টানা কিছুক্ষণ বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় কুড়িগ্রাম শহরের বড় অংশ। সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন পক্ষ থেকে হাঁকডাক দেওয়া হলেও কার্যত সমাধান হয় না। ১৬ বছর ধরে চলছে এ অবস্থা। গত সোমবারের বৃষ্টিতেও পুরোনো এই সমস্যা আবার সামনে এসেছে। বৃষ্টিতে কার্যত অচল হয়ে পড়েছিল শহর। এতে দিনভর  মহাভোগান্তিতে পড়তে হয় বাসিন্দাদের। 
এদিকে দুইদিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তা, জিঞ্জিরাম, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বেড়ে তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।  জিঞ্জিরাম নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় একটি কাঠের সাঁকো ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
কুড়িগ্রামে সোমবার রাত ৯টায় বৃষ্টি শুরু হয়। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে নগরীর অন্তত ২০টি মহল্লা এক থেকে দেড় ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জজকোর্ট, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ লাইনস, হাসপাতালপাড়া, পৌর বাজার, হাটিরপাড়, বৈশ্যপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, মধুর মোড়, হরিজনপল্লি, পিটিআই চত্বর, ভোকেশনাল মোড়সহ বিভিন্ন দপ্তর ও আবাসিক এলাকায় পানি ঢুকে গেছে। 
কুড়িগ্রাম পৌরসভার বাসিন্দা ফজলুল হক বলেন, ১৬ বছর ধরে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা বেহাল। বৃষ্টি এলেই ড্রেনগুলো উপচে পানি ঘরে প্রবেশ করে। কোথাও ড্রেনের ওপরই স্থাপনা নির্মাণ, কোথাও বা বালু-মাটি দিয়ে ভরাট হয়ে গেছে। যে খাল দিয়ে বৃষ্টির পানি নামত সেগুলোও ভরাট হয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টি হলে সড়কে পানি জমে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। 
পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী বলেন, ১৬ বছরে এ সমস্যা সমাধানে কোনো কাজ হয়নি। আমরা তাৎক্ষণিক সমাধান করতে পারব না।  নতুন করে ড্রেন সংস্কারের পরিকল্পনা নেওয়া হবে। আপাতত ড্রেনের ওপর থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে পানি বের হবার পথ করে দেওয়া হবে। 
টানা বৃষ্টিতে গ্রামে গ্রামে দুর্ভোগের মাত্রাও বেড়েছে। ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তাপারের দলদলিয়া, থেতরাই, বেগমগঞ্জ, মোল্লারহাট, সরিষাবাড়ী, বিদ্যানন্দ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টিতে এসব এলাকার আবাদি ফসলগুলো ডুবে গেছে। কৃষকেরা তাড়াহুড়ো করে আধাপাকা ধান কেটে নিচ্ছেন। ক্ষেত থেকে তোলা হচ্ছে অপরিপক্ব পেঁয়াজ ও বাদাম। বেশির ভাগ কৃষক ফসল রক্ষা করতে পারেননি। তিস্তার পানিতে ডুবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন প্রায় ৮৫ জন কৃষক।
রাজারহাটের তিস্তাপারের কৃষক ফয়জার আলী বলেন, ‘১৪টা দিন গেলে বাদাম গুল্যা ঘরত তুলবের পালুং (পেলাম) হয়। সর্বনাশা তিস্তার পানি হঠাৎ আসি সোগ (সব) ভাসি (ডুবে) গেইল।’ 
ব্রহ্মপুত্র পারের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মোল্লার হাটের দেড়শ বসতভিটা, আবাদি ফসল ও বিদ্যুতের খুঁটি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে তিনশ বসতভিটা। ভাঙনের হাত থেকে সম্পদ রক্ষার জন্য বাসিন্দারা অপরিপক্ব গাছ কেটে ফেলছেন। ঘর-বাড়ি সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। 
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল ইসলাম জানান, আগামী ৫ দিন রংপুর ও ভারতের মেঘালয় ও আসামে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে কুড়িগ্রামের ৪ নদ-নদীতে পানি বাড়তে পারে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বন য

