‘শ্রাবণ বিদ্রোহ’ প্রিমিয়ার শোতে উঠে এলো গণঅভ্যুত্থানের তথ্যচিত্র
Published: 7th, July 2025 GMT
‘আম্মু কখনও যদি বিপ্লব হয়, আমি যেন রাজপথে শহীদ হই। এখন সেই কথায় বারবারই মনে পড়ে আমার। আল্লাহ হয়তো তার এ কথাটা কবুল করেছে।’ সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়’র মা শামসি আরা জামান আজ সোমবার বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় জাতীয় জাদুঘরে কানায় কানায় পূর্ণ মিলনায়তনে নিজের ছেলেকে নিয়ে স্মৃতিচারণে এসব কথা বলেন। আরিফুর রহমান পরিচালিত তথ্যচিত্র ‘শ্রাবণ বিদ্রোহ’ এর প্রিমিয়ার শো আজ অনুষ্ঠিত হয়। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে তৈরি তথ্যচিত্রটির বিশেষ সহযোগিতায় রয়েছে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর ও প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)।
পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফের সঞ্চালনায় আয়োজনে স্বাগত বক্তব্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো.
শুভেচ্ছা বক্তব্যে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, জুলাই কখনও বেহাত হবে না। জুলাইয়ের গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিচার চলছে, বিচার দৃশ্যমান। এই বিচার গ্রহণযোগ্য করতে হবে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে খুনিদের বিচার সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, ফ্যাসিবাদ বারবার ফিরে আসার চেষ্টা করে, তাকে দমন করতে হয়। ফ্যাসিবাদ যেন আর কখনও মাথাচাড়া দিতে না পারে, সেজন্য তিনি সকলকে সোচ্চার থাকার আহ্বান জানান।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, রাজনৈতিক ঐকমত্য থাকলে দেশে আর ফ্যাসিবাদ ফিরে আসবে না। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যে উদ্দেশ্যে শহীদরা আত্মত্যাগ করেছেন, সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে দেশের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানান।
তথ্যচিত্রের প্রিমিয়ার শোতে আরও উপস্থিত ছিলেন শহীদ আবু সাইদের বাবা ও ভাই। আবু সাইদের বাবা ও সাংবাদিক প্রিয়’র মায়ের কথায় প্রতিধ্বনিত হয় আন্দোলনে সকল হত্যার বিচারের দাবি। এছাড়া প্রধান মিলনায়তন এবং একইসঙ্গে সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন বয়সী মানুষের উপস্থিতিতে প্রিমিয়ার শোতে প্রতিটি মৃত্যুর দৃশ্যের সময় আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়। দর্শক সারি থেকেই ভেসে আসতে থাকে জুলাই অভ্যুত্থানের বিভিন্ন স্লোগান।
তথ্যচিত্র শেষে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে আরিফুর রহমান বলেন, এই তথ্যচিত্র বানানোর সময় অনেকে আমাকে বলেছেন, সমস্যা হবে। এটা নিয়ে ভবিষ্যতে অনেক ধরনের ঝামেলায় পড়তে হবে। কিন্তু এখন আর কোনো ভয় নেই। আমরা এখন সাহসী হয়ে গেলাম।
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের নৃশংস ও ভয়াবহ বাস্তবতার রূপ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই ৩০ মিনিটের তথ্যচিত্রে। আন্দোলনে সম্মুখসারিতে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে দেশের বিশিষ্টজনদের স্মৃতিচারণ, বক্তব্য, নিহতদের আহাজারি, আলোকচিত্রীর কথাসহ উঠে আসে জুলাইয়ের প্রতিটি রূদ্ধশ্বাস সময়গুলো। এটি আরও ৬টি ভাষায় ডাবিং করে ইউটিউবসহ পরবর্তীতে সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা হবে বলেও জানানো হয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গণঅভ য ত থ ন জ ল ই অভ য ত থ ন
এছাড়াও পড়ুন:
প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত
বাংলাদেশের মেকআপ আর্ট জগতে নীরবে নতুনত্ব যোগ করে যাচ্ছেন সোনালী মিতুয়া। তার শৈল্পিক ইলিউশন এবং বডি পেইন্টিংগুলো আন্তর্জাতিক মানের, যা দেখে চোখ ফেরানো দায়। বর্তমানে ফিনল্যান্ডে মেকআপের ওপর উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন এই শিল্পী, যার ক্যানভাসে শৈশবের প্রথম গন্ধ ছিল তেল রং আর থিনারের তীব্রতা। মেকআপ ব্যবহার করে তিনি যে ক্যানভাস তৈরি করেন-তা এক কথায় অনন্য, অসাধারণ।
সোনালী মিতুয়া কখনও তার মুখে ফুটে ওঠে ফাটল ধরা পৃথিবী, যেখান থেকে গজিয়ে ওঠে সবুজ লতা। কখনও দেখা যায় তার মুখটাই এক অর্ধেক যন্ত্র, অর্ধেক প্রকৃতি, যেন মানুষ আর মেশিনের মাঝের এক অদ্ভুত, কাব্যময় দ্বন্দ্ব।আর কখনও সেই মুখটাই অন্ধকারে মিলিয়ে যায়, শুধু দেখা যায় এক ভয়ঙ্কর কালো গহ্বর — যেন মানুষের শূন্য আত্মা। এগুলো কোনো সিনেমার দৃশ্য না।এগুলো এক তরুণী মেকআপ আর্টিস্টের সৃষ্ট জীবন্ত শিল্পকর্ম।
আরো পড়ুন:
একা বাস করতে পারে যে পাখি
কেউ কটূক্তি করলে কী করবেন?
