আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার দুরমুঠ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর-লুটপাটের পর পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। সম্প্রতি সেই কার্যালয় মেলার দর্শনার্থীদের গাড়ি রাখার গ্যারেজ বানানো হয়েছে। স্থানীয় যুবক মোহাম্মদ শাকিল গ্যারেজটি পরিচালনা করছেন।

দুরমুঠ মেলায় আসা দর্শনার্থীরা টাকা দিয়ে টোকেন নিয়ে কার্যালয় প্রাঙ্গণ ও ভবনের ভেতরে ইজিবাইক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল রাখছেন। গাড়ির ধরন অনুযায়ী ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে।

জানতে চাইলে মোহাম্মদ শাকিল বলেন, ‘এটা আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস ছিল। কিন্তু এটা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের নিজস্ব জমি। কিন্তু এখন আর পার্টি অফিস নাই। এখন এটা গ্যারেজ হয়েছে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার মেলায় ১০০ থেকে ২০০ গাড়ি আসে। অন্যান্য দিনে ৩০ থেকে ৫০টি আসে।’ গ্যারেজের জন্য মেলা কর্তৃপক্ষকে টাকা দেওয়া হয় কি না, প্রশ্ন করলে তিনি কোনো উত্তর দিতে রাজি হননি।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর দুরমুঠ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। কার্যালয়ের আসবাব ও দরজা-জানালাও খোয়া যায়। এর পর থেকে কার্যালয়টি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। কার্যালয়ের সামনে হজরত শাহ কামালের (রহ.

) মাজার। সম্প্রতি ওই মাজারের মেলা শুরু হয়েছে। এতে প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে আসা অনেক দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে। মেলা উপলক্ষে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনে দর্শনার্থীদের ইজিবাইক, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল রাখার গ্যারেজ বানানো হয়েছে। কার্যালয়ের সামনে গ্যারেজের একটি ফেস্টুনও টানানো হয়েছে।

দুরমুঠ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সৈয়দ রাশেদুজ্জামান মেলা কমিটির সভাপতি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কার্যালয়টিকে স্থানীয় কয়েকজন মেলায় আসা দর্শনার্থীদের গাড়ির গ্যারেজ বানিয়েছেন। ওই গ্যারেজ বানানোর সঙ্গে মেলা কর্তৃপক্ষের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ, পরিবারে শোক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার প্রতিবাদে গতকাল বুধবার ক্যাম্পাস ছিল উত্তপ্ত। সকাল থেকে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। হত্যার ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের কমিটি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শোক কর্মসূচির পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্ধদিবস ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে আজ।

এদিকে সাম্য হত্যার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দায়ী করেছে ছাত্রদল। উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমেদ খান ও প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদের পদত্যাগ দাবি করেছেন তারা। 

গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে ক্যাম্পাসসংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সাম্যকে হত্যা করা হয়। ওই রাতেই বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে ক্ষোভ দেখান। স্যার এএফ রহমান হলের ছাত্রদলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাম্যের গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায়।

এদিকে, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ছাত্রদল। গতকাল রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল বের করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, যে স্থানে হামলার ঘটনা ঘটেছে, সেটি ক্যাম্পাস এলাকার বাইরে। এদিকে, সাম্য হত্যাকাণ্ডের ‘দায়’ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাল্টাপাল্টি লেখালেখি চলছে। 

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত জানুয়ারিতে ফজলুল হক হলে তোফাজ্জল নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করেন শিক্ষার্থীরা। ওই ঘটনার পর দেশজুড়ে ক্ষোভে ফেটে পড়ে সাধারণ মানুষ। এবার ক্যাম্পাসসংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রাণ গেল সাম্যের। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলেন মাদারীপুর সদরের এরশাদ হাওলাদারের ছেলে তামিম হাওলাদার (৩০), কালাম সরদারের ছেলে পলাশ সরদার (৩০) ও ডাসার থানার যতীন্দ্রনাথ মল্লিকের ছেলে সম্রাট মল্লিক (২৮)। এলাকার বিক্ষুব্ধ লোকজন গতকাল রাতে তামিমের বাড়িতে আগুন দেয়। এদিকে, সম্রাট একসময় মাদারীপুর জেলা শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ছিলেন। তবে ওই কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। 

