দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত কার্যক্রমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে তথ্যপ্রাপ্তিতে আদালতের অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়ার সুপারিশ করেছে দুদক সংস্কার কমিশন। এ সুপারিশের বিরুদ্ধে বিএনপির অবস্থানকে হতাশাজনক ও বিভ্রান্তিকর বলছে কমিশন।

আজ সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছে দুদক সংস্কার কমিশন।

দুদক সংস্কার কমিশনের ২৯ নম্বর সুপারিশে বলা হয়েছে, আয়কর আইন ২০২৩–এর ৩০৯ ধারা সংশোধনপূর্বক এটি নিশ্চিত করতে হবে যে দুদক কর্তৃক চাহিত কোনো তথ্যাদি বা দলিলাদির ক্ষেত্রে এই ধারা প্রযোজ্য হবে না।

বর্তমানে এ ধারা অনুযায়ী এনবিআরে দাখিলকৃত রিটার্ন, হিসাব বিবরণী, দলিলাদি গোপনীয় বলে বিবেচিত। এনবিআর থেকে এসব তথ্য পেতে হলে দুদককে আদালতের অনুমতি নিতে হয়।

কমিশনের এ সুপারিশ কেন্দ্র করে ৫ জুলাই বিএনপি এক সংবাদ সম্মেলন করে। সেখানে এনবিআর থেকে তথ্যপ্রাপ্তিতে আদালতের অনুমতির বাধ্যবাধকতা রাখার পক্ষে অবস্থান নেয় বিএনপি। বিএনপির এ অবস্থানকে বিভ্রান্তিকর, হতাশাজনক ও স্ববিরোধী উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, দুদকের তদন্ত কার্যক্রমে অপ্রয়োজনীয় দীর্ঘসূত্রতা ও প্রশাসনিক জটিলতা এবং অনেক ক্ষেত্রে স্থবিরতা দূর করতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।

তবে কমিশনের করা ৪৭ সুপারিশের মধ্যে ৪৬টি সুপারিশে সম্মতি জানানোয় বিএনপিকে ধন্যবাদ দিয়েছে দুদক সংস্কার কমিশন।

দুদকের তদন্ত কার্যক্রমে এনবিআর থেকে তথ্য সংগ্রহে আদালতের অনুমতির বাধ্যবাধকতা না রাখলে তদন্ত কার্যক্রম বিলম্বিত হবে, বিএনপির এমন যুক্তিকে স্ববিরোধী হিসেবে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

আদালতের অনুমতির এ বাধ্যবাধকতাকে তদন্ত কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রতা তৈরির অন্যতম কারণ, যা বাস্তব অভিজ্ঞতা, গবেষণা ও অংশীজনদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য–পরামর্শ থেকে প্রমাণিত হয়েছে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামানকে উদ্ধৃত করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘দুদকের কার্যক্রমে অহেতুক বিলম্ব রোধ করার জন্য আদালতের অনুমতি নেওয়ার বিদ্যমান বিধান অব্যাহত রাখার যুক্তি দিয়েছে বিএনপি। কিন্তু বাস্তবতা হলো আদালতের অনুমতির বিধান রাখার ফলে দুর্নীতির তদন্তে দীর্ঘসূত্রতা ও জটিলতা বৃদ্ধি এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে তদন্ত প্রতিহত করার সুযোগ তৈরি হয়, যা দুদকের অকার্যকরতার অন্যতম কারণ।

তাঁকে উদ্ধৃত করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সুপারিশ ২৯ এর উদ্দেশ্য হচ্ছে এ অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আইনগত প্রতিবন্ধকতা দূর করে এনবিআরের তথ্যে দুদকের অবাধ ও বিলম্বহীন অভিগম্যতা নিশ্চিত করা। আয়কর সংক্রান্ত তথ্যের গোপনীয়তার যুক্তিও ভিত্তিহীন, কারণ এ তথ্য দুর্নীতির তদন্তের স্বার্থে দুদকের প্রাপ্য।’

