মৃত ভেবে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠাচ্ছিল পুলিশ, হঠাৎ নড়ে উঠল নিথর দেহ
Published: 11th, May 2025 GMT
রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলেন অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি। মৃত ভেবে পুলিশে খবর দেন স্থানীয় লোকজন। পুলিশ এসে নিথর দেহ দেখতে পায়। ময়নাতদন্তের জন্য তারা ওই ‘লাশ’ হাসপাতালের পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ সময় হঠাৎ তাঁর শরীর নড়ে ওঠে। তখন তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়।
এ ঘটনা নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলা সদরের মনতলা এলাকায় অজন্তা রাইস মিলের পেছনে উব্দাখালী নদীর তীর থেকে অজ্ঞাতনামা ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়ার পর তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজ সকাল ১০টার দিকে স্থানীয় কয়েকজন উপজেলা ডাকবাংলোর বিপরীত পাশে উব্দাখালী নদীর তীরে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে কয়েকজন পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে আসেন। ওই ব্যক্তিকে মৃত ভেবে তাঁরা বিষয়টি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেনকে জানান।
ওসি ফিরোজ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদীর তীরে বস্ত্রহীন ও রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা ওই ব্যক্তিকে স্থানীয় লোকজন মৃত ভেবে পুলিশকে খবর দেন। কয়েকজন পুলিশ সদস্য সেখানে গিয়ে আমাকে ফোন দিয়ে জানান, “ওই ব্যক্তি মারা গেছেন।” পরে আমি সেখানে যাই। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ হাসপাতালে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছিল। হঠাৎ ওই ব্যক্তির চোখ ও হাত নড়েচড়ে ওঠে। দ্রুত তাঁকে কলমাকান্দা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।’
ফিরোজ হোসেন জানান, ওই ব্যক্তির বয়স আনুমানিক ৩০ বছর। তাঁর পিঠে কাঁচিজাতীয় কিছু দিয়ে এল আকৃতির মতো আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, পূর্বশত্রুতাবশত তাঁকে দুর্বৃত্তরা হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর জখম করে মৃত ভেবে ফেলে রেখে যায়। ওই ব্যক্তির পরিচয় শনাক্তসহ বিষয়টি তদন্ত করছে পুলিশ।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন মুঠোফোনে বলেন, ওই ব্যক্তির পিঠে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন আছে। তাঁর প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক; নড়াচড়া করার মতো শক্তি হারিয়ে ফেলছেন। তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলি-আমেরিকান জিম্মি আলেক্সান্ডার শিগগির মুক্তি পাচ্ছেন: হামাস
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের হাতে জিম্মি থাকা ইসরায়েলি-আমেরিকান এডান আলেক্সান্ডার খুব শিগগির মুক্তি পাচ্ছেন। হামাসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গতকাল রোববার রয়টার্সকে এ কথা বলেছেন।
মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার ও মিসর এই পদক্ষেপকে গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা আবার শুরু করার ক্ষেত্রে একটি উৎসাহব্যঞ্জক অগ্রগতি হিসেবে উল্লেখ করেছে।
২১ বছর বয়সী ইসরায়েলি সেনা এডান আলেক্সান্ডার ঠিক কবে মুক্তি পাবেন, সে বিষয়ে হামাসের ওই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি। তবে ঘটনাটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, আগামীকাল মঙ্গলবার তিনি মুক্তি পেতে পারেন।
ধারণা করা হচ্ছে, এডান আলেক্সান্ডার হামাসের কাছে থাকা শেষ জীবিত আমেরিকান জিম্মি।
হামাস বলেছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানোসহ গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের সুযোগ তৈরির অংশ হিসেবে এডান আলেক্সান্ডারকে মুক্তি দেওয়ার এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চলতি সপ্তাহেই মধ্যপ্রাচ্য সফরে যাচ্ছেন। তাঁর বিশেষ দূত অ্যাডাম বোয়েলার বলেছেন, আলেক্সান্ডারকে যে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে, এ খবরটি একটি ইতিবাচক অগ্রগতি।
অ্যাডাম বোয়েলার আরও বলেন, জিম্মি অপর চার আমেরিকানের মরদেহ ফেরত দেওয়ার জন্য তাঁরা হামাসের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন।
আলেক্সান্ডারের মুক্তির পথ খোলার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই কৃতজ্ঞতা জানান।
ট্রাম্প লিখেছেন, এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার ও মিসরের প্রচেষ্টার প্রতি একটি সদিচ্ছাপূর্ণ পদক্ষেপ। যার লক্ষ্য, এই নৃশংস যুদ্ধের অবসান ঘটানো, সব জীবিত জিম্মি ও নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ তাঁদের প্রিয়জনদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। ইসরায়েলি হিসাব অনুসারে, ওই হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত হন। ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। এটিকে ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী দিন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্যানুসারে, ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত ৫২ হাজার ৮০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজা উপত্যকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
অবরুদ্ধ এই উপত্যকার ২৩ লাখ মানুষ বর্তমানে আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। গত মার্চ মাসে ইসরায়েল অবরোধ আরোপ করার পর এই সহায়তা দ্রুত কমে আসছে।
এক যৌথ বিবৃতিতে কাতার ও মিসর বলেছে, হামাস এডান আলেক্সান্ডারকে মুক্তি দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা গাজায় যুদ্ধরত পক্ষগুলোর মধ্যে নতুন করে যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরুর ক্ষেত্রে একটি উৎসাহব্যঞ্জক পদক্ষেপ।
এই আলোচনা গত মার্চ মাস থেকে বন্ধ আছে। কাতার ও মিসর আরও বলেছে, গাজার মানবিক পরিস্থিতির উন্নয়ন, একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং এই যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটাতে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একযোগে কাজ চালিয়ে যাবে।
গাজাভিত্তিক হামাসের নির্বাসিত প্রধান খলিল আল-হায়া বলেছেন, এডান আলেক্সান্ডারের মুক্তি নিশ্চিত করতে কাতার, মিসর ও তুরস্ক যৌথভাবে উদ্যোগ নিয়েছে।