উপাচার্যের দায় বনাম কাঠামোগত ব্যর্থতা
Published: 7th, July 2025 GMT
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি উপাচার্যের সঙ্গে যে অঘটন ঘটেছে, তা দুঃখজনক। সমকালে প্রকাশ, সেখানে উপাচার্যের রুমে গিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেছে– ‘আপনাকে আমরা বসিয়েছি।’ বস্তুত এর মধ্যেই দেশের উপাচার্য নিয়োগের বাস্তবতা ফুটে উঠেছে। সেখানকার ঘটনার প্রেক্ষাপট যদিও ভিন্ন, তারপরও আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র রাজনীতি, শিক্ষক রাজনীতি– এ দুটি প্রক্রিয়া শুধু মতপ্রকাশ বা অধিকার চর্চার মাধ্যম নয়। বরং অনেকাংশে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির গোপন ও দৃশ্যমান কাঠামো হিসেবে কাজ করে। একসময় ছাত্র রাজনীতি ছিল আদর্শভিত্তিক আন্দোলনের প্রতীক। শিক্ষকদের রাজনীতি ছিল নীতিনির্ধারণে প্রগতিশীল অংশগ্রহণের নাম। কিন্তু সময়ের সঙ্গে এগুলো অনেকাংশে দলীয় আনুগত্য, সুবিধাবাদ, নিয়োগ বাণিজ্য এবং প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।
উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ্য নির্বাহী হলেও দুর্নীতির একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে তিনি একটি অংশমাত্র। এই কাঠামোয় জড়িত থাকে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তর, রাজনীতি, শিক্ষক সমাজ, আর্থিক দপ্তর এবং ঠিকাদার গোষ্ঠী। তাই দুর্নীতি রোধে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, নিরপেক্ষ নিয়োগ ব্যবস্থা, জবাবদিহিমূলক প্রশাসন এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। শুধু উপাচার্যকে দায়ী করে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতির মূল সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। বরং এই ধারণা দুর্নীতির গভীর কাঠামোগত ও রাজনৈতিক বাস্তবতাকে আড়াল করে রাখে। এ সংকট থেকে উত্তরণে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, আন্তর্জাতিক মানের মূল্যায়ন, রাজনৈতিক বিবেচনা বাদ, অভিযোগ প্রমাণিত হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া এবং উপাচার্যদের জবাবদিহির আওতায় আনা জরুরি। নতুবা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ নষ্ট এবং অনিয়ম-দুর্নীতির সংস্কৃতি আরও গভীর হবে।
উপাচার্য নিয়োগে রাজনৈতিক আনুগত্যকেই প্রধান বিবেচনা করা হয়। যার ফলে যোগ্যতা ও সততার চেয়ে দলীয় পরিচয় বেশি গুরুত্ব পায়। অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। বরং মেয়াদ পূর্ণ করার সুযোগ দেওয়া হয়। উপাচার্যরা প্রায় সবকিছুতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। ফলে ক্ষমতার অপব্যবহার সহজ হয়। নিয়োগে তদবির ও আত্মীয়স্বজনকে চাকরি দেওয়া, প্রশাসনে বলয় তৈরি করা এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। নৈতিকতা ও পেশাদারিত্বের অভাব, ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়াও বড় কারণ।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান উপাচার্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একাধিক মামলা করেছে এবং কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। উপাচার্যদের এসব অপকর্মের ধরন বেশ বৈচিত্র্যময়। অনুমোদনহীন পদে অবৈধ নিয়োগ, অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতি, প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারিতা, নিয়োগ বাণিজ্য ও স্বজনপ্রীতি, রাজনৈতিক আনুগত্য ও দলীয়করণই বেশি দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, উপাচার্যরা আত্মীয়স্বজন, রাজনৈতিক কর্মী, এমনকি ছাত্র সংগঠনের নেতাদেরও চাকরি দিয়েছেন।
কোনো কোনো উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ও প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ; ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশে অনিয়ম করেছেন। আবার কেউ কেউ প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে শিক্ষার্থী ও শিক্ষককে হয়রানি করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের টাকায় ছাত্র সংগঠনকে ভাগ দেওয়ার মতো উদাহরণও রয়েছে।
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষসহ উচ্চ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক আনুগত্যকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। ফলে নিয়োগপ্রাপ্তরা প্রায়ই রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় বাধ্য থাকেন, যা প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব তৈরি করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, গবেষণা প্রকল্প বা প্রযুক্তি ক্রয়ে নিয়মতান্ত্রিক টেন্ডার প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয় না। ঠিকাদারদের সঙ্গে আঁতাত করে ঘুষের বিনিময়ে কাজ দেওয়া, অতিরিক্ত বিল অনুমোদন ইত্যাদি দুর্নীতির সাধারণ রূপ। নিয়োগ বোর্ডে নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে ঘনিষ্ঠজনের চাকরি নিশ্চিত করা; অনৈতিকভাবে প্রমোশন দেওয়া; গবেষণা অনুদান নিজেদের মধ্যে ভোটের রাজনীতি সামনে রেখে বণ্টন– এসব কর্মকাণ্ডে তারা জড়িত হন। উপাচার্যের এসব কার্যক্রমে সম্মতি বা সহযোগিতা দুর্নীতিকে উৎসাহিত করে। জবাবদিহির অভাব ও দুর্বল মনিটরিং ব্যবস্থাপনা অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রধান কারণ।
ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা ও পরিবর্তন জরুরি, যাতে অতীতের অনিয়ম, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত একটি শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ গড়ে ওঠে। উপাচার্য নিয়োগে রাজনৈতিক আনুগত্য বা দলীয় পরিচয় নয়; বরং যোগ্যতা, সততা ও নেতৃত্বের গুণাবলিই প্রধান বলে বিবেচ্য হতে হবে। অতীতে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগের কারণে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি বেড়েছে, যা শিক্ষার মান নষ্ট করেছে। উপাচার্যদের কর্মকাণ্ড নিয়মিত মূল্যায়ন ও তদারক করতে হবে। কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে দ্রুত তদন্ত ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি, যাতে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে না থাকেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ও আয়-ব্যয় সংক্রান্ত তথ্য সবার জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। অর্থ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও নিয়ম মানা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে দুর্নীতি ও অপচয় বন্ধ হয়। উপাচার্যদের মূল লক্ষ্য হতে হবে শিক্ষার মানোন্নয়ন, গবেষণা বৃদ্ধি ও আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা। এ জন্য প্রশাসনিক দক্ষতার পাশাপাশি একাডেমিক নেতৃত্ব ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার গুণাবলি থাকা জরুরি। একজন উপাচার্যকে সর্বোচ্চ নৈতিক মানদণ্ডে চলতে হবে এবং অন্যদের জন্য তা হতে হবে উদাহরণ। তিনি যেন স্বচ্ছতা, সততা ও ন্যায়ের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করেন। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য উপাচার্য নিয়োগ ও অপসারণে একটি একক ও স্থায়ী নীতিমালা তৈরি করা দরকার, যাতে কোনো সরকার বা গোষ্ঠী নিজেদের সুবিধামতো নিয়ম পরিবর্তন করতে না পারে।
ড.
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, গোপালগঞ্জ
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপ চ র য ন য় গ উপ চ র য র র র জন ত ব যবস থ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
নীতি সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ, কী প্রভাব পড়তে পারে বিশ্ব অর্থনীতিতে
অবশেষে সুদের হার কমিয়েছে ফেডারেল রিজার্ভ। গত বছরের ডিসেম্বর মাসের পর এই প্রথম সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে দুর্বলতার লক্ষণ, আফ্রো-আমেরিকানদের মধ্যে উচ্চ বেকারত্ব, কর্মঘণ্টা কমে যাওয়া ও নতুন চাকরি সৃষ্টির গতি কমে যাওয়ায় ফেড এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট কমিয়ে ৪ থেকে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়ার পর ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেন, অক্টোবর ও ডিসেম্বর মাসে সুদহার আরও কমতে পারে। তিনি বলেন, শ্রমবাজারের ক্রমবর্ধমান দুর্বলতা এখন তাঁর ও সহকর্মী নীতিনির্ধারকদের প্রধান উদ্বেগ। খবর রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেক দিন ধরেই ব্যাপক হারে সুদ কমানোর দাবি তুলছিলেন। তাঁর বক্তব্য, এতে অর্থনীতি চাঙা হবে। তবে ফেডের এ সিদ্ধান্ত তাঁর প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। ফেডের পর্ষদে নতুন গভর্নর স্টিফেন মিরান ছিলেন একমাত্র ভিন্নমতাবলম্বী। তিনি ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট হারে সুদহার কমানোর পক্ষে ছিলেন। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে আরও বড় কাটছাঁটের ইঙ্গিত দিয়েছেন।
সুদের হার নির্ধারণে রাজনৈতিক প্রভাবের প্রশ্ন সব সময়ই তোলা হয়। ট্রাম্প সম্প্রতি ফেডের এক গভর্নর লিসা কুককে সরানোর চেষ্টা করেছিলেন। যদিও কুক আদালতের লড়াইয়ে আপাতত নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন এবং বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি হোয়াইট হাউসের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান মিরানকে ফেডের পর্ষদে বসান।
শ্রমবাজারে দুর্বলতাপাওয়েল বলেন, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বেকারত্ব বাড়ছে, তরুণেরা আরও ভঙ্গুর হয়ে পড়ছেন। সামগ্রিকভাবে চাকরি সৃষ্টির গতি খুবই কম। শ্রমবাজারকে আর দুর্বল হতে দেওয়া যাবে না।