যে তথ্য এনবিআরের কাছে থাকতে পারে, তা এনবিআরেরই সহযোগী সংস্থা দুদককে পেতে আদালতের আদেশ লাগবে, কোনো যুক্তিতেই তা গ্রহণযোগ্য নয় বলে বিবৃতিতে মন্তব্য করেন ইফতেখারুজ্জামান।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী ও কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিএনপি এ বিষয়ে তাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করবে বলে বিবৃতিতে আশা ব্যক্ত করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র তদন ত অবস থ ন ব এনপ র

এছাড়াও পড়ুন:

৩০ নভেম্বরের মধ্যে করদাতাদের ই-রিটার্ন জমা দিতে বলেছে এনবিআর

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ১০ লাখের বেশি করদাতা অনলাইনে তাঁদের ই-রিটার্ন জমা দিয়েছেন। গত আগস্টে সব করদাতার জন্য অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

ই-রিটার্ন সিস্টেম ব্যবহার করে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে সব ব্যক্তি করদাতাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে এনবিআর। গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ অনুরোধ জানায় সংস্থাটি।

গত বছর নির্দিষ্ট এলাকার অধিক্ষেত্রের ব্যক্তি করদাতা, সারা দেশে ব্যাংকে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়। তাতে ১৭ লাখের বেশি করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করেন।

দেশে বর্তমানে ১ কোটি ১২ লাখের মতো কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) আছেন। তাঁদের মধ্যে প্রতিবছর মাত্র ৪০ লাখ টিআইএনধারী রিটার্ন দাখিল করেন।

এনবিআর জানায়, এক বিশেষ আদেশের মাধ্যমে চলতি বছর ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের প্রবীণ করদাতা, শারীরিকভাবে অসমর্থ বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন করদাতা, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতা, মৃত করদাতার পক্ষে আইনগত প্রতিনিধি কর্তৃক রিটার্ন দাখিল এবং বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিক ছাড়া সব ব্যক্তিশ্রেণির করদাতার অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

চলতি ২০২৫-২৬ করবর্ষে যেসব করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন, তাঁরাও চাইলে অনলাইনে ই-রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। অন্যদিকে ই-রিটার্ন সিস্টেমে নিবন্ধনসংক্রান্ত সমস্যার কারণে কোনো করদাতা অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতে না পারলে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট উপকর কমিশনারের কাছে সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে আবেদন করলে অতিরিক্ত বা যুগ্ম কর কমিশনারের অনুমোদনক্রমে কাগুজে রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। এই সময়সীমা ৩১ অক্টোবর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা ১৫ দিন বাড়ানো হয়েছে।

এনবিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, করদাতার পক্ষে ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধিও অনলাইনে ই-রিটার্ন জমা দিতে পারছেন। এ ছাড়া বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতাদের ক্ষেত্রে অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা না থাকলেও তাঁদের পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, ই-মেইল ইত্যাদি তথ্য দিয়ে ই-মেইল করলে ই-রিটার্নের নিবন্ধন লিংক পাঠানো হয়। এর মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতারা ই-রিটার্ন সিস্টেমে নিবন্ধন করে সহজেই অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারছেন। কোনো ধরনের কাগজপত্র বা দলিল আপলোড না করেই করদাতারা তাঁদের আয়, ব্যয়, সম্পদ ও দায়ের প্রকৃত তথ্য ই-রিটার্ন সিস্টেমে এন্ট্রি করে ঝামেলাহীনভাবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারছেন। ই-রিটার্ন দাখিলের পর তাৎক্ষণিকভাবে জমা স্লিপ পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে আয়কর সনদও প্রিন্ট করে নিতে পারছেন করদাতারা।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ই-রিটার্ন জমা সহজ করার জন্য গত বছরের মতো এবারও করদাতাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ই-রিটার্নসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যায় করদাতাদের সহায়তা দিতে একটি কল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। আবার ওয়েবসাইটে ই-রিটার্নসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা লিখিতভাবে জানালেও তার সমাধান পাচ্ছেন করদাতারা। কোনো করদাতা সশরীর নিজ নিজ কর অঞ্চলে গিয়েও ই-রিটার্ন জমা দেওয়াসংক্রান্ত সেবা নিতে পারছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৩০ নভেম্বরের মধ্যে করদাতাদের ই-রিটার্ন জমা দিতে বলেছে এনবিআর