এছাড়াও পড়ুন:

নোয়াখালীতে ফ্ল্যাট দখলে জেলা যুবদল সভাপতির সহায়তার অভিযোগ

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী শহরে একটি ফ্ল্যাট দখলের ঘটনায় জেলা যুবদলের সভাপতি মঞ্জুরুল আজিম ওরফে সুমনের সহযোগিতার অভিযোগ করা হয়েছে। আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় কাজল রেখা নামের এক নারী নোয়াখালী প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কাজল রেখা অভিযোগ করেন, ২০১০ সালে তাঁর বড় ছেলে আল মাহমুদের বন্ধু উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক নূর হোসেনকে তাঁদের মালিকানাধীন চৌমুহনী পৌরসভার কুরিপাড়া এলাকার একটি তিনতলা বাড়ি দেখাশোনার দায়িত্ব দেন। এরপর তিনি ছেলের পড়ালেখার সুবিধার্থে ঢাকায় চলে যান। তখন থেকে নূর হোসেন তাঁর বাড়ি দেখাশোনা করছিলেন। ‌একপর্যায়ে নূর হোসেন তাঁর বাড়ির তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাট দখল করে নেন এবং বাড়িতে থাকা অন্য ভাড়াটেদের বের করে দেন।

কাজল রেখা অভিযোগ করেন, নূর হোসেনের দলীয় প্রভাবের কারণে তিনি অনেক চেষ্টা করেও গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাড়ি দখলমুক্ত করতে পারেননি। পরে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর যুবলীগ নেতা নূর হোসেন আত্মগোপন করলে গত ৮ মার্চ তিনি তাঁর বাড়িটি দখলে নেন। এরপর নূর হোসেন জেলা যুবদলের সভাপতি মঞ্জুরুল আজিমের শরণাপন্ন হয়ে তাঁর (মঞ্জুরুল আজিম) লোকজনের মাধ্যমে ফ্ল্যাটটি পুনরায় দখল করেন।

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে জেলা যুবদলের সভাপতি মঞ্জুরুল আজিম আজ দুপুরে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, কাজল রেখা নামের ওই নারীর ফ্ল্যাট দখলের ঘটনায় তিনি কিংবা তাঁর কোনো লোক জড়িত নন। তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তাঁকে সামাজিকভাবে হেয় করার জন্য পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ওই নারীকে দিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য উপস্থাপন করেছেন।

এদিকে ফ্ল্যাট দখল করে রাখার বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে গত ১৬ মার্চ জেলা প্রশাসক পুলিশ সুপার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কাজল রেখা। তিনি বলেন, অভিযোগ দায়েরের পর বেগমগঞ্জ থানা থেকে একজন পুলিশ কর্মকর্তা তদন্ত করে এলেও ফ্ল্যাটটি এখনো দখলমুক্ত হয়নি।

জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার মো. আবদুল্লাহ আল ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, জায়গাজমি–সংক্রান্ত বিরোধের বিষয়গুলো আদালতের এখতিয়ার। এরপরও ওই নারীর অভিযোগ পাওয়ার পর বেগমগঞ্জ থানায় পাঠিয়েছেন। এ বিষয়ে ওই নারী বেগমগঞ্জ থানায় খোঁজ নিতে পারেন।

বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লিটন দেওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি সালিসের মাধ্যমে মীমাংসা হওয়ার কথা। হয়েছে কি না, তা তিনি জানেন না। মীমাংসা না হয়ে থাকলে ওই নারী আদালতে যেতে পারেন। তবে যাঁদের বিরুদ্ধে দখলের অভিযোগ করা হচ্ছে, তাঁরা ফ্ল্যাটের মালিকানার টাকাপয়সা লেনদেনের কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খইয়াছড়া খননকাজে ক্ষতি ব্যক্তিগত সম্পদের
  • নোয়াখালীতে ফ্ল্যাট দখলে জেলা যুবদল সভাপতির সহায়তার অভিযোগ
  • কুড়িগ্রামে বাড়ছে নদ-নদীর পানি, ভাঙনে দিশেহারা নদীপাড়ের মানুষ