যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক এড়াতে আলোচনার জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেঁধে দেওয়া ৯০ দিনের সময়সীমা শেষ হচ্ছে আগামী বুধবার (৯ জুলাই)। এরই মধ্যে কিছু দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করেছে। তবে বাংলাদেশসহ বেশির ভাগ দেশের সঙ্গে এখনো আলোচনা চলছে ওয়াশিংটনের। এমন পরিস্থিতিতে পাল্টা শুল্ক কার্যকরের সময়সীমা বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।

শুল্ক কার্যকরের সময়সীমা বাড়ানো হলেও ৯ জুলাইয়ের মধ্যে বেশ কিছু দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। আর যেসব দেশের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে কোনো সমঝোতা হয়নি, তাদের নতুন শুল্কের পরিমাণ জানিয়ে চিঠি দেওয়া হবে। ট্রাম্পের ভাষ্য অনুযায়ী, স্থানীয় সময় সোমবার প্রথম ধাপে এমন ১৫টি দেশকে চিঠি দেওয়ার কথা।

সপ্তাহান্তের গলফ উপভোগ শেষে স্থানীয় সময় রোববার নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্য থেকে ওয়াশিংটনে ফেরেন ট্রাম্প। এর আগে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘১২টি দেশকে চিঠি দেওয়া হবে। তা ১৫টিও হতে পারে।’ এ সময় সাংবাদিকেরা জানতে চান, নতুন শুল্ক ৯০ দিনের সময়সীমা শেষে, নাকি ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে? তবে এ প্রশ্নের স্পষ্ট কোনো জবাব দিতে পারেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

ট্রাম্পের মুখে অস্পষ্টতা দেখে প্রশ্নের জবাব দেওয়া শুরু করেন মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক। তিনি বলেন, ‘শুল্ক ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। প্রেসিডেন্ট এখন শুল্কের হার নির্ধারণ এবং বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কাজ করছেন।’ ট্রাম্প এ নিয়ে আর কোনো কথা না বললেও পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে জানান, সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় চিঠি পাঠানো শুরু করবে যুক্তরাষ্ট্র।

শুল্ক নিয়ে ছোট আরও ১০০টি দেশকে ট্রাম্প প্রশাসন চিঠি দেবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট। সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে তিনি বলেন, এই দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের তেমন একটা বাণিজ্য হয় না। চিঠিতে তাদের নতুন উচ্চ শুল্কহারের কথা জানিয়ে দেওয়া হবে। ১ আগস্ট থেকে পাল্টা শুল্ক কার্যকরের কথা উল্লেখ করে বেসেন্ট বলেন, এদিন থেকে ২ এপ্রিলের হারে শুল্ক ফিরে আসবে।

গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করা দেশগুলোর ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ হারে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। বাণিজ্য–ঘাটতির অজুহাতে অনেকে দেশের ওপর সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত পাল্টা শুল্ক চাপিয়ে দেওয়া হয়। পরে ৯ এপ্রিল পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়। এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য দেশগুলোকে সুযোগ দেন ট্রাম্প।

৯০ দিন শেষে ৯ জুলাইয়ের পরই পাল্টা শুল্ক কার্যকরের কথা ছিল। তবে ১ আগস্ট পর্যন্ত পেছানোয় বাণিজ্য আলোচনার জন্য আরও তিন সপ্তাহ সময় পেল বিভিন্ন দেশ। এখন পর্যন্ত শুধু যুক্তরাজ্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে পেরেছে। ভিয়েতনামও চুক্তিতে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। বাকি দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো অগ্রগতির কথা জানা যায়নি।

বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাংলাদেশেরও আলোচনা চলছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। গত শুক্রবার বাণিজ্য উপদেষ্টা প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন, ৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় বৈঠকে বসবেন তাঁরা। বৈঠক থেকে শুল্ক নিয়ে ভালো ফল পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।

শুল্ক নিয়ে আগামী ১ থেকে ২ দিনের মধ্যে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সংক্ষিপ্ত বাণিজ্য চুক্তি করার সিদ্ধান্ত হতে পারে। রোববার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি-টিভি১৮-এর খবরে বলা হয়েছে, ওই চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা ভারতীয় পণ্যের ওপর গড়ে ১০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। আর ৩৬ শতাংশ হারে শুল্ক এড়াতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি পণ্য কেনাসহ নানা প্রস্তাব দিয়েছে থাইল্যান্ড।

নানা জটিলতার পরও শুল্ক নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। আজ ইইউর বাণিজ্য মুখপাত্র ওলোফ গিল বলেছেন, রোববার ট্রাম্প ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েনের মধ্যে ‘ভালো আলাপ’ হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দ্রুত একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর আশা করা হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ল ক ক র যকর র য ক তর ষ ট র র র সময়স ম ন র জন য ১ আগস ট কর র স ৯০ দ ন

এছাড়াও পড়ুন:

তিন কারণে রপ্তানিতে প্রণোদনা প্রত্যাহার ৫ মাস পেছাল

তিন কারণে রপ্তানিখাতে আর্থিক প্রণোদনা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহারের সময়সীমা আরো ৫ মাস পিছিয়ে দিয়েছে সরকার। আগামী বছরের (২০২৬) জুলাই থেকে এটি কার্যকর করার কথা ছিল। এখন তা পিছিয়ে আগামী বছরের নভেম্বর মাস নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়টি অনুমোদনও করেছেন। 

