বৃষ্টি হলেই শহরে জলাবদ্ধতা তলিয়ে যায় ফসলি জমি
Published: 21st, May 2025 GMT
টানা কিছুক্ষণ বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় কুড়িগ্রাম শহরের বড় অংশ। সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন পক্ষ থেকে হাঁকডাক দেওয়া হলেও কার্যত সমাধান হয় না। ১৬ বছর ধরে চলছে এ অবস্থা। গত সোমবারের বৃষ্টিতেও পুরোনো এই সমস্যা আবার সামনে এসেছে। বৃষ্টিতে কার্যত অচল হয়ে পড়েছিল শহর। এতে দিনভর মহাভোগান্তিতে পড়তে হয় বাসিন্দাদের।
এদিকে দুইদিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তা, জিঞ্জিরাম, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বেড়ে তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। জিঞ্জিরাম নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় একটি কাঠের সাঁকো ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
কুড়িগ্রামে সোমবার রাত ৯টায় বৃষ্টি শুরু হয়। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে নগরীর অন্তত ২০টি মহল্লা এক থেকে দেড় ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জজকোর্ট, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ লাইনস, হাসপাতালপাড়া, পৌর বাজার, হাটিরপাড়, বৈশ্যপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, মধুর মোড়, হরিজনপল্লি, পিটিআই চত্বর, ভোকেশনাল মোড়সহ বিভিন্ন দপ্তর ও আবাসিক এলাকায় পানি ঢুকে গেছে।
কুড়িগ্রাম পৌরসভার বাসিন্দা ফজলুল হক বলেন, ১৬ বছর ধরে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা বেহাল। বৃষ্টি এলেই ড্রেনগুলো উপচে পানি ঘরে প্রবেশ করে। কোথাও ড্রেনের ওপরই স্থাপনা নির্মাণ, কোথাও বা বালু-মাটি দিয়ে ভরাট হয়ে গেছে। যে খাল দিয়ে বৃষ্টির পানি নামত সেগুলোও ভরাট হয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টি হলে সড়কে পানি জমে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী বলেন, ১৬ বছরে এ সমস্যা সমাধানে কোনো কাজ হয়নি। আমরা তাৎক্ষণিক সমাধান করতে পারব না। নতুন করে ড্রেন সংস্কারের পরিকল্পনা নেওয়া হবে। আপাতত ড্রেনের ওপর থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে পানি বের হবার পথ করে দেওয়া হবে।
টানা বৃষ্টিতে গ্রামে গ্রামে দুর্ভোগের মাত্রাও বেড়েছে। ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তাপারের দলদলিয়া, থেতরাই, বেগমগঞ্জ, মোল্লারহাট, সরিষাবাড়ী, বিদ্যানন্দ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টিতে এসব এলাকার আবাদি ফসলগুলো ডুবে গেছে। কৃষকেরা তাড়াহুড়ো করে আধাপাকা ধান কেটে নিচ্ছেন। ক্ষেত থেকে তোলা হচ্ছে অপরিপক্ব পেঁয়াজ ও বাদাম। বেশির ভাগ কৃষক ফসল রক্ষা করতে পারেননি। তিস্তার পানিতে ডুবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন প্রায় ৮৫ জন কৃষক।
রাজারহাটের তিস্তাপারের কৃষক ফয়জার আলী বলেন, ‘১৪টা দিন গেলে বাদাম গুল্যা ঘরত তুলবের পালুং (পেলাম) হয়। সর্বনাশা তিস্তার পানি হঠাৎ আসি সোগ (সব) ভাসি (ডুবে) গেইল।’
ব্রহ্মপুত্র পারের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মোল্লার হাটের দেড়শ বসতভিটা, আবাদি ফসল ও বিদ্যুতের খুঁটি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে তিনশ বসতভিটা। ভাঙনের হাত থেকে সম্পদ রক্ষার জন্য বাসিন্দারা অপরিপক্ব গাছ কেটে ফেলছেন। ঘর-বাড়ি সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল ইসলাম জানান, আগামী ৫ দিন রংপুর ও ভারতের মেঘালয় ও আসামে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে কুড়িগ্রামের ৪ নদ-নদীতে পানি বাড়তে পারে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বন য
এছাড়াও পড়ুন:
বিষখালীতে হঠাৎ ভাঙন
ঝালকাঠির রাজপুরের বিষখালী নদীতে হঠাৎ করে দেখা দিয়েছে ভাঙন। ফলে উপজেলার মঠবাড়িয়া ইউনিয়নের মানকি-সুন্দর গ্রামের বসতভিটা ও কৃষিজমি বিলীন হচ্ছে। এলাকাবাসীর ভাষ্য, ভাঙন রোধে কার্যকর কোনো উদ্যেগ নেয়নি প্রশাসন।
স্থানীয় বাসিন্দা হৃদয়, সোহাগ ও সজল জানান, গ্রামটি আজ প্রায় বিলুপ্ত। নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি, ফসলের জমি, বিদ্যালয়সহ নানা স্থাপনা। এখন মাত্র একটি বাড়ি টিকে আছে, সেটিই গ্রামের অস্তিত্বের শেষ চিহ্ন। এই উপজেলার নাপিতেরহাট ফকিরবাড়ি এলাকার বহু মানুষ নদী ভাঙনের কারণে বসতভিটা হারিয়ে গৃহহীন হয়েছেন।
আরো পড়ুন:
ফুঁসছে তিস্তা, লালমনিরহাটে রেড অ্যালার্ট জারি
কুড়িগ্রামে ১৭০ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত
খালেক হাওলাদার নামে ক্ষতিগ্রস্ত এক বাসিন্দা জানান, নদী ভাঙনের কারণে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়ের বাড়িতে। জীবিকার অনিশ্চয়তায় হতাশ হয়ে পড়েছেন দিনমজুর ও কৃষিজীবীরা।
ইয়াসিন মোল্লা নামে অপর ব্যক্তি জানান, খরস্রোতা বিষখালী নদীর ভাটির টানে প্রতিদিন ভাঙাছে নতুন নতুন এলাকা। গত কয়েকদিন ধরে মানকি-সুন্দর ও বাদুরতলা এলাকায় ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। নদী তীরের মানুষ আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছেন।
মানকি-সুন্দর গ্রামের ইকবাল হোসেন নয়ন জানান, মানকি লঞ্চঘাট রাস্তার পূর্ব পাশ ভাঙন দেখা দিয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন থামানো না গেলে পুরো রাস্তা ও ঘাট বিলীন হয়ে যাবে।
শিপন খলিফা জানান, নদীর তীরের মাটি ইট ভাটায় কেটে নিয়ে যাওয়ায় নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। মাটি কাটা বন্ধ করতে প্রশাসনের নজর দারি জরুরি।
ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম নিলয় পাশা বলেন, “ভাঙন-কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে শিগগিরই সরকারের কাছে চাহিদা পাঠাব। যতদ্রুত সম্ভব জিও ব্যাগ বা বাঁধ পুনরায় নির্মাণসহ ভাঙন রোধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করা হবে।”
তিনি বলেন, “স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য অনেক আগেই প্ল্যান পাঠিয়ে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।”
রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিফাত আরা মৌরি বলেন, “খোঁজ নিয়ে ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নদীর তীর থেকে মাটি কাটার বিষয়েও আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
ঢাকা/অলোক/মাসুদ