Prothomalo:
2025-08-14@10:11:57 GMT

বৌদ্ধধর্ম কর্মবাদী ধর্ম

Published: 11th, May 2025 GMT

বৌদ্ধধর্ম কর্মবাদী ধর্ম বা কর্ম ও কর্মফলে বিশ্বাসী। মহামানব গৌতম বুদ্ধ ঈশ্বরের বাণী কংবা ঈশ্বরের দোহাই দিয়ে মানব সমাজে ধর্ম প্রচার করেননি। বুদ্ধ অনন্ত জন্ম পরিগ্রহ করে ত্রিশ প্রকার পারমী পূর্ণ করে সর্বশেষ রাজা শুদ্ধোধন ও রানি মহামায়ার ওরসে জন্মগ্রহণের পর, ঊনত্রিশ বছর বয়সে রাজ ঐশ্বর্য, পিতামাতা, স্ত্রী–পুত্র সবকিছু ত্যাগ করে, ছয় বছর কঠোর সাধনার মাধ্যমে সহস্র মারসেনাকে পরাজিত করে বৈশাখী পূর্ণিমার সমুজ্জ্বল তিথিতে পরম জ্ঞান বুদ্ধত্ব লাভ করেন। তাঁর সাধনা দ্বারা যে জ্ঞান অধিগত করেছেন সেটাই তিনি মানব সমাজে প্রচার করেছেন। তাই বৌদ্ধধর্মকে বলা হয় মানব ধর্ম। তিনি মানুষের দুঃখ মুক্তির ধর্ম জনসমাজে প্রচার করেছেন। তিনি ঈশ্বরের বাণী প্রচার করেননি।

রাজকুমার সিদ্ধার্থ বুদ্ধত্ব লাভের পর তিনটা বিষয় আবিষ্কার করেছিলেন। সেই তিনটা বিষয় হচ্ছে— চার আর্য্যসত্য, অষ্টাঙ্গিক মার্গ ও নির্বাণ। অর্থাৎ মানুষের জীবনে দুঃখ আছে, সেই দুঃখ থেকে মুক্তি লাভের উপায় আছে, দুঃখ লাভের উপায় হল ‘অষ্টাঙ্গিক মার্গ’, অষ্টাঙ্গিক মার্গ অনুশীলনের মাধ্যমে মানুষ সকল প্রকার দুঃখের অন্তসাধন করে, সর্বতৃষ্ণা ক্ষয় করে বিমুক্ত মানবরূপে নির্বাণ লাভ করতে সমর্থ হন। তাই দুঃখ থেকে মুক্তি লাভ করে নির্বাণ সাক্ষাৎ করার জন্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ অনুশীলন ছাড়া অন্যকোনো পথ নেই। তথাগত বুদ্ধ যে ধর্ম পৃথিবীতে প্রচার করেছেন সেটা সম্পূর্ণরূপে নিজের সাধনা দ্বারা অধিগত ধর্ম।

এ ধর্ম প্রচার করতে গিয়ে জীবনে একটি বাক্যও কারও কাছ থেকে ধার করে তিনি প্রচার করেননি। ভগবান তথাগত বুদ্ধের প্রচারিত ধর্মকে বলা হয় সদ্ধর্ম বা সত্য ধর্ম। বুদ্ধ বলেছেন, ‘এহিপস্সিকো’। এর অর্থ হল  ‘এস, দেখ’ অর্থাৎ আগে জান, নিজের বিবেক বুদ্ধি দিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ কর। যদি সত্য কিংবা যুক্তিসঙ্গত এবং নিজের ও অপরের জন্য কল্যাণময় ধর্ম মনে হয় তবেই গ্রহণ কর, অন্যতায় বর্জন কর। বুদ্ধ তাঁর মতবাদ কারো ওপর বোঝাস্বরূপ চাপিয়ে দেননি। কাউকে স্বর্গ নরক অথবা মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে তাঁর ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করেননি। তিনি সবসময় ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করতেন। ভাল লাগলে গ্রহণ কর, ভাল না লাগলে গ্রহণ কর না। অন্ধভাবে কোনকিছুকে গ্রহণ কর না। এটা ছিল তাঁর পরিষ্কার কথা।

বৌদ্ধধর্ম সবসময় বাস্তবতায় বিশ্বাস করে। বৌদ্ধধর্ম ঐশ্বরিক ধর্ম নয়, পরিপূর্ণ মানব ধর্ম। বুদ্ধ বলেছেন, ‘নিজেই নিজের ত্রাণকর্তা বা মুক্তিদাতা। নিজে ব্যতীত অন্য আবার কে!’  তাই বৌদ্ধধর্ম জ্ঞানী, পণ্ডিতগণের প্রিয় ও গ্রহণযোগ্য ধর্ম। বুদ্ধ আরও বলেছেন, ‘আত্মদীপ প্রজ্বালন কর, নিজের শরণই অনন্য শরণ।’ বুদ্ধ ধর্ম প্রচার করতে গিয়ে কাউকে কোনোরকমে ভয় দেখাননি। সবাইকে নিজের কৃতকর্মের প্রতি বিশ্বাস করতে বলেছেন। কেননা কর্মই মানুষের সুখ-দুঃখের প্রধান কারণ। তাই তিনি বলেছেন, ‘সকল প্রকার পাপকর্ম হতে বিরত থেক, কুশলকর্ম সম্পাদন কর এবং স্বীয় চিত্তকে পবিত্র, পরিশুদ্ধ কর, ইহাই বুদ্ধগণের অনুশাসন।’

