াও পড়ুন:

নাটকে ভালোবাসার গল্পের প্রাধান্য

দেশে যে কোনো উৎসব মানেই নাটকে বৈচিত্র্যময় গল্পের উপস্থিতি। সে গল্পে থাকে প্রেম, পারিবারিক টানাপোড়েন, সম্পর্কের ভাঙাগড়া ও সামাজিক নানা বৈচিত্র‍্যের চিত্র। তবে গল্পে বৈচিত্র্য থাকলেও অধিকাংশ নাটকে প্রেমের গল্প যেন সবসময়ই থাকে কেন্দ্রবিন্দুতে। উৎসবের বাইরেও এই প্রেমের গল্পের প্রাধান্যই বেশি লক্ষণীয়; যা ছিল অতীতে এবং বর্তমানেও। এই সময়ে এসে তা যেন বেড়েছে বহুগুণ। কয়েক বছর ধরে উৎসবে দর্শকপ্রিয়তা আর ট্রেন্ডিং তালিকার দৌড়ে এগিয়ে থাকা বেশির ভাগ নাটকই ভালোবাসার গল্পকে কেন্দ্র করে নির্মিত। কখনও প্রেমের চঞ্চলতা, কখনও সম্পর্কের দ্বিধা, কখনও বা পারিবারিক টানাপোড়েনে জমে উঠেছে নাটকের আবহ।

গেল ঈদুল আজহায় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিএমভি’র ব্যানারে এবার প্রকাশ হয়েছে এক ডজন ঈদ নাটক। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছে জোভান অভিনীত ‘আশিকি’। ঈদের রাতেই ইউটিউবে মুক্তি পাওয়া এ নাটকটি এরইমধ্যে পৌঁছে গেছে ৫০ লাখেরও অধিক ভিউয়ারের ঘরে। নাটকটিতে দেখা যায়, আশিক নামের এক মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলের গায়ক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে শহরের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। প্রেমে পড়ে ধনীর দুলালী জসের সঙ্গে। গানের প্রতি ভালোবাসা, সমাজের টানাপোড়েন আর এক অসাধারণ প্রেমকাহিনির গল্পে নাটকটি জয় করে নিচ্ছে দর্শকহৃদয়। নির্মাতা ইমরোজ শাওনের কথায়, ‘আশিকির গল্পে আছে একজন শিল্পীর স্ট্রাগল, আবার এক অনন্য ভালোবাসার ভাষ্য।’

একই ব্যানারের আরও একটি নাটক ‘তবুও মন’ নিয়েও বেশ আলোচনা চলছে। তমাল আর রায়ার গল্প এটি। তমাল চাকরি করে থাইল্যান্ডে, রায়া পড়ে রাজশাহীতে। দু’জনের স্বভাব দুই মেরুতে হলেও তাদের সম্পর্ক গড়ায় এক মিষ্টি গন্তব্যে। ফারহান আহমেদ জোভান ও তানজিম সাইয়ারা তটিনী অভিনীত এই নাটকে প্রেম ও পরিবারের টানাপোড়েনকে একসঙ্গে তুলে ধরেছেন নির্মাতা আবুল খায়ের চাঁদ।

এদিকে দীর্ঘদিন পর নাটকে ফিরেছেন ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’খ্যাত নির্মাতা মাসুদ হাসান উজ্জ্বল। তাঁর নির্মিত ‘চুপকথা’ নাটকে জুটি হয়েছেন তৌসিফ মাহবুব ও নাজনীন নীহা। প্রেমের গল্প হলেও এতে রয়েছে প্রকৃতি ও সমাজ নিয়ে নানা প্রশ্ন। শ্রীমঙ্গল, জাফলং, গাজীপুর হয়ে ঢাকায় শুটিং হওয়া এই নাটকটি যেন একপ্রকার সিনেমাটিক অভিজ্ঞতা হয়ে উঠেছে। মহসীন মেহেদীর লেখা গল্পে উজ্জ্বল নিজের মতো করে সংলাপ ও চিত্রনাট্য তৈরি করেছেন। নাটকটির বিশেষত্ব– নায়ক-নায়িকার প্রথম দেখা কুমিরের খামারে! তবে নির্মাতা মনে করেন, এটি শুধু প্রেমের গল্প নয়। প্রেম ও প্রকৃতির গল্প বলা যেতে পারে। উজ্জ্বলের ভাষায়, ‘গল্পটা প্রেমের। তার সঙ্গে সমাজের নানাবিধ প্রসঙ্গ এসেছে। আমার যে কোনো কাজে যেমনটা হয় আর কী। নির্মাণের সময় সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টি বরাবরই মাথায় রাখি। এবারও তাই হলো। তবে এবার নাটক বানাতে গিয়ে মোটামুটি একটি সিনেমা বানিয়ে ফেলেছি সম্ভবত।’ 

