একটি গরু দিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন দিনমজুর মেনারুল ইসলাম। ভেবেছিলেন একটু একটু করে গড়ে তুলবেন নিজের একটি ছোট গরুর খামার, যা দিয়ে সংসার চলবে, ছেলেমেয়েরাও মানুষ হবে। সেই সাফল্য ধরাও দিয়েছিল। একটি থেকে চারটি গাভি ও তিনটি বাছুর হয়েছিল। দুধ বিক্রির টাকায় সংসার, সন্তানদের পড়ার খরচও চলত। কিন্তু এক রাতেই সবকিছু যেন ভেঙে গুঁড়িয়ে দিল চোরেরা।

কষ্টে গড়া তাঁর ছোট গরুর খামারটি এখন প্রায় শূন্য। গতকাল রোববার গভীর রাতে চোরেরা তালা কেটে তাঁর খামার থেকে ছয়টি গরু চুরি করে নিয়ে যায়। একমাত্র অবলম্বন হারিয়ে মেনারুল দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। তাঁর বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ঝাঁকুয়াপাড়া গ্রামে।

পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঝাঁকুয়াপাড়া গ্রামের এমাজ উদ্দিনের ছেলে মেনারুল ইসলাম পেশায় দিনমজুর। তাঁর একার আয়ে চলে ছয় সদস্যের সংসার। জমিজমা বলতে পৈত্রিক সম্পত্তির ভাগে পাওয়া বসতভিটার ১৫ শতক জমি। পাঁচ বছর আগে একটি গাভি কিনে লালন–পালন শুরু করেন। ধীরে ধীরে চারটি গাভি ও তিনটি বাছুরের খামারে পরিণত হয়। দিনমজুরি ও গাভির দুধ বিক্রির টাকায় ভালোই চলছিল সংসার। গতকাল রোববার দিবাগত রাতে খামারে গাভিগুলোকে খাবার দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। সকালে উঠে দেখেন খামারের দরজার তালা কাটা, ভেতরে গরু নেই।

মেনারুল ইসলাম বলেন, ‘কষ্ট করে গরুগুলা লালন–পালন করছি। দুধ বেচে ছেলেমেয়েক স্কুলে পাঠাইছি, ওদের বই কিনছি। এত কষ্ট করছি। এখন সব শেষ। যারা নিয়া গেছে, তারা জানে না, গরুগুলা আমার সন্তান ছিল। এখন কীভাবে দিন চলবে বুঝতেছি না।’

তাঁর চোখ ভেজা, গলায় কাঁপন, পাশে বসা স্ত্রী–ও নির্বাক। মেনারুলের স্ত্রী লাইলী বেগম বলেন, ‘চোরেরা ফকির বানে দিল হামাক। বাঁচি থাকার সম্বল কোনা চুরি করি নিল। চোখে এখন আন্ধার দেখছি।’

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এমন চুরি গ্রামে নতুন নয়। তবে এবার একজনের বুকভরা আশা যেন চুরি হয়ে গেছে।

তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ঝাঁকুয়াপাড়ায় খামার থেকে গরু চুরির ঘটনায় থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। পুলিশের একটি দল সেখানে গেছে। গরু উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সিপিবির ত্রয়োদশ কংগ্রেস শুরু ১৯ সেপ্টেম্বর

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) ত্রয়োদশ কংগ্রেস (কেন্দ্রীয় সম্মেলন) আগামী ১৯ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যেই দলের সব শাখা, উপজেলা ও জেলা সম্মেলন সম্পন্ন করা হবে। গত শুক্র ও শনিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির দু'দিনব্যাপী সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সোমবার দলের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সভার সিদ্ধান্তগুলো জানানো হয়। 

সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলমের সভাপতিত্বে সভায় দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, করণীয় ও সরকারের সংস্কারবিষয়ক আলোচনা উত্থাপন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক লুনা নূর। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন দলের প্রেসিডিয়াম, কেন্দ্রীয় কমিটি ও কন্ট্রোল কমিশনের সদস্য ও সংগঠকরা।

সভায় সারাদেশে অব্যাহত মব-সন্ত্রাস, খুন-ধর্ষণ-হত্যাকাণ্ডের ঘটনা এবং এসব ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে জননিরাপত্তায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে বিদ্যমান সংকট উত্তরণে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা এবং গণঅভ্যুত্থানে সংগঠিত হত্যাকাণ্ডের বিচার দৃশ্যমান করার দাবি জানানো হয়। 

সভায় চট্টগ্রাম বন্দর লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসাসহ দেশকে সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যবাদী শক্তির স্বার্থরক্ষার ভূমিকা নেওয়ার সরকারি পদক্ষেপের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়। এ সময় গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট দেশব্যাপী নানা কর্মসূচি ও ১৮ জুলাই ‘শহীদ রেজভী দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