যে  কারণগুলোর কারণে সময়সীমা পিছিয়ে দেয়া হয়েছে তা হলো, আমেরিকা কর্তৃক বাংলাদেশের পণ্যের ওপর অধিকহারে শুল্কারোপ, স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে ভারতের বিধিনিষেধ এবং গত বছরে রাজনৈতিক কারণে শিল্পখাতে অস্থিরতা। ইতোমধ্যে ২০২৪ সাল থেকে এই রপ্তানি প্রণোদনা ধাপে ধাপে কমিয়ে দেয়া হচ্ছে।

বিগত সাত অর্থবছরে রপ্তানিখাতে প্রণোদনার দেয়ার পরিমাণ ছিল ৪৬ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা। এই আর্থিক প্রণোদনা সিংহভাগ (৮০ ভাগেরও বেশি) পেয়েছে রপ্তানিমুখী তৈরিপোশাক শিল্প।  

আরো পড়ুন:

পাঁচ বছরে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন বেড়েছে ২২৮ শতাংশ

জবিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদদের নিয়ে গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জাতিসংঘের নির্ধারিত মানদণ্ড অনুযায়ী সংস্থাটির কমিটি ফর ডেভলেপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) সুপারিশ অনুসারে আগামী ২৪ নভেম্বর ২০২৬ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে। স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের পরবর্তী সময়ে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) এগ্রিমেন্ট অন সাবসিডিস অ্যান্ড কাউন্টারভেলিং মেজারস (এএসসিএম) অনুসারে রপ্তানি নির্ভর সাবসিডি অর্থ্যাৎ কোনো আর্থিক প্রণোদনা দেয়াা যাবে না। 

এ অবস্থায় রপ্তানিতে বিদ্যমান প্রণোদনা বা আর্থিক সহায়তা একসঙ্গে প্রত্যাহার করা হলে রপ্তানিকারকেরা হঠাৎ করে চ্যালেঞ্জর সম্মুখিন হতে পারেন বা রপ্তানি বাণিজ্য নেতিবাচক প্রভাব পরতে পারে। সেই বাস্তবতায় ২০২৬ সালের মধ্যে রপ্তানি প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা ধাপে ধাপে বা  ক্রমান্নয়ে কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত রয়েছে, যা পূর্ববর্তী সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদিত। উক্ত কর্মপরিকল্পনা অনুসারে প্রথম ধাপে সব পণ্যের (৪৩টি খাতের) রপ্তানি প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা ২০১৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত আংশিক হ্রাস করা হয়েছে।  দ্বিতীয় ধাপে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে এ নগদ সহায়তা আরো কিছুটা হ্রাস করা হয়েছে।

অর্থ বিভাগ এ বিষয়ে জানিয়েছে, এই  কর্মপরিকল্পনা অনুসারে তৃতীয় ধাপে  ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে রপ্তানি প্রণোদনা/নগদ সহায়তার যার আংশিক হ্রাস করার কথা ছিল। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকা কর্তৃক বাংলাদেশের উপর প্রতিযোগী দেশের তুলনায় অধিক হারে শুল্ক আরোপ, স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে ভারত সরকার দেয় বিধিনিষেধ এবং গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে শিল্পখাতে কিছুটা অস্থিরতা থাকার কারণে দেশের রপ্তানিখাত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। পরিবর্তিত এ বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে রপ্তানি প্রণোদনার হার এ মুহূর্তে আরো হ্রাস করা হলে রপ্তানিকারকেরা অধিকতর সমস্যার সম্মুখীন হবেন। এ পর্যায়ে তৃতীয় ধাপে নগদ সহায়তা হ্রাসের পরিকল্পনা ৬ (ছয়) মাসের জন্য বিলম্বিত করা যেতে পারে। সে প্রেক্ষিতে, নগদ সহায়তার  তৃতীয় ধাপে হ্রাসের লক্ষ্যে ইতোপূর্বে গৃহীত সিদ্ধান্ত শিথিল করে আগামী ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর করা যুক্তিযুক্ত হবে।  একইভাবে, ২০২৬ সালের ১ জুলাই থেকে চতুর্থ ধাপে নগদ সহায়তা হ্রাস কিছুটা বিলম্বিত করে এলডিসি উত্তোরণের দিন হতে অর্থাৎ এর ২০২৬ নভেম্বর থেকে কার্যকর করা সমীচীন হবে।

অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, এই সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অর্থ উপদেষ্টার কাছে পাঠানো হলে তিনি তা অনুমোদন করেছেন। ফলে রপ্তানি সহায়তা প্রত্যাহার প্রায় এক বছর পিছিয়ে গেল। এতে দেশের রপ্তানিকেরা বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা আরো খানিকটা সময় পেলেন।

ঢাকা/হাসনাত/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছেছে: ট্রাম্প
  • ক্লাব বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল: দেখে নিন সময়সূচি
  • আফগানদের ইরান ছাড়ার শেষ দিন আজ, কাল থেকে গ্রেপ্তার
  • লাখ লাখ আফগান শরণার্থীকে দেশ ছাড়ার নির্দেশ ইরানের
  • ঘনিয়ে আসছে ৯ জুলাই, এরপর কী করবেন ট্রাম্প
  • তিন কারণে রপ্তানিতে প্রণোদনা প্রত্যাহার ৫ মাস পেছাল
  • শুল্ক নিয়ে ১২টি দেশকে চিঠি দিচ্ছেন ট্রাম্প
  • বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মৌখিক পরীক্ষার সূচি প্রকাশ
  • জাপানে উচ্চশিক্ষা সুযোগ: যাত্রা কোথা থেকে কীভাবে শুরু করবেন?