৫ আগস্টের গণ–অভ্যুত্থান সফল না হলে আরও বহু মানুষকে শহীদ হতে হতো বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। তিনি বলেছেন, ‘যদি আমাদের গণ–অভ্যুত্থানে সফলতা না আসত, তাহলে আমরা হয়তো একটা ভিন্ন বাংলাদেশে থাকতাম। হয়তো আমাদের অনেককে সেই ঘটনার পরে শহীদ হতে হতো। তবে আনাসরা, জুনায়েদরা আমাদেরকে ব্যর্থ হতে দেয়নি। তাদের মতো আরও শত শত মানুষ সেদিন সফলতার জন্য, চূড়ান্ত সফলতার জন্য জীবন দিয়েছে।’

আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর গেন্ডারিয়ায় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ শাহারিয়ার খান আনাসের নামে সড়ক এবং শহীদ মেহেদী হাসান জুনায়েদের নামে চত্বর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আসিফ মাহমুদ এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি।

আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেন, দীর্ঘ দুই যুগের ফ্যাসিবাদকে বিতাড়িত করার মাধ্যমে একটা নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টির সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদেরা। তাই তাদেরকে শুধু স্মরণে রাখলে হবে না, যে প্রেরণার জায়গা থেকে, যেই দেশপ্রেমের জায়গা থেকে তারা জীবন দিয়েছে, সেই নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য আজন্ম লড়াই করে যেতে হবে।

স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বলেন, আগামীর বাংলাদেশে আর কাউকে যেন জীবন দিতে না হয়, সে জন্য শহীদদের হত্যার বিচার নিশ্চিত করা থেকে শুরু করে কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে।

অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, গণ–অভ্যুত্থানে শহীদেরা প্রমাণ করেছে এই প্রজন্ম এমন একটি মন নিয়ে জন্মেছে, যারা কোনো অন্যায়কে মেনে নেয় না। তিনি বলেন, শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না। যদি বৃথা যায়, তাহলে যাঁরা দায়িত্ব নিয়েছেন, তাঁরাও দায়ী হবেন।

এ সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, চাঁনখারপুলে ৫ আগস্টে যে ছয়জনকে হত্যা করা হয়েছিল, তাদের বিচারে চার্জ (অভিযোগ) গঠনের আদেশ হবে এ মাসের ১৪ তারিখ। আর আগস্টের শুরুতে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে। তিনি বলেন, যারা নির্বিচার পাখির মতো মানুষকে মেরেছে, তাদের প্রত্যেককেই বিচারের মুখোমুখি করা হবে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো.

রেজাউল মাকছুদ জাহেদী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া।

এ সময় শহীদ শাহারিয়ার খান আনাস ও শহীদ মেহেদী হাসান জুনায়েদের পরিবারের সদস্যরাও বক্তব্য দেন। বক্তব্যে তাঁরা আনাস, জুনায়েদসহ গণ–অভ্যুত্থানের সব শইীদের আত্মত্যাগকে মনে রাখার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানের শুরুতে শহীদ শাহারিয়ার খান আনাসের নামে ধূপখোলা এলাকার একটি সড়কের নামকরণ ফলক উন্মোচন করেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। এরপর শহীদ মেহেদী হাসান জুনায়েদের নামে একটি চত্বর উদ্বোধন করেন তিনি। পরে দুই শহীদের স্মরণে চত্বরসংলগ্ন এলাকায় বৃক্ষরোপণ করা হয়। এ সময় শহীদদের স্মরণে দোয়া করা হয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন উপদ ষ ট আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

ব্যাংক খাত সংস্কার: সফলতা নির্ভর করবে বাস্তবায়নের ওপর

বাংলাদেশের ব্যাংক খাত সংস্কারের জন্য তিন বছরের পরিকল্পনা বহুপ্রতীক্ষিত উদ্যোগ; এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। এই পথনকশার লক্ষ্য হলো আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এবং জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। দেউলিয়াত্ব আইন সংস্কার, খেলাপি ঋণের (এনপিএল) সমাধান, সংকট ব্যবস্থাপনা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রতি সরকারের প্রতিশ্রুতি এই পরিকল্পনায় প্রতিফলিত হয়েছে। বিষয়টি প্রশংসনীয়।

