Samakal:
2025-09-18@06:07:32 GMT

দৃশ্যগুলো দৃষ্টিকটু

Published: 7th, July 2025 GMT

দৃশ্যগুলো দৃষ্টিকটু

ঢাকা মহানগরীর এমনকি গুলশান, বনানী, বারিধারা, ধানমন্ডির অভিজাত এলাকাতেও চোখ পড়বে অভাবনীয় কাণ্ড-কারখানা। এসব দৃশ্য উন্নয়ন, সুশাসন, নিরাপত্তা, জনস্বাচ্ছন্দ্য ও পরিবেশবিরোধী।
খোদ সংসদ ভবনের সামনে সারি সারি বকুল গাছ থেকে ফুল ঝরে সড়ক ভরে থাকে। মন মাতানো সুবাস ছড়ায় চারদিকে। কিন্তু এই বিছিয়ে থাকা বকুল ফুলের কাছেই দেয়ালমুখো হয়ে মানুষ প্রস্রাব করে। যার দুর্গন্ধযুক্ত মূত্রধারা গড়িয়ে চলে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে। বিব্রত এসব বকুল গাছের সংসদ ভবনের দিকে অসহায় তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কী করার আছে!  

সংসদ বাউন্ডারির দক্ষিণে চওড়া উন্মুক্ত স্থানে রোজ বিকেলে প্রচুর জনসমাগম হয়। ফাস্টফুড, চটপটি-ফুচকা, মুড়ি-চানাচুর, বাদামের পসরা বসে। ভালো বেচাকেনাও হয়। কাগজের ঠোঙা, পলিথিনের ব্যাগ, চিপসের প্যাকেট, কলার খোসার স্তূপ হয়ে যায়। ওই স্থানে যারা মর্নিং ওয়াকে যান, এসব স্তূপ দেখেন। সিটি করপোরেশনের লোক কখন আসবে, ঠিক-ঠিকানা নেই। অথচ দোকানিরা নিজ উদ্যোগেই গভীর রাতে ময়লাগুলো অপসারণ করতে পারে! তারা তো ট্যাক্স দিয়ে ব্যবসা করে না। কেন পরিবেশ রক্ষায় এটুকু করতে পারবে না?

লালমাটিয়ার আড়ং আউটলেটের পেছনে একটা মাঠ আছে। সেখানে প্রায় দুই বছর ধরে ‘উন্নয়ন’ কাজ চলছে। ছোট্ট একটা প্রকল্পের শেষ দেখতে এলাকাবাসীকে আর কতকাল অপেক্ষা করতে হবে? মাঠ নেই, তাতে কী? মাঠের চারদিকের ফুটপাতে ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান বসে যায় রোজ। দোকানের সামনে প্লাস্টিকের চেয়ার সাজানো থাকে। পথচারী না পারে সড়কে নামতে, না পারে ফুটপাত ব্যবহার করতে!
যদি এদের সরিয়ে দিতে বলা হয়, নানা মানবিক কারণ হাজির করা হবে। তাই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য এমন সড়ক নির্ধারণ করতে হবে, যেখানে ফুটপাত বা সড়কে চলার স্বাধীনতা খর্ব না হয়। আইন ও নীতির ওপর আবেগকে স্থান দিলে একজনের উপকার করতে গিয়ে দশজনের ক্ষতি হয়।

