জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের তথ্যচিত্র শ্রাবণ বিদ্রোহ–এর প্রিমিয়ার শোতে শহীদ আবু সাঈদের বাবা বললেন, তাঁর কৃষক পরিবার থেকে বহু কষ্ট করে লেখাপড়া করে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া ছেলেটা একদিন ভালো চাকরি করবে, এই স্বপ্ন ছিল। কিন্তু সেই স্বপ্ন তো আর পূরণ হলো না। এখন একটাই চাওয়া, ছেলে হত্যার কঠিন বিচার করা হোক।
সোমবার সন্ধ্যায় জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শহীদ আবু সাঈদের বাবার কথায় অনেকের চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে। একই রকম বেদনা ও পুত্র হত্যার শোকের কথা বলেছেন শহীদ আলোকচিত্র সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র মা শামসি আরা জামান। তিনি বলেন, গত বছর আজকের এই দিনে তাঁর ছেলে জীবিত ছিল। রংপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে বাসে যাত্রা করেছিল। তিনি টিকিট করে দিয়েছিলেন। সেই ছেলে লাশ হয়ে গেল। তিনি বলেছেন, নির্বাচনের আগেই যেন তাঁর মতো সন্তানহারা বাবা-মায়েরা হত্যাকাণ্ডের বিচার পান, সেটা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রযোজনা এবং চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর ও প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) সহযোগিতায় শ্রাবণ বিদ্রোহ তথ্যচিত্রটি নির্মিত হয়েছে। পরিচালনা করেছেন আরিফুর রহমান।
তথ্যচিত্রটির প্রিমিয়ার শোর আগে ছিল জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে আলোচনা ও স্মৃতিচারণা। শুরুতেই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এই পর্বে শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে শহীদ আবু সাঈদ ও শহীদ তাহির জামানের বাবা-মা বক্তব্য দেন। তাঁদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি আইন ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের হত্যাকাণ্ডের বিচার চলছে। এই বিচার যেন কোনোভাবে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সেটা নিশ্চিত করেই বিচারিক প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। প্রতিটি ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। নির্বাচনের আগেই বিচার হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার যে নির্বাচন করবে, তা হবে দেশের ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ নির্বাচন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, রাজনৈতিক মতবিরোধ থাকবে, অনেক বিষয় নিয়ে তর্কবিতর্ক চলবে। কিন্তু ফ্যাসিবাদ যেন আর ফিরে না আসে, সেই বিষয়ে সবার দৃঢ় ঐক্য থাকতে হবে। বহু প্রাণ, বহু রক্তের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদের কবর রচনা করা হয়েছে। সেই কবর থেকে যেন ফ্যাসিবাদের আর উত্থান না হয়, সবাইকে সেই চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘আপাতদৃষ্টে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে রাজনৈতিক ঘটনা বলে মনে হলেও এটি ছিল একটি প্রবল সাংস্কৃতিক আন্দোলন। এই আন্দোলনের মূল সুর ছিল আমরা কারও অধীনে থাকব না। বিভিন্নভাবে আমাদের হীনম্মন্য করে রাখার একটা প্রবণতা ছিল। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে নিজস্ব সংস্কৃতির একটি বয়ান তৈরির চেষ্টা ছিল এই আন্দোলনে। এই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির নতুন বয়ান রচনা করতে হবে।’
তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, ‘অনেক তরুণের আত্মদানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের উৎখাত করা হয়েছে। এটা তরুণ প্রজন্মের গৌরবের অর্জন। তাঁদের ত্যাগ, আত্মদান ও বীরত্বের ঘটনা স্মরণ করে আমরা ভবিষ্যতে সাহস ও প্রেরণা লাভ করব। একই সঙ্গে এই ঘটনাগুলো আমাদের দায়িত্ব ও লক্ষ্যের কথাও মনে করিয়ে দেবে।’ তিনি বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পরে অনেক ক্ষেত্রে হয়তো হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এটা একটা দীর্ঘ লড়াই। শেখ হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে একটি বড় সাফল্য এসেছে। তবে ফ্যাসিবাদকে চিরতরে অপসারিত করতে হলে আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে।
সমাপনী বক্তব্য দেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা। সঞ্চালনা করেন পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ।
আলোচনা শেষে ছিল শ্রাবণ বিদ্রোহ তথ্যচিত্রের প্রিমিয়ার প্রদর্শনী। এর ব্যাপ্তি ৩০ মিনিট ৯ সেকেন্ড। অভ্যুত্থানের সেই রক্ত, অশ্রু, প্রতিবাদ প্রতিরোধের উত্তাল দিনগুলো উঠে আসে পর্দায়। রাজপথে ছাত্র-জনতার বিপুল বিক্ষোভ, নিরস্ত্র জনতার ওপরে পুলিশের গুলিবর্ষণ, হেলিকপ্টার থেকে মিছিলে গুলি, সড়কে পড়ে থাকা লাশ, অগ্নিসংযোগ, কারফিউ, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তরুণদের তুলে এনে গুম করার মতো ঘটনাগুলো একের পর এক উঠে আসে পর্দায়। ঘটনার দৃশ্যাবলির সঙ্গে ছিল গণ–অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র সমন্বয়ক ও বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টজনের মন্তব্য।
প্রদর্শনী শেষে ছিল পরিচালক আরিফুর রহমানের সঙ্গে দর্শকদের মুক্ত আলোচনা পর্ব।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট
এছাড়াও পড়ুন:
মুরাদনগরে নারী নির্যাতন: রিমান্ড শেষে চার আসামিকে আদালতে তোলা হবে আজ
কুমিল্লার মুরাদনগরের ধর্ষণ কাণ্ডে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে পর্নোগ্রাফি আইনের মামলায় গ্রেপ্তার ৪ আসামিকে ৩ দিনের রিমান্ড শেষে আজ মঙ্গলবার আদালতে হাজির করা হবে। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে ওই দিন ভুক্তভোগী নারীকে ঘরের ভেতর আটকে নির্যাতন ও ভিডিও ভাইরাল করার বিষয়ে তারা বেশ কিছু তথ্য দিয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে আগেই কোনো তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান। তবে মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, ‘রিমান্ডে ঘটনার সময় নির্যাতন ও ভিডিওকারীদের নাম প্রকাশ করেছেন আসামিরা।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লার আমলি আদালত-১১ এর বিচারক মমিনুল হকের আদালতে চারজনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মুরাদনগর থানার এসআই ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রুহুল আমিন। আদালত ৪ জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তারা হলেন– রমজান, মোহাম্মদ আলী সুমন, মো. আরিফ ও মো. অনিক।
মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান গতকাল সমকালকে বলেন, রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার আসামিদের আদালতে সোপর্দ করা হবে। একই মামলায় গ্রেপ্তার আরেক আসামি ও ঘটনার পরিকল্পনাকারী শাহ পরানের রিমান্ড শুনানি হবে বুধবার।