এই পথনকশায় পরিষ্কার ও কাঠামোবদ্ধ সংস্কারের রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে। নিঃসন্দেহে এসব পদক্ষেপ ব্যাংক খাতের গভীর সমস্যাগুলো সমাধানের লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা যেমন আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও এডিবি এই উদ্যোগে সমর্থন দিচ্ছে।

তবে এই পরিকল্পনার জটিলতা ও ব্যাপকতার কারণে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। সফলতা শুধু নতুন আইন প্রণয়ন নয়, বরং সেগুলোর কার্যকর বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করে। সময়মতো ও কার্যকর বাস্তবায়ন বাংলাদেশের নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ার দীর্ঘদিনের দুর্বলতা। অতীতে বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিরোধ এবং সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে সংস্কার কার্যক্রম ব্যাহত করেছে। কাঠামোগত সমস্যাগুলো আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার গভীরে প্রোথিত। দেশে ছোট ও দুর্বল ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি, মূলধন পর্যাপ্ত নয় এবং অভ্যন্তরীণ ঋণ দেওয়ার বিষয়টি প্রায় নিয়ন্ত্রণহীন। বর্তমানে ২০ শতাংশের বেশি ঋণ অনাদায়ি (নন পারফর্মিং) এবং ভবিষ্যতে এই হার আরও বাড়তে পারে। যদি এই সংস্কার কার্যক্রম যথাযথভাবে বাস্তবায়িত না হয়, তাহলে বাংলাদেশের ব্যাংক খাত ভবিষ্যতেও নানা ধাক্কার মুখে পড়বে। টেকসই প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে পারবে না এই খাত। বাস্তবতা হলো বাংলাদেশের বর্তমান আর্থিক খাতের অবস্থা উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যের সঙ্গে একেবারেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

বাস্তব অগ্রগতি অর্জনের জন্য সরকারকে এই পথনকশা আইন আকারে প্রণয়ন ও প্রয়োগের দিকে নজর দিতে হবে। আরও যা যা দরকার, তা হলো প্রথমেই দুর্বল ব্যাংকগুলো একীভূত করে অধিকতর শক্তিশালী ও স্থিতিশীল প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করা; বাংলাদেশ ব্যাংককে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের ওপর পূর্ণ স্বাধীনতা ও কর্তৃত্ব দেওয়া; জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে খেলাপি ও চুরি হওয়া অর্থের পুনরুদ্ধার স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করা ইত্যাদি। অন্যদিকে কার্যকর ঋণ পুনর্বিক্রয় বাজার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এতে ব্যাংকগুলোর ওপর চাপ কমবে এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিকল্প অর্থায়নের সুযোগ তৈরি হবে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এসব সংস্কারের সফলতা নির্ভর করছে বাস্তবায়নের ওপর। ভালো পরিকল্পনা জরুরি হলেও রাজনৈতিক নেতৃত্বের দৃঢ় অঙ্গীকার ছাড়া কার্যকর বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এই দায়িত্ব বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এবং নতুন সরকারের কাঁধে বর্তায়।

সেলিম রায়হান: নির্বাহী পরিচালক, সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ব্যাংক খাত সংস্কার: সফলতা নির্ভর করবে বাস্তবায়নের ওপর
  • ৭৩ বছরে রাবি: গবেষণা-উচ্চশিক্ষাসহ চাকরি ক্ষেত্রে গৌরবময় যাত্রা
  • চিচিঙ্গা চাষে সফল কৃষক নুরুল
  • এ সপ্তাহের রাশিফল (৫-১১ জুলাই)