এ শহরে স্কুল কম্পাউন্ডে কনসার্টের অনুমতি দেওয়া হয় টাকার বিনিময়ে। সারা মহল্লায় চলে শব্দদূষণ। অন্য পণ্যের প্রদর্শনীস্থলের ভেতরে খাবার দোকান বসিয়ে সয়লাব করে ফেলা হয়।
বইমেলা হয়ে পড়ে সেলফি তোলা আর ঘোরাঘুরির মেলা। অনেক সড়কে সকালবেলা মাছের বাজার বসে। মাছের জন্য নির্ধারিত বাজারগুলো তাহলে কী জন্য?
এই নগরে বেআইনি কাজের প্রতি আকর্ষণের মাত্রা একটু বেশিই। ফুট ওভারব্রিজ থাকা সত্ত্বেও তার নিচ দিয়ে সড়ক পার হওয়ার প্রতিযোগিতা চলে হরদম। গাড়ির দিকে হাত উঁচু করে স্বনিয়ন্ত্রিত নিষেধাজ্ঞা জারি করে যত্রতত্র অবলীলায় চলাচল করে এক শ্রেণির মানুষ। এর চেইন ইফেক্ট পড়ে গোটা ট্রাফিক ব্যবস্থায়। এদিকে মহাসড়কে উঠে পড়ে রিকশা। ইদানীং ব্যাটারিচালিত রিকশায় মহানগর ছেয়ে গেছে। যেহেতু এদের আলাদা লেন নেই; দ্রুতগতির যানবাহন ব্যাপক সমস্যায় পড়ে।  
যারা সড়কের ধারে বাড়ি করেছেন, তারাও ফুটপাত এমনকি সড়কের ওপর নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখেন। বাড়ির সামনের ফুটপাত দখল করা হয় আরও নানা কায়দায়। সড়ক বা ফুটপাত হেফাজতের পরিবর্তে তারা নির্যাতকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। 

ঢাকা শহরে যে পুরোনা বাস চলে, এগুলোর মালিকরা নানাভাবে প্রভাবশালী। ভালো সেবার জন্য ভালো বাস নামাতে গেলে তাদের আয়ের পথ বন্ধ হয়। তারা চান, এমন প্রকল্প যেন আলোর মুখ না দেখে। দুর্ভোগ পোহান সাধারণ নগরবাসী। 
ধানমন্ডির পুরাতন ২৭ নম্বর রোডের সমান্তরাল যে সড়কটা পূর্ব থেকে পশ্চিমে চক্ষু হাসপাতালের অদূরে মিশেছে, সেখানে কিছুদিন পরপর ওয়াসা, বিদ্যুৎ অথবা ফাইবার অপটিকের কাজের জন্য কেটে খোয়া দিয়ে ভরে রাখা হয়। মাসের পর মাস এভাবেই পড়ে থাকে। প্রশ্ন হচ্ছে, একবার সংস্কারের আগে কি সড়কের তলার সব কাজ সেরে রাখা যায় না? এক মুরগিকে দুইবার জবাই করে মৃত্যুযন্ত্রণা দীর্ঘায়িত করা ছাড়া এটাকে কী বলা যেতে পারে?

গাজী মিজানুর রহমান: সাবেক অতিরিক্ত সচিব

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ফ টপ ত র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

কাজাকিস্তানের যাযাবর জাতির করুণ ইতিহাস 

বিংশ শতাব্দীর আগে পৃথিবীর মানচিত্রে কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তান নামের এই পাঁচটি দেশ ছিলো না।  মূলত ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এই রাষ্ট্রগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা লাভ করে। পরে চীনের সহায়তায় ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলগুলো বাণিজ্যিক কেন্দ্রস্থল হিসেবে পুনরুত্থান হয়েছে। এখন প্রশ্ন  করা যেতে পারে, চীন কেন আবারও  এই অঞ্চলগুলোকে শক্তিশালী করে তুলছে?

ঐতিহাসিকভাবে মধ্য এশিয়া অঞ্চল সিল্করোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলো। যা চীনকে মধ্যপ্রাচ্য এবং রোমান সভ্যতার সাথে যুক্ত করেছিলো।  বীজ গণিতের জনক আল খারিজমি, আবু সিনার মতো বিজ্ঞানীদের জন্ম হয়েছে এখানে। যাদের লেখা বই ইউরোপে শত শত বছর ধরে চিকিৎসা ও নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। চেঙ্গিস খানও এই অঞ্চলে তার সম্রাজ্যের নিদর্শন রেখে গেছেন। পাশাপাশি ঘোড়ার পিঠে আদিম যাযাবর জীবনের ঐতিহ্যও টিকে আছে এখানে। 

আরো পড়ুন:

রাশিয়ার ‍বিরুদ্ধে এবার রোমানিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ

