অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের নথিপত্র যাচাই-বাছাইয়ে ৩০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে নির্দেশিকা জারি করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।

গত কয়েকমাস ধরেই ভারত জুড়ে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা নাগরিকদের সন্ধানে চলছে জোড় তল্লাশি অভিযান। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, উত্তর প্রদেশ, দিল্লি , মহারাষ্ট্র, গুজরাট ,হরিয়ানা, জম্মু-কাশ্মীর থেকে দক্ষিণ রাজ্য কর্ণাটক কেরালা, অন্ধপ্রদেশে পুলিশের অভিযানে শত শত মানুষকে আটক করা হয়েছে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা সন্দেহে।  

শুধুমাত্র গুজরাটের সুরাট ও আমেদাবাদেই অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে ৬ হাজার ৫০০ বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়। রাজস্থান থেকেও গ্রেপ্তার করা হয় প্রায় এক হাজারের বেশি বাংলাদেশি নাগরিককে। পরবর্তীতে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। 

আরো পড়ুন:

পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ভারতে এবার ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার

হাঁটুর বয়সি নায়িকাকে চুমু, সমালোচনার মুখে কমল হাসান

এমন পরিস্থিতিতে এবার অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নিল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৩০ দিনের এই ডেডলাইন ঘোষণা করা হয়েছে। মূলত অনুপ্রশকারীদের নথিপত্র যাচাই-বাছাইয়ের জন্য এই ৩০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্র। 

বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে আসা অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রের নতুন করে পদক্ষেপের অংশ হিসেবে এই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। বিএসএফ এবং আসাম রাইফেলসের মহাপরিচালকদের (ডিজি) কাছেও এই নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। 

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে দেশটির সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, অবৈধ অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে আটক বাংলাদেশি ও মিয়ানমারের (রোহিঙ্গা) নাগরিক- যারা নিজেদেরকে ভারতীয় নাগরিক বলে দাবি করছে- আগামী ৩০ দিনের মধ্যে তাদের পরিচয়, নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাইয়ের কাজ সম্পন্ন করতে হবে। ওই সময়সীমার মধ্যে যদি তারা ভারতীয় নাগরিক প্রমাণিত না হয় অর্থাৎ অনুপ্রবেশকারী সাব্যস্ত হলে ৩০ দিন পর থেকেই তাদের সংশ্লিষ্ট দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট আইনে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোকে বিশেষ ক্ষমতা দিয়েছে দিল্লি। 

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে প্রত্যেকটি রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলকে নির্দেশ দিয়ে এও বলা হয়েছে, যেসব বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদেরকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য বিএসএফ ও কোস্ট গার্ডের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে- তার একটি বিস্তারিত তালিকা প্রতিমাসের ১৫ তারিখে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠাতে হবে। সেই সঙ্গে ‘ব্যুরো অব ইমিগ্রেশন’ কর্তৃপক্ষকেও বলা হয়েছে, যেসব অনুপ্রবেশকারীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে সেই তালিকাটি যেন সরকারি পোর্টালে প্রকাশিত করা হয়। একইসঙ্গে সেই তথ্য পাঠানো হবে নির্বাচন কমিশন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ‘ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অব ইন্ডিয়া’ (ইউআইডিএআই) কর্তৃপক্ষকেও। যাতে ওই নির্দিষ্ট ব্যক্তি ভবিষ্যতে আর কোনোদিন ভারতে এসে আধার কার্ড, ভোটার কার্ড কিংবা পাসপোর্ট তৈরি করতে না পারে। 

পাশাপাশি অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোকে পর্যাপ্ত ডিটেনশন সেন্টার তৈরি রাখার নির্দেশ দিয়ে দেওয়া হয়েছে।  

গত ফেব্রুয়ারি মাসেই ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কঠোর বার্তা দিয়ে বলেছিলেন, “অবৈধ বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের দেশে প্রবেশ, নথিপত্র সংগ্রহ এবং তাদের থাকার বিষয়ে সহায়তা প্রদানকারী যেকোনো চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়টি জাতীয় নিরাপত্তার সাথেও সম্পর্কিত এবং এটি কঠোরভাবে মোকাবিলা করা উচিত। তাদের চিহ্নিত করে নির্বাসিত করা উচিত।” 

এরপর থেকেই রাজ্যে রাজ্যে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিতকরণ করতে ধরপাকড় শুরু হয়। 

এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা এজেন্সির এক কর্মকর্তা জানান, অনুপ্রবেশকারী বাছাই এবং ফেরত পাঠানো নিয়ে দিল্লির নির্দেশিকা নতুন নয়। তবে আগে কখনো এবারের মতো সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি। ভারতীয় নাগরিক বলে দাবি করা সন্দেহজনক বাংলাদেশি বা মিয়ানমারের বাসিন্দাদের নথিপত্র যাচাইয়ের জন্য ভারতের সংশ্লিষ্ট রাজ্যটিতে সেইসব নথি পাঠানো হতো। সেক্ষেত্রে নথিপত্র যাচাই হয়ে আসতে একমাস সময় লেগে যেত। কিন্তু এখন সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, জেলাশাসক, ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টরদেরকে নথি যাচাইয়ের কাজ শেষ করার জন্য ৩০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ততদিন পর্যন্ত ওই সন্দেহজনক ব্যক্তিকে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হবে। ওই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তার নাগরিকত্ব সম্পর্কিত তথ্য না আসলে ফরেনার্স রেজিস্ট্রেশন অফিস সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে নিজ দেশে ফেরত পাঠাবে।

ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স বর ষ ট র ৩০ দ ন র র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

পঞ্চগড় সীমান্ত দিয়ে ১৫ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ 

পঞ্চগড় সীমান্ত দিয়ে ১৫ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। তাদের মধ্যে পাঁচজন জন পুরুষ, পাঁচজন মহিলা ও পাঁচজন শিশু।

শুক্রবার (৪ জুলাই) রাতে পঞ্চগড় সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়ন ও অমরখানা ইউনিয়ন সীমান্ত দিয়ে ওই ১৫ জনকে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে পাঠানো হয়। তাদেরকে আটক করে পঞ্চগড় সদর থানায় হস্তান্তর করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

শুক্রবার রাতে চাকলাহাট ইউনিয়নের খুনিয়া পাড়া সীমান্তের মেইন পিলার ৭৬৪ এর ১৯ নম্বর সাব-পিলার এলাকা দিয়ে ১০ জনকে ঠেলে পাঠান বিএসএফের ৯৩ ব্যাটালিয়নের কৈলাশ ক্যাম্পের সদস্যরা। পরে সীমান্তের ১৫০ গজ বাংলাদেশের ভিতর থেকে বিজিবির শিং রোড বিওপির সদস্যরা তাদেরকে আটক করেন। 

একই রাতে অমরখানা সীমান্তের মেইন পিলার ৭৪৩ এর ৩ নম্বর সাব-পিলার দিয়ে দুই নারী, এক পুরুষ ও দুই শিশুসহ ৫ জনকে ঠেলে পাঠান বিএসএফের ৪৬ ব্যাটলিয়নের বালাচান ক্যাম্পের সদস্যরা। বিজিবির অমরখানা বিওপি সদস্যরা বাংলাদেশের আড়াই কিলোমিটার অভ্যন্তরে বোর্ড বাজার এলাকায় তাদেরকে আটক করেন।

আটক ১৫ জন বাংলাদেশের খুলনা, বাগেরহাট, যশোর ও নড়াইল জেলার বাসিন্দা। তারা দীর্ঘদিন ধরে ভারতে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন।

পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ হিল জামান বলেছেন, সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করা ব্যক্তিদের আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে বিজিবি। আমরা আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের হস্তান্তর করব। হস্তান্তর পর্যন্ত তারা উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে থাকবেন। 

ঢাকা/নাঈম/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পীরগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ৬ জনকে পুশইন
  • পঞ্চগড় সীমান্ত দিয়ে ১৫ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ 
  • তিন মাস পর বাংলাদেশি যুবকের মরদেহ ফেরত দিল বিএসএফ
  • আরও দুই সীমান্ত দিয়ে ১৬ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ
  • বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মৌখিক পরীক্ষার সূচি প্রকাশ
  • জাপানে উচ্চশিক্ষা সুযোগ: যাত্রা কোথা থেকে কীভাবে শুরু করবেন?
  • ৮৫ ব্রোকারেজ হা্‌উসকে আগস্টের মধ্যে চালু করতে হবে ব্যাক অফিস সফটওয়্যার
  • ৪৫তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা ১৬ জুলাই থেকে
  • মৌলভীবাজারের দুটি সীমান্ত দিয়ে ৭১ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
  • চুয়াডাঙ্গা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি আহত