ঢাকা মহানগরীর এমনকি গুলশান, বনানী, বারিধারা, ধানমন্ডির অভিজাত এলাকাতেও চোখ পড়বে অভাবনীয় কাণ্ড-কারখানা। এসব দৃশ্য উন্নয়ন, সুশাসন, নিরাপত্তা, জনস্বাচ্ছন্দ্য ও পরিবেশবিরোধী।
খোদ সংসদ ভবনের সামনে সারি সারি বকুল গাছ থেকে ফুল ঝরে সড়ক ভরে থাকে। মন মাতানো সুবাস ছড়ায় চারদিকে। কিন্তু এই বিছিয়ে থাকা বকুল ফুলের কাছেই দেয়ালমুখো হয়ে মানুষ প্রস্রাব করে। যার দুর্গন্ধযুক্ত মূত্রধারা গড়িয়ে চলে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে। বিব্রত এসব বকুল গাছের সংসদ ভবনের দিকে অসহায় তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কী করার আছে!
সংসদ বাউন্ডারির দক্ষিণে চওড়া উন্মুক্ত স্থানে রোজ বিকেলে প্রচুর জনসমাগম হয়। ফাস্টফুড, চটপটি-ফুচকা, মুড়ি-চানাচুর, বাদামের পসরা বসে। ভালো বেচাকেনাও হয়। কাগজের ঠোঙা, পলিথিনের ব্যাগ, চিপসের প্যাকেট, কলার খোসার স্তূপ হয়ে যায়। ওই স্থানে যারা মর্নিং ওয়াকে যান, এসব স্তূপ দেখেন। সিটি করপোরেশনের লোক কখন আসবে, ঠিক-ঠিকানা নেই। অথচ দোকানিরা নিজ উদ্যোগেই গভীর রাতে ময়লাগুলো অপসারণ করতে পারে! তারা তো ট্যাক্স দিয়ে ব্যবসা করে না। কেন পরিবেশ রক্ষায় এটুকু করতে পারবে না?
লালমাটিয়ার আড়ং আউটলেটের পেছনে একটা মাঠ আছে। সেখানে প্রায় দুই বছর ধরে ‘উন্নয়ন’ কাজ চলছে। ছোট্ট একটা প্রকল্পের শেষ দেখতে এলাকাবাসীকে আর কতকাল অপেক্ষা করতে হবে? মাঠ নেই, তাতে কী? মাঠের চারদিকের ফুটপাতে ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান বসে যায় রোজ। দোকানের সামনে প্লাস্টিকের চেয়ার সাজানো থাকে। পথচারী না পারে সড়কে নামতে, না পারে ফুটপাত ব্যবহার করতে!
যদি এদের সরিয়ে দিতে বলা হয়, নানা মানবিক কারণ হাজির করা হবে। তাই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য এমন সড়ক নির্ধারণ করতে হবে, যেখানে ফুটপাত বা সড়কে চলার স্বাধীনতা খর্ব না হয়। আইন ও নীতির ওপর আবেগকে স্থান দিলে একজনের উপকার করতে গিয়ে দশজনের ক্ষতি হয়।
এ শহরে স্কুল কম্পাউন্ডে কনসার্টের অনুমতি দেওয়া হয় টাকার বিনিময়ে। সারা মহল্লায় চলে শব্দদূষণ। অন্য পণ্যের প্রদর্শনীস্থলের ভেতরে খাবার দোকান বসিয়ে সয়লাব করে ফেলা হয়।
বইমেলা হয়ে পড়ে সেলফি তোলা আর ঘোরাঘুরির মেলা। অনেক সড়কে সকালবেলা মাছের বাজার বসে। মাছের জন্য নির্ধারিত বাজারগুলো তাহলে কী জন্য?
