অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের অনুষ্ঠান শেষে নিজ গ্রাম হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের বাথুয়ায় পৈতৃক বাড়িতে যান আজ বুধবার বিকেলে। আর সেখানে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বক্তব্য দেন। একান্ত আপনজন, যিনি সরকারকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাঁকে কাছে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন গ্রামের মানুষ।

সরকারপ্রধান হয়েও কোনো রাখঢাক রাখেননি অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। মঞ্চে উঠে সবাইকে সালাম দিয়ে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বলতে শুরু করেন, ‘বউত ভালা লার বেগ্গুনেরে দেখি বউত দিন বাদে এন্ডে আইলম। ছোড বেলাত এডেই আছিলম। ছোড বেলার বেক ছবি মাথার ভেতর রই গেইয়িগুই, এডে বটগাছ তলে হাট বইচতো, হাডত আইচতম। ছোড বেলাত একজনরে একজনে ঠাট্টা গরি কইতম আবদুর রশিদ টেন্ডলর হাট নজুমিয়েহাট, দুল মিয়ের জ্বালা বারি ফোরক মিয়ার মটরগাড়ি।’

(সবাইকে দেখে বেশি ভালো লাগছে। বহুদিন পর এখানে এলাম। ছোটবেলায় এখানে ছিলাম। ছোটবেলার সব ছবি মাথার ভেতর রয়ে গেছে। এখানে বটগাছতলে হাট বসত, হাটে আসতাম। ছোটবেলায় একজন আরেকজনরে ঠাট্টা করে বলতাম আবদুর রশিদ টেন্ডলের হাট নজুমিয়া হাট, দুলা মিয়ার জ্বালা ভারী, ফোরক মিয়ার মোটরগাড়ি।)

ছোটবেলার স্মৃতিচারণা করে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত তিনি গ্রামের স্কুলে লেখাপড়া করেন। এরপর তাঁর বাবা হাজি দুলা মিয়া সওদাগর তাঁকে চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে সেখানে স্কুলে ভর্তি করে দেন।

অধ্যাপক ইউনূস তাঁর বক্তব্যে চট্টগ্রামের ভাষায় বলেন ‘নজু মিয়ারহাট শর হই গিয়ে, শর বিলাত হই গিয়ে।’ ভবিষ্যতে দেশের আরও উন্নতি হবে বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘এসেছিলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে। এ সুযোগে আপনাদের সঙ্গে দেখা করে গেলাম। আমার খুব ভালো লাগছে, সবার সঙ্গে দেখা হলো। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন।’

এর আগে প্রধান উপদেষ্টা গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে বিকেল পাঁচটার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে দাদা-দাদি ও স্বজনদের কবর জিয়ারত করেন।

আরও পড়ুন‘জোবরা গ্রামের নারীদের কাছ থেকেই নতুন অর্থনীতি শিখেছি’২ ঘণ্টা আগে

গতকাল দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দিতে সকালে বিশেষ উড়োজাহাজে চট্টগ্রামে পৌঁছান প্রধান উপদেষ্টা। প্রথমে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি-৫) পরিদর্শন করেন এবং সেখানে বন্দর ও নৌপরিবহন খাতের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বন্দর ব্যবহারকারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। বন্দরের অনুষ্ঠান শেষে প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে পৌঁছে বহুল প্রত্যাশিত কালুরঘাট সেতুর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর চট্টগ্রাম মহানগরের জলাবদ্ধতা নিরসন–সংক্রান্ত এক সভায় যোগ দেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে জমির দলিল হস্তান্তর করেন। এরপর বিকেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখান থেকে গ্রামের বাড়ি বাথুয়ায় যান। পরে বিমানযোগে ঢাকায় ফিরে যান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

আরও পড়ুনদায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমবার চট্টগ্রামে প্রধান উপদেষ্টা১৩ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন

এছাড়াও পড়ুন:

৪১ বছর ধরে হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিলি করেন গাইবান্ধার রহিম

গাইবান্ধার পত্রিকা বিক্রেতা আবদুর রহিম। বাড়ি পলাশবাড়ী পৌরসভার নুনিয়াগাড়ি এলাকায়। বয়স ৭১ বছর। এই বয়সেও তিনি ঘুমভাঙা চোখে একনজর পত্রিকার শিরোনাম দেখে নেন। পত্রিকা গুছিয়ে বগলে চেপে ছুটে চলেন পাঠকের কাছে। ‘ভাই, আজকে গরম খবর আছে’ বলেই পাঠকের হাতে এগিয়ে দেন পত্রিকা।

এক পাঠক থেকে আরেক পাঠকের কাছে যান আবদুর রহিম। পত্রিকা বিলি করেন সকাল ৬টা থেকে টানা ৭ ঘণ্টা। বিকেল ৫টা থেকে ৪ ঘণ্টা বিলি করা পত্রিকার টাকা সংগ্রহ করেন। ১১ ঘণ্টার বেশির ভাগ সময় হেঁটে পত্রিকা বিলি ও টাকা সংগ্রহ করেন। দূরের পাঠকের কাছে যান বাইসাইকেলে। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হেঁটে বিলি করেন পত্রিকা। এভাবেই দীর্ঘ ৪১ বছর ধরে গাইবান্ধায় পত্রিকা বিলির কাজ করছেন তিনি।