পুলিশ বলছে, তারা বহিরাগত, ভবঘুরে ও মাদকসেবী। আজ তাদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবেদন করা হবে। এদিকে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে বাদ জোহর সাম্যের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ কেন্দ্রীয় ছাত্রদল ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। এর পর মরদেহ গ্রামের বাড়ি নেওয়া হয়। 

ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ 

সাম্য হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে বুধবার রাতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে জড়ো হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। উপাচার্যের বাসভবনের ফটকে নানা স্লোগান দেন তারা। এ সময় ‘দফা এক দাবি এক, ভিসির পদত্যাগ’, ‘আমার ভাইয়ের লাশ পড়ে, প্রশাসন কী করে’, ‘নয় মাসে দুই খুন, ভিসি-প্রক্টরের অনেক গুণ’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, বাসভবন থেকে বেরিয়ে এসে ছাত্রদলের কর্মীদের সঙ্গে উপাচার্য কথা বলছেন। তাদের শান্ত করার চেষ্টা করছেন। এক পর্যায়ে উপাচার্য ছাত্রদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমরা যদি মনে করো, তুমি আর আমি আলাদা পক্ষ, আমি এখানে দাঁড়ায়ে আছি; আমাকে মার বেটা, মার।’ সকালে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আয়োজিত সমাবেশে ছাত্রদল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টারও পদত্যাগ দাবি করেন। এ সময় বাঙলা কলেজ, তেজগাঁও কলেজসহ ছাত্রদলের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন ইউনিটও অংশ নেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, ‘ভিসি ও প্রক্টরকে সরানোর অনুরোধ করছি। না হলে আমরা এই ইন্টেরিম সরকারকেই সরাতে বাধ্য হব। অন্তর্বর্তী সরকার দেশের কোথাও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করতে পারেনি।’ 

বিশ্ববিদ্যালয় ও এর আশপাশের এলাকায় ছিনতাই ও মাদকের অভয়ারণ্য গড়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে যে দুর্বল অবস্থা বিরাজ করছে, তার প্রতিফলন আজকের এ ঘটনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের এলাকায় ছিনতাই ও মাদকের অভয়ারণ্য গড়ে উঠেছে। এগুলো মাসের পর মাস চলছে। বিশেষ করে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের পরবর্তী বাস্তবতায় এদের ধরার মতো কোনো সামর্থ্য পুলিশ প্রশাসনের রয়েছে কিনা সন্দিহান। বিভিন্ন সময় বলা হলেও এর কোনো প্রতিকার পাইনি।

ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির বলেন, বিভিন্ন ক্যাম্পাসে হত্যার রাজনীতি শুরু হয়েছে। ছাত্রদলের পরীক্ষিত নেতা সাম্যকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন শতভাগ নিষ্ক্রিয় ছিল। গত ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক তৈরির বদলে একটি ছাত্র সংগঠনকে বিভিন্ন হলে দখলদারিত্ব করতে সহায়তা করেছে।

এজাহারে যা আছে

এ ঘটনায় বুধবার সকালে সাম্যর বড় ভাই শরীফুল ইসলাম শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা করেন। এতে ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করা হয়। মামলার এজাহারে বলা হয়, মঙ্গলবার রাত পৌনে ১১টার দিকে সাম্য তার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু আশরাফুল আলম রাফি ও আব্দুল্লাহ আল বায়েজিদকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরছিলেন। ওই সময় উদ্যানের ভেতরে থাকা রমনা কালীমন্দিরের উত্তর পাশের বটগাছের নিচে থাকা ১২ জন তাদের মোটরসাইকেল দিয়ে সাম্যর মোটরসাইকেল ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এর কারণ জানতে চাইলে তারা পূর্বপরিকল্পিতভাবে সাম্য ও তার বন্ধুদের ইট দিয়ে আঘাত করে ও কিল-ঘুসি মারতে থাকে। এ সময় তাদের মধ্যে থেকে একজন সাম্যকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। একই সময় সাম্যর বন্ধুর হাতের কবজিতেও কোপ দেওয়া হয়। সাম্য রক্তাক্ত ও জখম অবস্থায় মাটিতে পড়ে গেলে দুষ্কৃতকারীরা তাঁকে ও তাঁর বন্ধুদের ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ছাড়ে। পরে সাম্যকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিসৎক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। 