রাশিয়ায় ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্প, সুনামির সতর্কতা 

রাজনৈতিক প্রভাব ও সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করেছিলো রুশরা। উপনিবেশিক শাসন এমনভাবে চালু করেছিলো, যা অনেকটা ব্রিটিশ বা ফরাসি সম্রাজ্যের মতো দেখতে। 
রাজ্যগুলোকে শিল্পায়ন ও আধুনিকায়নের ফলে বিশাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এমনকি যাযাবর জাতিকে যুদ্ধ যেতে বাধ্য করা হয়েছিলো। আর যাযাবর জাতিকে বসতি স্থাপনে বাধ্য করা হয়েছিলো। এরপর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ফলে কাজাখ জনগোষ্ঠীর চল্লিশ শতাংশ অর্থাৎ ২৫ শতাংশ মানুষ অনাহারে মারা যায়। এবং যাযাবর জনগোষ্ঠীর যে অর্থনীতি, তা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। কারণ সোভিয়েত আমলে কাজাখ যাযাবররা যে পশুপালন করতো তার নব্বই শতাংশই মারা যায়। ফলে বাধ্য হয়ে কাজাখদের যাযাবর জীবনযাত্রা ছেড়ে দিতে হয়। বলতে গেলে সোভিয়েত আমলে কাজাখ সভ্যতা ও সংস্কৃতির বেদনাদায়ক পুনর্গঠনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। 

১৯৯১ সালে সোভিয়েন ইউনিয়নের পতন হয়, সৃষ্টি হয় এই পাঁচটি স্বাধীন দেশের। এই দেশগুলো স্বাধীন হয়েছে ঠিকই কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন পরবর্তী বিশ্বে খাপ খাইয়ে নিতে তাদের ব্যাপক সংগ্রাম করতে হয়। তবে বিগত কয়েক দশক ধরে মধ্য এশিয়ার যাযাবর জাতিগুলো নিজস্ব সীমানার মধ্যে এক অনন্য পরিচয় গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। যদিও তাদের ওপর বাইরের প্রভাবও রয়েছে। তুরস্ক এই অঞ্চলে নিজেদের উপস্থিতি আরও বেশি জানান দিচ্ছে। সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক, ধর্মীয় এবং ভাষাগত মিল আছে। এমনকি শিক্ষাগত কাঠামোতেও মিল রয়েছে। তুরস্ক মধ্য এশিয়ায় রাশিয়ার পণ্য রফতানির একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হিসেবেও বিবেচিত। 

জিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় এক কোটি উইঘুর বাস করেন। যাদের বেশিরভাগই মুসলিম। এদের নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া উইঘুর পরিচয় মুছে ফেলতে তাদের পুনঃশিক্ষা শিবিরে আটকে রাখার অভিযোগও আছে। যদিও চীন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। 

বৈশ্বিক অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এর চীন মধ্য এশিয়ায় ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন করছে। এই অঞ্চলটিকে বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত করতে চাইছে, যা অনেকটা সিল্করুটের মতোই। 

চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ উদ্যোগের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় প্রাচীন সিল্ক রোড পুনরুজ্জীবিত করার একটি সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। এই রোড পুনরুজ্জীবিত হলে রাশিয়া আর চীনের প্রভাব বলয়ে থাকা এই অঞ্চলের ভূ রাজনৈতিক গুরুত্ব কতটা বাড়বে-সেটাও সময় বলে দেবে।  

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঝগড়া থেকে দেয়ালে মাথা ঠোকা, সালমান-ঐশ্বরিয়ার সম্পর্কের বিষয়ে প্রকাশ্যে আনলেন প্রতিবেশী
  • কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরদের কাজ কি শুধু ভাইভা নেওয়া
  • কাজাকিস্তানের যাযাবর জাতির করুণ ইতিহাস 
  • চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী-গ্রামবাসীতে বিদ্বেষ কেন
  • চার্লি কার্ক হত্যাকাণ্ড: ট্রাম্প কি দাঙ্গা–ফ্যাসাদকেই নীতি হিসেবে নিয়েছেন