পাওয়েল আরও সতর্ক করেন, নতুন চাকরির সংখ্যা এখন বেকারত্বের হার স্থিতিশীল রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে সামান্য ছাঁটাইও বেকারত্ব বাড়িয়ে দিতে পারে।
মূল্যস্ফীতি বনাম কর্মসংস্থানমূল্যস্ফীতি এখনো লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। আশঙ্কা করা হচ্ছে বছরের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতির হার ৩ শতাংশে উঠবে, যেখানে ফেডের লক্ষ্যমাত্রা হলো ২ শতাংশ। কিন্তু ফেড মনে করছে, কর্মসংস্থানের ঝুঁকি এখন বেশি গুরুত্ব পাওয়ার মতো বিষয়।
ফেডের নতুন পূর্বাভাসে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা বাড়িয়ে ১ দশমিক ৬ শতাংশ করা হতে পারে বলা হয়েছে। বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশেই স্থির থাকবে বলে তারা অনুমান করছে।
রাজনৈতিক টানাপোড়েনএ সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক নাটকও কম ছিল না। ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ নিয়ে সমালোচনা থাকলেও ফেডের পর্ষদের অন্য দুই ট্রাম্প-মনোনীত গভর্নর মিশেল বোম্যান ও ক্রিস্টোফার ওয়ালার শেষ পর্যন্ত মূল সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হয়েছেন। ওয়ালার বরাবরই শ্রমবাজারকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলে আসছেন।
পাওয়েল অবশ্য পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, ‘আমাদের সংস্কৃতির মূল বিষয় হলো তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত। আজকের বৈঠকে সুদহার ব্যাপক হারে কমানোর বিষয়ে বিপুল সমর্থন ছিল না।’
বাজারের প্রতিক্রিয়াসুদহার কমানোর ঘোষণার পর ওয়াল স্ট্রিটে প্রথমে শেয়ারের দাম বাড়লেও পরে ওঠানামা করে। শেষমেশ মিশ্র পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিন শেষ হয়। ডলার কিছুটা শক্তিশালী হয়েছে ঠিক, কিন্তু ট্রেজারি বন্ডের সুদ প্রায় অপরিবর্তিত। বাজার এখন প্রায় নিশ্চিত, অক্টোবরের বৈঠকেও সুদ কমানো হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ফেডের সাম্প্রতিক নীতি পরিবর্তনের মানে হলো তারা এখন ধীরে ধীরে ‘নিরপক্ষে’ অবস্থানের দিকে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি সাময়িকভাবে কিছুটা বাড়লেও ২০২৬ সালের মধ্যে স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নীতিসুদ কীকেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সুদহারে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে স্বল্প সময়ের জন্য ঋণ দেয়, সেটাই নীতি সুদহার। ইংরেজিতে একে বলে রেপো রেট। রেপোর বাংলা হচ্ছে পুনঃক্রয় চুক্তি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে এটি পরিচিত। অর্থনীতিতে নগদ তারল্যের জোগান দিতে বা অন্যভাবে বলতে গেলে ব্যাংকগুলোর জরুরি প্রয়োজনে অর্থ সরবরাহ করতে মুদ্রানীতির এ হাতিয়ার ব্যবহার করা হয়। বিশ্বের সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ হাতিয়ার ব্যবহার করে।
কোভিডের পর রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। তখন ফেডারেল রিজার্ভ বাজারে মুদ্রার চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করতে দফায় দফায় নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে। ফলে নীতি সুদহার গত দুই দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ২৫ থেকে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশে উঠে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদহারের প্রভাববিশ্ব অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতিসুদের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। ফেডের নীতিসুদের হার বাড়লে ট্রেজারি বন্ডের দাম কমে এবং সুদহার কমলে ট্রেজারি বন্ডের দাম বাড়ে। এর কারণ হলো বাজারে নতুন ও অধিক সুদের বন্ড আসার পর পুরোনো বন্ডের কুপন (সুদ) কম মনে হয়, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম কমে যায়। আবার যখন সুদের হার কমে, তখন নতুন বন্ডের কুপন কম হওয়ায় পুরোনো বন্ডের উচ্চ কুপনযুক্ত সুদ বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম বেড়ে যায়।
নীতিসুদ কমলেও একই প্রক্রিয়া ঘটে, তবে বিপরীতভাবে। সুদের হার কমলে নতুন বন্ডের কুপনও কমে যায়। এতে আগের উচ্চ সুদের কুপনযুক্ত বন্ডগুলো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। বিনিয়োগকারীরা এই পুরোনো বন্ডগুলো কিনতে আগ্রহী হন, ফলে সেগুলোর দাম বেড়ে যায়। বিনিয়োগকারীরা তখন তুলনামূলক ঝুঁকিপূর্ণ বাজারেও বিনিয়োগ আগ্রহী হন। এতে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগপ্রবাহ বাড়ে এবং ডলারের চাপ কিছুটা কমে।
সে কারণে বাজার নীতি সুদহারের দিকে তাকিয়ে থাকে, সুদ কমলে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়।