তৌসিফ-তটিনী জুটি হয়ে এসেছেন আরেক রোমান্টিক নাটকে ‘মন দিওয়ানা’। নির্মাতা হাসিব হোসাইন রাখির এই নাটকে দেখা যায়, রুসু নামের এক বাউন্ডুলে ছেলের সঙ্গে কলেজ পাস করা মারজানের হঠাৎ পরিচয় ও র‍্যাগিং থেকে গড়ে ওঠা সম্পর্কের গল্প। একদিকে রোমান্স, অন্যদিকে বন্ধুত্বের সহজ গল্পে নাটকটি পেয়েছে আলাদা গ্রহণযোগ্যতা।

অপূর্ব ও তাসনিয়া ফারিণ অভিনীত নাটক ‘ভুল থেকে ফুল’। দুই প্রজন্মের মুগ্ধতা ছড়ানো দুই তারকার রসায়ন দেখা গেছে এই নাটকে। নাটকটির মাধ্যমে ভিন্ন রকম এক আবেগঘন অনুভূতির জগতে দর্শককে নিয়ে গেছেন নির্মাতা জাকারিয়া সৌখিন। নাটকটি প্রকাশ করেছে ইউটিউব চ্যানেল ধূপছায়া। গল্পটি প্রেমের হলেও তা আটপৌরে রোমান্সের পথে হাঁটে না। বরং এখানে প্রেম এসেছে ভুলের পথে, উপলব্ধির ধাপে, সম্পর্কের নীরব কান্নায়। নির্মাতা জাকারিয়া সৌখিন বলেন, ‘গল্পটির প্রতিটি বাঁকে রয়েছে মায়া। আপনি চাইলেও ইমোশনাল না হয়ে থাকতে পারবেন না। নাটকটি শেষ হলে মনে হবে, ভুলের পরেও ভালোবাসা রয়ে যায়। কখনও কখনও ভুলই আমাদের সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করায়।’

ঈদের এই নাটকগুলোর বাইরে সাম্প্রতিক সময়ের সফল রোমান্টিক নাটকের তালিকাতেও ভালোবাসার গল্পই শীর্ষে। যেমন— নিলয়-হিমির ‘গুডবয় ব্যাড লাক’, ‘কাছের মানুষ’, তৌসিফ-কেয়া পায়েলের ‘ভুল মানুষ’, জোভান-তটিনীর ‘মন বদল’, অপূর্ব-সাদিয়ার ‘মেঘ বৃষ্টি রোদ্দুর’, জোভান-কেয়ার ‘বন্ধুত্ব নাকি প্রেম’, মুশফিক-মিম মানতাশার ‘নাইস টু মিট ইউ’, আরশ খান-সুনেহরার ‘পাগল প্রেম’, জোভান-নাজনীন নীহার ‘মিথ্যে প্রেমের গল্প’ এবং অপূর্ব-তটিনীর ‘চিঠি দিও’ ও ‘ফিরে আসা।’

সব মিলিয়ে এবারও প্রমাণ হলো, বাংলা নাটকের প্রাণ এখনও ভালোবাসার গল্পেই। চরিত্রের টানাপোড়েন, আবেগের ছায়া, মায়ার মোড়ক–সবকিছু মিলিয়ে প্রেমই রয়ে গেল নাটকের মূল চালিকাশক্তি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