এই নগরে বেআইনি কাজের প্রতি আকর্ষণের মাত্রা একটু বেশিই। ফুট ওভারব্রিজ থাকা সত্ত্বেও তার নিচ দিয়ে সড়ক পার হওয়ার প্রতিযোগিতা চলে হরদম। গাড়ির দিকে হাত উঁচু করে স্বনিয়ন্ত্রিত নিষেধাজ্ঞা জারি করে যত্রতত্র অবলীলায় চলাচল করে এক শ্রেণির মানুষ। এর চেইন ইফেক্ট পড়ে গোটা ট্রাফিক ব্যবস্থায়। এদিকে মহাসড়কে উঠে পড়ে রিকশা। ইদানীং ব্যাটারিচালিত রিকশায় মহানগর ছেয়ে গেছে। যেহেতু এদের আলাদা লেন নেই; দ্রুতগতির যানবাহন ব্যাপক সমস্যায় পড়ে।
যারা সড়কের ধারে বাড়ি করেছেন, তারাও ফুটপাত এমনকি সড়কের ওপর নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখেন। বাড়ির সামনের ফুটপাত দখল করা হয় আরও নানা কায়দায়। সড়ক বা ফুটপাত হেফাজতের পরিবর্তে তারা নির্যাতকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।
ঢাকা শহরে যে পুরোনা বাস চলে, এগুলোর মালিকরা নানাভাবে প্রভাবশালী। ভালো সেবার জন্য ভালো বাস নামাতে গেলে তাদের আয়ের পথ বন্ধ হয়। তারা চান, এমন প্রকল্প যেন আলোর মুখ না দেখে। দুর্ভোগ পোহান সাধারণ নগরবাসী।
ধানমন্ডির পুরাতন ২৭ নম্বর রোডের সমান্তরাল যে সড়কটা পূর্ব থেকে পশ্চিমে চক্ষু হাসপাতালের অদূরে মিশেছে, সেখানে কিছুদিন পরপর ওয়াসা, বিদ্যুৎ অথবা ফাইবার অপটিকের কাজের জন্য কেটে খোয়া দিয়ে ভরে রাখা হয়। মাসের পর মাস এভাবেই পড়ে থাকে। প্রশ্ন হচ্ছে, একবার সংস্কারের আগে কি সড়কের তলার সব কাজ সেরে রাখা যায় না? এক মুরগিকে দুইবার জবাই করে মৃত্যুযন্ত্রণা দীর্ঘায়িত করা ছাড়া এটাকে কী বলা যেতে পারে?
গাজী মিজানুর রহমান: সাবেক অতিরিক্ত সচিব
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কাজ না করেই অর্ধেক টাকা তুলে নেন ঠিকাদার
সড়কে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের প্রতিবাদে গাজীপুরের কাপাসিয়ায় মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। এমনকি ওই সড়কের কাজ না করেই অর্ধেক টাকা উঠিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করেন তারা। গতকাল সোমবার দুপুরে সদর ইউনিয়নের সূর্য নারায়ণপুর এলাকার কর্মসূচিতে শতাধিক মানুষ অংশ নেন। তারা সড়কটির কাজ যথাযথভাবে করার দাবি জানান।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সূর্য নারায়ণপুরের আব্দুর রশিদের বাড়ি থেকে বক্তারটেক পর্যন্ত ২৮০ ফুট দীর্ঘ রাস্তাটিতে ইট বিছিয়ে (সলিং) ৮ ফুট চওড়া করার কথা। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের অধীনে কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) প্রকল্পের আওতায় এ কাজের প্রাক্কলন ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সদর ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আল আমিন পালোয়ান এ কাজের ঠিকাদার। কিন্তু এলাকাবাসী সড়কটিতে নিম্নমানের ইট ব্যবহার ও বালু না দিয়েই কাজ শুরুর অভিযোগ করেছেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আল আমিন পালোয়ান একই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। যে কারণে গত সরকারের আমলে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ না করেই টাকা আত্মসাৎ করেছেন। গণঅভ্যুত্থানের পর একাধিক মামলায় আসামি হয়ে পালিয়ে যান। কিন্তু সম্প্রতি এলাকায় এসে ওই সড়কের কাজ না করেই অর্ধেক টাকা উঠিয়ে নিয়েছেন। নিম্নমানের সামগ্রী বসানোর প্রতিবাদ করলে এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির গুজব ছড়িয়েছেন তিনি। এমনকি নানা মাধ্যমে আল আমিন হুমকিও দিচ্ছেন।
সেখানে বক্তব্য দেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মঈনুল ইসলাম, ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল বাসার কাজল, মো. রানা শেখ প্রমুখ। তাদের অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে আল আমিন পালোয়ানের নম্বরে কল দিয়েও সংযোগ মেলেনি।
কাপাসিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. তামান্না তাস্নীম বলেন, একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে সরেজমিন পরিদর্শনে যেতে বলেছেন। তিনি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।