বৌদ্ধধর্ম সর্বদা কর্ম ও কর্মফলে বিশ্বাস করে। কুশল বা সৎকর্ম মানুষের জীবনে মঙ্গল, কল্যাণ বয়ে আনে। অকুশল বা পাপকর্ম মানব জীবনে অমঙ্গল, অকল্যাণ বয়ে আনে। ভালমন্দ, সুখ-দুঃখ, কল্যাণ–অকল্যাণ সবই নিজের কর্মের মাধ্যেই নিহিত, কর্ম দ্বারাই নির্ধারিত হয়। এর বাইরে বিশ্বাস করার আর কিছু থাকে না। তাই বৌদ্ধধর্ম বাস্তবসম্মত, যুক্তিসঙ্গত ও বিজ্ঞানমনস্ক ধর্ম হিসেবে পৃথিবীতে সর্বজনীন ধর্ম বলে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে। অন্ধবিশ্বাস, মিথ্যা কল্পকাহিনী, অবাস্তব ধারণা বৌদ্ধধর্ম সমর্থন করেনা। বুদ্ধ ঈশ্বর বিশ্বাসকে মিথ্যাদৃষ্টি বলে অভিহিত করেছেন। আর মিথ্যাদৃষ্টিপরায়ণ মানুষেরা জন্ম, জরা, ব্যাধি, মৃত্যু— এ সকল দুঃখ থেকে কখনও মুক্তি লাভের আশা করতে পারেন না।

ভগবান বুদ্ধ তাঁর শিষ্যমণ্ডলীদের উদ্দেশ্যে যে অন্তিম বাণী বলেছিলেন, ‘হে ভিক্ষুগণ! তোমরা শীল, সমাধি, প্রজ্ঞার অনুশীলন করো, জ্ঞানের সাধনা কর, পবিত্র পরিশুদ্ধ জীবনের অধিকারী হও। পঁয়তাল্লিশ বছর যাবত আমি তোমাদের যে ধর্ম, যে বিনয় শিক্ষা দিয়েছি তা সুন্দররূপে প্রতিপালন করবে। হীনধর্ম সেবন করবেনা, জগতে সংস্কার মাত্রই অনিত্য, যা উৎপন্ন হয়, তা পুনরায় বিনাশ হয়, তোমাদের প্রতি ইহাই আমার শেষ শিক্ষা, ইহাই আমার অনুশাসন।’

পবিত্র বুদ্ধ পূর্ণিমার আলোয় সমগ্র বিশ্ব আলোকিত হোক। যুদ্ধ, সংঘাত, হানাহানি, অশান্তি চিরতরে বন্ধ হোক।

শান্ত হে মুক্ত হে, হে অনন্ত পুণ্য,
করুণাঘন ধরণী তল, কর কলঙ্ক শূন্য।

সবাই মঙ্গল লাভ করুক, সকলের কল্যাণ হোক, জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক।

ভদন্ত বুদ্ধানন্দ মহাথেরো প্রতিষ্ঠাতা উপাধ্যক্ষ, ঢাকা আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহার, সিনিয়র সহ-সভাপতি বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব শ ব স কর কল য ণ বল ছ ন ল ভ কর কর ছ ন র কর ছ

এছাড়াও পড়ুন:

স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবিতে এবার যমুনা সেতুর মুখে মহাসড়ক অবরোধ, চরম ভোগান্তি

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) দ্রুত অনুমোদন ও বাস্তবায়নের দাবিতে এবার যমুনা সেতুর মুখে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত তাঁরা যমুনা সেতু পশ্চিম গোলচত্বর এলাকায় ঢাকা ও উত্তরবঙ্গমুখী মহাসড়কের উভয় লেন অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।

শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের ২১টি জেলার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মহাসড়কে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী ও পরিবহনচালকেরা। এক ঘণ্টা পর বেলা একটার দিকে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক ছেড়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করে।

চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে এর আগে গতকাল বুধবার সকাল ৯টা থেকে ছয় ঘণ্টা উল্লাপাড়া রেলস্টেশনের সামনে রেলগেট এলাকায় রেলপথ অবরোধ করেন তাঁরা। এতে ঢাকা ও খুলনার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটে। গতকাল বেলা তিনটার দিকে আজকের যমুনা সেতুর পশ্চিমে মহাসড়ক অবরোধের ঘোষণা দিয়ে তাঁরা অবরোধ তুলে নিয়েছিলেন।

গত ২৬ জুলাই রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের কর্মসূচি বর্জনের মধ্য দিয়ে ডিপিপি অনুমোদনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। চলমান কর্মসূচির অংশ হিসেবে কয়েক দিন ধরে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়ক অবরোধ করে পথনাটক, শেকল ভাঙার গান ও প্রতীকী ক্লাসের আয়োজন করা হয়। এরপরও সাড়া না পেয়ে গত বৃহস্পতিবার হাটিকুমরুল গোলচত্বরে মানববন্ধন ও রোববার মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। গতকাল রেলপথ অবরোধের পর আজ যমুনা সেতুর পশ্চিমে মহাসড়ক অবরোধ করা হয়।

আজ দুপুরে যমুনা সেতু পশ্চিম গোলচত্বর এলাকা অবরোধ করে দাবি আদায়ের জন্য বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভে এক শিক্ষার্থীকে কাফনের কাপড় পরে স্লোগান দিতে দেখা যায়।

আজ দুপুরে যমুনা সেতু পশ্চিম গোলচত্বর এলাকা অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় এক শিক্ষার্থীকে কাফনের কাপড় পরে স্লোগান দিতে দেখা যায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