ইসলাম এক পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থার নাম, যা মানুষকে ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তির পথ বাতলে দিয়েছে। একজন মুসলমান মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিক ইবাদতের পাশাপাশি উত্তম নৈতিকতা, সদাচরণ এবং সামাজিক দায়িত্ব পালনের মাধ্যমেও তাঁর পূর্ণ ইমানের পরিচয় দেন।  

আরবি ভাষায় সদাচরণকে বলা হয় ‘হুসনুল খুলুক’, অর্থাৎ সুন্দর চরিত্র বা উত্তম নৈতিকতা। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে রাসুল (সা.

)-এর প্রশংসা করে বলেন, ‘আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী’ (সুরা আল-কলম, আয়াত: ৪)। হাদিসে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যার চরিত্র উত্তম’ (সহিহ বুখারি)।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি তো প্রেরিত হয়েছি মানবচরিত্রের উৎকর্ষ সাধনের জন্য’ (মুয়াত্তামালিক)। 

সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকা ও ভালো ব্যবহার করা ইসলামের অন্যতম শিক্ষা। যারা মানুষের সঙ্গে ভালো আচরণ করেন, তাদের সবাই পছন্দ করেন। মানুষের সদাচরণ পাওয়ার সবচেয়ে বড় হকদার পিতা-মাতা। এর পর স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-সন্ততিসহ আত্মীয়স্বজন, এতিম-অসহায়, প্রতিবেশী; এমনকি আল্লাহতায়ালার সব সৃষ্টিই সদাচরণ পাওয়ার হকদার।
পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহতায়ালা সদাচরণ করতে জোর তাগিদ দিয়েছেন। সুরা আন-নিসার ৩৬ আয়াতে মহান আল্লাহ এরশাদ করেন, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং কাউকে তাঁর সঙ্গে শরিক করো না। বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন, এতিম, নিকট-প্রতিবেশী, দূর-প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, মুসাফির ও তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসিদের প্রতি সদাচরণ করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ দাম্ভিক-অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’ 

সদাচরণ আত্মবিশ্বাস, ধৈর্য, বিনয়, শিষ্টাচার ও মানবিক বোধ জাগ্রত করে। একজন সদাচারী ব্যক্তি নিজের ভুল সহজেই বুঝতে পারে, ক্ষমা চাইতে জানে এবং অপরকে ক্ষমা করতেও জানে। এটি পরিবারে ভালোবাসা ও সহমর্মিতার আবহ তৈরি করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সর্বোত্তম ব্যক্তি সে-ই, যে তার পরিবার-পরিজনের সঙ্গে উত্তম আচরণ করে’ (তিরমিজি)।
সুরা আল ইমরানের ১৫৯ আয়াতে এরশাদ হয়েছে, ‘এটা আল্লাহতায়ালার অনুগ্রহ যে তুমি তাদের প্রতি কোমলচিত্ত। তুমি যদি কর্কশভাষী ও কঠোর হৃদয় হতে, তাহলে তারা তোমার সংসর্গ থেকে দূরে সরে যেত। তাই তুমি তাদের ক্ষমা করো, তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং কাজকর্মে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করো।’

আরও অসংখ্য আয়াতে মহান আল্লাহ মানুষকে সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। এটা ইসলামের অন্যতম শিক্ষা। ইসলাম মনে করে, শুধু মানুষ নয়; যাবদীয় সৃষ্টিই ভালো আচরণ পাওয়ার অধিকার রাখে। অপ্রয়োজনে গাছের একটি পাতা ছেঁড়াও ইসলামের দৃষ্টিতে অন্যায়। এমনকি ভারবাহী পশুকে পর্যন্ত অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেওয়া অপরাধ বলে গণ্য করেছে ইসলাম। 
কোনো পশু-পাখিকে আটকে রেখে ক্ষুধায় কষ্ট দেওয়া ভয়াবহ গুনাহর কাজ। পশু-পাখির সঙ্গে আচরণই যদি এমন হয়ে থাকে, তাহলে সৃষ্টির সেরা ও আল্লাহর প্রতিনিধিদের সঙ্গে কেমন আচরণ ইসলাম দাবি করতে পারে– সহজেই অনুমেয়। ইসলাম মনে করে, মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার তো স্বয়ং আল্লাহর সঙ্গেই দুর্ব্যবহার।