সুরতহালে যা আছে

সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্যর ডান কানের পেছনে, বুকের বাঁ পাশে এবং পিঠে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ ছাড়া ডান পায়ের ঊরুতে ধারালো অস্ত্রের এক থেকে দেড় ইঞ্চির মতো গভীর ক্ষত দেখা গেছে। এতে মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে ময়নাতদন্ত করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করা হয়।

কী ঘটেছিল সেই রাতে

সাত থেকে আট বছর ধরে সাম্যর ঘনিষ্ঠ বন্ধু নাজমুল। তাঁর বাসা সেগুনবাগিচায়। ঘটনার রাতে সাম্যর সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছিলেন নাজমুল। তিনি বলেন, ‘বুধবার শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের একটি অনুষ্ঠান ছিল। সেটি শেষ হওয়ার পর চার বন্ধু মিলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কাবাব খেতে যাই। যে দোকানে গিয়েছি সেটিও আমাদের এক বন্ধুর। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সাম্য, রাফি ও বায়েজিদ মোটরসাইকেলে যায়। আমি সাইকেল নিয়ে যাই। কাবাব খাওয়ার পর আমি একটু আগে ক্যাম্পাসে ফিরে আসি। সেখান থেকে ফেরার কয়েক মিনিট পর বায়েজিদ ফোন করে জানায়, সাম্যর অবস্থা খারাপ। তার ওপর হামলা হয়েছে। এরপর এফ রহমান হলের আরও দুই বন্ধুকে খবর দেই। সবাই দ্রুত ঢাকা মেডিকেলে রওনা হয়েছিলাম। তবে দুর্ভাগ্য ডাক্তার সাম্যকে মৃত ঘোষণা করেন।’ 

নাজমুল জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে থেকে মাস্টার্স শেষ করেন তিনি। এর আগে লেদার টেকনোলজিতে ভর্তি হন। তখন সাম্যসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গ্রুপের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। সেখান থেকে গভীর বন্ধুত্ব। বুধবার টিউশনি শেষে সাইকেল নিয়ে ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে যান নাজমুল। তিনি বলেন, সাম্য, বায়েজিদ ও রাফির ওপর হামলার সঙ্গে বহিরাগত ১০ থেকে ১২ জন ছিল। তারা তিন থেকে চারটি মোটরসাইকেলে এসেছিল।

মোটরসাইকেলে ধাক্কা লাগা থেকে ঘটনার সূত্রপাত। এরপর কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে বহিরাগতরা বায়োজিদকে আঘাত করে। পরে সাম্যকে আঘাত করা হয়। হামলাকারীদের হাতে কী দেশীয় অস্ত্র ছিল– এমন প্রশ্নে নাজমুল বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রাতে নানা ধরনের লোকজন থাকে। তাদের হাতে কী ধরনের অস্ত্র ছিল জানা নেই। 

তদন্তে যা পাওয়া গেল 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক তৌফিক হাসান সমকালকে বলেন, ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও তারা হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেনি। 

তদন্ত কর্মকর্তা আরও জানান, ঘটনার পরপরই দু’জন রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান। সেখানে থেকে দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর আরেকজনকে ধরা হয়। জড়িত অন্যদের খুঁজছি আমরা। গ্রেপ্তার তিনজনকে বুধবার দুপুরে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করা হয়েছে। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম জামসেদ আলম তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গ্রেপ্তার তিনজন ফার্মগেট এলাকায় ফুটপাতে কিছুদিন আগে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তার তিনজন ২০ দিন আগে ওই মাদারীপুর থেকে ঢাকায় আসে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। তারা মাদক সেবনের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়েছিল। 

