নিখোঁজের এক দিন পর পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী মাইমুনা আক্তার ময়নার (১০) লাশ স্থানীয় মসজিদের দোতলা থেকে উদ্ধার হলেও ঘটনার কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের শাহবাজপুর ইউনিয়নের হাবলিপাড়া মসজিদ থেকে গতকাল রোববার সকালে ময়নার লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে গত শনিবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে বাড়ি থেকে সতীর্থদের সঙ্গে বের হয়ে আর ফেরেনি ময়না। অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে মাইকিংয়ের পর রাতে সরাইল থানায় জিডি করা হয়।
লাশ উদ্ধারের ঘটনায় রোববার রাতেই ময়নার মা লিপি আক্তার বাদী হয়ে সরাইল থানায় ধর্ষণ শেষে হত্যার অভিযোগ এনে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেছেন। মসজিদের ইমাম হামিদুর রহমান (৩০) ও মুয়াজ্জিন সাইদুল ইসলামকে (২১) এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। সোমবার রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাদের আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছিল।
পুলিশ জানিয়েছে, ইমাম ও মুয়াজ্জিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। লাশ উদ্ধারের পর থেকেই পুলিশের পাশাপাশি পিবিআই, সিআইডিও বিষয়টি তদন্ত করছে।
এদিকে পরিবারের সদস্যদের দাবি, পূর্ববিরোধের জেরে নয়, পাশবিকতার মনোবৃত্তি থেকেই ধর্ষণ শেষে ময়নাকে হত্যা করা হয়েছে। লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে ময়নার প্রবাসী বাবা দেশে ফিরছেন। লাশবাহী অ্যাম্বুল্যান্স বাড়ির আঙিনায় রাখা হলে শাহবাজপুর গ্রামসহ আশপাশ এলাকার শত শত নারী-পুরুষ ময়নাকে শেষবারের মতো দেখতে ভিড় জমান।
ময়নার মা জানান, মসজিদের ইমাম হামিদুর ময়নার লাশ মসজিদের দোতলায় পড়ে থাকার খবর দেন তাঁকে। তিনি তাঁর ভাশুর হাবিবুরকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ময়নার বিবস্ত্র লাশ উপুড় অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। এ সময় তার গলায় সালোয়ার প্যাঁচানো অবস্থায় দেখতে পেয়ে তিনি সেখানেই জ্ঞান হারান।
লিপি আক্তার বলেন, দুপর আড়াইটার দিকে ময়না মাদ্রাসারা অনুষ্ঠানে যায়। বিরিয়ানির প্যাকেট নিয়ে এসে আমাকে দিয়ে প্রায় সাড়ে ৩টার দিকে বাইরে যায়। আমাদের কোনো শত্রু নেই। যে বা যারা ময়নাকে এভাবে ধর্ষণ শেষে হত্যা করেছে, তাদের ফাঁসি চাই।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি ময়না আত্বাকুয়া নুরানি তাহাফ্ফুজে কোরআন মাদ্রাসার নুরানি বিভাগে পড়ত। সেই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ শাহ মো.
লতিফ মোস্তারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত ময়না। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক মোছাম্মৎ লায়লা বেগম জানান, ময়না খুবই মেধাবী ছিল। সে বৃহস্পতিবারও স্কুল করেছে। আমাদের বিদ্যালয়ে কাব লিডার ছিল ময়না। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
স্থানীয় মুসল্লিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এশার নামাজের পর মসজিদে প্রবেশের দুটি গেটই বন্ধ থাকে। ফজর নামাজের সময় তা আবার খোলা হয়। মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিন মসজিদের ভেতরেই তাদের নির্ধারিত কক্ষে রাতে থাকেন।
আসর, মাগরিব ও এশার নামাজের পর মসজিদের মাইকে ময়না নিখোঁজের বিষয়ে মাইকিং করা হয়েছিল। মুসল্লি তাজুল ইসলাম জানান, শুক্রবার ছাড়া মসজিদের দোতলায় কেউ নামাজ আদায় করেন না। রোববার সকালে শিশুরা মক্তবে পড়তে এসে দৌড়াদৌড়ি করে দোতলায় গিয়ে লাশ দেখে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মসজিদের দক্ষিণ পাশ শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আশফাকুল মতিন খসরু স্মৃতি পাঠাগার। সেখানে কয়েক মাস আগ পর্যন্ত ঢাকা থেকে একজন চিকিৎসক এসে বিন্যামূল্যে চিকিৎসা দিতেন। এখন সেখানে কিছু লোক আড্ডা বসায়।
সরাইল থানার ওসি মোরশেদ আলম চৌধুরী জানান, আটক ইমাম ও মুয়াজ্জিনকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থেই মামলার অগ্রগতির বিষয়ে কিছু জানাতে চাননি তিনি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড় য় মসজ দ র দ র বব র ময়ন র
এছাড়াও পড়ুন:
সিপিবির ত্রয়োদশ কংগ্রেস শুরু ১৯ সেপ্টেম্বর
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) ত্রয়োদশ কংগ্রেস (কেন্দ্রীয় সম্মেলন) আগামী ১৯ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যেই দলের সব শাখা, উপজেলা ও জেলা সম্মেলন সম্পন্ন করা হবে। গত শুক্র ও শনিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির দু'দিনব্যাপী সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সোমবার দলের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সভার সিদ্ধান্তগুলো জানানো হয়।
সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলমের সভাপতিত্বে সভায় দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, করণীয় ও সরকারের সংস্কারবিষয়ক আলোচনা উত্থাপন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক লুনা নূর। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন দলের প্রেসিডিয়াম, কেন্দ্রীয় কমিটি ও কন্ট্রোল কমিশনের সদস্য ও সংগঠকরা।
সভায় সারাদেশে অব্যাহত মব-সন্ত্রাস, খুন-ধর্ষণ-হত্যাকাণ্ডের ঘটনা এবং এসব ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে জননিরাপত্তায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে বিদ্যমান সংকট উত্তরণে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা এবং গণঅভ্যুত্থানে সংগঠিত হত্যাকাণ্ডের বিচার দৃশ্যমান করার দাবি জানানো হয়।
সভায় চট্টগ্রাম বন্দর লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসাসহ দেশকে সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যবাদী শক্তির স্বার্থরক্ষার ভূমিকা নেওয়ার সরকারি পদক্ষেপের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়। এ সময় গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট দেশব্যাপী নানা কর্মসূচি ও ১৮ জুলাই ‘শহীদ রেজভী দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।