আর তাই ধর্ম-বর্ণ, শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে প্রত্যেক মানুষের সঙ্গে সদাচরণ করা ইসলামের অন্যতম নির্দেশনা। শুধু তাই নয়, অন্যান্য সৃষ্টির সঙ্গেও সদাচরণ করার শিক্ষা ইসলাম আমাদের দিয়েছে। 
আমাদের সমাজে প্রবীণরা বড় অসহায় ও অবহেলার পাত্র। যার পরিপ্রেক্ষিতে বৃদ্ধাশ্রমের ধারণা সমাজে চালু হয়েছে। একজন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা তাঁর আত্মীয়স্বজন পরিবেষ্টিত হয়ে জীবনের শেষ দিনগুলো কাটাবেন, এটাই স্বাভাবিক। এর ব্যতিক্রমী আচরণ যে কতটা কষ্টের, তা বলে বোঝানো মুশকিল। আমাদের সবার উচিত যারা প্রবীণ, আমাদের বয়োজ্যেষ্ঠ; তারা যেন যথাযথ শ্রদ্ধা ও সম্মান পান। আমাদের বুঝতে হবে, যে দয়া করে না, সে দয়া পায় না।

ড. মো. শাহজাহান কবীর: বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

ভুয়া খবরে বিরক্ত মাহি, জানালেন সত্যিটা

দেশ-বিদেশি তারকাদের মৃত্যুর গুজব নতুন কিছু নয়। মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন তারকার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ে। দেড় মাস আগেই ছড়িয়ে পড়ে চিত্রনায়িকা পরীমণির মৃত্যুর গুজব। পরে ফেসবুক লাইভে এসে বিষয়টির প্রতিবাদ জানিয়ে ক্ষোভ ঝাড়েন তিনি। দেড় মাস পর একই ঘটনার শিকার হলেন আরেক চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি।

সম্প্রতি কিছু ভুয়া ফেসবুক গ্রুপ এবং পেজে ‘বাংলাদেশি অভিনেত্রী মাহিয়া মাহির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার’ শিরোনামে বিভ্রান্তিকর পোস্ট ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি চোখে পড়েছে মাহিরও। হঠাৎ নিজের মৃত্যুর খবরে হতবাক মাহিয়া মাহি।

এ ধরনের গুজব নিয়ে নিজের বিরক্তি প্রকাশ করে সামাজিক মাধ্যমে স্পষ্ট মাহি জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি ভালো আছেন।

সোমবার ফেসবুক পোস্টে মাহি লেখেন, ‘আমি আছি, মরি নাই রে ভাই।’ এর মাধ্যমে তিনি গুজবকারীদের উদ্দেশ্যে কটাক্ষ করেই জানিয়ে দিলেন, এই খবর সম্পূর্ণ মিথ্যা।তিনি সুস্থ আছেন এবং এমন কোনো ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।

মাহির পেস্টের কমেন্ট বক্সে মেহেদী হাসান নামে একজন লিখেছেন, ‘টেনশনে ছিলাম। যাক, আপনি ভালো আছেন জানতে পেরে চিন্তামুক্ত হলাম।’

ইয়াসমিন জান্নাত নামে একজন লিখেছেন, ‘এসব মিথ্যা খবর যারা রটায় তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’

প্রসঙ্গত, মাহিয়া মাহি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। অনেক দিন ধরে তাকে নতুন কোনো সিনেমা বা শুটিংয়ে দেখা যাচ্ছে না। তবে ব্যক্তিগত জীবন এবং রাজনীতির কারণে তিনি আলোচনায় ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • একজনের প্রেমে পড়েছিলাম, এখন সে আমার বউ
  • সাজা মওকুফের পর রাজশাহী কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন ৭ জন
  • ৪ কোটি শিশুকে শরণার্থী বানিয়েছে যুদ্ধ আর সংঘাত
  • গানে নিয়মিত সাবিনা ইয়াসমীন, কণ্ঠে তুললেন ‘প্রাণের বাংলাদেশ’
  • চট্টগ্রামে আরও ১০ জন করোনায় আক্রান্ত
  • প্রতারণা ও ব্ল্যাকমেল শিখে এআই কি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে
  • ভুয়া খবরে বিরক্ত মাহি, জানালেন সত্যিটা
  • ইরান শান্তিপূর্ণ আচরণ করলে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে: ট্রাম্প
  • অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাওয়ায় সাংবাদিকদের ওপর ক্ষেপলেন জবি শিক্ষিকা
  • কাঁঠালগাছে ঝুলছিল যুবকের মরদেহ, দুই পা ছিল বাঁধা