ডিএমপির মুখপাত্র ডিসি তালেবুর রহমান বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আসামি তামিম, সম্রাট ও পলাশকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করে। এ ছাড়া ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন এবং জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

স্বজনের আহাজারি 

শুধু মোটরসাইকেলে ধাক্কা লাগার মতো তুচ্ছ কারণে সাম্য খুন হননি বলে দাবি করেছেন বাবা ফখরুল আলমের। ঢামেক মর্গের সামনে তিনি বলেন, ‘ছেলেকে মেরে ফেলার জন্য পূর্বপরিকল্পিতভাবে এটা ঘটানো হয়েছে। আমি ছেলে হত্যার সর্বোচ্চ বিচার চাই। ভবিষ্যতে যাতে আর কারোর বুক খালি না হয়।’ 

তিনি বলেন, ছেলের সঙ্গে গত সোমবার ফোনে কথা হয়। তখনও সে আমাকে বলেছিল, বাবা তুমি চিন্তা করো না, আমি ভালো আছি। এর পর কাল রাতেই ছেলের মৃত্যুর খবর এলো। বিগত আওয়ামী লীগ শাসনামলে সে হলেও থাকতে পারেনি; ওর বড় ভাই ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা ছিল বলে।’ 

ঘটনাস্থলে যা দেখা গেল 

ঘটনাস্থল ক্রাইমসিন ঘোষণা করে, সেটাকে ঘিরে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রমনা কালীমন্দিরের গেটের দোকানি ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, আগে এখানে পাঁচ থেক সাতটা দোকান ছিল। ৫ আগস্টের পরে অর্ধশত দোকান বসেছে। তবে তিনি এ হত্যার বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি। বুধবার রমনা কালীমন্দির গেটে কোনো দোকান দেখা যায়নি। সেখানকার এক আনসার সদস্যরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ৫ আগস্টের পরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এখন পুরো অরক্ষিত। কাউকে কিছু বলতে পারি না। যে যার মতো এখানে এসে সময় কাটান। আগে সন্ধ্যা ৭টার পরে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হতো না। এখন সারারাত এখানে লোকজন থাকে। মাদক কারবার চলে খোলামেলা।

আইনি নোটিশ

সাম্য ছাড়াও ইসলামের ইতিহাস, সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আবু বকর সিদ্দিক এবং মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক তোফাজ্জল হোসেন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিচারিক তদন্ত চেয়ে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি প্রত্যেকের পরিবারকে ৫০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও নোটিশে বলা হয়েছে।

গতকাল সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষারসহ পাঁচ আইনজীবী ই-মেইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রোভিসি (প্রশাসন), প্রোভিসি (শিক্ষা) ও রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশের আইজিপি ও র‍্যাবের ডিজিকে এ নোটিশ পাঠিয়েছেন। 

আধাবেলা বন্ধ ক্লাস-পরীক্ষা

সাম্য হত্যার কারণে আজ বৃহস্পতিবার আধাবেলা ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ সময় ঢাবিতে শোক পালন করা হবে। বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান।

তিনি বলেন, শিক্ষক হিসেবে সাম্যর মৃত্যু আমাদের জন্য বেদনাদায়ক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব নেওয়ার পরে প্রথম সপ্তাহ থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার জন্য আমরা কাজ করছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থানকে মাথায় রেখে এর নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন অংশীজনকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দায়িত্বে আছে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। তবু আমরা আমাদের সীমিত সামর্থ্য নিয়ে চেষ্টা করেছি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রাজু ভাস্কর্যের পেছনের গেট বন্ধ করতে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পর্যাপ্ত লাইটিং ও সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হবে। এগুলো তদারকি করবে গণপূর্ত বিভাগ ও ডিএমপি। 

তিনি বলেন, যারা মাদক কারবারে জড়িত, তারা আমাদের ছাত্র হলেও ছাড় দেওয়া সুযোগ নেই। যত কঠিনই হোক, সবার সহযোগিতা নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