আবদুর রহিম বলেন, ‘সকাল ৬টা থেকে পত্রিকা বিলির কাজ শুরু করি। বেলা ১টার দিকে শেষ হয়। উপজেলা সদরে হেঁটে বিলি করি। তবে সদর থেকে ৬-৭ কিলোমিটার দূরে জুনদহ, কালীতলা, ঢোলভাঙ্গা, হোসেনপুর এলাকায় সাইকেলে যাই। এসব জায়গায় সাইকেল রেখে হেঁটে পত্রিকা বিলি করি। দুপুরে বাড়িতে বিশ্রাম নিই। এরপর পত্রিকা বিক্রির টাকা তোলা শুরু করি। টাকা তুলতে বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সময় লাগে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হাঁটাহাঁটি হয়ে যায়। এ রকম ব্যস্ততায় কীভাবে ৪১ বছর কেটে গেল, টেরই পেলাম না! তবে পত্রিকা বিলি করে আনন্দ পাই। অনেক পাঠক আমাকে ভালোবাসেন, খোঁজখবর নেন।’

দীর্ঘ সময় পত্রিকা বিলি করতে সমস্যা হয় কি না, তা জানতে চাইলে আবদুর রহিম বলেন, ‘আমার কোনো অসুখবিসুখ নেই। যত দিন শরীর ভালো থাকবে, তত দিন এই কাজ চালিয়ে যাব।’

ব্যবসার শুরু

রহিমের পৈতৃক বাড়ি রংপুর শহরের আরাজি গুলাল বুদাই এলাকায়। সেখানে তাঁর বাবার ৩ শতাংশ জমিতে বসতভিটা ছিল। এ ছাড়া কোনো সম্পদ ছিল না। বাবা আবেদ আলী অনেক আগেই মারা গেছেন। তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। লেখাপড়া করেছেন তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। ছোটবেলা থেকেই কৃষিকাজ করতেন। ১৯৭৫ সালে বিয়ে করেন একই এলাকায়। তাঁর ছয় মেয়ে ও এক ছেলে। দারিদ্র্যের কারণে সংসার চালানো একসময় কঠিন হয়ে পড়ে।

রহিমের খালাতো ভাই রংপুর শহরে পত্রিকা বিলি করতেন। তাঁর পরামর্শে ১৯৮৪ সাল থেকে রংপুরে স্থানীয় পত্রিকা দিয়ে আবদুর রহিমের এই ব্যবসার যাত্রা শুরু। এরপর তিনি বাসে ফেরি করে বিক্রি করতে থাকেন পত্রিকা। প্রতিদিন রংপুর থেকে বাসে উঠে পলাশবাড়ী পর্যন্ত আসেন। এভাবে তিন বছর কেটে যায়। এরপর পলাশবাড়ীর স্থানীয় এক সাংবাদিকের বাড়িতে থেকে পত্রিকা বিক্রি শুরু করেন। ছয় মাস থাকেন সেখানে। এরপর জমানো ও ঋণের টাকায় নুনিয়াগাড়ি এলাকায় সোয়া ৮ শতাংশ জমি কিনে টিনশেড ঘর বানান। বাড়ি থেকে ব্যবসা করতে থাকেন। পলাশবাড়ী চারমাথা এলাকায় বসে ঢাকা, রংপুর ও বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকা সংগ্রহ করে পলাশবাড়ী উপজেলা সদরে বিক্রি করতে থাকেন।

হকার থেকে এজেন্ট

কয়েক বছর পর আবদুর রহিম নিজের নামে বেশ কিছু পত্রিকার এজেন্সি নেন। পত্রিকার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় একা সামলাতে পারছিলেন না। তাই চারজন লোক নিয়োগ করেন। তাঁরা এখনো রহিমের কাছে কমিশনে পত্রিকা নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ব্যবসা শুরুর সময় প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ কপি পত্রিকা বিলি করতেন। মাসিক আয় ছিল ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। কয়েক বছর পর পাঠকের চাহিদা বেড়ে যায়। সে সময় মাসিক আয় হতো ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা। বর্তমানে ছাপা পত্রিকার পাঠক কমে গেছে। এখন প্রতিদিন ১৫০ থেকে ১৬০ কপি পত্রিকা বিলি করছেন। বর্তমানে তাঁর মাসিক আয় গড়ে ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা।

আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পত্রিকার ব্যবসা করে রংপুর থেকে এসে পলাশবাড়ীতে বাড়ি করতে পেরেছি, মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। সততার সঙ্গে চলছি। এতেই আমি সন্তুষ্ট।’

পলাশবাড়ী মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান সরকার বলেন, ‘আবদুর রহিমকে বহু বছর ধরেই পত্রিকা বিক্রি করতে দেখছি। তাঁকে দেখে মনে হয় না ৭১ বছর বয়স হয়েছে। তাঁর মধ্যে ক্লান্তি দেখা যায় না। দিন-রাত পরিশ্রম করেন। কখনো তাঁকে মিথ্যা বলতে শুনিনি। এলাকার মানুষ তাঁকে ভালোবাসেন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘বাসটির সঙ্গে একটি ট্রাকের ধাক্কা লাগে, এরপর আর কিছু মনে নেই’
  • রেলের ৭ লাখ টাকার যন্ত্র ২৭ হাজারে বানালেন তিনি
  • রাতে এক ঘণ্টার ব্যবধানে সাভার-ধামরাইয়ে দুই বাসে আগুন
  • জনস্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণাই তাঁর নেশা 
  • ইডেনে স্পিন বিষ, ১৫ উইকেটের দিনে উড়ছে ভারত
  • বিচারকের ছেলে হত্যা মামলার আসামি লিমন পাঁচ দিনের রিমান্ডে
  • বিচারকের ছেলে হত্যা: লিমন ৫ দিনের রিমান্ডে
  • ‘তোকে গুলি করে মারব না, ব্লেড দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারব’
  • ৪১ বছর ধরে হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিলি করেন গাইবান্ধার রহিম
  • শাকিবের নায়িকা পাকিস্তানের হানিয়া