সোনালী মিতুয়ার মেকআপে একটা গল্প, একটা দর্শন, একটা গভীর বার্তা লুকিয়ে থাকে। যেখানে অধিকাংশ মানুষ মেকআপকে শুধু প্রসাধনের জগতে দেখে, সে সেখানে মেকআপকে তুলেছে এক উচ্চমাত্রার শিল্প হিসেবে। তার হাতে রঙ মানে—চামড়ার ওপরে নয়, বরং আত্মার ভাষা প্রকাশের এক মাধ্যম।
তার কাজে দেখা যায় প্রস্থেটিক মেকআপের প্রভাব— যেখানে মুখ বদলে যায়, গড়ে ওঠে নতুন রূপ, নতুন চরিত্র। এমন কৌশল একদিন তাকে সিনেমার পর্দায় প্রস্থেটিক আর্টিস্ট হিসেবে বড় জায়গায় নিয়ে যাবে—
এ কথা বলার জন্য বিশেষজ্ঞও হতে হয় না।
এই মেয়েটির সবচেয়ে বড় শক্তি তার কল্পনাশক্তি। সে মুখের ভেতরেই ফুটিয়ে তোলে গল্প—একদিকে প্রকৃতি, ফুল, প্রজাপতি; অন্যদিকে প্রযুক্তি, ধ্বংস আর শূন্যতা। দেখলে মনে হয়, এই দুইয়ের টানাপোড়েনেই গড়ে উঠেছে তার শিল্পজগৎ।
বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য এই মেয়েটি এক অনুপ্রেরণা। সে প্রমাণ করছে—শিল্পের ভাষা যদি শক্ত হয়, তাহলে দেশের সীমা পেরিয়ে বিশ্বেও পৌঁছানো যায়। যেখানে মেকআপকে এখনো অনেকেই কেবল সাজের কাজ মনে করেন, এই মেয়েটি সেখানে দেখিয়েছে — মেকআপও হতে পারে দর্শন, প্রতিবাদ আর সৃষ্টির ক্যানভাস।
তিনি জানেন, প্রস্থেটিক আর্টে (বিশেষত কৃত্রিম অঙ্গ, ক্ষত বা ফ্যান্টাসি চরিত্র তৈরি) করা যায় দক্ষতার সাথে। বর্তমানে বাংলাদেশের সিনেমায় যেখানে প্রস্থেটিকের ব্যবহার খুবই সীমিত, সেখানে সোনালী মিতুয়ার মতো একজন আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিল্পী আছেন, তার হাতেই তৈরি হতে পারে বাংলাদেশের ইতিহাসের চরিত্রদের নিখুঁত রূপ, অথবা আমাদের ফ্যান্টাসি সিনেমার ভিনগ্রহের প্রাণী।
সোনালী মিতুয়ার কাজগুলো দেখলেই বোঝা যায়, তিনি মেকআপকে স্রেফ সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যম হিসেবে দেখেন না, বরং এটিকে একটি শক্তিশালী গল্প বলার হাতিয়ার মনে করেন।
একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন মানুষ প্রকৃতির মাঝে ফাটল ধরা পাথরের মতো এক রূপ ধারণ করেছেন। সবুজ, হলুদ ও লালের মিশ্রণে চোখের অংশটি গভীর এবং রহস্যময়, আর ফাটলের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে আসা লতা-পাতা জীবনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি তার পরিবেশ-সচেতনতা এবং ফ্যান্টাসি আর্টের দক্ষতা প্রমাণ করে।
সাদাকালো স্কেচের মতো দেখতে এই মেকআপটি অত্যন্ত কঠিন এবং চোখে পড়ার মতো। মুখের প্রতিটি অংশে পেন্সিল বা চারকোল দিয়ে আঁকা হ্যাচিংয়ের মতো স্ট্রোকগুলো ত্রিমাত্রিক চেহারাটিকে দ্বিমাত্রিক কমিক-বুক বা নয়ার চলচ্চিত্রের চরিত্র হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছে।
চোখ ও মুখের চারপাশে মাকড়সার জাল এবং ফুলা, রক্তবর্ণ চোখের পাপড়ি ভীতি ও কষ্টের এক শক্তিশালী অনুভূতি জাগায়। এটি বিশেষ করে হ্যালোইন বা হরর থিমের জন্য পারফেক্ট।
গভীর অন্ধকারে তোলা এই ছবিটি ‘অন্ধকার গহ্বর’ বা ‘কৃষ্ঞগহ্বর’ থিমের একটি চমকপ্রদ ইলিউশন মেকআপ। নিখুঁত কনট্যুরিং এবং রঙের ব্যবহারে মুখের এক অংশে যেন সত্যিই একটি ফাঁকা, গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
ঢাকা/লিপি